জয়চাঁদ বড়ালের কথা
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে মগনলালের বাড়ি বার করতে বেশি সময় লাগল না। বাড়ির বাইরেটা দেখে ভিতরে ঢুকতেই ইচ্ছা করে না, কিন্তু একবার ঢুকে পড়লে দেখা যায় বেশ তক্তকে পরিচ্ছন্ন।
একজন চাকর এসে জয়চাঁদবাবুকে তিন তলায় নিয়ে গেল। তারপর একটা বারান্দা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটা ঘরের দরজার সামনে পৌঁছে ঘোষণা করল যে বড়ালবাবু এসেছেন।
ভিতরে আসুন, মগনলালের গভীর গলায় শোনা গেল।
জয়চাঁদ বড়াল ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন।
মগনলাল এক পাশে গদিতে বসে আছে। অন্য পাশে সোফা রয়েছে, তারই একটাতে বড়াল বসলেন।
কী ডিসাইড করলেন? মগনলাল প্রশ্ন করল।
ওটা বেচব না।
মগনলাল কিছুক্ষণের জন্য চুপ। তারপর বলল, আপনি ভুল করছেন, জয়চাঁদবাবু। আমাকে রিফিউজ করে কোনও লোক রেহাই পায়নি। আপনি কি দাম বাড়াতে চাচ্ছেন?
না। আমি ওটা ফ্যামিলিতেই রাখতে চাই। চার পুরুষ ধরে রয়েছে, এখনও থাকুক।
আপনার বাড়ি যা দেখলাম সোনাহাটিতে, তাতে আপনার মানথিলি ইনকাম দেড়-দু হাজারের বেশি বলে মনে হয় না। আর এতে আপনি একসঙ্গে ক্যাশ অনেক টাকা পেয়ে যাবেন। হোয়াই আর ইউ বিইং সো ফুলিশ?
এটা বংশমর্যাদার ব্যাপার। এটা আমি আপনাকে বোঝাতে পারব না।
ওই মোতি কোথায় আছে?
আমার কাছে নেই।
ওটা আপনি আনেননি?
বেচবই না যখন ঠিক করলাম তখন আর আনিব কেন?
মগনলাল তার সামনেই রাখা একটা ঘণ্টার উপর চাপড় মারল। টুং শব্দের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা চাকর এসে ঘরে দাঁড়াল।
গঙ্গা–এই বাবুকে সার্চ করো।
গঙ্গা বেশ ষণ্ডা লোক; সে একটানে জয়চাঁদবাবুকে বসা অবস্থা থেকে দাঁড় করাল। তারপর সবঙ্গে সার্চ করে একটা মানিব্যাগ, একটা রুমাল আর একটা মশলার কৌটো বার করে মগনলালের সামনে রাখল।
ঠিক হ্যায়, বলল মগনলাল। ওয়াপিস দে দেনা।
চাকর জয়চাঁদবাবুকে তার জিনিসগুলো ফেরত দিয়ে দিল।
বসুন আপনি।
জয়চাঁদবাবু আবার সোফায় বসলেন। মগনলাল বলল, সোনাহাটিতে জানলাম কি আপনাদের ক্লাব প্রদোষ মিটারকে রিসেপশন দিয়েছে।
ঠিকই শুনেছেন।
তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
আপনার সব কথার জবাব দিতে তো আমি বাধ্য নই।
আপনার জবাবের দরকার নেই, বিকজ আই অলরেডি নো। আপনি যখন হাওড়াতে ট্রেন থেকে নামলেন, তখন থেকে আমার লোক আপনাকে নজরে রেখেছে। আপনি শিয়ালদায় যোগমায়া হোটেলে উঠেছেন। –রাইট?
ঠিক।
বিকেল পাঁচটার সময় হোটেল থেকে বেরিয়ে আপনি স্ট্যাক্সি করে সাউথে যান। আপনার ডেস্টিনেশন ছিল ফেলু মিটারের বাড়ি–রাইট?
আপনি তো সবই জানেন।
আপনার মোতি এখন ফেলু মিটারের জিন্মায় আছে।
জয়চাঁদবাবু চুপ করে রইলেন। মগনলাল বলল, ইউ হ্যাভ ডান সামথিং ভেরি স্টুপিড, মিস্টার বড়াল। আপনি পার্লটা আমাকে দিলে চালিস হাজার টাকা পেতেন। এখন আমি সে পার্ল আদায় করে নেব, আর আপনি আমার কাছ থেকে একটা পইসাও পাবেন না।
জয়চাঁদবাবু উঠে পড়লেন।
আমি তা হলে এখন আসতে পারি?
পারেন। আমাদের বিজনেস খতম। তবে আপনার জন্য আমার আপশোস হচ্ছে।