জগদ্ধাত্রী পূজো
রাজসিক দেবী দুর্গা। তামসিক দেবী কালী। এরপরই আসেন সত্ত্বগুণের অধিকারী দেবী জগদ্ধাত্রী। জগৎ বা ত্রিভূবনের ধাত্রী। ধারণকর্ত্রী তথা পালিকা। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে দেবীর আবাহন।
দেবী সিংহের স্কন্ধে আরূঢ়া। চতুর্ভুজা ভবসুন্দরী। বাম হস্তে শঙ্খ, ধনু। দক্ষিণ হস্তে চক্র ও পঞ্চবাণ। রক্ত বস্ত্র পরিহিতা। প্রভাতী সূর্যের ন্যায় গাত্রবর্ণা। নানান অলংকারে বিভূষিতা। নাগরূপ যজ্ঞ উপবীত ধারিণী। দুর্গার বিকল্প রূপ।
শ্রী শ্রী চণ্ডীতে উল্লেখ আছে, যুদ্ধ উন্মত্ত মহিষাসুর একবার হস্তী রূপ ধারণ করল। দেবী ধারণ করলেন মহা শক্তিশালী জগদ্ধাত্রী রূপ। চক্র দ্বারা ছেদন করলেন হাতির শুঁড়।
দেবীর বাহন সিংহ তাই দাঁড়িয়ে থাকে মৃত হস্তীর উপর। সংস্কৃতে হস্তী অর্থ “করী”। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ভাষায়,—-
“মন করীকে যে বশ করতে পারে তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন”।
আবারও পুরাণ বলছে, মহিষাসুর বধের পর দেবতাদের উল্লাসের কথা। তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তি দুর্গা। তাই অসুর নিধন হয়েছে তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে। তাঁদের গর্ব দেখে, দেবী পরমেশ্বরী অলক্ষ্য থেকে একটি তৃণখণ্ড নিক্ষেপ করেন দেবতাদের দিকে।
ইন্দ্র ব্যর্থ হলেন বর্জ্র দ্বারা সেই তৃণ ধ্বংস করতে। বরুণ পারলেন না জলস্রোতে প্লাবিত করতে। অগ্নি পারলেন না দহন করতে। বায়ু অসমর্থ হলেন উড়িয়ে নিয়ে যেতে।
দেবতাদের দুরাবস্থায় হাস্যময়ী পরমাসুন্দরী সালাঙ্কারা মহাদেবী হলেন আবির্ভূতা। বুঝিয়ে দিলেন তিনিই জগতের ধারিণী এবং পালিনী শক্তি। তিনিই জগদ্ধাত্রী। জ্ঞান চক্ষু উন্মিলিত হল দেবতাদের।
কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, চন্দননগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ, মা সারদামণির বংশের জগদ্ধাত্রী আরাধনা, আদি মহিমা থেকে ইতিহাস। আলোকে আলোকে আলোকিত ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি। আবার আসব কোনো দিন তেমনি কোনো গল্প নিয়ে।।