Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দুপুরে বেগমবাজারে || Shamsur Rahman

দুপুরে বেগমবাজারে || Shamsur Rahman

দুপুরের বেগমবাজারের রোগা গলির ভিতর
অত্যন্ত সান্নাটা গোরস্তানে
জংধরা টিনের কৌটার পানি চলকে পড়লো
আমার ঠোকরে, চতুর্দিকে উঁচু নিচু
কবরের ঢেউ। আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি
কার রৌদ্রপায়ী কবরের পাশে? যখন ছিলেন
নিঃশ্বাসের অধিকারী তিনি,
তখন কি লোকে তাকে
জানতো পুরুষ ব’লে? নাকি নারী তিনি? তন্বী কিংবা
বয়সিনী, কী-যে তার পরিচয়, কিছুই না জেনে
তারই কথা ভাবি,
যে-আছে মাটির নিচে তুখোড় মুনাফা-ঝলসিত
কুসদীজীবীর মতো অতিশয় কেজো
কীটের সংসারে স্মৃতিহীন, নাটক-রহিত, একা।
খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে এসেই
কেমন একলা পাখি কোথায় যে উড়ে চলে যায়।

ফুলকাটা পাঞ্জাবিটা ঘামে জবজবে, অজস্র সোনালি সূচ
চলেছে চিমটি কেটে, পায়ে
পুরানো ব্যথাটা
আবার মুখিয়ে ওঠে, আমার আত্মায় ক্রমে জ্বরোভাব ফোটে।
গোরখোদকেরা নির্বিকার
চালাচ্ছে কোদাল তালে তালে,
ঘাসের চাপড়া, তাল তাল মাটি জমে,
নতুন চাটাই, কিছু বাঁশ
অধীর অপেক্ষমান। ‘ঐ যে টগর চারার কাছে পিঠে বড়
ভাইজান আছেন ঘুমিয়ে-
তোমার কি মনে পড়ে, ‘বললেন, ধূসর মেজো ভাই।

আমি কি এখানে এর আগে
এসেছি কখন? না, আমার মনে পড়ে না কিছুই।
ভাইজান সত্যি কি নিদ্রিত
সেখানে গাছের কাছে, যেদিকে আমার মেজো ভাই
তুললেন তর্জনী তাঁর নিশানা নির্দেশকারী সন্তের মতন?
নাকি অন্য কারো কবরকে
করলেন শনাক্ত ঝাঁঝাঁ দুপুরে নিজের
ভাইয়ের কবর বলে? অদূরে নজরে পড়ে সদ্য
চুনকাম-করা কবরের জন্যে বিজলি বাতির কী বিশদ
আয়োজন, বুঝি ভদ্রলোক
অন্ধকার ঘরে শুতে ছিলেন অত্যন্ত অনিচ্ছুক,
খওফের নখ হয়তো তাকে আঁচড়াতো ঘন ঘন।
নকশা-কাটা সিল্কের মতন শরীরের পাখি
আমার অনেক কাছে এসে দুপুরকে চমকানো শিস দিয়ে
জীবনের সৌন্দর্য আবৃত্তি করে গেল।
কোদাল ঝিমায় রোদে, মাটির ডেউয়ের চারপাশে
ঊর্ধ্বারোহী প্রাথী হাত, ঘাড় উচ্চারিত নিরুদ্দেশে
সোপর্দের ভাষা-
নামুক কবরে তাঁর অবিরল রোশনির ঢল।
আবার আমরা নামি পথে; আস্তাবল,
যা বিলীয়মান দ্রুত, কেবলি উগরে দেয় ঝিমানো ঘোড়ার
বিষ্টা আর খড়-বিচালির গন্ধ, চা-খানার বেজায় ইচঁড়েপাকা চুনু,
কানে যার সিগারেট গোঁজা, টুল মোছে,
নয়া ফিল্মি গান গায়, ক্লান্ত চোখে দেখি
মোগল ঘোড়সওয়ার, নায়েবে নাজিম, চমকিলা
চামুটি, লাগাম হাতে জাফরানী রঙের ভেতরে
চলেছেন, বাতাস অলস
আতরের খোশবুতে আর দুলে ওঠে পরীবিবির তাঞ্জাম।

শুধু তাঁকে রেখে এসে, ঔদাস্যে সেলাই করা হুহু
শরীরে রৌদ্রের দাগ এবং আত্মায় জ্বরঠোস নিয়ে আমি
হঠাৎ চমকে উঠি-শ্রাবণের সিয়া আসমান
এসেছে জমিনে নেমে বেগমবাজারে,
অথচ আমার মধ্যে অপরূপ স্থাপত্যের মতো
আলোক বৃক্ষের জাগরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *