ফেলুদা নিজেই আমাকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে
পরদিন সকাল। ফেলুদা নিজেই আমাকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে। কাল রাত্রে লালমোহনবাবু আমাদের নামিয়ে দিয়ে যাবার পর আধা ঘণ্টার মধ্যে স্নান-খাওয়া সেরে ফেলুদা তার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। সত্যি বলতে কী, রাত্রে আমার ভাল করে ঘুমাই হয়নি। বেশ বুঝতে পারছি যে আমরা একটা আশ্চর্য রকম প্যাঁচালো রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়েছি! এ গোলকধাঁধার কাছে লখনী-এর ভুলভুলাইয়া হার মেনে যায়। কোন দিকে কোন রাস্তায় যেতে হবে জানি না, সব ভরসা ফেলুদার উপর। অথচ ফেলুদা নিজেই কি ভুলভুলাইয়া থেকে বেরোনোর পথ জানে?
ফেলুদা তার ঘরে খাটের উপর বসে, তার সামনে টমাস গডউইনের বাক্স, তার ভিতরের জিনিস খাটের উপর ছড়ানো। দুটো তামাক খাবার সাদা পাইপ-তেমন পাইপ আমি কখনও চোখেই দেখিনি; একটা রুপোরা নাস্যির কোটো; একটা সোনার চশমা, আর চারটি লাল চামড়ায় বাঁধানো খাতা–তার প্রত্যেকটার মলাটে সোনার জল দিয়ে লেখা ডায়রি। খাতাটা যে সিস্কের কাপড়ে বাঁধা ছিল সেটা বিছানার উপরেই পড়ে আছে, আর তার পাশে পড়ে আছে নীল ফিতেটা। ফেলুদা একটা খাতা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খুব সাবধানে প্রথম পাতাটা উলটে দ্যাখ।
এ কী! এ যে শার্লট গান্ডউইনের খাতা!
১৮৫৮ থেকে ৬২ পর্যন্ত। যেমন মুক্তোর মতো হাতের লেখা, তেমনি স্বচ্ছন্দ ভাষা। কাল সারা রাত ধরে পড়ে শেষ করেছি। কী অমূল্য জিনিস যে রিপন লেনের অন্ধকূপের মধ্যে এতকাল পড়েছিল, তা ভাবা যায় না।
আমি অবাক হয়ে প্রথম পাতাটার দিকে চেয়ে আছি। আর উলটোতে সাহস পাচ্ছি না, কারণ বুঝতে পারছি পাতাগুলো ঝুরঝুরে হয়ে আছে। ফেলুদা বলল, অ্যারাকিস এ খাতা খুলেছিল।
কী করে জানলে?
খাতার পাতা অসাবধানে উলটালেই পাতার উপরের ডান দিকের কোণ আঙুলের চাপে ভেঙে যায়। এই দ্যাখ-
ফেলুদা একটা পাতা অসাবধানে উলটে দেখিয়ে দিল।
আর শুধু তাই না, বলে চলল ফেলুদা, এই ফিতেটা দ্যাখ! কয়েক জায়গায় ক্ষয়ে গেছে— একশো বছরের উপর গেরোবাঁধা অবস্থায় থাকার জন্য। কিন্তু ওই ক্ষয়ে যাওয়া জায়গা ছাড়াও দ্যাখ। এই দুটো জায়গায় ফিতে কেমন পাকিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে টাটকা নতুন গেরোর জন্য। যে খুলেছে সে তত হিসেব করে ঠিক একই জায়গায় গেরো বাঁধেনি; সেটা করলে ধরা মুশকিল হত।
তোমার আঙুলে কালো দাগ কেন?—এটা আমি ঘরে ঢুকেই লক্ষ করেছি।
এটা আরেকটা ক্লু, বলল ফেলুদা। এটা বোঝানোর সময় পরে আসবে। দাগটা লেগেছে ওই নাস্যির কৌটোটা থেকে।
কী জানলে ওই ডায়েরি পড়ে? আগ্রহে আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
টম গডউইনের শেষ বয়সের কথা, বলল ফেলুদা। একটা পয়সা হাতে নেই, খিটখিটে মেজাজ। এক ছেলে মরে গেছে, অন্য ছেলে ডেভিড়ের উপর কোনও বিশ্বাস নেই, কোনও টান নেই। কাউকে ট্রাস্ট করে না, এমনকী নিজের মেয়ে শার্লটকেও না। কিন্তু শার্লট তবু তার পরিচর্যা করে, তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে, ভগবানের কাছে তার মঙ্গল প্রার্থনা করে। জুয়ায় সর্বস্ব গেছে টমাস গডউইনের, শার্লট নিজে সেলাইয়ের কাজ করে আর কার্পেট বুনে কলকাতার মেমসাহেবদের কাছে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। গডউইন লখনী-এর নবাবের কাছে দামি জিনিস যা পেয়েছিল সব বিক্রি করে দিয়েছে, কেবল তিনটি জিনিস ছাড়া। এই কাসকেট, এই নস্যির কৌটো-যেটা সে আগেই শার্লটকে দিয়েছিল–আর তৃতীয় হল সাদতের কাছে পাওয়া তার প্রথম বকশিশ।
সেটাও শার্লটকে দিয়ে গেছিল?
না। সেটা সে কাউকে দেয়নি। মারা যাবার আগে সে মেয়েকে বলে গিয়েছিল, সেটা যেন তার কফিনের মধ্যে পুরে তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়। শার্লট তার বাপের ইচ্ছা পূরণ করে। মনে শান্তি পেয়েছিল।
সেটা কী জিনিস?
শার্লটের ভাষায়—ফাদারস প্রেশাস পেরিগ্যাল রিপিটার।
সেটা আবার কী?
এখানে ফেলু মিত্তিরও ফেল মেরে গেছে রে তোপ্সে। ডিকশনারিতে বলছে রিপিটার বন্দুক বা পিস্তল হতে পারে, আবার ঘড়িও হতে পারে। পেরিগ্যাল হয়তো কোম্পানির নাম। সিধু, জ্যাঠাও শিওর নন। তুই ঘুম থেকে ওঠার আগে ওর বাড়িতে ঢু মেরে এসেছি। দেখি, বিকাশবাবু যদি আলোকপাত করতে পারেন।
পার্ক স্ট্রিটে একটা নিলামের দোকান আছে; নাম পার্ক অ্যকশন হাউস। সেখানে বিকাশ চক্রবর্তী বলে এক ভদ্রলোক কাজ করেন যাঁর সঙ্গে ফেলুদার খুব আলাপ। একটা কেসের ব্যাপারে ফেলুদাকে ওখানে যেতে হয়েছিল বার কয়েক, তখনই চেনা হয়।
এই সেদিনও দোকানটার পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখেছি অনেক পুরনো ঘড়ি সাজানো রয়েছে। আমার মন বলছে। ওটা বন্দুক-টন্দুক নয়, ঘড়ি।
লালমোহনবাবু আসার আগে অবধি ফেলুদা শার্লট গডউইনের ডায়রি থেকে অনেক ঘটনা বলল। শার্লটের এক ভাইঝি বা বোনঝিরও কথা নাকি আছে ডায়রিতে। শার্লট তাকে উল্লেখ করেছে মাই ডিয়ার ক্লেভার নীস বলে। সে নাকি কোনও কারণে তার ঠাকুরদাদাকে অসন্তুষ্ট করেছিল, কিন্তু মারা যাবার আগে টিম গডউইন তাকে ক্ষমা করে তাঁর আশীবাদ দিয়ে যান। শার্লটের দুই ভাই ডেভিড আর জনের কথাও ডায়রিতে আছে। ডেভিডের সমাধি আমরা সাকুলার রোডের গোরস্থানে দেখেছি। জন বিলেতে গিয়ে আত্মহত্যা করেন; কেন সেটা শার্লট জানতে পারেননি।
লালমোহনবাবু এসে বললেন, কাল সকাল অবধি দোটানার মধ্যে ছিলুম,-পুলকের জন্য ভক্তিমূলক গল্প লিখি, না আপনার সঙ্গে ভিড়ে পড়ি। কালকের কাণ্ডকারখানার পর আর দ্বিধা নেই। খ্রিল ইজ বেটার দ্যান ভক্তি। সেই বাক্সে কিছু পেলেন?
একটা সোয়াশো বছরের পুরনো ডায়রি থেকে জানলাম যে, টমাস গডউইনের কবর খুঁড়লে তুয়তো একটা পেরিগ্যাল রিপিটার পাওয়া যেতে পারে।
কী পিটার?
চলুন, বেরিয়ে পড়া যাক। পেট্টিল কত আছে?
দশ লিটার ভরসুম তো আজ সকালেই।
গুড। ঘোরাঘুরি আছে!
পার্ক অকশন হাউসে ঢুকেই ফেলুদার ভুরুটা কুঁচকে গেল।
আসুন, মিস্টার মিত্তির।!! কী সৌভাগ্য আমার। কোনও নতুন কেস-টেস নাকি?
বিকাশবাবু এগিয়ে এসেছেন। বেশ চকচকে নাদুসনুদুস চেহারা, গাল ভর্তি পান। কেন জানি দেখলেই মনে হয় নর্থ ক্যালকাটার লোক।
আপনার যে সৌভাগ্য সে তো দেখতেই পাচ্ছি, বলল ফেলুদা।এই সেদিন দেখলাম গোটা আষ্টেক ছোট বড় ঘড়ি সাজানো রয়েছে; এর মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে গেল?
কেন? কী ঘড়ি চাই আপনার? ওয়াল ক্লক? অ্যালার্ম ক্লক?
ফেলুদা তখনও এদিক ওদিক দেখছে। বিকাশবাবুকে দেখে কেন জানি মনে হচ্ছিল যে উনি ওই খটমট নামওয়ালা ঘড়ির বিষয় কিছু জানবেন না। ফেলুদার প্রশ্ন শুনে বললেন, রিপিটার বোধহয় এক রকমের অ্যালাির্ম ঘড়ি। তবে পেরিগ্যাল ঠিক বুঝলাম না। তা ঘড়ির বিষয়ে জানার জন্য তো খুব ভাল লোক রয়েছে। তার বাড়িতে শুনেছি আড়াইশো রকম ঘড়ি আছে। ঘড়িপাগলা লোক আর কী।
কার কথা বলছেন?।
মিস্টার চৌধুরী। মহাদেব চৌধুরী।
বাঙালি?
বাঙালি হলেও মনে হয় পশ্চিম-টশ্চিমে মানুষ। ভাঙা-ভাঙা বলেন বাংলা। বেশির ভাগ ইংরিজিই বলেন। এলেমদার লোক। আগে বম্বে ছিলেন, এখন কলকাতায় এয়েছেন। আর এসেই, যা পাচ্চেন—একটু ভাল হলেই—কিনে নিচ্ছেন। অবিশ্যি পুরনো হওয়া চাই। আপনি যে বলচেন এখানে ঘড়ি দেখচোন না, তার বেশির ভাগই আপনি দেখতে পাবেন ওর বাড়িতে গেলে। আর লোকটা জানেও। আপনি একবারটি গিয়ে কথা বলে দেখুন না। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল–দেখেননি?
কী বিজ্ঞাপন?
কারুর কাছে কোনও পুরনো ঘড়ি বিক্রি থাকলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
লোকটিকে একটি পুরোদস্তুর ধনকুবের বলে মনে হচ্ছে!
বাব্বা-ক্লথ মিল, সিনেমা হাউস, চা, জুট, রেসের ঘোড়া, ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট-কী চাই আপনার?
ঠিকানা জানেন?
জানি বইকী। কলকাতায় আলিপুর পার্ক, আর তা ছাড়া পেনেটিতে গঙ্গার ধারে একটা বাড়ি কিনোচে। ওখানেই কাছাকাছির মধ্যে কাপড়ের মিল। এখন বোধকরি কলকাতায় আছে, তবে আপনারা সকালে না গিয়ে বিকেলে যাবেন, এখন আপিসে থাকবেন।.দাঁড়ান, ঠিকানাটা লিখে দিচ্ছি।
মহাদেব চৌধুরীর ঠিকানা নিয়ে আমরা পার্ক অকশন হাউস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আপনারা এক কাজ করুন, ফেলুদা গাড়িতে উঠে বলল, আমাকে ন্যাশনাল লাইব্রেরির এসপ্ল্যানেড রিডিং রুমে নামিয়ে দিয়ে একবারটি পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানে গিয়ে দেখে আসুন তো রিপোর্ট করার মতো কিছু আছে কি না।
রিহিপোর্ট?-লালমোহনবাবুর গলা আর স্টেডি নেই।
হ্যাঁ, রিপোর্ট। আর কিছু দেখবার দরকার নেই, শুধু গডউইনের সমাধিটি একবার দেখে আসবেন। এ দুদিন জল হয়নি, জায়গাটা শুকনোই পাবেন। ওখানে কাজ সেরে চলে আসবেন আমার কাছে, তারপর বাইরে কোথাও খেয়ে নেওয়া যাবে। এখন আর বাড়ি ফেরার কোনও মনে হয় না। অনেক কাজ; একবার রিপন লেনেও যেতে হবে।
ফেলুদা গডউইন সাহেবের বাক্সটা ভাল করে ব্রাউন কাগজে প্যাক করে সঙ্গেই এনেছে, আর সৰ সময় বগলদাবা করে রেখেছে।
অবিশ্যি দিনের বেলা আর ভয়ের কী আছে বলুন, বললেন লালমোহনবাবু, সন্ধের দিকটাতেই একটু ইয়ে-ইয়ে লাগে।
মন যদি কুসংস্কারের ডিপো না হয় তা হলে ভূতের ভয় কোনও সময়ই নেই।
এসপ্ল্যানেডের পথে একটা ট্রাফিক জ্যামে পড়ে অপেক্ষা করার ফাঁকে লালমোহনবাবু বললেন, আপনি যে ঘড়ির খোঁজ করছেন, সে কি ট্যাঁক-ঘড়ি?
সে তো জানি না এখনও।
ট্যাঁক-ঘড়ি যদি হয় তো আমার কাছে একটা আছে।
কার ঘড়ি?
যার ঘড়ি তার তিনটে জিনিস রয়েছে আমার কাছে-ঘড়ি, ছড়ি আর পাগড়ি। গ্র্যান্ডফাদারের জিনিস। লেট প্যারীচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। আচ্ছা, প্যারী নামটা কেথেকে এল মশাই?
এখানেই ছিল, বলল ফেলুদা! আপনি বাংলা রাইটার হয়ে প্যারী মানে জানেন না? প্যারী হল রাধার আর এক নাম। যেমন রাধিকাচরণ, তেমনি প্যারীচরণ।
থ্যাঙ্ক ইউ সার। যা হোক, যা বলছিলাম-ঘড়িটা ভাবছি আপনাকে দিয়ে দেব।
ফেলুদা বেশ অবাক।
হঠাৎ?
একটা কিছু দেব দেব করছিলাম ক’দিন থেকে, আমার হিন্দি ছবির সাফল্যের পিছনে তো
আপনার অবদান কম নয়!–আর তার মানে এই গাড়িটা হওয়ার পিছনেও। হয়তো দেখবেন এ ঘড়িও সেই পেরিপিটার না কী বলছিলেন, সে জিনিস।
সেটার চান্স কম। তবে আপনি যে জিনিসটা অফার করলেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার কাছে খুব যত্নে থাকবে এটা কথা দিতে পারি। উনবিংশ শতাব্দীর জিনিস তো আর ব্যবহার করা যায় না—তবে দম দেব রোজ। ঘড়িটা চলে?
দিব্যি।
ফেলুদাকে নামিয়ে দিয়ে যখন আমরা গোরস্থানে পৌঁছলাম তখন প্রায় বারোটা বাজে। এখানে কাজ সেরে ফেলুদাকে তুলে নিয়ে আমরা যাব নিজামে মাটন রোল খেতে। এটা ফেলুদারই প্ল্যান, ও-ই খাওয়াবে। অবিশ্যি তার আগে যাওয়া হবে রিপন লেনে বাক্স ফেরত দিতে।
পার্ক স্ট্রিটে এ সময়টা ট্র্যাফিক কম, তাই দুপুর হওয়া সত্ত্বেও গোরস্থানের পরিবেশটা বেশ নিরিবিলি। গেট দিয়ে ঢুকে দু-একবার ডাকাডাকি করেও বরমদেও দারোয়ানের দেখা পেলাম না। সে আবার ইঁদুরের সৎকার করতে কোনও ঝোপের পিছনে গেছে কি না কে জানে।
আমরা মাঝখানের পথটা দিয়ে এগিয়ে গেলাম। লালমোহনবাবুকে যতই ঠাট্টা করি না কেন, আর ফেলুদা কুসংস্কারের কথা যাই বলুক না কেন, এই গোরস্থানটার ভিতরে ঢুকলে সাহসের খানিকটা কম পড়ে যায় ঠিকই। শুধু সমাধিগুলো থাকলেও না হয় হত, তার উপরে এত গাছপালা, এত ঝোপঝাড় আগাছা কচুবনে ছেয়ে আছে জায়গাটা যে, তাতে ছমছমে ভাবটা আরও বেড়ে যায়। অবিশ্যি লালমোহনবাবু যতটা বাড়াবাড়ি করছেন, ততটা করার মতো ভয়ের কারণ দিনের বেলা কী থাকতে পারে জানি না। ভদ্রলোক এগোতে এগোতে আড়চোখে ফলকগুলোর দিকে দেখছেন আর সমানে মন্ত্র আওড়ানোর মতো করে বিড়বিড় করছেন। কী যে বলছেন সেটা কান পেতে শুনে তবে বুঝতে পারলাম। সেটা শোনার মতোই বটে।
দোহাই পামার সাহেব, দোহাই হ্যাঁমিলটন সাহেব, দোহাই স্মিথ মেমসাহেব—ঘাড়টি মটকিও না বাবা, কাজে ব্যাগড়া দিয়ে না! তোমরা অনেক দিয়েচ, অনেক নিয়েচ, অনেক শিখিয়েচ, অনেক ঠেঙিয়েচ.ক্যাম্বেল সাহেব, অ্যাডাম সাহেব, আর—ই হু—তোমার নামের তো বাবা উচ্চারণ জানি না!—দোহাই বাবা, তোমরা ধুলো, ধুলো হয়েই থাকো বাবা, ধুলো…ধুলো…
আমি আর থাকতে পারলাম না। বললাম, কী ধুলো-ধুলো করছেন?
ছেলেবেলায় পড়িচি যে বাবা তপেশ—ডাস্ট দাউ আর্ট, ঢুঁ ডাস্ট রিটার্নেস্ট। এ সবই তো ধুলো।
তা হলে আর ভয় কীসের?
কবিরা যা লেখে সব কি আর সত্যি?
আমরা বাঁয়ের মোড় ঘুরেছি। গাছ এখনও পড়ে আছে। মাটি শুকনো। অনেক মাটি। টমাস গডউইনের সমাধি ঘিরে মাটির ঢিবি।
ধুলো…ধুলো…ধুলো…
লালমোহনবাবু যেন মনে সাহস আনার জন্যই যান্ত্রিক মানুষের মতো কথাটা বলতে বলতে গডউইনের সমাধির দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর তাকে তিনবার ক আর দুবার কিং কথাটা বলতে শুনলাম, আর তারপরই তিনি দাঁত কপাটি লেগে কাটা গাছের মতো সটান পড়ে গেলেন মাটির ঢিবির ওপর।
তার পা যেখানে পড়েছে তার পর থেকেই শুরু হয়েছে একটা গর্ত, সেটা প্রায় এক-মানুষ গভীর, আর সেই গর্তের মাটির ভিতর থেকে উঁকি মারছে একটা মড়ার খুলি।