Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু-তদন্তে একেনবাবু || Sujan Dasgupta » Page 6

নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু-তদন্তে একেনবাবু || Sujan Dasgupta

বিকেল বেলা অভীক যখন এল, প্রমথ তখন আবার উর্দু-টু-ইংলিশ ডিকশনারি নিয়ে বসেছে। আমি একটা পেপারের প্রুফ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তারই মধ্যে একেনবাবু বকবক করে আমাদের মাথা খাচ্ছেন!

অভীক ঢুকেই প্রমথকে বলল, “ছবিটার জন্য থ্যাংক ইউ।”

“ইউ আর ওয়েলকাম। …একেনবাবুর কাছ থেকে কিন্তু এখনও ধন্যবাদ পাইনি। ছবিটা পেয়েছেন কিনা তাও জানি না।”

“কীসের ছবি স্যার?”

“আপনার হাতে চেক তুলে দেবার ছবি। ভুলে গেছেন নিশ্চয়?”

“আরে না না স্যার, ভুলব কেন, পেয়েছি! সত্যি ছি ছি, আপনাকে তো ধন্যবাদটাই জানানো হয়নি। ধন্যবাদ স্যার।”

“লেট হলেও অ্যাকসেপ্টেড। এবার আপনি অভীকবাবুকে জিজ্ঞেস করুন উনি কি শুধু ধন্যবাদ দিতে এসেছেন, না কাজটা কদ্দূর এগিয়েছে জানতে এসেছেন?” অভীক একটু লজ্জা পেল। “না না, তা নয়।” একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করল, “আপনার যা যা ইনফর্মেশনের দরকার পেয়েছেন তো?”

“হ্যাঁ, সবাই যতটুকু সাহায্য করার করছেন। আচ্ছা, আপনিও তো পারমিতা ম্যাডামকে ভালো করেই চিনতেন, তাই না?

“ছেলেবেলায় চিনতাম পাড়ার মেয়ে হিসেবে। বড়ো হয়ে যাবার পর তো আর পাড়ার মেয়ে নয়, বস-এর ভাগ্নি। সুতরাং একটা দূরত্ব হয়েছিল।”

“ভাস্করবাবুর কথা শুনে মনে হল পারমিতা ম্যাডামের সঙ্গে অনেকেরই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়েছিল, এ ব্যাপারে আপনি কি কিছু জানেন স্যার?”

“ভাস্কর, এ ব্যাপারে অনেক ভালো জানবে। আমি আবছা আবছা শুনেছি। ইচ্ছে করেই শুনতে চাইনি পাছে বস এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে বসেন। ওঁর কাছে তো লুকোতে পারব না।”

“কার কাছ থেকে শুনেছিলেন স্যার?”

“সে কি আর মনে আছে, এর-ওর কাছ থেকে তো নানারকম উড়ো কথাই কানে আসে।”

“তা তো বটেই স্যার। আচ্ছা, আপনি কি তৃণা ম্যাডামের দাদাকে চিনতেন?”

“চিনতাম, কিন্তু খুব ভালো করে নয়।”

“আপনাদের পাড়াতেই তো থাকতেন স্যার!”

“তা থাকত, কিন্তু ও একটু আলাদা থাকত, আমাদের সঙ্গে তেমন মিশত না। তৃণাদের বাড়িতে বড়ো হলেও ও কিন্তু আপন দাদা ছিল না, মাসতুতো দাদা।”

“উনি মারা গেলেন কীভাবে?”

“শুনেছিলাম সুইসাইড। এর বেশি সত্যিই কিছু জানি না।”

“কোনো গুজবও শোনেননি স্যার?”

“গুজব তো অনেক কিছুই রটে, সব তো আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেই জন্যেই বলতে বাধছে।”

“তাও একটু শুনি না স্যার?”

একটু ইতস্তত করে অভীক বলল, “আসলে আমার মনে হয় ওর মাথাটাই খারাপ ছিল। শুনেছি মেয়েদের অনেক অশ্লীল মেসেজ পাঠাত, রিঙ্কিকেও নাকি পাঠিয়েছিল। ড্রাগস ও অন্যান্য বদভ্যাস ছিল। নিজের বোনের সঙ্গেও নাকি অবৈধ সম্পর্ক পাতাবার চেষ্টা করেছিল, যেটা সম্পূর্ণ অসত্য।”

“নিজের বোন মানে তৃণা ম্যাডাম!”

“হ্যাঁ।”

“তারপর?”

“পাড়ায় এসব জানাজানি হবার পর খুবই বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পাড়াতেই ওকে টিটিকিরি দেওয়া আর হেনস্তা করা শুরু হয়। তবে তার সঙ্গে সুইসাইডের কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা জানি না।”

একেনবাবু কোনো মন্তব্য করলেন না। একটু চুপ করে থেকে বললেন, “ভালোকথা স্যার, রজতবাবু তো বোধহয় বিয়ে করেননি, তাই না?”

“যদ্দূর জানি করেননি।”

“ওঁর কোনো ভাই নেই, তাই তো স্যার?”

“আমার জ্ঞানত নেই।”

‘মাসতুতো, জ্যাঠতুতো… মানে ‘তুতো’ টাইপের স্যার?”

“বলতে পারব না।”

“ধরে নিচ্ছি ভাগ্নিই সব কিছু পেতেন ওঁর মৃত্যুর পর।”

“সেইরকমই আমরা ভেবেছিলাম। তবে দূর সম্পর্কের ভাইদের ব্যাপারটা তৃণা হয়তো বলতে পারবে। ওর তো খুব যাতায়াত ছিল ওই বাড়িতে।”

“কিন্তু ম্যাডাম তৃণার সঙ্গে তো বোধহয় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল পারমিতা ম্যাডামের… নইলে ওঁর বাড়িতে না উঠে, অনুরাধার বাড়িতে গিয়ে উঠলেন!”

ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে অভীক বলল, “সেটা তৃণার বাড়িতে জায়গার অভাব বলে। প্রথমে এসে তো গেস্ট হাউসেই উঠেছিল। কিন্তু গেস্ট হাউসটা একদম ফাঁকা ছিল বলে একা একা থাকতে চায়নি।”

“যেদিন প্লেনে ওঠার কথা তার আগের রাত্রে তো গেস্ট হাউসেই ছিলেন স্যার?”

“তা ছিল, কারণ তখন স্যার ছিলেন, তা ছাড়া আরও দু-জন গেস্ট ছিলেন। একা থাকার ব্যাপার ছিল না।” .

“ভালোকথা স্যার, আপনি তো পারমিতা ম্যাডামের নাচ দেখতে গিয়েছিলেন?

“হ্যাঁ।” একটু থেমে অভীক বলল, “আমি না গেলে, নাচই হত না।”

“কেন স্যার?”

“ওর নাচের জামাকাপড়, মেক-আপ, নাচের অলংকার-টলংকার সব কিছু তো গেস্ট হাউসেই ছিল। অত জিনিস বন্ধুদের বাড়িতে রাখবে কোথায়? আমিই ওগুলো তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম।”

“এবার বুঝলাম স্যার। ভালোকথা, গেস্ট হাউসটা এক বার দেখতে পারি?”

“নিশ্চয়। কিন্তু ওখানে কিছু পাবেন বলে মনে হয় না। ঘরগুলো তো ক্লিন করার কথা গেস্টরা চলে গেলে।”

“আমিও নিশ্চিত স্যার কিছু পাব না, তবে অধিকন্তু ন দোষায়।”

“বেশ তো কখন যেতে চান বলুন, আমি নিয়ে যেতে পারি।”

“এখন যদি যাই, তাহলে তো আপনাকে আবার গেস্ট হাউসে যেতে হবে।”

“তাতে কী হয়েছে, এমনিতেই আমাকে এক বার গেস্ট হাউসে যেতে হত। একজন গেস্ট একটু আগে মেসেজ পাঠালেন ওঁর ফ্ল্যাশ ড্রাইভ গেস্ট রুমে ফেলে গেছেন! ওটা আজকেই ওভারনাইট ডেলিভারি করে পাঠাতে হবে… কী ঝামেলা বলুন তো!”

এবার আমাকে ধরলেন একেনবাবু। “যাবেন নাকি স্যার? গাড়িতে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে।”

অভীক বলল, “গাড়ি লাগবে কেন, সাবওয়ে আর বাস ধরে চলে যাব, পার্কিং-এর ঝামেলা নেই। বড়োজোর সোয়া ঘণ্টার পথ।”

আমি জানি সাবওয়ে বা বাস কোনোটাই একেনবাবু পছন্দ করেন না। আমার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কী স্যার, আপনারা যাবেন না?”

প্রমথও খুব ভালোভাবে জানে কেন একেনবাবু দু-দু বার একই প্রশ্ন করছেন, তাও অম্লানবদনে বলল, “গেস্ট হাউস তো আপনি দেখতে চান, আমরা ভিড় বাড়িয়ে কী করব!”

“কী যে বলেন স্যার, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন!”

শেষে আমরা সবাই গেলাম আমার গাড়িতেই। গেস্ট হাউসটা কুইন্সের কিউ গার্ডেনস-এ। ভাগ্যিস গেস্টমশাই ওঁর ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ফেলে চলে গিয়েছিলেন! পারমিতা যে-রুমে ছিল তার লাগোয়া বাথরুমে এগজস্ট ফ্যান সশব্দে চলছে, জানলাটাও একটু খোলা!

অভীক বিরক্ত হয়ে বলল, “দেখেছেন কাণ্ড! গেস্টরা সবাই চলে যাবার পর আমার অফিস অ্যাসিস্টেন্টের কাজ এগুলো সব চেক করা। নিশ্চয় এটা জ্যানিটরের কাণ্ড! বাথরুম ক্লিন করতে এসে কীর্তিটা করেছে। ওর সুপারভাইজারকে রিপোর্ট করতে হবে… এনার্জি নষ্ট এবং তার ওপর ক্রাইম ইনভাইট করা।”

“এখানে চুরি-টুরি খুব হয় নাকি স্যার?”

“খুব হয় কিনা জানি না। আমাদের এই গেস্ট হাউস পাঁচ বছরের পুরোনো… টাচ উড, এখন পর্যন্ত কিছু চুরি হয়নি।”

“ক্লিনিং সার্ভিসের লোকেরা কি সব বিশ্বাসযোগ্য?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“এখন পর্যন্ত তো কোনো সমস্যা হয়নি। গেস্টরা কিছু ফেলে গেলে ড্রয়ারে বা ক্লজেটে ঢুকিয়ে রেখে যায়। নতুন গেস্ট আসার আগে আমরা সেগুলো সরিয়ে রাখি।”

কথাটা ঠিক, একেনবাবু ক্লজেটটা খুলতেই চোখে পড়ল কতগুলো মাস্ক খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। আজকাল পলিউশনের জন্যে আমিও মাঝেমধ্যে কলকাতায় মাস্ক নিয়ে যাই। তবে এগুলোর কোয়ালিটি অনেক ভালো। অভীক বলল, “ইসস, কলকাতায় অ্যালার্জিতে খুব কষ্ট পেত বলে রিঙ্কির জন্যে কিনেছিলাম। নিয়ে যায়নি দেখছি।”

একেনবাবু একটা মাস্ক হাতে নিয়ে বললেন, “খুব ভালো কোয়ালিটির, কিন্তু এখন তো আর লাগবে না স্যার, এগুলোর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন উনি।”

ফ্ল্যাশ ড্রাইভটা পাওয়া গেল তিন নম্বর গেস্ট স্যুইটে, নাইট টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর। কিংস্টন-এর তৈরি। তবু নিশ্চিত হবার জন্য অভীক ফোন করল। ঠিকই, ওটাই ফেলে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক।

“না পাওয়া গেলে লজ্জার ব্যাপার হত।” অভীক ওটা পকেটস্থ করে বলল, “এখন এটাকে পাঠিয়ে দিলেই আমার মুক্তি। …আপনি আর কিছু দেখতে চান, একেনবাবু?”

“না স্যার, এই তো দেখলাম। মোট চারটে স্যুইট, তাই তো?”

“হ্যাঁ, এ ছাড়া একটা কমন কিচেন। সকালে একজন হাউসকিপার এসে, চা-কফি বানিয়ে দেয়। দেখতে চান?”

“এলাম যখন দেখেইনি স্যার।”

কিচেনে কী দেখার আছে বুঝলাম না। কিছুই প্রায় নেই। রেফ্রিজারেটরে কয়েকটা হাফ-অ্যান্ড-হাফ, জ্যাম-জেলি, মাখন ইত্যাদি। ওভারহেড ক্যাবিনেট-এ কয়েকটা সিরিয়ালের বাক্স, আরও হাবিজাবি কিছু ছিল- মনে রাখার মতো কিছুই নয়। আসাটা যে অর্থহীন হবে আমি জানতাম। আসলে একেনবাবু কোথাও যাবার সুযোগ পেলেই ছোটেন!

গেস্ট হাউস থেকে গাড়িতে সবাই যখন ফিরছি অভীক মাঝপথে এক জায়গায় নেমে চলে গেল ফ্ল্যাশ ড্রাইভটা ক্যুরিয়ার করতে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *