ছায়াশরীর
অনেকদিন আগেকার কথা বলছি। আমার বয়স তখন তেইশ বছর। তিন বছর একটানা রেলে চাকরি করার পর চাকরিটা বাধ্য হয়েই ছেড়েছি। একজন বদমেজাজি অফিসারের দাপট তখন সহ্য হয়নি, সেই বয়সে ধৈর্য এবং অপমান হজম করবার ক্ষমতা খুব কম থাকে বলেই অবলীলায় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি।
বাঁধা একটা মাইনে ছিল, সেটা গেল। মনমেজাজ তাই ভাল ছিল না। হঠাৎ একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে একটা চিঠি এসে হাজির হল। চিঠিটা এল নলহাটি থেকে। লিখেছে দীপক নামে আমার এক বন্ধু।
বছর তিনেক আগে আমরা একবার ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নলহাটিতে গিয়েছিলাম স্বাস্থ্যোদ্ধারে। নলহাটির পাহাড়ে একটি বহুদিনের পুরনো বাড়িতে আমরা ভাড়া ছিলাম। ওই একই বাড়িতে দীপকরাও থাকত। ফলে দু’জনের মধ্যে বেশ ভাল একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই দীপক আমাকে নলহাটি ও তার আশপাশের গ্রামগুলো খুব ভালভাবে চিনিয়ে দিয়েছিল। ব্রাহ্মণী নদীর ধারে জগধারী আশ্রমে গিয়ে বসে থাকতাম আমরা। নলহাটি পাহাড়ে বনে বনে ঘুরে আতাফল খেতাম।
যাই হোক, সেই থেকেই দীপকের সঙ্গে চিঠিতে যোগাযোগ ছিল। আমার চাকরি ছাড়ার পর হঠাৎই চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘শুনলাম রেলের চাকরিটা ছেড়েছ। বেশ করেছ। তুমি বলেই পারলে। আমি হলে ছাড়তাম না। পত্রপাঠ এখানে যদি চলে আসো তা হলে আর বেকার বসে থাকতে হবে না।’
নিশ্চয়ই কোনও একটা কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। কী কাজ তা জানি না। আবার সেই লালমাটির দেশ, আবার সেই সবুজ বনশ্রী, আবার সেই ব্রাহ্মণী নদী—মন যেন নতুন করে মেতে উঠল আবার।
পরদিন সকালেই হাওড়া স্টেশনে এসে ট্রেন ধরলাম।
দীপকের বাবা-মা, ওর ভাই, দীপক, কী যে করবে আমাকে পেয়ে তা ভেবে পেল না। দুপুরে স্নানাহারের পর দীপক আর আমি পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল একটি নিমগাছের ছায়ার নীচে এসে বসলাম।
আমরা যেখানে বসে ছিলাম তার চারদিকে অসংখ্য ঝোপঝাড়। পাহাড়ের উচ্চস্থান
থেকে দূরের বনানীর শোভা বড়ই সুন্দর। প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে একসময় আমরা কাজের প্রসঙ্গে এলাম। বললাম, “এবার বল কী কাজের জন্য ডাকিয়ে এনেছিস আমাকে?” দীপক বলল, “এর আগের বারে যখন এসেছিলি তখন আমার সঙ্গে একবার ভবানন্দপুর গ্রামে গিয়েছিলি মনে আছে?”
“হ্যাঁ। ওইখানে চন্দ্ৰময়ী সিদ্ধপীঠে এক সাধুবাবাকে দেখতে গিয়েছিলাম।” “ঠিক। ওই গ্রামে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের দরকার।
সেই দায়িত্বটা তোকেই নিতে হবে। কোনও স্কুল বা পাঠশালা নয়, কোচিং ক্লাসের মতো । মাস গেলে আশি টাকা মাইনে পাবি। থাকার জন্য ঘরও পাবি একটা। আর গ্রামের ব্যাপার তো, চালটা, কলাটা, মুলোটা, তরিতরকারি, হাঁস মুরগির ডিম—এসবের অভাব হবে না। কিনেও খেতে হবে না ওগুলো। এখন করবি কিনা বল?”
আমি তো এককথায় রাজি। সে আমলে আশি টাকার দাম অনেক। তার ওপর থাকা-খাওয়ার খরচ তো লাগছেই না প্রায় বলতে গেলে । তবু মাসে পঞ্চাশ টাকার মতো খরচ হলে বাকি টাকাটা পোস্ট অফিসের বইতে জমে যায়। এ সুযোগ কেউ ছাড়ে? বিশেষ করে অমন সুন্দর গ্রামের পরিবেশে থাকতে পাওয়া।
পরদিন সকালেই ‘দুর্গা দুর্গা’ বলে আমরা রওনা হলাম। ওই গ্রামেরই একজন মাতব্বর ছিলেন আবদুল হালিম। নলহাটিতে ওঁর মস্ত দালান। তাঁরই দেওয়া গোরুর গাড়িতে চেপে রওনা হলাম আমরা। ভবানন্দপুর এখান থেকে প্রায় পাঁচ-সাত মাইল দূরে। তাই অনেক সময় লাগল যেতে। তবু বেশ ভালভাবেই পৌঁছে গেলাম।
গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে একটি বুনো পাহাড়ের কোলে চালাঘর। তারই লাগোয়া ছোট্ট একটি মাটির ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা হল। ঘরে একটি তক্তাপোশ পাতা ছিল। মাদুর বিছানা মশারি সবেরই ব্যবস্থা ছিল দেখলাম। গ্রামের মানুষজনও খুবই ভাল। হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই মানুষ বসবাস করেন এই গ্রামে। তাঁরা আমাকে দেখে বললেন, “এ যে একেবারেই ছেলেমানুষ!” বলে বললেন, “তা হোক, ছোট ছোট ভাইবোনগুলোকে একটু দেখাশোনা কোরো বাবা। আমরা চাষিভুষি মানুষ। এ গাঁয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে গড়ে তোলবার মতো তেমন কেউ নেই। ছেলেরাও স্কুল পাঠশালার ধারেকাছে ঘেঁষতে চায় না। অথচ আজকালকার দিনে মুখ্যু হয়ে থাকাটাও তো ঠিক নয়। একটু চেষ্টা করে দ্যাখো যদি এদের মানুষ করতে পারো।”
আমি বললাম, “আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। ওরা যদি নিয়মিত আসে আমার কাছে, তা হলে ঠিক আমার মনের মতো করে ওদের আমি গড়ে তুলবই।”
গ্রামবাসীরা বললেন, “তবে বাবা, একটা ব্যাপারে তোমাকে আমরা সাবধান করে দিই। সন্ধের পর একটু সতর্ক থেকো, আর রাত্রে ঘর থেকে বেরিয়ো না। তার কারণ জঙ্গল থেকে প্রায়ই এখানে বুনো জন্তু, মানে ছোটখাটো বাঘ বা ভালুক হঠাৎ করে বেরিয়ে আসে।”
আমি বললাম, “বেশ। সতর্ক থাকব।”
এর পর আমি আমার ঘরের দখল নিলে দীপকও ফিরে গেল নলহাটিতে।
এইখানকার এই সুন্দর পরিবেশে মন আমার আনন্দে ভরে উঠল । আমি বহাল তবিয়তেই ওই গ্রামে রয়ে গেলাম এবং মনপ্রাণ দিয়ে শুরু করে দিলাম শিক্ষকতার কাজ। পাঁচ থেকে দশের মধ্যে ছেলেমেয়ে সব। সকাল-বিকেলে দু’ঘণ্টা করে ওদের পড়ানোর দায়িত্ব ছিল আমার।
ছাত্রছাত্রীরা চলে গেলে একটু বেলায় কাঠের জ্বাল দিয়ে ভাতেভাত একটু ফুটিয়ে নিতাম। সিদ্ধ ডিম বা রান্না করা অন্য তরকারি প্রায় সব বাড়ি থেকেই একটু না একটু আসত আমার জন্য। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে দুধ-কলা গুড়-মুড়ি যা আসত তা-ও খেয়ে শেষ করতে পারতাম না।
মোট কথা, বেশ ভালভাবেই দিনগুলো কাটছিল আমার।
আমি যে ঘরটাতে থাকতাম তার পেছনদিকে একটি কামিনীগাছ ছিল, আর ছিল বেশ বড়সড় একটি গোলঞ্চগাছ। একপাশে ছিল মস্ত একটি টিলা। সেখানে দেবী চন্দ্রময়ীর থান। প্রতি শনি-মঙ্গলবারে দলে দলে আদিবাসীরা এখানে এসে পায়রা বলি ছাগ বলি ইত্যাদি দিত। নাচগান করত।
এইরকমই এক শনিবারে চাঁদনি রাতে সবার নিষেধ অগ্রাহ্য করে আদিবাসীদের ধামসা মাদলের তালে তালে নাচগান দেখে ফিরছি, হঠাৎই দেখলাম আমার বাড়ির পেছনে যে কামিনীগাছটা ছিল তার ডালে দোলনা বেঁধে বছর পাঁচেকের একটি ফুটফুটে মেয়ে মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে। আর তাকে দোলা দিচ্ছে এই গ্রামেরই রোজিনা নামের একটি মেয়ে।
আমাকে দেখেই শিশুটি দোলনা থেকে লাফিয়ে কোথায় যে পালাল তার ঠিক নেই। কিন্তু ধরা পড়ে গেল রোজিনা।
রোজিনাকে আমি চিনি। চোদ্দো-পনেরো বছরের এক নওল কিশোরী। মাজা কালো গায়ের রং। অপূর্ব সুন্দর ওর মুখশ্রী। বনে বনে ঘুরে কাঠ কুড়িয়ে বেড়ায়। ওর সঙ্গে আমি কথাও বলেছি অনেকবার। মাঝে মাঝে আমাকেও কিছু শুকনো কাঠ জোগান দিয়েছে ও। আমি বললাম, “এ কী! রোজিনা ! এই রাতদুপুরে তুমি এখানে? ও মেয়েটি কে? কাকে দোল খাওয়াচ্ছিলে তুমি?”
রোজিনা আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নত করেই দ্রুত স্থানত্যাগ করল।
পরদিন সকাল থেকে নতুন এক ভাবনাচিন্তা এসে উপস্থিত হল আমার মনে। কে ওই শিশুটি? এই গ্রামে রোজিনাকে তো চিনি। কিন্তু ওই শিশুকে তো দেখিনি কখনও? অমন সুন্দর চাঁদের মতো ফুটফুটে শিশু যে বিরল।
তাই একটু বেলায় ছাত্রদের পড়িয়ে শুকনো কাঠের খোঁজে টিলায় উঠে খোঁজ করতে লাগলাম রোজিনার। সে তখন একমনে কাঠ সংগ্রহ করছিল। আমি ওর খুব কাছে গিয়ে বললাম, “কী ব্যাপার রোজিনা, কাল আমার কথার উত্তর না দিয়েই চলে এলে যে?”
আমার কথা শুনে অবাক হয়ে রোজিনা বলল, “কাল! কখন?”
“কেন, রাত্রিবেলা!”
“আপনি তা হলে আর কাউকে দেখেছেন। আমি নই। সন্ধের পর আমি ঘর থেকে বেরোই না। আব্বাজান কড়া নজর রাখেন আমার দিকে।”
আমি তখন যা দেখেছি সবই বললাম ওকে।
রোজিনা দূরের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, “আশ্চর্য তো! এ কী করে হয়? তা ছাড়া আপনিই বলুন না, রাত্রিবেলা কামিনীগাছের ডালে বসিয়ে ওইটুকু বাচ্চাকে কেউ দোল খাওয়ায়?”
কথাটা ঠিক। আমি তবে কী দেখলাম? কাকে দেখলাম? ভয়ে আমার সারাগায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। এই ঘটনার কথা আমি আর কাউকেই না বলে বেমালুম চেপে গেলাম।
তবে কিনা এর পর থেকে রোজিনা আমাকে অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে লাগল। এইভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন সন্ধেবেলা রোজিনা এসে বলল, “আপনি আর এ গাঁয়ে থাকবেন না মাস্টারমশাই। যত শিগগির সম্ভব চলে যান। পারলে কালই চলে যান আপনি।”
দারুণ বিস্মিত হয়ে আমি বললাম, “কেন?”
কঠিন গলায় রোজিনা বলল, “প্রশ্ন করবেন না।”
আমি আহত হয়ে বললাম, “বেশ! তোমরা আমাকে না চাইলে আমি চলেই যাব।” রোজিনার চোখ দুটি ছলছল করে উঠল এবার। বলল, “কিছু মনে করবেন না মাস্টারমশাই। আপনার ওপর দৃষ্টি পড়েছে।”
আমি সভয়ে বললাম, “কার?”
“সে-কথা বলা যাবে না।” বলে আর একমুহূর্তও না থেকে রোজিনা চলে গেল।
মনটা আমার খুবই খারাপ হয়ে গেল। কেননা এই ক’দিনে এই গ্রামকে আমি এমনই ভালবেসে ফেলেছিলাম যে, এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারি না। এমন সুন্দর ও লোভনীয় পরিবেশ ছেড়ে চলে যেতে মন আমার চাইছে না। অথচ ও আমাকে এমন ভয় ধরিয়ে দিল যে—
সে রাতে হঠাৎই আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার পর আমার মনে হল ঘরখানি যেন কামিনী ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে আছে। আঃ, কী সুবাস! কী উগ্র সেই গন্ধ ! শুধু কামিনী নয়, আরও অনেক সুগন্ধি ফুলের গন্ধ আমার নাকে আসতে লাগল। তখন পৌষের শেষ। এই সমস্ত ফুল এই অসময়ে ফোটবার নয় । মনের মধ্যে তাই কেমন যেন একটা ভয়ের ভাব জেগে উঠতে লাগল। তার ওপরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় যেন কেঁপে উঠতে লাগল সর্বাঙ্গ।
ঘরের বাইরে পেছনদিকে কেমন যেন একটা পাতা খসখস মচমচ শব্দ। কেউ যেন আমার জানলার ধার ঘেঁষে অনবরত যাওয়া-আসা করছে। নিশ্চয়ই ভালুক এসেছে ওখানে। তবুও ব্যাপারটা কী দেখবার জন্য নিঃশব্দে জানলার কাছে গিয়ে আলতো করে পাল্লাটা খুলে বাইরের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলাম। দেখি কিনা সেই সেদিনকার মতো রোজিনা সেই শিশুটিকে কামিনীগাছের ডালে দোলনায় বসিয়ে দোল খাওয়াচ্ছে। আমি একভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। রাত তখন একটা। এত রাতে এ কী কাণ্ড! হঠাৎ আমার চোখে চোখ পড়ে গেল শিশুটির। যেই না পড়া, আর সে রইল না। এক লাফে দোলনা থেকে নেমে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। দেখতে দেখতে শূন্য দোলাটাও মিলিয়ে গেল একসময়। আর ক্রুদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে এক-পা এক-পা করে খানিক এগিয়ে এসে
রোজিনা কঠিন গলায় বলল, “কাল সকালেই আপনি চলে যাবেন। আর একদিনও থাকবেন না।” বলে অন্ধকার জঙ্গলে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
আমি মূর্ছিত হয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে আমার সামান্য যা কিছু ছিল তাই গোছগাছ করে রোজিনাদের বাড়িতে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করে চলে যাওয়ার কথা বলতেই রোজিনা অবাক হয়ে বলল, “কী আশ্চর্য! আমি আবার কখন আপনাকে চলে যাওয়ার কথা বললাম? আপনি আমাদের গর্ব। আপনাকে কখনও এ-কথা আমি বলতে পারি মাস্টারমশাই?”
রোজিনার মা-বাবা, এমনকী গ্রামবাসীদেরও সবাইকে আমি খুলে বললাম সব কথা। শুনে সবাই অবাক!
রোজিনা দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে বলল, “আপনি যে শিশুকে দোল খেতে দেখেছেন সে আর কেউ নয়। আমারই ছোট বোন। কয়েক বছর আগে ওই কামিনীগাছের ডালে দোল খেতে খেতে সাপের কামড়ে সে মারা যায়। ওরই পেছনদিকের মাঠে কবরও দেওয়া হয়েছে তাকে। তারই অশরীরী আত্মাটা আপনাকে দেখা দিলেও বারবার কেন যে আপনি তার সঙ্গে আমাকে দেখছেন তা আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।”
আমার মুখে এই কথা শোনার পর গ্রামবাসীরা আমাকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
বললেন, “অশুভ আত্মার কথা অমান্য না করাই উচিত। তুমি চলেই যাও বাবা। বলা যায় না সত্যিই যদি খারাপ কিছু হয় তখন আফসোসের আর শেষ থাকবে না।”
এর পর সবাই মিলে আমার চোখের সামনেই কেটে ফেলল সেই কামিনীগাছটিকে। বহুদিনের পুরনো গাছ। কী শক্ত আর মোটা তার ডালপালা। কামিনীগাছ সাধারণত এত বড় হয় না। সরু ডালের অপলকা গাছ। অথচ টিলা পাহাড়ের কোলে এই গাছটা যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়।
যাই হোক, আমি ভয়ে ভয়ে সেইদিনই গ্রামবাসীদের সাহায্যে গ্রামত্যাগ করে নলহাটিতে ফিরে এলাম। কিন্তু একটা রহস্য আমার কাছে রহস্যই রয়ে গেল, ওই শিশুটি না হয় রোজিনার বোনের প্রেতাত্মা। কিন্তু রোজিনার শরীর নিয়ে যে আমাকে দু’-দু’বার দেখা দিল সে তা হলে কে? তবে কি রোজিনা তার অজান্তেই ওই প্রেতাত্মার অশুভ প্রভাবে সম্মোহিত হয়ে ওর অবচেতনে এই কাজ করে থাকে? যা এতদিন কারও নজরে পড়েনি এবং আমি দেখে ফেলতেই এই বিপত্তি? হবেও বা! আমি অবশ্য পরবর্তীকালে ও নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামাইনি।