মাষ্টার মশায়, সেই ছোটবেলায় কবে
আপনাকে দেখেছি মনে পড়ে না,
আসলে আমরা অনেক কিছুই ত হারিয়ে ফেলি
হারিয়ে ফেলি ছোট বেলার শোনা গল্পগুলো।
রাত শেষ হলে শিশিরের শীত সরলতা
যেভাবে লেগে থাকে সবুজ ঘাসের ‘পর
আবার রোদ উঠলেই হারিয়ে যায়
ঠিক কি তেমনই ?
মাষ্টার মশায়, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির রোদ্দুরে
হাঁটি অনেক দূর,
দূরত্ব তটরেখার ব্যাপ্ত চরাচরে
দেখি জলোচ্ছ্বাস
দৈনন্দিন পৃথিবীর বুকে এক রাশ ধুলো,
অলীক স্বপ্ন ভেসে আসে
এক বিবর্ণ দুপুরের জলছবি
ছিপছিপে চেহেরার দাড়ি মাখা বছর তিরিশের
এক মায়াবী মুখ,
অনভিপ্রেত এক নির্ভেজাল চাওনি।
তখন ত কপালকুন্ডলার হারানো পথিক
আমাদের ভাবনা জুড়ে
সেই চেনা-অচেনা গল্পের মাঝে
কখন বসিয়েছি আপনাকে খেয়াল নেই।
অজস্র স্বপ্নের ভিড়ে
আপনি একাকার মিশে গেছেন
মিশে গেছেন শুধু ভালবাসাকেই সম্বল করে
প্রাপ্তি বলতে সেই ভালবাসা।
আমার এ লেখনী হোক আজ স্বগতোক্তি
পাখিরা উড়ুক ডানা মেলে
সমস্ত ভাবনা হোক উন্মুক্ত
দূর নক্ষত্রলোকে গানের মতই
ব্যাপ্ত হোক মহৎ জীবন,
হৃদয়ের শুদ্ধতা আসুক দ্বিধাহীন
ক্ষমা প্রার্থনায়,
অন্তর্লোকে গোপন কান্নার স্রোত
শুধু শিশির হয়েই ঝরুক
ঝরুক নিদারুণ দুঃখ শোকে,
আন্দোলিত হোক প্রতিটি ধ্বনি
বিহ্বল জীবনের গানে গানে।
মাষ্টার মশায়, কিছুই ত হয়নি পাওয়া
নির্ভেজাল উদারতা, প্রদীপ্ত কাননে
অজস্র ফুলের যে চারা বপণ হয়েছিল
তা আজ ফুলে ফুলে হিন্দোলিত
আপনি দেখলেন না
আপনি দেখতেই পেলেন না,
কোনো এক বর্ষমুখর সন্ধ্যার রিহার্সালে
আপনার মুক্ত কন্ঠের নিভৃত সুরের মূর্ছনা
পৌঁছে গিয়েছিল আঁধার ভেদ করে
পাহাড়ি খরস্রোতা ঝরণার কাছে
যেখানে শুধু জোনাকিরা ভেসে বেড়ায়
ঝিঁঝিঁরাও তখন নিশ্চুপ
পাতা ঝরা নিস্তব্ধতা
আপনার উন্মীলিত হৃদয়ের উচ্ছ্বাস
জ্যোৎস্নার মত ঝরেছিল
অথচ সত্তার আকাশে বোঝার মত
একটুকরোও মেঘ ছিল না,যে মেঘ বৃষ্টি ধরে রাখে
আর পৃথিবী শীতল করে।
মাষ্টার মশায়, রোদ ছায়ার পৃথিবীর বুকে আপনি নির্লিপ্ত
নীরব মৃত্যু নিয়ে গেছে স্থবির চেতনা বোধ
তবে আপনি আছেন
বেঁচে আছেন আলোর দিশারী শিল্পী হয়ে
উজ্জ্বল ধ্রুব তারা হয়ে
দূর অসীম নক্ষত্রলোকে
যেখানে আছে অজেয় শান্তির নীড়
যেখানে নক্ষত্র খচিত শুভ্র ফুলেরা ফোটে
এ কোনো শোকগাথা নয়
নয় কোনো সান্ত্বনার প্রতিশ্রুতি
এ হল নির্বোধ নির্বাক অন্তর উপলব্ধির
এক মুঠো বিশুদ্ধ ভালবাসা
যা ধাবিত আপনার দিকে
শুধু আপনার দিকেই।