ওহে অন্তরতম ,
মিটেছে কি তব সকল তিয়াষ
আসি অন্তরে মম ।
দুঃখসুখের লক্ষ ধারায়
পাত্র ভরিয়া দিয়েছি তোমায় ,
নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ
দলিত দ্রাক্ষাসম ।
কত যে বরন কত যে গন্ধ
কত যে রাগিণী কত যে ছন্দ
গাঁথিয়া গাঁথিয়া করেছি বয়ন
বাসরশয়ন তব —
গলায়ে গলায়ে বাসনার সোনা
প্রতিদিন আমি করেছি রচনা
তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া
মুরতি নিত্যনব ।
আপনি বরিয়া লয়েছিলে মোরে
না জানি কিসের আশে ।
লেগেছে কি ভালো , হে জীবননাথ ,
আমার রজনী আমার প্রভাত
আমার নর্ম আমার কর্ম
তোমার বিজন বাসে ।
বরষা শরতে বসন্তে শীতে
ধ্বনিয়াছে হিয়া যত সংগীতে
শুনেছ কি তাহা একেলা বসিয়া
আপন সিংহাসনে ।
মানসকুসুম তুলি অঞ্চলে
গেঁথেছ কি মালা , পরেছ কি গলে ,
আপনার মনে করেছ ভ্রমণ
মম যৌবনবনে ।
কী দেখিছ , বঁধু , মরমমাঝারে
রাখিয়া নয়ন দুটি ।
করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার
স্খলন পতন ত্রুটি ।
পূজাহীন দিন সেবাহীন রাত
কত বারবার ফিরে গেছে নাথ ,
অর্ঘ্যকুসুম ঝরে পড়ে গেছে
বিজন বিপিনে ফুটি ।
যে সুরে বাঁধিলে এ বীণার তার
নামিয়া নামিয়া গেছে বারবার —
হে কবি , তোমার রচিত রাগিণী
আমি কি গাহিতে পারি ।
তোমার কাননে সেচিবারে গিয়া
ঘুমায়ে পড়েছি ছায়ায় পড়িয়া ,
সন্ধ্যাবেলায় নয়ন ভরিয়া
এনেছি অশ্রুবারি ।
এখন কি শেষ হয়েছে , প্রাণেশ ,
যা কিছু আছিল মোর ।
যত শোভা যত গান যত প্রাণ
জাগরণ ঘুমঘোর ।
শিথিল হয়েছে বাহুবন্ধন ,
মদিরাবিহীন মম চুম্বন ,
জীবনকুঞ্জে অভিসারনিশা
আজি কি হয়েছে ভোর ?
ভেঙে দাও তবে আজিকার সভা ,
আনো নব রূপ , আনো নব শোভা ,
নূতন করিয়া লহো আরবার
চিরপুরাতন মোরে ।
নূতন বিবাহে বাঁধিবে আমায়
নবীন জীবনডোরে ।