জাপানি কবি মাৎসু বাসো (松尾 芭蕉)
‘মাৎসু বাসো’-র জন্ম হয় ইগো প্রদেশ, উইনো’র নিকটে ২৮ শে নভেম্বর ১৬৯৪ সালে। জন্মনাম মাৎসু কিন্সাকু (松尾 金作), পরবর্তীতে মাৎসু চুয়েমন মুনেফুসা (松尾 忠右衛門 宗房)।
বাসো সামুরাই (সৈন্যদের রাঁধুনি) পরিবারের লোক ছিলেন।
বাসোর বাবা খুব সম্ভবতঃ ছিলেন একজন মুসোকুনিন, একধরনের কৃষক শ্রেণী যাদের জমি অধিগ্রহণের অধিকার ছিল এবং কিছু সামুরাই বিশেষ সুবিধা পেতেন।
বাসোর ছোটবেলার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে যৌবনের শেষের দিকে তিনি তোদো ইওশীতাদার সেবায় নিয়োজিত হন। তাকে পরে কখনোই এক পূর্ণ সামুরাইর মর্যাদায় উন্নীত করা হয়নি। কিছু সমকালীন সূত্রে বলা হয় যে বাসো সেখানে খানসামা এবং অন্যান্য রসুইর কাজ করতেন, তবে এর কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ অবশ্য নেই। তবে এই সম্বন্ধে আর একটি অনুমান করা হয়, সেকারণে তিনি ইওশীতাদার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং এটার কিছু প্রমাণ ও কাগজপত্র পাওয়া যায়।
বাসো ইওশীতাদার মতন হাইকাই নো রেঙ্গার শখ ছিলো। এটি হচ্ছে একটি যৌথ কাব্যিক রচনা যার প্রতিটি ক্রোম শুরু হতো একটি ৫-৭-৫ মোরা বিন্যাসের মাধ্যমে। এই বিন্যাসকে বলা হতো হক্কু যার পরে নাম হাইকু হয় যখন বিন্যাসটি মুক্ত ভাবে উপস্থাপিত করা হয়। হক্কুর পর এক অন্য কবি একটি তৎসম্বন্ধিত ৭-৭ মোরা কাব্য পুরো কবিতার সঙ্গে যোগ করতে পারতেন।
বাসো এবং ইওশীতাদা নিজেদের একটি করে হাইগো (হাইকাই কবির ছদ্মনাম) দিলেন। বাসোর নাম হলো সোবো যেটা ওনার নাম মুনেফুসার ওন-যমী (জাপানি কানজির চৈনিক উচ্চারণ) উচ্চারণ।
বাসোর কাব্যপরিচয় খুব ছোটবেলাতেই হয়। এদোর (আধুনিক টোকিও) বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে জড়িত হওয়ার খুব অল্পদিনের মধ্যেই সমগ্র জাপানে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক হলেও জাপানের সাহিত্যিকদের শহুরে সামাজিক জীবন এড়িয়ে চলতেন। তিনি বরং জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। তিনি গহীন জনমানবহীন অরণ্য, প্রকৃতির মাঝে ঘুরে ঘুরে তার লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতেন। বাশো-র মতো করে জাপানের প্রকৃতিকে ছুঁতে আর কেউই পারেনি। হাইকু আর বাশো সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিলেন একসময়।
হাইকু কাকে বলে?
হাইকু (একবচনে “হাইকি”) একধরনের সংক্ষিপ্ত জাপানি কবিতা। তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৫, ৭ এবং ৫ জাপানি শ্বাসাঘাত মোরাস মিলে মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয়। সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয়। মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয়। ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করেন। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাসাঘাত অনুসারী। সেই অনুজায়ী ১২ মোরাসে ১৭ সিলেবল হয়। ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশি সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তারা ১৭ দল ও তিন বাক্য বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লিখেছেন।
হাইকু একটুকরো স্বপ্নের মতো। এই স্বপ্নে সচারচর দু’টি রূপক থাকে। দু’টি রূপক আপাতভাব সম্পর্কহীন হলেও রূপক দু’টি হাইকু পাঠকের মনের ভিতরে বিদ্যুচ্চমকে মিশে যায় আর অনবদ্য একটা স্বপ্নময় জগৎ সৃষ্টি করে।
অতিসাধারণ দু’টি রূপকের মিথস্ক্রিয়ায় আকস্মিকভাবে, আশ্চর্য একটা রূপের সৃষ্টি হয়। সেটি ঘটে যেন সাধারণ বাস্তব কালে নয়, বরঞ্চ বলা যায় স্বপ্নীল কালে, যুক্তিশীল উত্তেজনাপ্রবণ মনের ভিতরে একটা নিঃশব্দ আবির্ভাবের মতো।
সব সময়েই যে একই রকম ঘটে তা নয়, ভিন্ন ভিন্ন কবিতে তার চারিত্র পাল্টে যেতে পারে, তবে দু’টি কমবেশি-দূরবর্তী রূপকের পাশাপাশি অবস্থান হল হাইকুর মূলগত গঠন।
হাইকুর জগতে সমগ্র বিশ্বটাি হল একটা রূপক। অতিসাধারণ, খুঁটিনাটি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, আণুবীক্ষণিক দৃশ্যমানতা হাইকুতে সংক্ষিপ্ত, অথচ অনন্যসাধারণ সরলতায় বর্ণিত হয়। হাইকু চিন্তাপ্রসূত নয়, বরং তাৎক্ষণিক, মুহূর্তনির্ভর, স্বতঃস্ফূর্ত এবং অবশ্যই তা শুধু শব্দ নির্ভর। শব্দ এবং শব্দ-চিত্র ছাড়া এর আর কোন বিশ্ব নেই।
১৬৬২ সালে বাসো নিজের প্রথম কবিতা প্রকাশিত করেন। ১৭২৬ সালে বাসোর আরো দুটি কবিতা একটি সংকলনে ছাপা হয়।
১৬৬৫ সালে বাসো, ইওশীতাদা এবং তাদের কয়েকজন জানাশোনা কবি মিলে একটি হযাকুইন, একশো শ্লোকের রেন্কু, লেখেন। ১৬৬৬ সালে ইওশীতাদা মারা যান এবং বাসোর শান্তির জীবনে পরিবর্তন আসে। এই সময়ের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই কিন্তু বলা হয় বাসো সামুরাই হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে বাড়ি থেকে চলে জান। অনেক জীবনীকার বাসোর বাড়ি ছাড়ার নানা কারণ এবং গন্তব্যের ব্যাপারে তত্ব-তালাশ করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো, বাসো এবং একটি শিন্তৌ মিকোর প্রেমে পড়ে বাড়ি ছাড়েন কিন্তু এই কথার কোন সত্যতা নেই।
বাসোর নিজে এই সময়ের উল্লেখ অস্পষ্ট ভাবে করেছেন। এক জায়গায় উনি বলেছেন “এক সময়ে আমি জমি সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক কাজ চাইছিলাম।” এবং যে “একটা সময়ে ছিল জখন আমি সমকামী প্রেমের ব্যাপারে মুগ্ধ ছিলাম।”
বাসোর কোন সন্তানাদির খবর পাওয়া যায় না।
অবশ্য এটা জানা যায় না যে এটি সত্যিকারের সমকামী ছিলেন নাকি সেটা ছিল কবির আবেশ ও কল্পনা। বাসোর জীবনীকারেরা এটা মনে করেন যে বাসো সমকামী ছিলেন আজীবন এবং তাঁর প্রেমিকদের মধ্যে অনেক জন ছিল তারই শিষ্য।
তার মধ্যে তাঁর সঙ্গিনী ছিলেন ‘জুতেই’ নামের এক ‘মিকো’। ‘মিকো’ অর্থ পূজারিনী।
অধ্যাপক ‘গ্যারি লেইউপ্প’-য়ের মতে বাসোর সমকামী রচনা তার নিজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক।
বাড়ি ছাড়ার পর বাসো মনস্থির করলেন যে কবিতা লিখতে হবে তাকে। কবি হয়ে বাঁচতে হবে।
বাসোর নিজের কথায় “বিকল্পগুলো আমার মস্তিষ্কে যুদ্ধ করেছিল এবং আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছিল।” তাঁর মনের দ্বিধা হয়তো এইজন্য ছিল কারণ তখনও রেঙ্গা এবং হাইকাই নো রেঙ্গা খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না।
যাই হোক, বাসোর কবিতা কাব্য সংগ্রহে ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৬৭১ সালে প্রকাশিত হতে থাকে। উনি নিজে ১৬৭২ সালে ওনার সব কবিতা এবং তেইটোকু ধারার লেখকদের লেখা সংগ্রহ করে, কাই ওই (ঝিনুকের খেলা) নামক গ্রন্থে প্রকাশিত করেন। সেই বছরের বসন্তকালে বাসো এদো শহরে চলে আসেন কাব্যরচনা নিয়ে পড়বেন বলে।
পরে তিনি হয়েছিলেন জাপানের এদো সময়কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি। তার জীবদ্দশায় তিনি মূলতঃ হাইকাইন রেঙ্গা বা রেংকু নামক কবিতায় তাঁর অবদানের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। শত বছরের ব্যাখা-বিশ্লেষণের পর তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ হাইকু কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাঁর লেখা কবিতাগুলো বিশ্ব-বিখ্যাত হয়। জাপানের স্মৃতিস্তম্ভ ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ নিয়ে তিনি বহু কবিতা লিখেছেন। যদিও বাসো পশ্চিমা বিশ্বে তাঁর রচিত হাইকুর জন্যই বিখ্যাত, তিনি নিজে মূলতঃ রেংকুতে তার অবদান ও অংশগ্রহণকেই তার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করতেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,”আমার বহু অনুসারী আমার মতো হাইকু লিখতে পারে। হাইকাই শ্লোক যোগ করার মধ্য দিয়েই প্রকৃতভাবে আমি আমাকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি।”
তাঁর ছদ্মনাম –
সোবো (宗房)
তোসে (桃青)
বাসো (芭蕉)
তাঁর রোমানীকরণ নাম – Matsuo Bashō
বাসো দুজন কৃষকের সঙ্গে দেখা করছেন যারা মাঝ-শরতের চাঁদ উৎসব পালন করছেন। ছবিটি য়োশিতোশির চাঁদের একশো অভিব্যক্তি সংগ্রহ থেকে নেয়া। ছবির ওপর হাইকু লেখা যার মানে দাড়ায়,
সেই অর্ধচন্দ্র রাত থেকে/আমি শুধু আজ রাতের অপেক্ষায় ছিলাম।
নিহনবাসীর প্রচলিত সাহিত্যচক্রে বাসোর সহজ এবং প্রাকৃতিক শৈলী খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৬৭৪ সালে বাসো হাইকাই কবিদের অন্তরীণচক্রে যোগ দেন এবং তাকে কিতামুরা কিগিন (১৬২৪-১৭০৫ সালে) গোপনে শিক্ষা প্রদান করেন। বাসো তখনকার শোগানের প্রতি উপহাসমূলক শ্রদ্ধা যাপনের জন্য এই হক্কুটি লেখেন:
甲比丹もつくばはせけり君が春 kapitan mo / tsukubawasekeri / kimi ga haru
ডাচ ক্যাপ্টেনরাও / নিজের রাজার সামনে নতজানু হয় — /তারই রাজত্বে উত্থান করে। [১৬৭৮ সাল]
নিশিয়ামা শএন, হক্কু লেখার দানরীন ধারার প্রত্যিষ্ঠাতা এবং অগ্রণী কবি, ওসাকা ছেড়ে এদো আসেন ১৬৭৫ সালে। বাসোকে আমন্ত্রিত করা হয় ওনার সঙ্গে পদ্য লেখার জন্য। এই উপলক্ষে বাসো নিজের হাইগো নাম বদল করে টোসেই রাখলেন। এরপর বাসো কাব্যচর্চার শিক্ষকতা করতে লাগলেন এবং ১৬৮০ সালের মধ্যে ২০টি শিষ্য তার কাছে পড়তে আরম্ভ করল। এই শিষ্যরা টোসেই-মনটেই ডোকুগীন-নিজুকাসেন (টোসেইর কুড়িটি শিষ্যের দ্বারা লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রকাশিত করলেন এবং তাদের শিক্ষকের প্রতিভা জনসম্মুখে আনল। সেই বছরের শীতকালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে, বাসো নদী পার করে ফুকুগাওয়া চলে গেলেন, একটি শান্ত এবং একান্ত জীবন কাটানোর জন্য।
ওনার শিষ্যরা মিলে একটি গ্রামীণ কুঁড়েঘর তৈরি করলো ওনার থাকার জন্য। সেখানে ওরা নিজেদের গুরুর জন্য উঠোনে একটি কলাগাছ (芭蕉, বাসো) লাগলো, যেটি চোখে পড়তে, তিনি নিজের হাইগো নাম পাল্টে বাসো রাখলেন। বাসো গাছটি দেখে খুব খুশি হলেন কিন্তু গাছের নিচে ফুকুগাওয়ার মিস্ক্যানথুস ঘাস দেখে নিরাশ হলেন। তিনি লিখলেন:
ばしょう植ゑてまづ憎む荻の二葉哉 bashō uete / mazu nikumu ogi no / futaba kana
আমার নতুন কলাগাছের ধরে/ প্রথম সংকেত আমার বিশ্বস্থতার — / একটি মিস্ক্যানথুসের অঙ্কুর! [১৬৮০ সাল]
সুখ্যাতি পেয়েও বাসো নিজেকে খুব একা এবং নিঃসঙ্গ মনে করেন। তিনি জেন(বৌদ্ধ)ধ্যান শুরু করেন কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নাি। ১৬৮২ সালের শীতে বাসোর বাড়িতে আগুন লাগে এবং পরের বছর বাসোর মার স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে। বাসো এরপর যামুরা জান এবং একটি বন্ধুর বাড়ি থাকেন। ১৬৮৩ সালের শীতকালে বাসোর শিষ্যরা আবার একটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করে কিন্তু বাসোর মন তবুও ভালো থাকে না। ১৬৮৪ সালে বাসোর ছাত্র তাকারাই কিকাকু বাসোর এবং অনন্য কবির কাব্য মিনাশীগুড়ি (কুঁচিত বাদাম) নামক একটি সংগ্রহে প্রকাশিত করেন। একই বছরের শেষের দিকে বাসো নিজের চারটে বড়ো যাত্রার প্রথমটির উদ্দেশে এদো ত্যাগ করেন।
বাসো একা ভ্রমণ করতে লাগলেন এবং অখ্যাত এদোর পাঁচ রাস্তা (গোকাইডো) ধরে হাঁটতে লাগলেন। মধ্যকালীন জাপানে এই পাঁচ রাস্তা খুবই বিপজ্জনক ছিল। প্রথমে বাসো ভেবেছিলেন যে উনি রাস্তার মাঝখানে এক অজানা জায়গায় মরে পড়ে থাকবেন অথবা ডাকাতেরা ওনাকে খুন করবে। বাসোর এই মনোভাবের উন্নতি হতে লাগল।তাঁর যাত্রা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে, এবং তিনি যাত্রা উপভোগ করতে লাগলেন। পথে বাসোর অনেক বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয় এবং ঋতুর পরিবর্তন দেখে তিনি মুগ্ধ হন।
বাসো এবার কবিতায় অন্তর্মুখী না হয়ে বেশি করে যা দেখছেন তার বর্ণনা করতে থাকেন। তিনি লেখেন:
馬をさへながむる雪の朝哉 উমা বো সায় / নাগমুরু যুকি নো / আশিতা কানা
একটি ঘোড়াও / আমার চোখ আটকে দায়ে / এই তুষারময় সকালে। [১৬৮৪ সাল]
বাসোর প্রথম যাত্রা তাকে এদো থেকে ফুজি পর্বত, উএনো এবং কিয়োটো নিয়ে যায়। তিনি প্রচুর কবির সঙ্গে দেখা করেন যারা বাসোর ছাত্র হতে চায়। বাসো তাদের এদো শৈলী ত্যাগ করার উপদেশ দায়। উনি নিজের কুঁচিত বাদাম শৈলীও তাদের ত্যাগ করতে বলেন কারণ “বইটিতে এমন অনেক কাব্য আছে যেটা আলোচনার যোগ্য নয়”
বাসো এদো ফিরে আসেন ১৬৮৫ সালের গ্রীষ্মকালে এবং আরো হাইকু রচনা করেন। এদো ফিরতে উনি কিছুটা সময় ব্যয় করেন কাব্য লিখতে এবং নিজের জীবনের সম্বন্ধে টিপ্পনি করতে। তিনি লেখেন:
年暮ぬ笠きて草鞋はきながら
তোশি কুরেণু / কাসা কিতে ওরাজি / হাকিনাগারা
‘আরো একটি বছর চলে গেল / একটি যাত্রীর ছাতা আমার মাথায়, / খড়ের চটি আমার পায়ে।’ [১৬৮৫ সাল]
এদো ফিরে বাসো খুব খোশমেজাজে নিজের অধ্যাপনা করতে লাগলেন কিন্তু তারই মধ্যে, মনে মনে, আবার বেরিয়ে পড়ার চিন্তা করতে লাগলেন। নিজের যাত্রার সময়ে লেখা হাইকু গুলি নজারাশি কিকো (মাঠের অভিজ্ঞতার বিবরণ) নামক বইতে প্রকাশিত হয়। ১৬৮৬ সালে বাসো নিজের সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় হাইকুটি লেখেন:
古池や蛙飛びこむ水の音
ফুরু ইকে য়া / কায়াজু তবিকোমু / মিজু নো ওটো
‘একটি প্রাচীন পুকুর / একটি ব্যাঙ ঝাঁপায় / জলের শব্দ।’ [১৬৮৬ সালে]।
এই কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছিলেন বাংলায়।
” পুরনো ডোবা
দাদুরি লাফালো যে
জলেতে ধ্বনি।”
বাংলার এক মহাকবির ভাষা ছুঁয়েছিল জাপানি মহাকবির ভাষাকে।
বাশো র কবিতা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন,
‘এ ছবি দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয়…।’ শব্দ বুলিয়ে ছবি আঁকার অন্য নাম ‘হাইকু’।
জাপানি কবিতার আদিরূপ হল ঐ ‘রেনকু’ বা ‘হাইকাই গা রেঙ্গা’। ‘রেনকু’-র প্রথম তিনটি পংক্তি ৫-৭-৫ মাত্রায় বিভক্ত। একে বলা হত ‘হোককু’। এই ‘হোককু’-ই পরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘হাইকু’ নামে।
ইতিহাসবিদ্বের মতে কবিতাটি প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে যায়। এপ্রিল মাসে এদোর কবিরা বাসোর বাড়ি আসেন একটি হাইকাই নো রেঙ্গার প্রতিযোগিতার জন্য। বাসোর শ্রদ্ধায় কাব্যের বিষয় ছিলো ব্যাঙ এবং প্রতিযোগিতা শেষে বাসোর হক্কু সংগ্রহের প্রথমে রাখা হয়।
বাসো এদোতে থেকে অধ্যাপনা এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে লাগলেন। ১৬৮৭ সালের শরৎকালে তিনি গ্রামে চাঁদ দেখার জন্য ভ্রমণে বেরোন। ১৬৮৮ সালে আরও লম্বা ছুটি নিয়ে তিনি উএনো ফেরত আসেন নতুন চন্দ্রোবৎসর পালন করতে। এদো ফিরে তিনি কিছুটা একান্তবাসী জীবন কাটান। তিনি কখনও অথিতিদের ডাকে সাড়া দিতেন না আবার কখনো অতিথিদের সঙ্গ উপভোগ করতেন। তিনি নিজের জীবন সুক্ষ ঠাট্টার সঙ্গে উপভোগ করতেন যেমন এই হাইকুটিতে দেখা যায়:
いざさらば雪見にころぶ所迄
ইজা সারাবা / যুকিমি নী কোরোবু / টোকোরোমাদে
‘এবার চলো বেরোই / তুষার উপভোগ করতে যতক্ষণ না / আমি পা ফসকে পরে যাচ্ছি!’ [১৬৮৮ সাল]
গভীর উত্তরের সরু পথ
বাসোর দ্বিতীয় যাত্রার গোপন পরিকল্পনা ওনার সেরা কাজ ওকু নো হোশোমিচী (গভীর উত্তরের সরু পথ) বইটি থেকে আমরা জানতে পারি। ১৬৮৯ সালের মে মাসের ১৬ তারিখ বাসো এবং তার ছাত্র কাযাই সোরা হনশুর উত্তরের প্রদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ২৯সে জুন ওনারা হিরাইজুমি পৌঁছন। সেখান থেকে দ্বীপের পশ্চিম দিকে কিসাকাটা ভ্রমণ করেন এবং তারপর সমুদ্রতীর ধরে আস্তে-আস্তে পাহাড় চড়ে ফিরে আসেন। বাসো এবং তার শিষ্য ১৫০ দিনের এই যাত্রায় ৬০০রি (২৪০০ কিলোমিটার) হেঁটে দেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চল দেখে ১৬৯১সালে এদো ফিরে আসেন।
বাসো যখন গিফু অঞ্চলের ওগাকি শহর পৌঁছন ততোদিনে ওনার নিজের যাত্রাবৃত্তান্ত লেখা শেষ। উনি তিন বছর ধরে লেখাটি সম্পাদন করেন এবং অনেক কিছু বাদ দেন, এবং সর্বশেষ সংস্করণ করেন ১৬৯৪ সালে। অবশেষে গভীর উত্তরের সরু পথ বইটি প্রকাশিত হয় ১৭০২ সালে বাসোর মারা যাওয়ার পর।
বইটি অতি জনপ্রিয় হয় এবং অনেক হবু কবি বাসোর যাত্রার পথ অনুসরণ করেন। এই বইটি বাসোর জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখা বলে মনেকরা হয়। যেখানে এই প্রকারের হাইকু ছিলো –
荒海や佐渡によこたふ天河 আরাওনি য়া / সাডো নি যকোটাও / আমানোগাওয়া
‘উত্তাল সুমুদ্র / সাডোর দিকে প্রসারিত / আকাশগঙ্গা ছায়াপথ’ [১৬৮৯ সাল]
কবিরা নাকি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হন। জীবনের নৌকো বাইতে বাইতেই হয়তো সম্ভাব্য মৃত্যুর ছবি দেখে বাসো লিখেছিলেন,
旅に病んで
夢は枯野を
かけ廻る
(অসুখ যাত্রাপথে/ স্বপ্ন চড়ে বেড়ায়,/ শুকনো ঘেসোমাঠে)
১৬৯১ সালের শীতকালে এদো ফিরে বাসো, নিজের ছাত্রদের তৈরি করা তৃতীয় কুঁড়েঘরে থাকতে লাগলেন। কিন্তু তিনি আর একা থাকেননি। নিজের ভাইপো এবং তার মহিলা বন্ধু জুটেই, দুজনেই তখন অসুস্থ, তাদের নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। এই সময় বাসোর সঙ্গে দেখা করতে প্রচুর অতিথি আসতে থাকেন।
বাসোর অস্থিরতা ফিরে আসে। উনি নিজের বন্ধুকে চিঠিতে লেখেন “অন্যদের জ্বালাতনে আমার মনের শান্তি নেই।” বাসো শিক্ষকতা এবং হাইকাই সম্মেলনে মন দেন কিন্তু ১৬৯৩ সালে, একমাসের জন্য তিনি নিজের বাড়ির দরজা অতিথিদের জন্য বন্ধ করে দেন। এই সময়টা তিনি কারুমিনীতি আপন করেন। এটি হচ্ছে একটি অর্ধ-বৌদ্ধ দর্শন যেটি রোজকার জীবন থেকে নিজেকে আলাদা না রেখে, জীবনকে মেনে নিতে বলে। এই নীতি আপন করার পর বাসো নিজের কুঁড়েঘরের দরজা আবার খুলে দেন।
১৬৯৪ সালের গ্রীষ্মকালে বাসো শেষ বারের মতন এদো ত্যাগ করেন এবং উএনো আর কিউটোতে সময় কাটিয়ে, ওসাকা চলে আসেন। ওসাকায় তিনি পেটের রোগ নিয়ে অসুস্থ হন এবং নিজের শিষ্যদের মাঝে ওসাকায় শান্তভাবে মারা যান ২৮শে নভেম্বর ১৬৯৪ সালে ৫০ বছর বয়সে।
যদিও বাসো কোনো মৃতুকাব্য লেখেননি, নিম্নলিখিত কাব্যটি তার জীবনের শেষ কাব্য এবং এটি তার বিদায়কালীন কাব্য হিসেবে ধরা হয়।
旅に病んで夢は枯野をかけ廻る
তাবি নি যান্ডে / য়ুমে বা কারেনো বো / কাকে মেগুরু
‘যাত্রায় অসুস্থ হওয়া / আমার স্বপ্ন ঘুরতে যায় / একটি সুখনো ঘাসের মাঠে।’ [১৬৯৪ সাল]
তাঁর প্রভাব এবং সাহিত্য সমালোচনা
কিগোর (ঋতু শব্দ) হাত না ধরে, যেটি আজও জাপানে খুব জনপ্রিয়, বাসো নিজের কবিতায় আসল প্রকৃতি এবং আসল ভাবনা দর্শাতে চাইতেন। বাসোর জীবনকালীন তাঁর শৈলী এবং প্রচেষ্টা যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল এবং তিনি মারা যাওয়ার পর সেটি আরও বৃদ্ধি পায়। মুকাই কেওরাই এবং হাত্তরী দোহোর মতো ছাত্ররা বাসর নিজের কবিতা সম্বন্ধে বলা উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করে।
অষ্ঠাদশ শতকে বাসোর লেখা কবিতা নিয়ে চর্চা আরও উৎসাহ পায়। ইশীকো সেকিসুই আর মোরো নানিমারুর মতো পন্ডিতেরা বাসোর কবিতার সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনা, তৎকালীন পুস্তক, অন্য কাব্যচর্চা মেলানোর জন্য প্রচুর গবেষণা করেন। এই গবেষকেরা বাসোর কবিতায় লেখা অস্পষ্ট ঐতিহাসিক উল্লেখের প্রচুর প্রশংসা করেন যদিও তার মধ্যে কিছু সাহিত্যিক মিথ্যে থেকে গিয়েছিল।
১৭৯৩ সালে শিন্তো আমলাতন্ত্র বাসোর কবিতাকে ইশ্বরত্বত ঘোষণা করে এবং বাসোর লেখার নিন্দে করাকে ধর্মনিন্দা বলা হয়ে থাকে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাসোর কব্যের সর্বসম্মত প্রশংসার অবসান ঘটে। মাসওকা শিকি, বাসোর সেরা সমালোচক, নিজে সাহসী হয়ে এবং অকপট সমালোচনার মাধ্যমে বাসোর প্রশংসা নিষ্ঠার অবসান ঘটান। আবার অন্যদিকে, শিকি ছিলেন সেই মানুষ যার মাধ্যমে বাসোর হক্কু জপানি বুদ্ধিজীবী আর মানুষের মধ্যে আবার প্রচলিত হয় এবং কাব্যগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ হয়। শিকি হক্কুর নাম বদলে হাইকু রাখলেন কারণ তিনি এই ৫-৭-৫ শ্লোক হাইকাই নো রেঙ্গা কাব্যশৈলীর শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট মানতেন।
বাসোর কবিতার সমালোচক ব্যাখ্যা বিংশ শতাব্দী অব্দি চলতে থাকে, য়ামামোতো কেনকিচি, ইমোতো নোইচি এবং ওগাটা শুতমুর কাজ বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। এই শতাব্দীতে বাসোর কবিতা অন্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদ শুরু হয়। বিদেশিদের চোখে বাসোকে হাইকুর শ্রেষ্ঠ রচয়িতা হিসেবে দেখা হয়। বিদেশি পাঠকদের হাইকু শৈলী কে রেঙ্গা অথবা ট্যাংকা শৈলীর চাইতে বড় দেখা হয় আর বাসোকে জাপানি কবিদের মধ্যে আদিরূপাত্মক এবং হাইকুকে জাপানি কাব্যলেখনের মধ্যে আদিরূপাত্মক প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু পাশ্চাত্য পন্ডিতেরা ভুল করে বাসোকে হাইকুর জনক হিসেবে ধরে নেন।বাসোর প্রতিচ্ছায়াবাদি এবং পর্যাপ্ত শ্লোক এজরা পাউন্ড, বিম্ববাদী এবং বিট প্রজন্মকে প্রভাবিত করে।
১৯৫২ সালে দ্য নিউইয়র্কার পত্রিকায় জে.ডি.সলিংগারের লেখা “টেডি” ছোট গল্পে বাসোর দুটি কবিতা জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
১৯৭৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বুধগ্রহের একটি গর্তের নামকরণ বাসোর নামে করা হয়।
মাৎসুয়ো বাশো’র পঁচিশটি হাইকু
[Robert Hass, Jane Reichhold ও অন্যান্যদের ইংরেজি অনুবাদ থেকে
বাংলা রূপান্তর – নান্নু মাহবুব থেকে সংগৃহীত ]
১).
শীতের বরষা
ঝরে গোয়ালের ’পরে;
ডাকে একটি মোরগ।
২).
আছি এক সরাইখানায়
বারনারীরাও ঘুমুচ্ছে যেইখানে
শুঁটিঝোপ আর চাঁদ
৩).
তেরছা চাঁদের আলো
বাঁশঝাড়ে
ডাকে একটি কোকিল
৪).
বয় শরতের হাওয়া
তবুও সবুজ
বাদামের খোসাগুলি
৫).
শীতের প্রথম ধারা
বানরও চায় যেন
একখানা রেনকোট
৬).
বসন্ত
নামহীন পাহাড় এক
ভোরের কুয়াশায় অবগুণ্ঠিত
৭).
কতই না ভালো
দেখে-যাওয়া এই বিদ্যুৎ আর
ক্ষণস্থায়ী জীবনকে না ভাবা
৮).
মধ্যমাঠ,
অনুরতি নেই কিছুতে
ভরতপাখিরা গায় গান
৯).
বসন্তবৃষ্টি
ছাদ থেকে পড়ে চুইয়ে
বোলতার বাসা থেকে ফোঁটা ফোঁটা
১০).
নিস্তব্ধতা
সিকাডার তীব্র নিনাদ
কুরে কুরে ঢোকে প্রস্তরে
[সিকাডা: উষ্ণ অঞ্চলের লাফিয়ে-চলা বড় পতঙ্গবিশেষ। মাথার দুই দিকে এর বৃহৎ দু’টি চোখ। সিকাডা শিরা-উপশিরাময় স্বচ্ছ ডানাযুক্ত। পুরুষ সিকাডা একরকম একটানা উচ্চস্বর নিনাদ সৃষ্টি করে। খোসা পরিত্যাগ করা সিকাডার একটি বৈশিষ্ট্য। জাপানী হাইকুতে এই পতঙ্গটি ঘুরে-ফিরে আসে।]
১১).
প্রথম তুষার
ঝরে
আধা-নির্মিত সেতুর ওপর
১২).
মর্নিং-গ্লোরি-ও
দেখা গেল
বন্ধু নয় সে আমার
[মর্নিং-গ্লোরি: নরম নীলাভ বেগুনি ফুল একধরণের গুল্মলতা। ফুল অন্য রঙেরও হয়। বহু প্রজাতির দেখা যায়। এই লতার অপরূপ ফুল ফোটে সকালে আর দুপুরের আগেই বুঁজে যায়।
ছায়াকুঞ্জ তৈরিতে ঘনসবুজ পাতার মর্নিং-গ্লোরি অনবদ্য। জাপানে এই ফুল বহুল আদৃত।]
১৩).
মাছওলার হাঁক
মিশে যায়
কোকিলের চিৎকারে
১৪).
এই পুরাতন গ্রাম
পার্সিমনবৃক্ষ ছাড়া
নেই বাড়ি একটিও
[পার্সিমন: দীর্ঘজীবী প্রাচ্যদেশীয় বৃক্ষ। বৃক্ষ পনেরো থেকে ষাট ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। গাব পরিবারের এ ফল জাপানে অতি আদৃত, ফল
মিষ্টি, লাল, হলুদ, কমলা রঙের হয়।]
১৫).
সাগর আঁধার হয়ে আসে
বুনো হাঁসেদের স্বর
ক্ষীণ শাদা
১৬).
শীতের উদ্যান
চাঁদ সরু এক সুতা
পতঙ্গরা গায় গান
১৭).
গোধূলির বরিষণে
এই উজ্জ্বলরঙ জবা
এক মায়াময় সূর্যাস্ত
১৮).
ক্ষোদিত দেবতারা গেছে বহুকাল
ঝরা পাতাগুলি জড় হয়
মন্দির দেওড়িতে
১৯).
মাঝে মাঝে আসে মেঘ,
চাঁদ-দ্যাখা থেকে
মেলে অবসর
২০).
কেউ নেই এই পথে
শুধু আমি
হেমন্ত গোধূলি এই
২১).
মৌমাছি এক
টলমল এলো বেরিয়ে
পিয়নিবৃক্ষ থেকে
[পিয়নি – চীনা ফুল। গুল্মজাতীয় গাছ। পিয়নি বৃক্ষও রয়েছে। এডো যুগে জাপানে পিয়নি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সুবাসিত এই ফুল লাল, শাদা বা হলুদ হতে পারে।]
২২).
প্রাচীন শহর নিস্তব্ধ
ভাসে পুষ্পের সৌগন্ধ
আর গোধূলির ঘণ্টা
২৩).
মঞ্জরিত শাদা চেরির ওপরে
কুয়াশার শাদা মেঘ
প্রভাতোজ্জ্বল পর্বত
২৪).
জেগে আছি রাতে
ক্ষীণ লণ্ঠন
জমে আসে তেল
২৫).
জাগো আকাশ হলো আলো
চলো যাই পথে বেরোই আবার
সাথী প্রজাপতি
.. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. ..
সাহিত্যগ্রন্থ তালিকা
——————————
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি
Oku no Hosomichi
কাই ওই (ঝিনুকের খেলা) (১৬৭২ সাল)
এদো সানগিন (江戸三吟) (১৬৭৮ সাল)
ইনাকা নো কুবাসে (田舎之句合) (১৬৮০ সাল)
টোসেই মন্টেই ডোকুগিন নিজু কাসেন (桃青門弟独吟廿歌仙) (১৬৮০ সাল)
টোকিওয়া নো কুবাসে (常盤屋句合) (১৬৮০ সাল)
মিনাশিগুড়ি (虚栗, “কুঁচিত বাদাম”) (১৬৮৩ সাল)
নোজারাশি কিকো (আবহাওয়া উদ্ভাসিত একটি নরকঙ্কালের প্রতিবেদন) (১৬৮৪ সাল)
ফুয়ু নো হি (শীতের দিনগুলি) (১৬৮৪ সাল)
হারু নো হি (বসন্তের দিনগুলি) (১৬৮৬ সাল)
কাওয়াজু আওয়াসে (ব্যাঙ প্রতিযোগিতা) (১৬৮৬ সাল)
কাশিমা কিকো (কাশিমা মন্দিরের যাত্রা) (১৬৮৭ সাল)
ওই নো কোবুমি, অথবা উতাৎসু কিকো (একটি ভ্রমণ জীর্ণ ঝুলির প্রতিবেদন) (১৬৮৮ সাল)
সারাশিনা কিকো (সারাশিনা গ্রামের যাত্রা) (১৬৮৮ সাল)।
—————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া ] –
Louis Frédéric, Japan Encyclopedia, Harvard University Press, ২০০০ সালে,পৃষ্ঠা – ৭১.
“松尾芭蕉”। The Asahi Shimbun Company। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২২ সাল।(জাপানি)
“芭蕉と伊賀上野”। 芭蕉と伊賀 Igaueno Cable Television। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২২ সাল।(জাপানি)
Drake, Chris. ‘Bashō’s “Cricket Sequence” as English Literature’, in Journal of Renga & Renku, Issue 2, ২০১২ সাল পৃষ্ঠা – ৭.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পৃষ্টা -২৩
আনুষঙ্গিক বিষয় ,১৯৮২ সাল,পুষ্টা – ২১.
Okamura, ১৯৫৬ সাল।
আনুষঙ্গিক বিষয়, ২৯৮২ সাল, পৃষ্ঠা – ২২.
Gregory M. Pflugfelder (২৯৯৯ সাল). Cartographies of Desire: Male-Male Sexuality in Japanese Discourse, ১৬০০ সাল -১৯৫০ সাল. University of California Press. পৃষ্টা _ ৩৯. ISBN 978-0520251656.
Leupp, Gary (২৯৯৭ সাল). Male Colors: The Construction of Homosexuality in Tokugawa Japan. University of California Press. পৃষ্টা – ১৩৭.
সেই স্থানে , পৃষ্টা – ৮৩.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পৃষ্টা – ২৩.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পুষ্টা – ৯.
Kokusai ১৯৪৮ সাল, পৃষ্ঠা – ২৪৬.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ২৯.
Carter ১৯৯৭ সাল, পৃষ্ঠা – ৬২.
Yuasa ১৯৬৬ সাল, পৃষ্ঠা – ২৩.
Carter ১৯৯৭ সাল, পৃষ্ঠা – ৫৭
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পৃষ্ঠা – ২৫.
Kokusai ১৯৪৮ সাল, পৃষ্ঠা – ২৪৭.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পৃষ্ঠা – ৯৫.
আনুষঙ্গিক বিষয় ১৯৮২ সাল, পৃষ্ঠা – ২৬.
Examples of Basho’s haiku written on the Tokaido, together with a collection of portraits of the poet and woodblock prints from Utagawa Hiroshige, are included in: Forbes and Henley, ২০১৪ সাল.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ১২২.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৮২ সাল, পৃষ্ঠা – ২৯.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ১৩৮.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ১৪৫.
Kokusai ১৯৪৮ সাল, পৃষ্ঠা – ২৪১.
Bolitho, Harold, in Treasures of the Yenching: seventy-fifth anniversary of the Harvard-Yenching Library, Chinese University Press, ২০০৩ সাল, ISBN 978-962-996-102-2 পৃষ্ঠা – ৩৫.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল , পৃষ্ঠা – ৩৪৮.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ৩৪.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৭০ সাল, পৃষ্ঠা – ৫০.
আনুষঙ্গিক বিষয়, ১৯৯২ সাল, পৃষ্ঠা – ৭.
Burleigh, David ‘Modern Haiku Review’ vol 35.2, Sum ২০০৪ সাল, Lincoln, United States.
Shirane (১৯৯৮ সাল), পৃষ্ঠা – ৩৭.
Ross, Bruce. How to Haiku: A Writer’s Guide to Haiku and Related Forms, Tuttle, 2002, ISBN 978-0-8048-3232-8, p. 2.
See, for instance, Lawlor 2005, পৃষ্ঠা – ১৭৬.
Slawenski, ২০১০ সাল,পৃষ্ঠা – ২৩৯: “Nothing in the voice of the cicada intimates how soon it will die” and “Along this road goes no one, this autumn eve.”
International Astronomical Union (৩০শ নভেম্বর ১৯৮০ সাল). Transactions of the International Astronomical Union, Volume XVIIB. Springer Science & Business Media. p. 291. ISBN 978-90-277-1159-5.
“Matsuo Bashō (松尾芭蕉)”। Classical Japanese Database। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০০৮ সাল । Various poems by Bashō, in original and translation.
“Interpretations of Bashō”। Haiku Poets Hut। ৯ই জুলাই ২০০২ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০০৮ সাল। Comparison of translations by R. H. Blyth, Lucien Stryck and Peter Beilenson of several Bashō haiku.
Price, Sean (২০০৭ সাল)। “Phinaes’ Haikai Linked Verse Translations”। ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৭ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০২। Translations of renku by Bashō and his disciples, by Sean Price.
Norman, Howard (২০০৮ সাল)। “On the Poet’s Trail”। National Geographic Magazine। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০০৮ সাল। অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) Travels along the path Matsuo Bashō followed for Oku no Hosomichi. Photography by Mike Yamashita.
Norman, Howard (২০০৮ সাল)। “On the Poet’s Trail”। National Geographic Magazine। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০০৮ সাল। অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) Interactive Travelogue of Howard Norman’s journey in Basho’s footsteps, including a map of the route taken.
“An Account of Our Master Bashō’s Last Days”। Simply Haiku: A Quarterly Journal of Japanese Short Form Poetry। সংগ্রহের তারিখ ২৯ শে জুন ২০০৮ সালে। A translation by Nobuyuki Yuasa of an important manuscript by Takarai Kikaku, also known as Shinshi, one of Bashō’s followers.
গ্রন্থাগারে মাৎসু বাসো সম্পর্কিত বা কর্তৃক কাজ (ওয়ার্ল্ডক্যাট ক্যাটালগ) (ইংরেজি)
“Matsuo Bashō – Complete Haiku in Japanese”। André von Kugland। সংগ্রহের তারিখ ৯ই জানুয়ারী ২০১০ সালে।