Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জোজো অদৃশ্য || Sunil Gangopadhyay » Page 10

জোজো অদৃশ্য || Sunil Gangopadhyay

আলখাল্লা পরা লোকটি এবারে বলল, ব্রিং দ্যাট বয়, ছেলেটিকে আমার নিকটে আনো?

কাকাবাবুকে ওইভাবে অজ্ঞান করে নিয়ে যেতে দেখে সন্তু দুবার ফুঁপিয়ে উঠেছিল, তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিল। কাকাবাবু একদিন বলেছিলেন, সব মানুষকেই একদিন না একদিন মরতে হয়। মানুষ কতরকম ভাবে মরে। কিন্তু মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আত্মসম্মান বজায় রেখে, মাথা উঁচু করে থাকতে হয়। মৃত্যুর কাছে হার মানতে নেই।

দুটি লোক সন্তুকে সেই আলখাল্লাধারীর সামনে দাঁড় করাতেই সন্তু চোখ বুজে ফেলল।

লোকটি জিজ্ঞেস করল, হোয়াটস ইয়োর নেম? নাম কী আছে?

সন্তু বলল, সুনন্দ রায়চৌধুরী।

অত বড় নাম দরকার নেই। নিক নেম বলো। ছোট নাম!

সন্তু।

গুড। সন্টু? বেশ নাম আছে। তুমি চক্ষু ক্লোজ করে আছ কেন?

আমার ইচ্ছে হয়েছে।

ওন ইয়োর আইস। মাই অর্ডার। চক্ষু খোলো!

আমি কারুর হুকুমে চোখ খুলি না, চোখ বন্ধ করি না।

দুপাশের লোক দুটি দু দিক থেকে ধাঁই ধাঁই করে সন্তুর দু গালে চড় কষাল। সন্তু একটা শব্দও করল না। চোখ বোজাই রইল।

আলখাল্লাধারী হাততালি দিয়ে উঠল।

একজন মুখোশধারী জিজ্ঞেস করল, মাস্টার, একটা লোহা গরম করে আনব? চোখের সামনে ধরলে বাপ বাপ বলে চোখ খুলবে।

মাস্টার বলল, না। ব্রেভ বয়! এরকম ছেলেই আমার চাই। ওর চোখ নষ্ট করা চলবে না। পরে ঠিক চোখ খুলবে, হি উইল ওবে মি, আমার সব কথা শুনবে। টেক হিম আপস্টেয়ার্স।

লোক দুটো সন্তুকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে নিয়ে চলল। দোতলা, তিনতলা পেরিয়ে চারতলার একটা ঘরে ওকে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল বাইরে থেকে।

সন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঘরটা পরীক্ষা করে দেখল। সম্পূর্ণ ফাঁকা ঘর, কোনও কিছু নেই। দেওয়ালের রং সাদা। দুটো বড় বড় জানলা, ভেতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া। একটা জানলার ছিটকিনি খুলে কাঠের পাল্লাটা ঠেলতেই সেটা সম্পূর্ণ খুলে গেল, জানলায় কোনও লোহার শিক বা গ্রিল নেই!

ঝড়বৃষ্টির সময় মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জন্য এই বাড়ি তৈরি হয়েছে। এখানে কেউ সবসময় থাকে না, চোর-ডাকাতের কথাও চিন্তা করা হয়নি, তাই জানলায় গ্রিল বা শিক লাগায়নি। এরকম ঘরে সন্তুকে আটকে রেখে লাভ কী? সে তো জানলা দিয়েই বেরিয়ে যেতে পারে।

সন্তু মাথা বাড়িয়ে নীচের দিকে তাকাল। চারতলা, এখান থেকে লাফালে হাড়গোড় টুকরো-টুকরো হয়ে যাবে। বাইরের দেওয়ালে পা রাখার কোনও জায়গা নেই। কাছাকাছি কোনও জলের পাইপও চোখে পড়ল না।

সন্তু আরও অনেকটা ঝুঁকে ওপরে ছাদের দিকটা দেখে নিল। তারপর জানলাটা বন্ধ করে দিয়ে বসে রইল লক্ষী ছেলে হয়ে।

ঘণ্টাখানেক বাদে দরজা খুলে একজন একটা প্লেটে তিনখানা পরোটা আর আলুর দম দিয়ে গেল। সঙ্গে-সঙ্গে খেতে শুরু করে দিল সন্তু। হাতের সামনে খাবার পেলে সে অবহেলা করে না। এর পর আবার কখন খাবার জুটবে কি জুটবে না, তার ঠিক নেই।

খাবার দিয়েছে, কিন্তু জল দিল না? পরোটা খেলেই জল তেষ্টা পায়। সন্তু ভাবল, একজন কেউ নিশ্চয়ই প্লেটটা ফেরত নিতে আসবে, তখন তার কাছে জল চাইবে। হয়তো দিতে ভুলে গেছে। কিন্তু কেউ আর এল না।

ক্রমে রাত বাড়তে লাগল। মাঝে-মাঝে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, কিছু লোক চলে যাচ্ছে এ-ঘরের পাশ দিয়ে। এ-ঘরে বিছানা নেই, একটা শতরঞ্চিবা মাদুর পর্যন্ত নেই, ওরা কি ভেবেছে, সন্তু মেঝেতে শুয়ে ঘুমোবে? দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে রইল সন্তু।

একসময় সব শব্দ থেমে গেল। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। তবু আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সন্তু। তারপর উঠে একটা জানলার পাল্লা খুলে দেখল। তারপর সেই জানলার ওপর উঠে দাঁড়িয়ে শরীরটা বার করে দিল বাইরে। নীচের দিকে নামবার উপায় নেই। কিন্তু খানিকটা উঁচুতে ছাদের কার্নিস। হাত তুলে ছোঁয়া যায়। সেটা ধরে ঝুলতে ঝুলতে ওপরে ওঠা যাবে কী করে? সে-চিন্তা না করে সন্তু দু হাতে ছাদের কার্নিস ধরে ঝুলে পড়ল। হাত একটু আলগা হলেই সোজা নীচে পড়ে যাবে। শরীরটাকে দোলাতে-দোলাতে একবার উলটো সামার সল্ট দিয়ে সন্তু উঠে পড়ল কার্নিসের ওপর। তার শরীরটা কাঁপছে। একচুল এদিক-ওদিক হলে একেবারে আছড়ে পড়ত নীচে। আবার তার মুক্তির আনন্দও হচ্ছে।

ছাদটা বিরাট, ফুটবল খেলার মাঠের মতন। আকাশ অন্ধকার বলে সমুদ্রের কিছুই দেখা যায় না। খানিকটা দূরে সমুদ্রের ওপর একটা আলো জ্বলছে। অস্পষ্টভাবে মনে হল, ওখানে একটা লঞ্চ বা স্টিমার দাঁড়িয়ে আছে। ওটা কাদের? এদেরই নাকি? কাকাবাবুকে কি সত্যিই সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে, না কোথাও আটকে রেখেছে? অজ্ঞান অবস্থায় সমুদ্রে ফেলে দিলে কাকাবাবু বাঁচবেন কী করে? কাকাবাবু প্রায়ই বলেন, আমার চামড় লাইফ। মহাভারতের ভীষ্মের মতন আমার ইচ্ছামৃত্যু। অন্য কেউ আমাকে মারতে পারবে না।

ছাদ থেকে নামার সিঁড়ির মুখে কোনও দরজা নেই। সন্তু পা টিপে টিপে নেমে এল। চারতলায় লম্বা টানা বারান্দা, তার দু দিকে সারি-সারি ঘর। সন্তু যে-ঘরে ছিল, সেটা ছাড়া আর সব ঘরের দরজা খোেলা। এখানকার সকলেই ওই মাস্টার নামের লোকটার কথায় ওঠে বসে। কেউ পালাতে চায় না?

সন্তু খুব সন্তর্পণে একটা ঘরে উঁকি মারল। মেঝেতে শতরঞ্চি পাতা। সে-ঘরে দুটি ছেলে ঘুমিয়ে আছে। সন্তু নিশ্বাস বন্ধ করে তাদের কাছে গিয়ে মুখ দেখল। তারই বয়েসী দুটি ছেলে, অচেনা।

বেরিয়ে গিয়ে অন্য একটা ঘরে ঢুকল। চতুর্থ ঘরটায় সে দেখতে পেল জোজোকে। অন্য ছেলেটি দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমিয়ে আছে, জোজো ঘুমোচ্ছে চিত হয়ে। সন্তু একটা বড় নিশ্বাস ফেলল। উঃ কতদিন পর দেখা হল জোজোর সঙ্গে! কলকাতায় একদিন দেখা না হলেই মনটা ছটফট করত।

সন্তু আস্তে-আস্তে ঠেলা দিতে লাগল জোজোকে। সে জানে, জোজোর গাঢ় ঘুম, সহজে ভাঙে না। হঠাৎ জেগেই না চেঁচিয়ে ওঠে! কয়েকবার ঠেলার পর জোজো চোখ মেলে তাকাতেই সন্তু নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, চুপ! কোনও কথা বলিস না। আমি সন্তু, উঠে আয়।

জোজো স্থির চোখে সন্তুর দিকে তাকিয়ে শুয়েই রইল।

সন্তু হ্যাঁচকা টানে তাকে উঠিয়ে বলল, সময় নষ্ট করা চলবে না। শিগগির চল!

জোজোর হাত ধরে ঘরের বাইরে এসে সন্তু দৌড়ল সিঁড়ির দিকে। এখনও কোথাও কেউ জাগেনি। কামাল আর আলিকে কোথায় আটকে রেখেছে? ওদের খুঁজতে হবে।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সন্তু জিজ্ঞেস করল, তুই আমাকে আগে দেখতে পাসনি?

জোজো কোনও উত্তর দিল না।

সন্তু আবার বলল, ওই আলখাল্লা পরা লোকটার পায়ে হাত দিচ্ছিলি কেন? লোকটা কে?

জোজো এবার থমকে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে বলল, আই অ্যাম আর নাম্বার ফোর্টিন, হু আর ইউ?

সন্তু দারুণ অবাক হয়ে বলল, সে কী রে জোজো? তুই আমায় চিনতে পারছিস না? আমি আর কাকাবাবু তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।

জোজো আবার একই সুরে বলল, আমার নাম্বার আর ফোর্টিন, তোমার নাম্বার কত?

সন্তু বলল, অত জোরে কথা বলিস না। নাম্বার আবার কী?

জোজো নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আরও জোরে চিৎকার করল, মিস্টার এক্স, মিস্টার এক্স কাম হিয়ার!

সন্তু এবার জোজোর মুখ চেপে ধরে কাতরভাবে বলল, জোজো কী করছিস? এত কষ্ট করে তোর জন্য এলাম–।

জোজো আবার মিস্টার এক্স-এর নাম ধরে ডাকল।

এবার চারতলা থেকে নেমে আসতে লাগল একজন মুখোশধারী। নীচের তলা থেকেও দুজন উঠে আসছে। ফাঁদে পড়া ইদুরের মতন সন্তু একবার নীচে খানিকটা নেমে গিয়ে আবার উঠে এল ওপরে। তিনজন একসঙ্গে চেপে ধরল সন্তুকে, জোজো তার মুখে একটা ঘুসি মেরে বলল, আই ওবে দ্য মাস্টার!

আগের ঘরটাতেই আবার নিয়ে আসা হল সন্তুকে, তবে এবার হাত-পা বেঁধে রেখে গেল।

সেই অবস্থাতেই সন্তুর কেটে গেল পরের সারাদিন। কেউ তাকে একফোঁটা জলও দিল না। কিছু খাবারও দিল না। তার খোঁজ নিতেও এল না কেউ। খিদের চেয়েও সন্তুর জলতেষ্টা পাচ্ছে বেশি। তবু সে নিজের মনকে বোঝাচ্ছে যে, আগেকার দিনে বিপ্লবীরা জেলখানায় নির্জলা অনশন করতেন। যতীন দাস বেঁচে ছিলেন তেষট্টিদিন! তার তো কেটেছে মাত্র দেড়দিন। এসব ভেবেও মন মানে না, বারবার সে শুকনো ঠোঁট চাটছে জিভ দিয়ে।

পা বাঁধা থাকলেও সে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এসেছে জানলার ধারে। জানলাটাও খুলতে পেরেছে। সারাদিন তার কেটে গেল জানলার ধারে। অনেকখানি সমুদ্র দেখা যায়, মাঝে-মাঝে দু-একটা ভটভটি নৌকো আর স্পিড বোট যাচ্ছে। এই দ্বীপের কাছে কেউ আসে না। কালকে দূর থেকে এই দ্বীপটাকে কী সুন্দর আর নির্জন দেখাচ্ছিল অথচ এখানে কতসব কাণ্ড চলছে।

এত ছেলেকে এখানে চুরি করে আনার উদ্দেশ্যটা ঠিক কী, এখন বোঝ যাচ্ছে না। ওই যে আলখাল্লা পরা লোকটাকে সবাই মাস্টার অর্থাৎ প্রভু বলে, সেই লোকটার সব হুকুম এখানে সবাই অন্ধের মতন মেনে চলে। লোকটার একটা কিছু সাঙ্ঘাতিক ক্ষমতা আছে, চোখ দিয়ে সবাইকে বশ করে ফেলে। ওর চোখের মণিদুটো হিরের মতন জ্বলজ্বল করে। সন্তু দূর থেকে দেখেছে, ওর সামনে গিয়ে সেজন্যই চোখ বুজে থেকেছে।

মুখোশধারী এখানে পাঁচ-ছজন আছে, তারা কর্মী, এই জায়গাটা পাহারা দেয়, অন্য কাজকর্ম করে। মুখোশ পরে থাকে কেন কে জানে! বাইরের লোকদের ভয় দেখাবার জন্য? তাদের চেয়ে কিন্তু জোজো আর তার বয়েসী ছেলেদের খাতির বেশি। এদের পোশাকও ভাল, সাদা ফুলপ্যান্ট আর নীল রঙের কোট। সারাদিন ধরে ওই ছেলেদের নানারকম ব্যায়াম করতে দেখেছে সন্তু। আশ্চর্য ব্যাপার, তারা কেউই প্রায় কোনও কথা বলে না। হাঁটা-চলা যন্ত্রের মতন। ওদের মধ্যে জোজোও আছে।

জোজোর দিকে যতবার চোখ পড়ছে, ততবার চোখ ফেটে জল আসছে সন্তুর। জোজো বেশ জোরে একটা ঘুসি মেরেছিল, চোয়ালে ব্যথা হয়ে আছে। জোজো তার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, সে তাকে ঘুসি মারল? জোজোই কাল রাত্রে তাকে ধরিয়ে দিল! জোজো কি সত্যি জীবন্ত রোবট হয়ে গেছে?

সন্তু কিছুতেই হার স্বীকার করবে না। কিছুতেই ওই লোকটাকে মাস্টার বলে ডাকবে না। ওরা যদি তার চোখ গেলে দেয়, কেটে কুচি কুচি করেও ফেলে, তবু সন্তু রোবট হবে না। সে মানুষ হয়েই মরবে।

সেই আলখাল্লা পরা মাস্টারকে অবশ্য দিনের বেলা একবারও দেখা যায়নি। কাল ছাদ থেকে যেটাকে লঞ্চ বলে মনে হয়েছিল, সেটা সত্যিই একটা লঞ্চ, এখান থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এই দ্বীপ থেকে একটি স্পিড বোট মাঝে-মাঝে যাতায়াত করছে সেটার কাছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে গেল, সন্তু দাঁড়িয়ে রইল একই জায়গায়। নীচে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ওপর তলাতেও কোনও লোকজনের শব্দ নেই। সবাই কোথাও চলে গেল নাকি? মাঝে-মাঝে কি ওরা এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়? সন্তুর কথা কি সবাই ভুলে গেছে? এখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার তো কোনও উপায়ই নেই। কেউ যদি এখানে না থাকে, তা হলে সন্তু না খেয়ে শুকিয়ে মরে যাবে! কাকাবাবু বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আসবেন। আর যদি বেঁচে না থাকেন… নাঃ, তা হলেও সন্তু না খেয়ে মরতে রাজি নয়। আজ রাতটা সে দেখবে, তারপর জানলায় উঠে ঝাঁপ দেবে নীচে।

আর একটু রাত হওয়ার পর দরজা খুলে গেল। দুজন মুখোশধারী এসে তার পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে দড়িটা বাঁধল কোমরে। তারপর দড়িটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল নীচে। সন্তু যেন একটা গোরু কিংবা ছাগল।

অনেকটা হাঁটিয়ে সন্তুকে তারা একটা স্পিড বোটে তুলল। সেটা যেতে লাগল লঞ্চটার দিকে। সন্তু একবার ভাবল, হাত বাঁধা অবস্থায় সমুদ্রে লাফিয়ে পড়বে। কিন্তু তার কোমরের দড়িটা একজন শক্ত করে ধরে আছে। দেখা যাক এর পরে কী হয়?

লঞ্চের ভেতরে একটা বড় হলঘরের মতন। সেখানে বসে আছে জোজোর বয়েসী সবকটি ছেলে। সন্তুকে বসিয়ে দেওয়া হল তাদের একপাশে। মাস্টারের আজ অন্যরকম পোশাক, সাদা প্যান্টের ওপর একটা লম্বা কালো মখমলের কোট, সেটা হাঁটু পর্যন্ত ঝোলা, বুকপকেটে একটা সাদা ফুল গোঁজা। একটা ছোট টেবিলের ওপাশে সেই সিংহাসনের মতন উঁচু চেয়ারটা রাখা হয়েছে। মাস্টার তাতে বসেনি, দাঁড়িয়ে আছে, হাতে সেই সোনালি দণ্ড।

সন্তুকে দেখে মাস্টার বলল, ওয়েলকাম অন বোর্ড।

সন্তু সঙ্গে-সঙ্গে চোখ বুজে ফেলল।

মাস্টার হেসে বলল, খুলবে, খুলবে, চোখ খুলবে। যখন জানবে তোমার সামনে কী দারুণ ফিউচার আমি তৈরি করে দেব।

তারপর অন্যদের দিকে ফিরে বলল, বয়েজ, তোমাদের পারফরমেন্স দেখে আমি খুশি! তোমাদের ট্রেনিং এখানে অর্ধেক কমপ্লিট হয়েছে। এখানে বাইরের লোক এসে ডিসটার্ব করছে, তাই আমরা অন্য জায়গায় চলে যাব। তোমরা হবে আমার প্রাইভেট আর্মি। তোমাদের কেউ বন্দি করতে পারবে না, কোনও কারাগার তোমাদের আটকে রাখতে পারবে না। অসীম শক্তি হবে তোমাদের।

সন্তু জোজোর চোখে চোখ ফেলার চেষ্টা করছে, কিন্তু জোজো তার দিকে তাকাচ্ছেই না একেবারে, সে একদৃষ্টে চেয়ে আছে মাস্টারের দিকে।

মাস্টার বলে চলেছে, তোমরা কেউ কারও নাম করবে না, সবাই এক-একটা নাম্বার, তবু প্রত্যেকে প্রত্যেককে সাহায্য করবে। আমি তোমাদের সুপ্রিম কম্যান্ডার। আমি যখন তোমাদের যে-কোনও জায়গায় যেতে বলব, তোমরা যাবে। কোনও প্রশ্ন করবে না। বুঝেছ?

সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, ইয়েস মাস্টার!

মাস্টার আবার বলল, তোমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ থাকবে না। আমিই তোমাদের সব। তার বদলে তোমরা চমৎকার জায়গায় থাকবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল খাবার খাবে। বুঝেছ?

আবার সবাই বলে উঠল, ইয়েস মাস্টার!

মাস্টার বলল, তোমাদের ট্রেনিং যখন কমপ্লিট হবে…

হঠাৎ এই সময় বাইরে একটা গুলির শব্দ হল। খুব কাছেই। একজন কেউ চেঁচিয়ে বলল, পুলিশ! তোমাদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। সারেন্ডার করো। সবাই হাত তুলে দাঁড়াও। নইলে গুলি করা হবে।

সন্তুর হৃৎপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠল। এ তো কাকাবাবুর গলা!

একটা ছোট লঞ্চ এসে এর পাশে ভিড়েছে। ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন কাকাবাবু, তাঁর হাতে একটা রাইফেল। আরও চারজন পুলিশ তাঁর পাশে রাইফেল উঁচিয়ে আছে।

মাস্টার জানলা দিয়ে দেখল বাইরে। সে একটুও চঞ্চল হল না। ছেলেদের বলল, তোমরা চুপ করে বসে থাকো। তোমরা ভয় পাবে না জানি। পৃথিবীর কোনও কিছুকেই তোমরা ভয় পাবে না।

তারপর তার মুখে ফুটে উঠল একটা অদ্ভুত হাসি।

কাকাবাবুর বগলে একটামাত্ৰ ক্ৰাচ, তাও বাঁশের তৈরি। তিনি সেটাকে প্রথমে এই লঞ্চের ওপর ছুড়ে দিলেন, তারপর লাফিয়ে চলে এলেন এদিকে। জানলায় দেখতে পেলেন মাস্টারের মুখ।

কাকাবাবু তাকে বললেন, হাত তুলে বাইরে এসো। তোমার খেলা শেষ।

মাস্টার বলল, আমি পৃথিবী জয় করতে চলেছি, আর আমার খেলা শেষ করবে একটা খোঁড়া লোক? আর কয়েকটা সেকেলে বন্দুকধারী সেপাই? হাঃ হাঃ হাঃ, তুই আবার মরতে এসেছিস! দ্যাখ এবার কী হয়!

এই লঞ্চ থেকে কেউ দুটো বোমা ছুড়ে দিল পুলিশের লঞ্চে। সাধারণ বোমা নয়, শব্দ হল না, ফাটল না। তার ভেতর থেকে আগুন বেরুল প্রথমে, তারপর গলগলিয়ে ধোঁয়া। পুলিশ চারজন ঘাবড়ে গিয়ে এলোমেলো গুলি চালাল কয়েকবার, তারপর তাদের হাত থেকে বন্দুক খসে গেল, তারা নিজেরাও

নেতিয়ে পড়ে গেল অজ্ঞান হয়ে।

কাকাবাবু পেছন ফিরে ব্যাপারটা দেখলেন। সঙ্গে-সঙ্গে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন ঘরটায়। রাইফেল তুলে বললেন, ওতে কোনও লাভ হবে না। আর একটা বড় জাহাজ-ভর্তি সৈন্য আসছে পঞ্চাশজন। একটু পরেই এসে পড়বে। তাদের ওই ধোঁয়া দিয়ে কাবু করতে পারবে না। ততক্ষণ কেউ নড়বে না। এদিক-ওদিক করলেই আমি গুলি চালাব!

মাস্টার আবার হেসে উঠে বলল, বটে? গুলি চালাবে? গুলি চালিয়ে কজনকে মারবে? ঠিক আছে, তুমি প্রথমে একে মারো।

জোজোর দিকে আঙুল তুলে বলল, আমি জানি, তুমি এই ছেলেটির খোঁজে এসেছ, তাই না?

সে জোজোকে হুকুম দিল, রোবট নাম্বার ফোর্টিন, যাও, এগিয়ে যাও, গো, গেট হিম।

জোজো স্প্রিং-এর মতন দাঁড়িয়ে পড়ে দুহাত মেলে এগিয়ে গেল কাকাবাবুর দিকে। একেবারে রাইফেলের নলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াল।

কাকাবাবু সবিস্ময়ে বললেন, জোজো, এ কী করছ? সরে যাও। আমার সামনেটা ক্লিয়ার করে দাঁড়াও!

জোজো যেন সে-কথা শুনতেই পেল না।

মাস্টার আবার হুকুম দিল, গ্র্যাব হিম! গেট দা রাইফেল!

জোজো এবার কাকাবাবুর রাইফেলটা ধরে টানাটানি শুরু করে দিল।

সন্তুর খুব ইচ্ছে হল কাকাবাবুকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যেতে। কিন্তু তার হাত পেছন মুড়ে বাঁধা। কোমরের দড়িটা একজন ধরে আছে। তবু সে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই সেই লোকটি আবার জোর করে বসিয়ে দিল।

কাকাবাবু চিৎকার করছেন, জোজো, ছাড়ো, ছাড়ো। হঠাৎ গুলি বেরিয়ে যাবে! জোজো, প্লিজ, প্লিজ, ওরা তোমার শত্রু, ওদের সাহায্য কোরো না।

মাস্টার আরও কয়েকটি ছেলেকে বললেন, যাও, ওকে চেপে ধরো। গ্র্যাব হিম।

চারটি ছেলে ছুটে গিয়ে কাকাবাবুর কেউ গলা টিপে ধরতে গেল, কেউ কোমরটা জাপটে ধরল। কাকাবাবু খুব অসহায় হয়ে পড়লেন। জোজোর কাছ থেকে তিনি রাইফেলটা ছাড়িয়ে নিয়েছেন বটে, কিন্তু জোজোকে তিনি মারবেন কী করে? সে প্রশ্নই ওঠে না। সন্তুর বয়েসী অন্য ছেলেগুলোকে মারতেও তাঁর হাত উঠল না।

তিনি রাইফেলটা ফেলে দিয়ে হাত দিয়ে ঠেলে-ঠেলে ছেলেগুলোকে সরাবার চেষ্টা করলেন।

রাইফেলটা পড়ামাত্র কয়েকজন মুখোশধারী ছুটে গিয়ে কাকাবাবুকে দেওয়ালে ঠেসে ধরল।

মাস্টার এবারে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল, ফিনিশড! ক মিনিট লাগল? বয়েজ, তোমরা খুব ভাল কাজ করেছ। এক্সেলেন্ট! দেখলে তো, তোমাদের কেউ হারাতে পারবে না। তোমরা সবসময় জিতবে!

তারপর কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, এই লোকটা বেঁচে ফিরে এল কী করে? ঠিকমতন ওকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তো? ঠিক আছে, এবারে ওকে এমন শিক্ষা দেব, ওকে আমি একটা কুকুর বানাব। ও আমার সব কথা শুনবে, আমার পায়ের কাছে কাছে থাকবে! ওকে আমার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে এসো! তোমরা সবাই বসে থাকো!

পেছনদিকের দরজা খুলে একটা ছোট ঘরে গেল মাস্টার। মুখোশধারীরা কাকাবাবুকে ঠেলে-ঠেলে নিয়ে চলল সেই দিকে।

সেই ছোট ঘরখানা নানারকম যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। একটা টেবিল আর দুটো চেয়ারও রয়েছে। মুখোশধারীদের চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করে সে কাকাবাবুকে বলল, বোসো! আর দশ মিনিটের মধ্যে তুমি তোমার নিজের নামটাও ভুলে যাবে। তোমাকেও একটা মুখোশ পরিয়ে দেব, তুমি নিজের মুখটাও আয়নায় দেখতে পাবে না। তুমি হবে আমার স্লেভ। আমি মাস্টার, তুমি স্লেভ।

কাকাবাবুর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল, তিনি বললেন, তুমি তো দেখছি একটা পাগল!

লোকটি গর্জন করে উঠে বলল, কী, পাগল? এখনও তুমি আমার সব ক্ষমতা দ্যাখোনি।

কাকাবাবু বললেন, এত ছেলেকে তুমি চুরি করে আনিয়েছ কী মতলবে? সব এক বয়েসী?

লোকটি বলল, বাছাই-করা ইন্টেলিজেন্ট ছেলে। ঠিক এই বয়েসটাতে ভাল ট্রেনিং নিতে পারে। এই বয়েসের ছেলেরা বিপ্লব করে। যুদ্ধে যায়। এরা মরতে ভয় পায় না। এরা কোনওদিন লিডারের কথার অবাধ্য হয় না। আমি শুধু লিডার নই, আমি ওদের মাস্টার, ওদের প্রভু। ওরা আরও ওই বয়েসী ছেলে জোগাড় করে আনবে। একটা বিশাল আর্মি হবে। আমি ওদের দেশে-দেশে ছড়িয়ে দেব! ওরা সব ব্যাঙ্ক ভেঙে টাকা লুট করে আনবে। অস্ত্রশস্ত্র লুট করে আনবে। পৃথিবীর সব টাকা আমার হবে। আমি হব পৃথিবীর রাজা! তুমি হবে আমার চাকর! আমার পা চাটবে।

কাকাবাবু বললেন, এ যে বদ্ধ উন্মাদের মতন কথা! পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছ বুঝি? হিটলার হতে চাও!

লোকটি রাগে নিশপিশ করতে করতে বলল, হিটলার যা পারেনি, আমি তাই দেখিয়ে দেব! আমি পৃথিবীর যে-কোনও মানুষকে বশ করতে পারি। আমার চোখের সামনে কেউ পাঁচ মিনিট দাঁড়াতে পারে না। এইবার দ্যাখো!

সে কাকাবাবুর চোখের সামনে হাত ঘুরিয়ে সম্মোহনের ভঙ্গি করল। কাকাবাবু অট্টহাস্য করে উঠলেন। তারপর বললেন, এই মুহূর্তটির জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। একজনের কাছে আমি শপথ করেছিলাম, আমার ওপর কেউ এই বিদ্যে ফলাবার চেষ্টা না করলে আমি নিজে থেকে কক্ষনও কাউকে হিপনোটাইজ করব না। এখন আর বাধা নেই। শোনো, তুমি ওই ছোট-ছোট ছেলেগুলোকে সম্মোহিত করে রেখেছ বলে ভাবছ যে আমাকেও পারবে? ওহে, আমার নাম রাজা রায়চৌধুরী, আমাকে সম্মোহিত করে এমন সাধ্য দুনিয়ায় কারও নেই!

লোকটি এবার চমকে উঠে বলল, রাজা রায়চৌধুরী? তুমি? কাকাবাবু বললেন, নাম শুনেছ তা হলে? লোকটি টেবিলের ওপর একটা বেল বাজাবার চেষ্টা করতেই কাকাবাবু তার হাত চেপে ধরলেন। কড়া গলায় বললেন, তোমার পাঁচ মিনিট লাগে, আমার তাও লাগে না।

লোকটি মুখ নিচু করে ফেলেছিল, কাকাবাবু তার চিবুকটা ধরে উঁচু করে দিলেন। সে তবু দুর্বলভাবে বলল, পারবে না, তুমি আমাকে পারবে না! তার আগে আমি তোমাকে

দুজনে দুজনের দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল। মাস্টারই আগে চোখ বুজে ফেলল। কাকাবাবু জলদমন্দ্র স্বরে ধমক দিলেন, চোখ খোলো!

সঙ্গে-সঙ্গে সে আবার চোখ খুলল। তার চোখের মণি স্থির হয়ে গেছে। পলক পড়ছে না।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে?

সে বলল, আমি তোমার ভৃত্য!

কাকাবাবু আবার বললেন, তুমি আমার সব কথা মেনে চলবে?

সে বলল, ইয়েস মাস্টার!

কাকাবাবু বললেন, প্রমাণ দাও, এই দেওয়ালে তিনবার মাথা ঠোকো!

সে অমনই পেছন ফিরে দড়াম-দড়াম করে বেশ জোরে মাথা ঠুকল তিনবার।

কাকাবাবু বললেন, হাত দুটো মাথার ওপরে তোলো! এইবার চলো ওই ঘরটায়!

লোকটি থপথপ করে এগিয়ে চলল। দরজাটা খুলে বড় ঘরটায় এসে কাকাবাবু বললেন, এদের সবাইকে বললো, যে যেখানে বসে আছে, সেখানেই থাকবে। কেউ যেন আমার গায়ে হাত না দেয়।

লোকটি বলল, সবাই বসে থাকো। ইনি তোমাদের মাস্টারের মাস্টার। কেউ এর গায়ে হাত দেবে না!

কাকাবাবু ক্রাচটা তুলে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে প্রথমেই সন্তুর হাতের বাঁধন খুলে দিলেন। সন্তু নিজেই এর পরে খুলে নিল কোমরের দড়ি।

কাকাবাবু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মাথায় ডাণ্ডা দিয়ে কে মেরেছিল, তুই দেখেছিস?

কোনও একজন মুখোশধারীকে সন্তু মারতে দেখেছিল। কিন্তু এদের মধ্যে ঠিক কোনজন তা বুঝতে পারল না।

কাকাবাবু আবার মাস্টারের কাছে এসে বললেন, কে আমাকে মেরেছিল? বলো!

সে আঙুল তুলে একজন মুখোশধারীকে দেখিয়ে দিল।

কাকাবাবু একটানে তার মুখোশটা টেনে খুলে দিলেন। মাথাজোড়া টাক, ভুরু নেই, এই সেই লোকটি।

কাকাবাবু বললেন, তুবক! তুমি এখানে এসে জুটেছ? ম্যাজিশিয়ান মিস্টার এক্স কোথায়? ঠিক আছে, পরে দেখা যাবে। শোনো, আমার গায়ে যে হাত তোলে, তাকে আমি ক্ষমা করি না। এ ব্যাপারে আমার কোনও দয়ামায়া নেই! মানুষকে যখন মারো, তখন মনে থাকে না যে তোমাকেও ওইরকমভাবে কেউ মারলে কেমন লাগবে? এবার দ্যাখো কেমন লাগে।

ক্ৰাচটা তুলে কাকাবাবু দড়াম-দড়াম করে তাকে দুবার মারলেন। তার কানের পাশটায় কেটে গিয়ে রক্ত গড়াতে লাগল।

কাকাবাবু এবার মাস্টারের দিকে ফিরে বললেন, তুমি এত ছেলের সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলে! মা-বাবার কাছ থেকে ওদের কেড়ে এনেছ! ওরা মেসমেরাইজড হয়ে আছে। ওটা কী করে কাটিয়ে দিতে হয় তাও আমি জানি। তুমি আমাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে। অর্থাৎ তুমি একটা খুনি। এবার তোমার কী শাস্তি হবে?

সন্তু হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, কাকাবাবু সরে যাও, সরে যাও, তোমার পেছনে।

মেঝেতে পড়ে থাকা রাইফেলটা তুলে সে তক্ষুনি একবার গুলি চালিয়ে দিল!

একজন মুখোশধারী এই ঘরের বাইরে ছিল, সে একটা তলোয়ার নিয়ে চুপিচুপি পেছন দিক থেকে মারতে এসেছিল কাকাবাবুকে। প্রায় কোপ মেরেছিল আর একটু হলে, ঠিক সময় সন্তু গুলি করেছে।

লোকটি মরেনি, গুলি লেগেছে তার কাঁধে, মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। মস্ত বড় তলোয়ারটির দিকে তাকিয়ে কাকাবাবু বললেন, বাপ রে, লাগলেই হয়েছিল আর কী! সন্তু, তুই আর একবার আমার প্রাণ বাঁচালি। আর কেউ বাইরে আছে? মাস্টার, আর কেউ আছে বাইরে?

মাস্টার দুদিকে মাথা নেড়ে বলল, না।

কাকাবাবু বললেন, সন্তু, তুই তবু রাইফেলটা রেডি করে রাখ। আর কেউ ঢোকার চেষ্টা করলেই গুলি করবি।

তারপর মাস্টারের দিকে ফিরে বললেন, তোমার শাস্তি আমি ঠিক করে রেখেছি। আমার সঙ্গে তুমি যে ব্যবহার করেছ, তুমিও ঠিক সেই ব্যবহার পাবে। রাজার প্রতি রাজার ব্যবহার! আমাকে তুমি বাত্তিরবেলা মাঝসমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলে, তোমাকেও ঠিক ওই একই ভাবে এই রাত্তিরেই সমুদ্রে ফেলে দেব। তারপর তুমি বাঁচতে পারো কি না দ্যাখো!

বুকমার্ক করে রাখুন

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress