৩. অরিন্দম ফিরে এসে
তিন
সুস্হ অরিন্দম ফিরে এসে কাজে যোগ দিলে, সবাই ওকে ঘিরে ধরেছে যখন—
: পাশের খাটালটায় গয়লাগুলো দুধে জল মেশাতো রোজ । আমরা পাগলরা একদিন হইচই করে সেটা বন্ধ করালুম ।
: মানে ? পাগল হোসনি তুই ?
: বাহ ! পাগল আবার হতে যাব কেন ?
: আর এই যে এত কাণ্ড-কারখানা করলেন ?
: কী করব ! ছাড়াতেই পারছিলুম না নিজেকে । ভালোলাগাটাই খারাপ লাগতে আরম্ভ করেছিল ।
: আর মানিব্যাগে ফোটি নিয়ে ঘুরলি ! সবাইকে দেখিয়ে-দেখিয়ে বেড়ালি যে ?
: জানি । প্রেম সম্পর্কে ধারণাটা লটকে গেছে । ওটার দরকার ছিল ।: সকলেরই জীবনে ভুল ভাঙার সুযোগ আসে ।
: মজা তো যথেষ্ট লুটলেন !
: অমন জাঁতিকলে পড়লে বুঝতেন । জীবনটা নষ্ট করে ফেললুম ।
: বিয়ে করে ফ্যাল এবার, বিয়ে করে ফ্যাল ।
: পাগলামির বদনামটা আগে কাটিয়ে নিই ।
: আরে কন্যাপক্ষ শুধু চাকরি আর নুনুর রঙ দেখবে । আর তাছাড়া কাট মারলেই পারতেন । পাগল সাজার দরকার তো ছিল না ।
: ও আপনারা বুঝবেন না । যাকগে, যখন পাগল ছিলুম, তখন দশ টাকার রুপোর কয়েন বেরিয়েছিল, গান্ধির মুখের । আমার জন্যে রেখেছে কি না ?
: পঞ্চানন সিনহার কাছে খোঁজ নিন । রেখেছে নিশ্চই । আপনাকে বাদ দিতে সাহস পাবে না । পাগল হয়েছেন খবর পেয়েও ম্যানেজমেন্ট কাউকে পোস্ট করেনি আপনার জায়গায় । তবে মেড়ো পার্টিদের একেকটা কয়েন পনেরো-কুড়ি টাকায় বেচেছিল পঞ্চানন । কাউন্টারে ও-ই তো ছিল তখন । বাজারে এখন পঁচিশ টাকা রেট যাচ্ছে । কালীপুজো-দেওয়ালিতে পঞ্চাশে উঠবে ।
পঞ্চানন সিনহা ভাগলপুরের । বলে, আরে ভাই, ম্যায় বঙ্গালি হুঁ । কায়স্হ । ঘোষ বোস মিত্রা সে শাদি হোতা হ্যায় হম লোগোঁ কা । বংলা কা চর্চা নহিঁ হ্যায়, ভুল গয়ে । নদিয়া পুরেইলিয়া জলপাইগুররি মেঁ কাফি সগে-সমবন্ধি রহতে হ্যাঁয় ।
কী ভয়াবহ । এভাবে নিশ্চিহ্ণ হওয়া । অতনুর মনে হয়েছে । সুশান্ত বলেছে, তাতে কি ! ভাষা আবার কোনও ব্যাপার নাকি ? কিছু একটা বলতে আর বলে বোঝাতে পারলেই হল ।
অরিন্দম সত্যই পাগল হয়ে গিয়েছিল কি না, কথার মারপ্যাঁচে সে ব্যাপারে সহকর্মীদের মাঝে অবুঝ সন্দেহ চাউর করে দিতে পেরেছে বেশ সহজে । অরিন্দম যখন চিকিৎসার স্মৃতিহীন ঘেরাটোপে, অফিসের কোয়ার্টার রাজেন্দ্রনগরে রেলফাটকের কাছে, বিলির জন্যে তৈরি হয়ে যাওয়ায়, ওর নামে, অনুপস্হিতিতে বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল একটা ফ্ল্যাট । মা আর ছোটো ভাই নতুন কোয়ার্টারে । পুরোনো ভাড়া বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশিনীর মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা আর নেই, কিংবা তার থলথলে খলবলে স্বামীর, যে বাড়তি রোজগারের ধান্দায় অহরহ ট্যুরে ।
পাগল হয়ে অরিন্দম মোটা হয়ে গিয়ে খানিক । ভুঁড়ি এখন বপু । ঘিরে থাকা মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিকে আনাগোনা করিয়ে, পিয়ানোর রিডের ওপর যেমন আঙুল, ডো রে মি ফা, ভাঙা গলায় বলে উঠল অরিন্দম, ‘আচ্ছা, অতনু-সুশান্ত জুটিকে দেখছি না, ওরা আমার জয়েন করার খবর পায়নি বুঝি ?’
শিবু পালিত, মানে আশিয়ানা বিলডিঙের শৈবাল, যে নাটক করে, মানে গ্রুপ থিয়েটার, বিপ্লবী উৎপল দত্তের সঙ্গে রঙ্গিলা উত্তমকুমারের মিশেল দিয়ে জানালো, ‘সুশান্ত গেছে দু-ট্রাক কড়াইশুঁটি আনতে, আর অতনু গেছে রেমিটান্স নিয়ে ।
‘অতনু আর রেমিট্যান্স ?’
রেমিট্যান্স মানে বন্দুকধারী প্যারা মিলিটারি পুলিশ পাহারায় অনেকগুলো কাঠের বাক্সে থাক-থাক টাটকা নোট ট্রেনের ওয়াগনে করে পাততাড়ি । সেগুলো তুলে দেয়া নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ; যে নিয়ে যাচ্ছে যে বুঝে নেবে প্যাকেট আর বাণ্ডিল । যারা নেবে তারা গুণে যাচাই করে নেবে । গোনাগুনি করতে তাদের যতদিন সময় লাগে ততদিন সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকতে হবে । নিয়ে যাবার হরেক হ্যাঙ্গাম । ওয়াগন ব্রেকারের ভয় । লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার সঙ্গে সফরের ভয় । ট্রেন থামলেই গাড়ি থেকে নেমে দেখে নাও সব ঠিকঠাক । তালা টেনে যাচাই করে নাও । ঘুমের দফারফা । বারবার হিসি পাবে । গোনাগুনতিতে দিনের পর দিন কাটাতে হয় অচেনা জায়গায় । থাকার হোটেল নেই অনেক শহরে । মুখে দেয়া যায় না এমন খাবার । মশা । রোগের বালাই । নোংরা জল । লোডশেডিং । ধুলো । লু । বৃষ্টি । একা ।
পুরোনো হিলহিলে নোটের স্যাঁতসেঁতে গুঁড়ো০গুঁড়ো ধুলোয় অতনুর অ্যালার্জি হয়েছিল । চাকরিতে ঢুকেই । চোখের জলে নাকের জলে রুমাল ভিজে, ধুতির খুঁট ভিজে, সহ্যশক্তি না গজানো ওব্দি অ্যালাজেসিক আর অ্যালার্জির বড়ি খেয়ে অর্ধনিমিলিত, ক্যানটিনের বেঞ্চে বা ডিসপেনসারির স্ট্রেচারগাড়িতে চিৎ । বড়ো খাজাঞ্চি, যাঁর টেবিলের বিশাল কাঁচের তলায় ভারতের প্রতিটি তীর্থের দেবী-দেবতার রঙিন-শাদাকালো ছবি, বলেছিলেন, ‘এ চাকরির অনেক হ্যাপা আছে, কিন্তু সয়ে যাবে, এরপর যদি আঁস্তাকুড়ে শোও তাহলেও অসুখে পড়বে না ।’
নামকরা কেরানি বলে দশটা-পাঁচটায় নির্ভুল আটক অরিন্দম । পাগলোত্তর জীবনে একদিন চারটে নাগাদ, যখন ও মনে-মনে একটা খসড়া বাংলা থেকে ইংরেজিতে তর্জমা করছে, ধাড়ি নোট-পরীক্ষক গৃহবধুদের মুখরা দল নানা সুগন্ধের বেড়ায় ঘিরে ধরল ওকে । উমা ভর্মা, মানসী বর্মণ, শ্যামলী কর্মকার, হেমা শ্রীবাস্তব, সরিতা যাদব, আরও কয়েকজন । একজন বলল, ‘আমরা নালিশ জানাতে এসেছি, সাকসেনা সাহেব সবাইকে দেখিয়ে-দেখিয়ে আমাদের কনফিডেনশিয়াল অ্যাপ্রেজাল রিপোর্ট লিখেছেন আর হাসিঠাট্টা করেছেন ।’
‘জানি,’ অরিন্দম মুখ না তুলেই বলল, ‘মানসী বর্মণের পোটেনশিয়ালিটির কলামে লিখেছিলেন “আনপ্রুভড”, কারেক্ট করিয়ে নেয়া হয়েছে ।’
মানসী বর্মণ কাছে ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘বৃন্দাবন পার্কে ছিলেন শুনলুম ।’ মানসী দৃষ্টিকটুভাবে সুশ্রী, আকর্ষণিয়ভাবে উন্নাসিক, ফুলোফুলো ত্বরান্বিত আঙুলে নোট গোনার অকল্পনীয় ব্যুৎপত্তি ।
‘না, লুম্বিনী পার্কে,’ গা বাঁচায় অরিন্দম, মুখ না তুলেই ।
উমা ভর্মা হিন্দিতে বলল, ‘ওঃ, ভাগ্যিস মথুরায় নয় ।’
অরিন্দম চোখাচোখি এড়াতে চাইছিল । কে জানে মৌলিনাথ উসকেছে কি না এদের । এরা ওকে দলবেঁধে হেনস্হা করতে এসেছে । প্রতিবেশিনীর কানাঘুষো দূতী । তার পাগলামির খবরের সঙ্গে মুখরোচক আরও গুজব রটে থাকবে, সত্যিকে ফেনানো অতিকথা । গ্লানিকে পাগলামি দিয়ে সারাবার প্রক্রিয়াকে তাহলে রুদ্ধ করতে চাইছে এরা । একজন মানুষের ভাবনাচিন্তাকে আঘাত করার ঠিক কতটা অধিকার, সামাজিক প্রাণী হিসেবে, আরেকজনের থাকতে পারে ? মানসীর তো বরের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির গুজব । লক্ষ কি সত্যিই অরিন্দম !
‘মথুরার রাজায় গিজগিজ করছে অফিসটা ।’ শ্যামলী কর্মকার, ময়লা, কোঁকড়া চুল, দেখতে দশ-পনেরো দিনের পোয়াতি, মন্তব্য করল । গায়ের রঙ ময়লা নয়, তবু বাবা-মা শ্যামলী নাম রেখেছে বলে হয়তো কৃষ্ণ আর তার লীলার ওপর ওর রাগটা আমার ওপর ঝাড়ল, নিজেকে নিঃশব্দে বলল অরিন্দম।
চলে গেলেন গৃবধুরা, মোজেকজমিনে ময়ূরপঙ্খী নৌকো বেয়ে । শিশির ফোঁটারা বেরিয়েছেন নৈশভ্রমণে । শ্যামলী কর্মকারের দু’কাঁধে আর পিঠে মাংসের আদরনীয় তিরিশোর্ধ পরত জমতে শুরু করেছে, না তাকিয়েও দেখতে পাচ্ছিল অরিন্দম, ফর্সা পিঠে শিরদাঁড়ার দুপাশে জড়ুল আঁকা ডানাছড়ানো নরম মাংসের প্রজাপতি ।
অরিন্দম জানে ও পাগল হয়ে গিয়েছিল । কেন তাও মনে আছে ওর । অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার থেকে জানতে পেরেছে কবে থেকে ছুটিতে ছিল ও । কিন্তু কোন মুহূর্তে পাগল হয়ে গিয়েছিল, মনে নেই, কবে কখন, কোথায় । উন্মাদ হয়ে ওঠার মুহূর্তটা জানতে চায় অরিন্দম, নিজেকে নিজের বাইরে থেকে জানতে চায়, দেখতে চায়, আহ্লাদের অনিকেত মুহূর্তটা, সেই উজ্বল বিস্ফোরণ, বিগ ব্যাং, নীহারিকাপূঞ্জ, অন্য জগতে স্হানান্তরন । হাসপাতালের কাগজে ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপির অঙ্কময় লেখাজোখা । বোবাদের বিনির্মাণ করলে কতরকম গোলমেলে অরিন্দম বেরিয়ে আসবে, যে অরিন্দমদের ও চেনে না । বুড়ো কাউনসেলার সেরে যাবার পর বলেছিলেন, আপনার আত্মবিশ্বাস আপনাকে সারিয়ে তুলেছে । সেটা কোন অরিন্দমের আত্মবিশ্বাস ?
নিকট বন্ধুদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখেনি । জানা ছিল, এই সম্পর্কের উত্তরণ নেই । কিন্তু নরম মাংসের নেশায় একরোখা অন্ধত্ব জাপটে ধরল ওকে । নিজের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ দিয়ে শুরু ।
অফিসের কাচের বাইরে তাকাল অরিন্দম ; এক গূড়দর্শী শঙ্খচিল সাঁতরাচ্ছে আকাশের রোদ্দুর-মাখানো ঢেউয়ে ।
ওদের সংস্হায় প্রত্যেক বছর একজন পাগল হয় । গেল-বার দুবেজি হয়েছিল, তার আগের বছর এম কে ঝা পাগল হয়ে আর ফেরেনি । আসছে বছর কার পালা কে জানে । এর চেয়ে, অসীম পোদ্দার মামুদ জোহের মিলে যে সান্ধ্যদল গড়ে তুলেছে, যাকে সবাই নারী-নারকো গ্যাঙ বা না-না লেচার বলে, তাতে ঢুকলে পাগল হওয়া থেকে রেহাই পেত হয়তো ।
বি সেকশানের নোট পরীক্ষকদের কেউ বড় একটা ঘাঁটায় না । সংস্হা যাদের ঘ্যাঁচড়া বজ্জাত আড়বুঝো বদরাগি ঝগড়ুটে কর্মচারী মনে করে, তাদের পাঠায় ওই সেকশানে । মামুদ জোহরের কাছে জানলায় সানফিল্ম লাগানো ফিকে নীল রঙের ম্যাটাডর ভ্যান, সানফিল্ম লাগানো বেআইনি হওয়া সত্বেও লাগিয়েছে, ড্রাইভারের পেছনে সানমাইকার দেয়াল । পেছনে কি চলছে দেখা যায় না । ড্রাইভার পেছনের ট্র্যাফিক দ্যাখে রিয়ারভিউ আয়নায়, তাই ভাড়া করা ড্রাইভার রাখে না, গ্যাঙের সদস্যরা নিজেরাই চালায় । সানমাইকার দেয়ালের পেছনে, দুদিকের সিট টানলে সোফা-কাম-বেড, মখমালের চাদর দেয়া বিছানা গড়ে ওঠে । মাইক্রোবায়োলজিতে গবেষণা মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে মামুদ জোহের ঢুকেছিল চাকরিতে । নিজের শহর, নিজের প্রাসাদোপম বাড়ি, এখানেই চাকরি, ব্যাস ।
অসীম পোদ্দারের জানলায় পর্দা ঢাকা শাদা ডিজেল অ্যামব্যাসাডর । অ্যামবাসাডর উঠে যাচ্ছে বলে মনখারাপ থাকে । জেনেটিকসে পিএইচডি অসীম পোদ্দার । কেন্দ্র সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগে অধস্তন বৈজ্ঞানিকের চাকরি পেয়েছিল, কিন্তু নোটপরীক্ষকের চেয়ে মাইনে কম বলে যায়নি ; অফিসে, এমনকি চায়েরদোকানে, পেছনের গলিতে তাড়ির আর জুয়ার ঠেক-এ ওর নাম ডকটর ।
অফিসের কাজ শেষ হলে, একটা-দুটোর মধ্যেই হয়ে যায়, পেছনের গলিতে, যেখানে পোড়া নোটের ছাই দিয়ে একটা পোর্টেবল গন্ধমাদন ঢিপি, ওরা গিয়ে দল বেঁধে তাড়ি খায় চায়ের কাপে, সিপ মেরে, তাড়ির ঋতুতে । ভাঙের ঋতু হয়, দিশি মদের, আফিমের, গাঁজার, চরসের, স্ম্যাকের । গাঁজাগুঁড়ো তামাক-চরসে মিশিয়ে আইভরি পাইপে । মেডিকাল কলেজের নাইজেরিয় ছাত্ররা হেরয়িন এল এস ডির ব্যবস্হা করে । ম্যাটাডরে ফার্স্ট এইড বাক্সে অ্যালুমিনিয়াম পাত, চামচ, ডিস্টিলড জল, সুঁই নেবার পিচকিরি, কাঁচি, লাইটার, ছিলিম, টয়লেট পেপার, তুলো । আর আছে বিদেশি-স্বদেশি নিরোধ বা কনডোম, রঙবেরঙ, নানা সুগন্ধের । আছে অকুস্হলকে তুলতুলে করে তোলার মলম । শনিবার-শনিবার হল্লাবোল । সেদিন যে একটারও আগে ছুটি । সেদিন ওদের দলে বেশ কয়েকজন অফিসারও শহরের অন্য কোনো নির্দিষ্ট মোড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে ওদের দলে । দাশগুপ্ত, বোস, আগরওয়াল, রায়চৌধুরী, মুদলিয়ার, খান্না, মুখার্জি ওরা সব । লটারি অনুযায়ী ফি-হপ্তায় দুজন, ট্রেজারার আর ম্যানেজার হয়, যারা গাড়ি চালায়, ছোঁয় না কিছু । সন্ধে নাগাদ কোনও হাফগেরস্হ যুবতীকে এই কড়ারে তোলা হয়, দশ বারোজন তার সঙ্গে রতিভ্রমণ করবে ম্যাটাডরের সোহাগ বিছানায়, আর তারপর তার আসতানায় ছেড়ে দেয়া হবে কাজ শেষে । দুদিন বা তিনদিন একসঙ্গে ছুটি থাকলে ওরা অমন যুবতীকে নিয়ে বাইরে কোথাও চিটফান্ডের লটারি খেলতে যায় । মেয়েটির সঙ্গে লুকোচুরির খেলা । যে জেতে সে মেয়েটিকে আর চিটফাণ্ডের নির্দিষ্ট অংশ পায় ।
এই দলটার সঙ্গে মেশার অসুবিধে, তাদের অনৈতিকতা আর উচ্চশিক্ষার গর্ববোধ ছাড়া, নিজেদের মধ্যে কনভেন্টে পড়া ইংরেজিতে কথা বলে । মৌতাত ছাড়া, কারোর কোনো উচ্চাকাঙ্খা নেই, বা নেই কেরিয়ার সম্পর্কে চিন্তা । যতটুকু আয় তাকে মনে করে যথেষ্ট । ওদের কথা বলার ঝাঁঝ থেকে জানিয়ে দেয় যে কেউ কিছু হয়ে ওঠে না, বুদ্ধিজীবির কাজ আদর্শবাদকে এড়ানো, বেঁচে থাকাটা জ্বরভারে আনন্দ, স্মৃতি জিনিসটা বানানো, বাস্তব বলে আদপে কিছু হয় না বলে কোনো দুশ্চিন্তায় ভোগার দরকার নেই । অসম ধ্যানধারণার কারণে, অনেকে হেঁ-হেঁ হাসতে-হাসতে দ্রুত পাশ কাটায় । বংশরোপণ সিং যাদব ওই ভাবে পাশ কাটাতে গিয়ে থলে ভর্তি অফিস থেকে চুরি করা গোটা দশেক রঙিন পেপারওয়েট নিয়ে ওদের হাতে ধরা পড়েছিল । চাপরাশি থেকে উঠতে-উঠতে অবসরপ্রাপ্তির বছরে অফিসার হয়ে হেনস্হা ।
মামুদ জোহের সব সময় গম্ভীর, চিন্তিত । অন্য মুসলমান কর্মচারী বা অফিরাররাও ওর ধারে কাছে যায় না । কিছুটা কুঁজো আর গাঁট্টাগোঁট্টা, বেশ ফর্সা, কুঁজো হলেও ঢ্যাঙা, নিজের নাক দেখিয়ে বলে এটাই আরবদেশের, বাদবাকি ইনডিয়ান । অসীম পোদ্দারের বাঁ হাতে, এমনকি নাচগান-হুল্লোড় আর যৌন-অভিসারের সময়েও, একটা ডায়েরি, টুকটাক লিখে নিচ্ছে কিছু । দলে আছে বাইশ থেকে চল্লিশ বয়সি । রেগুলার দেবেন্দর, অভিজিৎ, শৈবাল, হরিশ, রবীন, অশোক, নরেন, প্রতুল, অনিমেষ, সুশীল, সুধীর, কমলেশ — বাঙালি বিহারি পাঞ্জাবি ওড়িশি ।
সুশান্ত, সব ব্যাপারে নাক গলানোর সুবাদে, অসীম পোদ্দারকে একবার অনুরোধ করেছিল, গরদানিবাগ হাই স্কুলে পড়া স্হানীয় ইংরেজি এড়িয়ে বাংলাতেই, অ্যামব্যাসাডরটা চালিয়ে দেখবে । চালু কিরতে গিয়ে বোঝে গাড়িটায় ক্লাচ নেই । কমলেশ, অটোমোবিল এনজেনিয়ারিং পড়ে যে ছোকরাটা নোট-পরীক্ষকের চাকরিতে ঢুকেছিল, ক্লচ বাদ দিয়ে দিয়েছে । কত গাড়ি বারিপথ বুদ্ধমার্গ অশোক রাজপথ থেকে দিনদুপুরে হাপিস হয়ে যায় রোজ, ওদেরটা হয়নি । চাকা ব্যাটারি ওয়াইপার ওব্দি চুরি যায়নি । অথচ চুরি হতে পারে না এমন অস্হাবর এমন কিছু পাটনা শহরে নেই, জীবজন্তু এমনকি মানুষও, মাঝপথ থেকে আচমকা উধাও ।
নিসপিসে বাঁ পা দুচারবার নাড়ানাড়ি করে বিস্ময়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে সুশান্ত, ‘হিন্দমোটরে পাঠিয়ে দিন না প্রোজেক্টটা ।’
‘না, অনেকের চাকরি চলে যাবে ; তাছাড়া এর ড্রিং তো অনেককাল আগে এসে গেছে ইনডিয়ায়, অটোমোবিল ইনডাসট্রিতে সম্পূর্ণ রদবদল ঘটে যাবে কয়েকবছরে । তখন আমাদের ইনডিয়ান গাড়ি কমপিট করতে পারবে না , ‘ বলেছিল অসীম পোদ্দার । অসীম এখনও বাংলায় কথা বলে, অথচ ওর জাঠতুতো ভাই তরুণ পোদ্দার, যার বাবা ক্ষেত্রমোহন পোদ্দার ব্রাহ্মস্কুল রামমোহন রায় সেমিনারির প্রধান শিক্ষক ছিলেন, আর পায়জামার ওপর ধুতি পরতেন, ও, তরুণ পোদ্দার বাংলা জানলেও বলে না, বাঙালিদের সঙ্গেও হিন্দিতে কথা বলে । তরুণের বড়দা, কল্যাণ পোদ্দার এখন প্রধান শিক্ষক, নিজেকে বাঙালি পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হয় । ব্রাহ্ম শিক্ষক পাওয়া যায় না বলে উনিই প্রধান শিক্ষক, বংশপরম্পরায় চলবে স্কুল । বাংলা পড়ানো হয় না, কেননা সরকার আর বাংলা টেক্সটবুক ছাপে না ; স্কুলও বাঙালি শিক্ষক পায় না ।
সুশান্তকে কিন্তু মামুদ জোহের সমীহ করে, ট্রাকে করে ভিন্ন রাজ্য থেকে অসময়ের ফল-আনাজ আমদানির খাটুনি-প্রতিভার জন্যে । কেননা প্রায় সবাই মনে করে খাটুনির প্রতিভা একেবারে নেই বাঙালি যুবকদের, ঝুঁকি নেবার, অথচ অনেকেই মাওওয়াদি হবার ঝুঁকি নিয়ে বনপার্টিতে চলে যায় । মামুদ জোহেরের গ্যাঙের অনেকে যেতে চেয়েছে সুশান্ত’র পেছন-পেছন, কিন্তু ওর কাকা বলেছেন ব্যবসাপাতির ঘাঁতঘোঁত সবাইকে জানানো উচিত নয় ।
ননীদার বিয়েতে পৌঁছেছিল মামুদ জোহের অসীম পোদ্দাররা, রাত একটা নাগাদ আকাশের তারা মাথায় করে, টং, ঝিমন্ত বাসরের টনক নড়িয়ে, বেদম বাজনা ম্যাটাডরের মিউজিক সিসটেমে, পরিত্রাহি আশা ভোঁসলে আর ডি বর্মণের সুরে । ওদের গুরুমাতাল শৈবাল পালিত শুধু লিট্টি খেয়ে বলেছিল, ‘চিংড়ি কাটলেট চিকেন টিক্কা চিজ পকোড়া করতে পারতেন, নইলে আর প্রভিডেন্ট ফাণ্ড কেন ?’ কিন্তু ওদের সঙ্গে নকল কোঁকড়াচুল টকটকেঠোঁট চোখেকাজল গালেরুজ হাতেমেহেন্দি তরুণীটি বথুয়া শাক দিয়ে গোগ্রাসে গিলেছিল পুরি, মানে বড়ো মাপের মোটা-মোটা লুচি, নিজের সঙ্গে একটা হোমসার্ভিস প্যাকেটও তৈরি করিয়ে নিয়েছিল ।
ননীদা বললেন, ‘যাক, বিয়েতে এই পূণ্যিটা অন্তত করে নিলুম, কী বল হে মামুদ, জীবনে যে কখনও এমন নেমন্তন্ন খায়নি, তার আশীর্বাদ পেলুম।’ রাজেন্দ্রনগরের কমিউনিটি সেন্টারের সামনের বাড়িটায়, রাস্তার ওপারে, সারা রাতের ভগবতী জাগরণের জগঝম্প চলছিল পুরোদমে । নরক, ব্যাস, রাত দেড়টা-দুটোয় লোডশেডিং গুলজার ।
মামুদের দলের অফিসাররা, জানাজানি এড়াতে যাদের নির্ধারিত জায়গা থেকে তুলে নেয়া হয়, ননীদার বিয়েতে আলাদা এসেছিল একে-একে । ওদের লাম্পট্যের উল্লেখ করে প্রচুর উড়ো অভিযোগ এসেছে বেনামে । অফিস নির্ণয় নিয়েছে, সেরকমই কেস তৈরি করেছিল অরিন্দম, অফিসের বাইরে যে যা করে তা তার নিজস্ব ব্যাপার, সংস্হার কোনও দায়দায়িত্ব নেই । ‘ভাগ্যিস আপনি অবৈধ সম্পর্ক পাতিয়েছিলেন, বাঁচাবার পথ কেটে বের করতে পারলেন,’ ওর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলেছিল মুদালিয়ার ।
রমাবৌদি সবচেয়ে আগে ধরে ফেলেছিলেন এই নানা গ্যাঙের কাজকারবার, উপস্হিতি । ‘কাউকে শিগগির পাঠিয়ে দ্যাখো তো ও-ফুটে গেটের সামনে লাল শাড়ি-পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি না’, টেলিফোনে বলেছিলেন রাঘবকে । রাঘব তখন দুপুরের ভোজন সেরে টুথপিক দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছাগল বের করছিল, দৌড় দিলে দোতলার ওর কোয়ার্টার সংলগ্ন বারান্দায় । ‘হ্যাঁ, রয়েছে একজন কারোর অপেক্ষায়, চোখে কালো চশমা । কাঁচ তোলা সাদা অ্যামবাসাডর তুলে নিয়েছিল সুবেশা তন্বীকে, পেছনে ফলো করছে একটা ম্যাটাডর ভ্যান ।’
‘দাশগুপ্ত সায়েবের কাছে কলগার্লের ডায়রেকটরি আছে গো,’ জানিয়েছিল রমা । শুনে রাঘবের মদে চিকনগাল বিখ্যাত ঘিঘিক-ঘিঘিক হাসি, হেঁচকিকে হাসিতে রূপান্তরিত করে ফেলেছে অভ্যাসবশত ।
দাশগুপ্ত যখন লাঞ্চ করতে লাউঞ্জে, ব্রিফকেসে পাওয়া গেল সুদৃশ্য ছোট্ট ডাইরেকটরি, সিঙ্গাপুরে গ্লসি কাগজে ছাপানো । টালিফোন নাম্বার, চেহারা, উচ্চতা, বয়স, কতোগুলো ভাষা জানে, সাংকেতিক না, কয়েকজনের খোলাবুক ফোটো । প্রত্যেকের দরদাম ডলার আর দিনার-দিরহামে । এদেশের সেরা খরিদনারীদের তালিকা । কিছু টেলিফোন নম্বর নিজেই লিখে রেখেছে দাশগুপ্ত । টিক দেয়া কয়েকটায় । প্রথম পৃষ্ঠায়, ‘উইথ গ্রেট অ্যাডমিরেশান ফ্রম এস পি মুখার্জি,’ মুক্তোর মতন ।
অরিন্দমের সে-সময়ের মণিব দাশগুপ্ত, প্রশাসনের অধিকর্তা । ব্রিফকেসে নিখিল ভারত কলগার্ল ডাইরেকটরি আবিষ্কার শান্তি দিয়েছিল অরিন্দমকে, বিপথগমনের সাহস যুগিয়েছিল, কেননা ও তখন বিবাহিতা অভিজ্ঞ প্রতিবেশিনীর দুই থলথলে শ্যামল উরুর খিলে আটক । অন্যের অনুপস্হতিকে পুষিয়ে দিচ্ছে নিজের নির্ভেজাল কৌমার্য দিয়ে ।
তার দিনকতক পরেই নিজের ঘোরানো চেয়ারে পাক খেয়ে হৃদরোগে কার্পেটে ঠিকরে পড়ে যখন দাশগুপ্ত মৃত্যুমুখী, অরিন্দমের দুহাতের চেটোয় হিম জমে উঠছিল ফোঁটায়-ফোঁটায়, ঘামের সন্দিহান বিন্দু বিনবিনিয়ে উঠেছে কপালে । মামুদ জোহের কাঁদতে-কাঁদতে না-না গ্যাঙের সহমর্মীদের নিয়ে অকালবৃদ্ধের লাশ গাড়িতে তুলে ছুটেছিল কুরজি মিশনারি হাসপাতালে ।
শ্যামলী কর্মকার যখন শ্মশান অভিমুখী ফুলে ঢাকা দাশগুপ্তর শবের কপালে হাত বুলিয়ে বলেছিল, ‘যৌনতা বাদ দিলে লম্পটদের চরিত্র আদারওয়াইজ ভালো হয়,’ তখন অরিন্দম আচমকা, ‘কী বলছেন কী আপনি ? দাশগুপ্ত সায়েব আর লম্পট ! দাম না দিয়ে কোনও সেবা কারোর থেকে নিতেন না ।’
অফিসের গৃহবধু কর্মীরা থ, যেন অরিন্দমেরও যোনি ছিল কখনও, কোনও বয়সে ।
দাশগুপ্তের মৃত্যুর পর, অফিস যখন অফিসের মতন নির্লিপ্ত নৈর্বক্তিকে ফিরেছে, উকিল ভৈরোঁনারায়ণ শুক্লা স্টাফ সেকশানে ঢুকে জানিয়ে গেল, দাশগুপ্ত নিজের সম্পত্তি দিয়ে গেছে সান্ধ্যদলের পাঁচজনকে, স্হাবর সম্পত্তিও বেচে তাদের মধ্যে টাকা ভাগ করে দেয়া হবে ।
তেরো দিনের মাথায় রাজেন্দ্রনগরের কমিউনিটি হলে শ্রাদ্ধ-উৎসব । উৎসবের কাণ্ডারী না-না গ্যাঙের সদস্যরা । অরিন্দম শ্রাদ্ধে গিয়ে দ্যাখে ও-ই একলা শুধু ধুতি পাঞ্জাবি পরে বাঙালি সেজে পৌঁছেছে । এতদিন কাছাকাছি থেকেও নিজের নিকট ওপরঅলাকে বুঝতে পারেনি, মিশতে পারেনি দাশগুপ্তর কমবয়সী সঙ্গীদের সাথে । চরিত্র জুড়ে তক্কে-তক্কে থাকার সতর্কতা অরিন্দমকে সব ব্যাপারেই উটকো করে ফেলেছিল ।
সবাইকে অবাক করে কিন্তু ভিড়ে গেল, এতদিনকার চর্চিত দূরত্ব মুছে, অতনু ।
ঘরকুনো মনমরা নিঃসঙ্গবিলাসী গররাজি অতনু বাধ্য হয়েছিল টাকা ঠাসা কাঠের বাক্সগুলো নিয়ে অনেকদূরে যেতে, কারণ এবার আর তার বদলে কেউ রাজি হয়নি । এর আগে এড়িয়ে যেতে পেরেছে প্রত্যেকবার । ট্যুরের টিএ-ডিএর লোভে চলে গেছে ওর বদলে আরেকজন । প্রথমে ভেবেছিল লম্বা ছুটি মেরে ডুব দেবে দায়িত্ব থেকে । অবাক হয়ে গেল নিজের মধ্যেই ইচ্ছেটা আবিষ্কার করে । অনিচ্ছার মধ্যে বোধহয় পরাজয়বোধের ঘুণপোকা পাক খাচ্ছিল এতকাল । তাছাড়া শরীরের কষ্টবোধকে মনে হতো সবচেয়ে বড়ো শত্রু । রোপনি আর কাটাই ঋতুতে বেশির ভাগ বিহারি কর্মচারী গ্রামে যায় ; তাই অতনুর বদলে এবার যাবে না কেউ ।
যাদের জমিজমা নেই, ব্রাহ্মণ কায়স্হ দলিত-মুসলমান বা অবিহারি, তারা বললে, এবার নিজের পায়ে দাঁড়াও ; তোমার হয়ে আমরা আর কতো সেইব ! গুলিগোলা খেতে আমরা যাচ্ছি না ।
: ওখানের লোকেরা কুকুর-বেরালের মাংস খায় ।
: সবরকম পাখি খায়, কাকও, তারিয়ে ।
: সাপখোপ খায় ।
: প্রকৃতি কিন্তু অপূর্ব ।
: মেয়েরা অপূর্ব সুন্দরী । টকটকে রঙ । দেখে মনে হবে আনটাচড ।
: পুরুষগুলো কিন্তু অফিসেও মাল টেনে ভোম হয়ে থাকে ।
: নোট গুণে দেখে-শুনে নাবার জন্যে রোজ হাতজোড় করতে হবে তোকে । বিরক্ত হয়ে যাবি । এক ঘণ্টায় যা গোনা যায় তা গুনতে দিন কাবার হয়ে যাবে।
: ঘোরাঘুরিরও তেমন স্কোপ নেই ।
: কদ্দিন যে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে কে জানে !
: একদম টাইমপাস হয় না ; তার ওপর সন্ধে হয় তাড়াতাড়ি, দুটো বাজতেই বিকেল ।
: মালটানা পাতাফোঁকার ওব্বেস থাকলে তেমন অসুবিধে হতো না ।
: সাবধানে মেলামেশা করবেন । ওদিকে খুব এডস-ফেডস হয়, সেদিন দেখাচ্ছিল দূরদর্শনে । ধুতিটা পালটে এবার ফেডেড জিনস ধরুন । কাপড়-ফাপড় কাচাকাচির অনেক ঝুঠঝামেলা ।
: গরম কাপড় নিয়ো সঙ্গে । শুধু আলোয়ানে কুলোবে না ।
: থাকার জায়গাও পাওয়া যায় না সহজে । যাও বা দুচারটে হোটেল আছে বা গেস্ট হাউস, সরকারি অফিসারদের কব্জায় ।
: আরে অফিসারগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতন শহরে ফেরত যায়, দু-তিনটে বছর কোনও রকমে কাটিয়ে । বাড়তি মাইনে, বাড়তি এল টি সি, তবু কি নাকে কান্না ।
: খোঁজাখুঁজি করলে দু’তিনঘর বাঙালি পেয়ে যাবেন । বাঙালি কোথায় নেই !
বেচারা । অতনুর সবই জানা । অফিসের সকলেই জানে এসব । উৎসাহ দেবার বদলে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে । কারণ হ্যাঙ্গাম পোয়াতে পারে না বলে, কাছাকাছি শহরেও ক্যাশ রেমিট্যান্স নিয়ে যাবার কাজ এড়িয়ে গেছে এর আগে । সবাই তা জানে । এখন তিরিশ-চল্লিশ বাকসো পাঁচশ একশ পঞ্চাশ কুড়ি আর দশ টাকার নোট পুলিশ পাহারায় ট্রেনে, তারপর ভ্যানে, ইনার লাইন পারমিটের ভ্যানতারা, স্হানীয় পুলিশকে জানানো, ওফ কি ঝকমারির চাকরি । কিছু অঘটন হলে, যদি বেঁচে থাকে, অতনুকে নিয়ে টানাটানি । গুলি খেয়ে পটল তুললে তো কথাই নেই । অফিস বীমা করিয়েই খালাস ।
মা-কে একলাই চালাতে হবে । সুশান্তকে বলে যাবে বাজার-টাজার করে দিতে । ও বাইরে গেলে মুশকিল ।
সকালেই ভাগলপুর থেকে ফিরেছে সুশান্ত । ওর বড়দা, বড়জ্যাঠামশায়ের ছেলে, যা ডাক্তারের ক্লিনিকে কাজ করে, অনেককাল কমপাউণ্ডার, সেই সত্যেন বোসরায়ের সতেরো বছরের মেয়ে পাপড়িকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে গুণ্ডারা ।
হিন্দিতে লেখা স্টেটমেন্ট, এফ আই আর-এর জেরক্স অতনুকে দিয়েছিল সুশান্ত ।
“আমি ডক্টর সত্যেন্দ্রমোহন বোসরায়ের স্ত্রী অর্চনা বোসরায় সাকিন বড় পোস্টাপিসের কাছে, কপতোয়ালি থানা, জেলা ভাগলপুর । আজ সতেরো ডিসেম্বর দুপুর একটায় ভাগলপু মেডিকাল কলেজ হাসপাতালস্হিত পুলিশ শিবিরের জমাদারের উপস্হিতিতে মেডিকাল কলেজের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে বয়ান দিচ্ছি যে দুপুর বারোটা নাগাদ যখন আমি পুজোর ঘরে ছিলুম, হঠাৎ আমার মেয়ে পাপড়ির মা-মা চিৎকার শুনতে পাই । চিৎকার শুনে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি চার-পাঁচজন জোয়ান ছেলে আমার মেয়েকে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে চাইছে । তাদের মধ্যে জিন্দো এলাকার সাবোর থানা-নিবাসী রামদাস মণ্ডলের ছেলে প্রবীণ সিংহকে চিনতে পারি । অন্য আরেকটা ছেলেকেও চিনি যে ডাক্তার আর এন ঝার স্ত্রীর সঙ্গে দিনকুড়ি আগে এসে প্রবীণের সঙ্গে পাপড়ির বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল । ওই প্রস্তাব আমি সঙ্গে-সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলুম । আমার মেয়েকে ধরে টানাটানি রুখতে যেই আমি ওদের মধ্যে গিয়ে পড়ি, তক্ষুনি নীল রঙের জ্যাকেট পারা বেঁটে মতন এক ছোকরা আমার দিকে পিস্তল তাক করে । ভয়ে আমি যেই পুজোর ঘরে ঢুকেছি, মেয়ের বাঁচাও-বাঁচাও চিৎকার শুনে তক্ষুনি বাইরে এসে দেখি, প্রবীণ এক হাতে আমার মেয়ের চুলের মুঠে আর অন্য হাতে পিস্তল নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে । আমাকে দেখে পাপড়ি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই, প্রবীণ চে!চিয়ে উঠল, ‘প্রদীপ ঝা, এর মুখ বন্ধন করে দাও ।’ রোগা ফর্সা ছেলেটা আমার মুখে লিউকোপ্লাস্ট এঁতে দিল । তারপর প্রবীণ বলল, ‘এই সুরেশ বুধিয়া, দেখছিস কি, তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নিয়ে চল ।’ যে ছেলেটা পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সে এই ফাঁকে পিস্তলটা দিয়ে বেশ জোরে আমার মাথায় মারে, আর হিঁচড়ে নিয়ে যায় আমার মেয়েকে । আমি আবার বাধা দেবার চেষ্টা করলে প্রবীণ গুলি চালায় । রাস্তার সিঁড়িতেও আটকাতে গেলুম তো সেখানে দুটো লোক দাঁড়িয়ে ছিল, দেখলে চিনতে পারব, কোনও ভারি জিনিস দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিলে । এর মধ্যে আমার দেওর আর ওর স্ত্রী এসে পড়ে ওদের আটকাতে গেলে প্রবীণ আবার গুলি চালায় । আমরা চেঁচাতে-চেঁচাতে ওদের পেছন-পেছন গেট পর্যন্ত পৌঁছলে, ওরা একটা শাদা মারুতি গাড়িতে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায় । গাড়ির নম্বর ডি আই ডি ২৮৯৬, আর গাড়িটার কাছে ২২২৩ নম্বরের আরেকটা গাড়ি ছিল । ভেতরে তিন-চারজন, সেটাও মারুতির সঙ্গে পালায় । গাড়ি দুটো বিহার হোটেলের দিকে চলে গেল । আমি আমার ছ’বছরের মেয়ে অর্পিতার সঙ্গে রিকশয় চেপে প্যাটেলবাবু রোডে আমার স্বামীর ক্লিনিকে যাই, আর ঘটনা জানাই । তারপর আমার স্বামী কমপাউণ্ডার শচীন ঘোষকে নিয়ে ভাগলপুর মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে আসি । আমি নিশ্চিত যে প্রবীণ সিংহ, প্রদীপ ঝা, সুরেশ বুধিয়া আর অন্য ছ;সাতজন ষড় করে আর পিস্তল চালিয়ে আমার মেয়ে পাপড়িকে অপহরণ করেছে ।”
পড়ার পর, অতনু জোরে বলে ফেলেছিল, ‘এবার কী হবে তাহলে ?’ সুশান্তর জ্যাঠামশায় নামছিলেন দোতলা থেকে, বললেন, ‘হবে আবার কী ! মারুতি গাড়িটা মুখ্যমন্ত্রীর শালা বাচ্চা ঝা’র । তারপর একটু থেমে, ‘এদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে হবে ।’
সুশান্তকে এই প্রথম, এত বছরের পরিচয়ের পর, গম্ভীর আর চিন্তিত দেখে, অতনু বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল ।
সুশান্তর বাড়ি থেকে একটা ব্লোপ্লাস্ট সুটকেস, কানে ঠুলি দেবার অডিও ডিভাইস, ওর নিজে ট্যুরে যাবার পাতলা বিছানা, ফোলানো বালিশ নিয়েছে, আর সুশান্তর মেজদার একটা ফুলপ্যান্ট জ্যাকেট, যদি দরকারে পড়ে, তাই । যেখানে যাচ্ছে সেখানে জিনসের জামা-কাপড় কর্ডুরয় জুতো বিদেশি অনেক জিনিস পাওয়া যায়, সুশান্ত জানিয়েছে । সস্তায় । সুশান্তর মাধ্যমে, মানসী বর্মণ দিয়েছে ফ্রানসের ইউ ডি কোলোন আর মাস্ক পারফিউম আনতে । আলু ছেঁচকি রুটি আর স্কুলের সময়ের রঙিন ওয়াটার বটল দিয়েছেন মা । উনি ততো চিন্তিত নন কেননা বাবা প্রায়ই যেতেন অমন বাইরে ট্যুরে, অফিসের কাজে । মায়ের সঙ্গে কেমন যেন দূরত্ব গড়ে উঠেছে ক্রমশ, খুব কম কথা হয় । অতনু নিজে ছাড়া কেউই ওর প্রথম ট্যুর নিয়র চিন্তিত নয় । চিন্তায় পাকিয়ে উঠেছে ওর দুশ্চিন্তা ।
কিসের দুশ্চিন্তা, নিজেই ঠাহর করে উঠতে পারছিল না । পেটের মধ্যে পাক খাচ্ছে পিচ্ছিল পাঁকালের দল ।
অতনুর ঊর্ধতন অফিসার, যার এসব কাজের দায়, এসেছিলেন স্টেশানে, লোডিং ঠিকমতো হল কিনা যাচাই করতে, ওয়াগন বন্ধ হবার পর তালাগুলো নাড়িয়ে দেখলেন অনেকবার, সিল করে দিলেন সবকটা তালা অফিসের সিলমোহর মেরে । সুশান্তও এসেছিল, বলল, ‘পাপড়িকে জোর করে বিয়ে করেছে প্রবীণ, কেস দায়ের হয়েছে, কিন্তু পাপড়িকে ওর বাবা-মা ফেরত নিতে চাননি, বেশ গণ্ডোগোল আরম্ভ হয়েছে ।’ আরও থমথমে হয়ে উঠল অতনু, বিমর্ষ, আক্রান্ত, নিঃসঙ্গ ।
ট্রেন ছাড়তে, হাত নাড়িয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাবার মাঝে, অতনুর মনে পড়ে গেল, আচমকা, চিরুনি টুথব্রাশ পেস্ট সাবান দাড়ি কামাবার সরঞ্জাম নিতে ভুলে গেছে ও ।
ট্রেন থামলেই, প্ল্যাটফর্মে নেমে, ওয়াগানটার দিকে খেয়াল রাখছিল অতনু । বারবার ওর ওই প্রকাশ্য উদ্বেগে বিরক্ত প্যারা মিলিটারির সঙ্গী হেড কন্সটেবল জানালো, অত চিন্তার কিছু নেই, অমন ঢের ক্যাশ বাকসো সঙ্গে নিয়ে গেছে ওরা, ডাকাতরা এ-মাল ছুঁতে ভয় পায়, আর এই রুটে মাওওয়াদি পড়ে না ; মাওওয়াদিরাও এই ওঘান ভাঙতে চায় না, নতুন নোটের নম্বরের ট্রেল অনুসরণ করে প্রশাসন ওদের ধরে ফেলতে পারে ।
ঠিক আছে, যা হবার হবে, দেখা যাবে, ভেবে, রুটি আলু ছেঁচকি খেয়ে, বিছানা পেতে শুয়ে পড়ল অতনু । স্বপ্ন দেখল, বাবা পায়ে হেঁটে ট্রেকিং করে, মিউলের পিঠে দু’পাশে টাকার বাকসো ঝুলিয়ে, সঙ্গে লাল মুরেঠা-মাথা বন্দুকধারী পুলিশ, ছ’টা বাদামি কালো মিউলের পাশে-পাশে মালবাহকদের পিঠে সুটকেস বেডিং, যাচ্ছেন হিমালয়ের কোনো ব্যস্ত গঞ্জের কারেন্সি চেষ্টে । হনুমান টুপি, মাফলার, দস্তানা, বালাপোষের কালো কোট । দূরের অস্বচ্ছ হিমবাহের উড়ন্ত শ্বাস খেলে বেড়াচ্ছে সিঁড়ি-ভাঙা সবুজ ধানখেতের ওপর । পায়ের কাছে হলুদ প্রজাপতির চনমনে দল, এই শীতেও, বসন্ত ঋতুকে ডানায় করে নিয়ে চলেছে বাবার জন্য । চড়াই থেকে নেমে ভাঙছেন উৎরাই । সাদা-বেগুনি ঘাসফুলের ছিটে । গলায় ঘণ্টি-বাঁধা উদাসীন গাইগোরু মুখ তুলে আগন্তুকদের এক পলক দেখে, জাবর কাটায় মন দ্যায় ।
ঘুম ভাঙল সেপাই নুরুদ্দিন মণ্ডলের দাড়ি-ঝোলানো ডাকাডাকিতে । ঘুম ভাঙতেই আশঙ্কিত, ভাবল বুঝি গোলমাল, ছিটকে উঠে বসল । না, সকাল । টুথব্রাশ পেস্ট আনেনি শুনে নিমদাঁতন দিয়ে গেল আর দাঁতন হয়ে গেলে গরম চপ আর চা । সুশান্তর উপদেশ অনুযায়ী সেপাইগুলোকে গুড হিউমারে রাখার জন্য এসব ভদ্রতা অতনুরই করার কথা । কিনউ অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে উঠতে পারছিল না । চা-চপ খেয়ে নিল গোবেচারা নৈঃশব্দে, আলগা চটি বুড়ো আঙুলে ঝুলিয়ে । গন্তব্যে না-পৌঁছানো ওব্দি, ওখানে সরঞ্জাম কেনার পরই দাড়ি কামাবে ।
নুরুদ্দিন আবার খোঁজ করতে এলে, ‘আমি ঠিক আছে, অত ভাবছেন কেন—,’ অতনু বলল ।
‘না, মানে সাহাব বলেছেন আপনি কখনও যাননি রেমিট্যান্স নিয়ে, তাই ।’
‘আরে ঠিক আছে, কেন কষ্ট করছেন মিছিমিছি’— কে এদের এসব বলেছে কে জানে ! অযথা অপদস্হ করা । সবাইকে সব কথা কি না বললেই নয় । স্টেশানে এসেছিলেন শ্রীনিবাসন, ওঁরই কীর্তি, নির্ঘাৎ । ছি ছি ।
পরের স্টেশানে নুরুদ্দিন হিন্দি খবরের কাগজ দিয়ে গেল ।
‘আপনি কি পুলিশে ? একজন মোটামতন বয়স্ক সহযাত্রী, উসখুস বাদ দিয়ে জানতে চায় সরাসরি ।
‘না’ । নোট পরীক্ষক বললে বুঝতে পারবে না আঁচ করে উত্তর দিল অতনু ।
‘ও । সি আই ডি ? সি বি আই ?’
চুপ মেরে থাকাটা বরং ভালো । আর জবাব দিল না অতনু । আবার জেরা আরম্ভ হতে পারে আঁচ করে ওপরে নিজের বার্থে উঠে গেল । সহযাত্রীদের মধ্যে ইন্দিরের খুন, অপারেশান ব্লু স্টার, বোফোর্স, নাগমণির স্ত্রী হত্যা, নির্মল মাহাতো হত্যা, বৈশালীতে মহোবিয়া খুন, জগন্নাথ মিশ্রর বলুয়া গ্রামের কাছে কমরেড রাজকিশোর ঝার হত্যা, বেগুসরায়ে ভাজপা, মাকপা, ইনকা নেতাদের বেরহম পিটুনি, জয়প্রকাশের চ্যালা লালু যাদব নীতিশকুমারদের জাতপাত রাজনীতি, বিধান পরিষদের উপসভাপতি রাজেশ্বরী দাশের দত্তকপুত্রী শ্বতনিশা ওরফে ববিকে নিয়ে মন্ত্রী বিধায়ক আর তাদের জোয়ান ছেলেদের বেলেল্লাপনা, দলেলচৌক বধৌরায় মুখ্যমন্ত্রী বিন্দেশ্বরী দুবের হাত, জয়প্রকাশ নারায়ণের সচিব আব্রহাম কী ভাবে শোভা চক্রবর্তীকে ঠকিয়েছে, ধানবাদের মাফিয়া মকদ্দমায় সূর্যদেব সিং সত্যদেব সিং শংকরদয়াল সিং সকলদেও সিং রঘুনাথ সিং কেমন হেসেখেলে ছাড়া পেয়ে গেছে, আর সমস্ত অপদার্থতার কারণ পুলিশ সি বি আই সি আইডির অফিসাররা, এসব গল্প চলে অতনুকে উদ্দেশ্য করে ।
অতনু খবরের কাগজ দিয়ে মুখ ঢেকে নিল নিজের বার্থে শুয়ে । কাগজে লিখেছে, প্রবীণ সিংকে ১০৭, ১৪৮, ১৪৯, ৪৫২, ৩৬৭, ৩৪১, ৩৪২ দণ্ড সংহিতার ধারায় আর অস্ত্র আইনের ২৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে । প্রশাসন প্রবীণের আস্তানার খবর পেলেও পুলিশ সে রাতে তাকে বারাহাটে গ্রেপ্তার করতে যায়নি। বারাহাটে ওরা বাহুবলী নেতা ওংকার রামের বাড়িতে উঠেছিল । সেখানেই প্রথমে ধর্ষণ, তারপর বিয়ে ।
অতনুর আবার মনে হল, ‘এবার কী হবে ?’ প্রত্যেকে, সবাই, গোটা রাজ্য উচ্ছন্নে যাবার আর কোনও নজির নেই বোধহয় ।
হাতিদহের পোলটা দেখা হল না । খাগাড়িয়া কাটিহার নিউ জলপাইগুড়ি পেরিয়ে গেছে । বিহার থেকে পশ্চিমবাংলায় ঢোকার নিসর্গ পরিবর্তনের মধ্যে শিহরণ বোধ করছিল অতনু ; পরিচিত স্বপ্নের চলচ্ছবির মধ্যে ছুটছিল ট্রেন, বাতাসের গন্ধেও পরিবর্তন ঘটে গেছে যেন ।
গৌহাটিতে ওয়াগন থেকে প্যারা মিলিটারি পাহারায় মাল গুনে-গুনে নামিয়ে তোলা হল অন্য ওয়াগনে । সারারাত স্টেশানে, মশা, কাঁধ ব্যথা, ঘুম নেই, । সকাল দশটায় ইনার লাইন পারমিট সংগ্রহ । শিলচর । বন্ধ কালো ভ্যান । সামনে জিপ পেছনে জিপ । উবড়ো খাবড়া চড়াই । অপ্রতিদ্বন্দ্বী নিসর্গের নয়নাভিরাম নষ্ট হয়ে যায় শরীরের সহ্যশক্তির অসহায় পরাজয়ে । দুর্গম প্রকৃতি আর অনভিপ্রেত ভয়ে বিরক্ত হয় অতনু, ঘুমিয়ে পড়ে।