জীবনকে ভালোবেসে
বেশ কিছুদিন যাবৎ একটা অস্বস্তিতে ভুগছে বীনা । স্কুলে যাওয়ার সময় ভীড় বাসে উঠতে ভয় পায়, লাম্পটার ব্যাপারে বরকে যদিও জানিয়েছে ,বর বলেছে ও কিছু না,কিন্তু এখনতো কত ঘটনাই ঘটছে ! যদি খারাপ কিছু হয়, মেয়ে বীথির এবার স্কুল ফাইনাল দেবে তাই ওকে কিছু বলে নি,পড়াশোনার চাপ তার মধ্যে আবার ভুলভাল চিন্তা করবে হয়তো।
সেদিন পুরানো বন্ধু সীমার ফোন, অনেকদিন পর ফোনে যোগাযোগ, কথাতো ফুরায় না, গল্প করতে করতে নিজের অজান্তেই বীনা ব্রেস্ট লাম্পের কথা বলে ফেলে,শুনে সীমা আর দেরি না করে ম্যামোগ্রাফি ও অন্যান্য টেস্ট করাতে বলে।
বীনা দ্বীধা থাকলেও টেস্টগুলো করিয়ে নেয় অবশেষে,রিপোর্টে ক্যানসার ধরা পড়ে, আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো ঘটনা, যদিও ডাক্তারবাবু আশাবাদী,একটা অপারেশনের পর শুরু হয় কেমো থেরাপী, জীবন যে এত রূঢ় হতে পারে বীনা ভাবেনি কখনো । সারা শরীরে অস্বস্তি,চুল কেমোর পর প্রায় সব উঠে গেছে,চোখের নিচে কালি। আস্তে আস্তে অবশ্য নতুন চুল কিছু হচ্ছে তবুও বাইরে বেরোনোর শারীরিক ও মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলছে বীনা ক্রমশ!
সীমা মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে, অনেক বোঝায়,
আজ দুপুরে বসে জানলার কাছে উঁকি দিয়ে দেখে এক ভদ্রমহিলা মাথায় স্কার্প বেঁধে হাসতে হাসতে যাচ্ছে ছেলের সাথে বোধহয়, কই খারাপতো লাগছে না! ঠিক সেই সময় সীমার ফোন আজ একসাথে দুজনে বেরোবো,আমি তোর জন্য দুটো সুন্দর স্কার্প কিনেছি,ফোনটা কেটে যায় আর কলিংবেল বেজে ওঠে, একি সীমা একগাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে!
দুই বন্ধু একসাথে বেশকিছুক্ষণ ঘুরে কফিশপে বসে , আজ অনেকদিন পর বীনার ভালো লাগছে। সীমা বলে ওঠে সমস্যাতো থাকবেই বেঁচে থাকতে হলে,কিন্তু সাহসের সাথে যুঝতে হবে নিজের জন্য, ফ্যামিলির জন্য বুঝেছিস।
বীনা মনে মনে বলে আর ভয় পেয়ে বাঁচবে না, নিজের সংসার, স্কুল, বন্ধুদের ভালোবেসে বাঁচবে। বাঁচবেই!!!!