রাত্রে থেকে যাওয়াটা সার্থক
রাত্রে থেকে যাওয়াটা সার্থক হয়েছে, তা খানিকটা বাদেই কাকাবাবু প্রমাণ করে দিলে।
ভাড়া-করা লঞ্চটায় শতরঞ্চি পাওয়া যায়নি, পাওয়া গিয়েছিল দুটো ছেড়া মাদুর। তাই পেতে ওরা বসেছিল ডেকের ওপরে। আকাশ মেঘলা, চাঁদ ওঠেনি। চারপাশটা কী রকম গা-ছিমছমে অন্ধকার। নদীর জলের ছলাৎ ছিলাৎ শব্দ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। নদীটা খুব চওড়া হলেও ওদের লঞ্চ রয়েছে এক দিকের পাড় ঘেঁষে। নদীর দুদিকেই জঙ্গল। স্পিডবোটের চালক কাশেম অবশ্য ভরসা দিয়েছে যে, এদিককার জঙ্গলে বাঘ নেই, কারণ এখানে জঙ্গলটা বেশ সরু, তার ওপারেই আর একটা নদীর মুখ। কিন্তু নদীর ওপরের জঙ্গলটায় নির্ঘাত বাঘ আছে। ওই জঙ্গলটার নামই হল বাঘমারা।
বিমান জিজ্ঞেস করেছিল, বাঘ তো সাঁতরে আসতে পারে শুনেছি?
কাশেম আমতা আমতা করে বলেছিল, তা পারে। তবে এত চওড়া নদী, স্রোতের টানও খুব, এতখানি সাঁতরে বাঘ আসবে না।
রণবীর ভট্টাচার্য বলেছিলেন, সুন্দরবনের বাঘকে বিশ্বাস নেই, ওরা সব পারে। এরকম ফেরোশাস বাঘ আর সারা পৃথিবীতে নেই। এখানকার প্ৰত্যেকটা বাঘই নরখাদক।
বিমান জিজ্ঞেস করেছিল, রণবীরবাবু, আপনি কখনও বাঘ দেখেছেন? আপনি তো অনেকবার এসেছেন এদিকে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, আমি যখন চব্বিশ পরগনার এস. পি. ছিলাম, তখন বেশ কয়েকবার। এদিকে আসতে হয়েছে। তবে বাঘ-টাঘ কখনও দেখিনি। আমি এই সব বিশ্ৰী জন্তুজানোয়ারের থেকে সব সময় দূরে থাকতে চাই।
কাশেম বলল, আমি একবার স্যার প্রায় বাঘের মুখে পড়েছিলুম।
কোথায়?
আপনার ওইদিকটায় হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী। সেখানে ছোট মোল্লাখালি বলে একটা গ্রাম আছে। আমার বাড়ি সেখানে। সেই গ্রামে একবার বাঘ এসেছিল। এই তো মোটে দুবছর আগে—
তারপর শুরু হয়ে গেল বাঘের গল্প।
কাকাবাবু কিন্তু এই গল্পে যোগ দেননি। তিনি ওপরেও আসেননি। তিনি লঞ্চের নীচতলাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন একটা লম্বা টর্চ জেলে। কী যে তিনি খুঁজছেন, তা তিনিই জানেন। তাঁর ক্রাচের ঠক ঠক শব্দ শোনা যাচ্ছে ওপর
রণবীর ভট্টাচাৰ্য কয়েকবার কাকাবাবুকে ডেকেছিলেন ওপরে আসবার জন্য। কাকাবাবু বলেছিলেন, তোমরা গল্প করো না, আমি পরে আসছি।
রণবীর ভট্টাচার্য এমন একটা মুখের ভাব করেছিলেন, যার অর্থ হল, এমন পাগল মানুষকে নিয়ে আর পারা যায় না!
কাশেম তিন-চারটে বাঘের গল্প বলবার পর রণবীর ভট্টাচাৰ্য তাকে বাধা দিয়ে বললেন, মাত্র পৌনে আটটা বাজে, অথচ মনে হচ্ছে যেন নিশুতি রাত। আমার ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। ওহে কাশেম, দ্যাখো না, আর এক রাউণ্ড চা পাওয়া যায় কি না?
কাশেম চলে গেল চা আনতে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বললেন, মাঝে-মাঝে এরকমভাবে রাত কাটানো মন্দ না। তবে বাঘ-ফাগ না এলেই বাঁচি। আর ডাকাত-ফকাত যদি এসে পড়ে, আমি একদিনে দুবার ডাকাতদের সঙ্গে লড়াই করতে পারব না!
বিমান বলল, এখানে দুটো লঞ্চ মিলে আমরা অনেক লোক, এখানে ডাকাত আসবে কোন সাহসে?
আরো ভাই আপনি জানেন না। যদি একটা ছোট মেশিনগান নিয়ে আসে, তা হলে আমরা সবাই ছাতু হয়ে যাব। বাংলাদেশ ওয়ারের পর এইসব বডর এরিয়ায় অনেকের কাছেই লাইট মেশিনগান ছিল।
সন্তু বলল, নীচে গিয়ে রেডিওটা চালিয়ে দিলে হয় না? এই রেডিওতে নিশ্চয়ই লোকাল স্টেশন পাওয়া যাবে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, তা পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, কাঁটা ঘুরিয়ে দাখো। শুনে এসো তো স্থানীয় সংবাদে আমাদের নিরুদ্দেশ সংবাদ শোনায় কি না?
সন্তু সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখল, সিঁড়ির ঠিক নীচেই কাকাবাবু দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে টর্চ জ্বেলে অন্য হাতে সিঁড়ির একটা ধাপ ধরে টানাটানি করছেন তিনি।
সন্তু নেমে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনি কী খুঁজছেন কাকাবাবু?
কাকাবাবু বললেন, যা খুঁজছিলাম, তা বোধহয় এবারে পেয়ে যাব, রণবীরকে ডাকো তো!
সন্তুর ডাক শুনে রণবীর ভট্টাচাৰ্য আর বিমান দুজনেই নেমে এল।
কাকাবাবু বললেন, এবারে তোমাদের সাহায্য চাই।
বিমান বলল, কী হয়েছে, কাকাবাবু?
তোমরা একটা জিনিস চিন্তা করেনি। লঞ্চের বিভিন্ন দেয়ালে হাতুড়ি কিংবা শাবলের দাগ দেখেছিলে নিশ্চয়ই। ডাকাতরা লঞ্চের দেয়াল ভাঙবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কেন? শুধু শুধু ইস্পাতের দেয়াল ভেঙে তাদের কী লাভ? আমি অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা করে দেখলুম, এই নীচতলায় সব কাঁটা ঘর আর মেশিনপত্রের জায়গা ছাড়াও চৌকো খানিকটা জায়গা রয়েছে। সেরকম রাখার উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে না। ওই জায়গাটা কিসের হবে? সেই জায়গাতে ঢোকার পথই বা কোথায়? ডাকাতরাও নিশ্চয়ই এটা লক্ষ করেছে, তাই তারা সেই চৌকো জায়গাটার দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা পারেনি। আমাদের পারতে হবে!
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, আমরা কী করে এই ইস্পাতের দেয়াল ভাঙব?
আমরা ভাঙব না, আমরা সেখানে ঢোকার রাস্তা খুঁজে বার করব। আমি দেয়ালের সব দিক তন্ন তন্ন করে দেখেছি, কোথাও কোনও ফাটল নেই। বাকি আছে এই সিঁড়িটা। এখন তোমরা দ্যাখে তো, এই সিঁড়িটা এখান থেকে সরিয়ে ফেলা যায় কি না!
সবাই মিলে টানাটানি করেও সে সিঁড়ি আধা ইঞ্চিও কাঁপানো গেল না। সেটা একেবারে পাকাপাকিভাবে নাটবলুন্টু দিয়ে আটা।
রণবীর ভটাচাৰ্য বললেন, নাঃ কাকাবাবু, আপনার ডিডাকশান ঠিক হল না। এই সিঁড়ির তলায় কিছু নেই।
কাকাবাবু তাতেও দমে না গিয়ে বললেন, এইবার দ্যাখো তো, এই সিঁড়ির ধাপগুলো ডিটাচেবল কি না?
এবারে ওরা সিঁড়িটার প্রত্যেক ধাপ ধরে টানাটানি শুরু করল। তার ফল পাওয়া গেল হাতেহাতেই। একদম ওপরের সিঁড়ির দুটো ধাপ খুলে এল সামান্য টানতেই। কাকাবাবু সেখানে টর্চের আলো ফেললেন।
সেখানে সিঁড়ির নীচে দেয়ালে একটা চৌকো বড়ার দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। এক দিকে একটা বোতাম। বিমান সেই বোতাম টিপতেই খুলে গেল একটা চৌকো দরজা।
বিমান চেঁচিয়ে বলল, কাকাবাবু, এর ভেতরে আর একটা সিঁড়ি আছে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, কাকাবাবু, পায়ের ধুলো দিন। সত্যিই আপনি অসাধারণ! এ-ব্যাপারটা আমার মাথাতেই আসেনি।
কাকাবাবু নীচে থেকে টৰ্চটা বিমানের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, দ্যাখো তো, ভেতরে কী দেখা যাচ্ছে?
বিমান টর্চটা ঘুরিয়ে সেই চৌকো গর্তটার মধ্যে ফেলে উত্তেজিতভাবে বলল, এর ভেতরে অনেক কিছু আছে! একটা বিছানা, প্রচুর বই আর কাগজপত্তর
কাকাবাবু শান্ত গলায় বললেন, আমি জানতুম, আমি জানতুম! সমস্ত বই আর কাগজপত্র ডাকাতরা নিয়ে যাবে, এ হতেই পারে না?
রণবীর ভট্টাচাৰ্য আফসোসের সুরে বললেন, পুলিশ ডিপার্টমেন্টটা একেবারে হোপলেস হয়ে গেছে। আগে যারা এনকোয়ারি করতে এসেছে, তাদের এ ব্যাপারটা একবারও মাথায় খেলেনি!
বিমান বলল, আমি ভেতরে নেমে দেখছি!
কাকাবাবু সিঁড়ির ওপরে উঠে এলেন চৌকো গর্তটার কাছে!
বিমান নীচে থেকে বলল, এখানে প্রচুর বইপত্তর, রীতিমতন একটা লাইব্রেরি। অনেক বই মেঝেতে ছড়ানো..একটা দেয়াল-আলমারিও রয়েছে, তার পাল্লা খোলা…ওমা, একী! মাই গড?
কী হল, বিমান? কী দেখলে?
একজন মানুষ! হাত-পা বাঁধা।
কাকাবাবু এবারে আর শান্তভাব বজায় রাখতে পারলেন না। চিৎকার করে বললেন, মানুষ? ইংগামার স্মেল্ট? তাঁকে আমরা খুঁজে পেয়েছি! বিমান, বেঁচে আছেন তো উনি? বিমান!
বিমান বলল, কিন্তু, কিন্তু…কাকাবাবু, ইনি তো সাহেব নন, এ তো একজন বাঙালি! বেঁচে আছে এখনও!
রণবীর ভট্টাচার্য বললেন, দাঁড়ান, আমি আসছি!
বেশি তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে তিনি সিঁড়ি দিয়ে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলেন নীচে। কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গে বললেন, আমার লাগেনি। কই, কই, লোকটা কই!
ভেতরের লোকটি ইংগামার স্মেল্ট নয় শুনে কাকাবাবু যেন দারুণ হতাশ হয়ে পড়লেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, আমি আর ওই সরু সিঁড়ি দিয়ে নামব না। লোকটিকে ওপরে তুলে নিয়ে এসো।
এবারে কাকাবাবু ডেকের ওপর উঠে মাদুরে বসলেন। তারপর নিশ্বাস নিতে লাগলেন জোরে জোরে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য আর বিমান লোকটিকে ধরাধরি করে নিয়ে এল ডেকের ওপরে। হাত-পা-মুখ বাঁধা একটি বছর তিরিশের বয়েসের লোক। গায়ে একটা নীল জামা আর খাঁকি প্যান্ট। লোকটির চুলে আর ঘাড়ে চাপ-চাপ রক্ত শুকিয়ে আছে। ওর জ্ঞান নেই, কিন্তু ক্ষীণ নিশ্বাস পড়ছে।
ঠিক সেই সময় চা নিয়ে উপস্থিত হল স্পিডবোটের চালক কাশেম। স্পিডবোট থেকে ওপরে উঠে এসে সে দারুণ চমকে গেল। এর মধ্যে একজন লোক বেড়ে গেছে!
কাশেম জিজ্ঞেস করল, স্যার, এ কে? কোথায় ছিল এ লোকটা?
রণবীর ভট্টাচাৰ্য জিজ্ঞেস করলেন, তুমি চেনো নাকি লোকটাকে?
কাশেম বলল, না স্যার। কিন্তু… এ লোকটাকে কোথায় পেলেন?
কাকাবাবু বললেন, ছোট সাধুবাবা বোধহয় এসে চিনলেও চিনতে পারত!
লোকটার হাত-পা খুলে দাও; দ্যাখো, যদি ওকে বাঁচাতে পারো?
বিমান বলল, আমি ফার্স্ট এইড জানি। আমি দেখছি।
লোকটির হাত-পা-মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে চোখে জলের ঝাপটা দেওয়া হল। বিমান নিজের রুমাল দিয়ে ওর মাথা মুছে দিতে গিয়ে দেখল, খুলিতে অনেকখানি ফাঁকা হয়ে গেছে। কেউ কোনও ধারাল অস্ত্ৰ দিয়ে ওর মাথায় মেরেছে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, মাথায় এরকম ক্ষত, নিশ্চয়ই ওর অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। কদিন ধরে ওখানে পড়ে আছে কে জানে। কিন্তু কী কড়া জান দেখেছেন, এখনও মরেনি। লোকটা যদি বাঁচে, তা হলে কাকাবাবু, ও আপনার জন্যই বাঁচল! আজি রাত্তিরে আমরা এখানে থেকে না গেলে ও ওই চোরাকুঠুরির মধ্যেই পচে গলে শেষ হয়ে যেত।
কাকাবাবু বললেন, লোকটার জ্ঞান ফিরলে অনেক কথা জানা যাবে। আমাদের এখানকার চোর-ডাকাতদের বুদ্ধি মোটেই কম নয়। আমার আগেই তারা গোপন কুঠুরিটায় ঢোকার পথ ঠিক বার করে ফেলেছে।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, ওর ভেতরে একটা ছোট্ট সিন্দুক মতন রয়েছে, তার পাল্লা খোলা। সেখানে টাকা-পয়সা, সোনা-দানা যাই হোক দামি কিছু জিনিস ছিল নিশ্চয়ই। তা নিয়ে ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে।
বিমান কাশেমকে বলল, তুমি এক কাপ চায়ে অনেকখানি চিনি মিশিয়ে দাও তো! থুকোজের বদলে চিনি খাওয়ালেই কিছুটা কাজ হতে পারে।
অজ্ঞান লোকটির মুখ ফাঁক করে সেরকম চা জোর করে ঢেলে দেওয়া হল তার গলায়। একটু বাদে লোকটি উঃ উঃ শব্দ করে একটু মাথা নাড়াচাড়া করল কিন্তু তার জ্ঞান ফিরল না।
কাকাবাবু বললেন, থাক, থাক, এখনই ওকে বেশি চাপ দেওয়া ঠিক নয়। তাতে ফল খারাপ হতে পারে। যেটুকু চিনি পেটে গেছে তা যদি বমি না হয়, তবে ওতেই কাজ হবে।
রণবীর ভট্টাচার্য বললেন, বিমানবাবু, ইউ আর অ্যান অ্যাসেট। আপনি আজ যা সাহায্য করলেন, তার তুলনা নেই। তবে, এই লোকটার হাত আর পা দুটো আবার ওই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন।
সন্তু অবাক হয়ে তাকাতেই তিনি আবার বললেন, বলা তো যায় না! হয়তো মটকা মেরে পড়ে আছে। কিংবা, একটু বাদে ভাল করে জ্ঞান ফিরলেই হঠাৎ জলে লাফিয়ে পড়তে পারে। এদের যা জীবনীশক্তি, কিছু বিশ্বাস নেই।
কাকাবাবু বললেন, সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছ। হাত-পা বেঁধে রাখাই ভাল।
ঠিক এই সময় একটা রাতপাখি ওদের মাথার ওপর দিয়ে খ-র-র খ-র-র শব্দে ডেকে উড়ে গেল। তারপরেই শোনা গেল একটা জাহাজের ভোঁ।
রণবীর ভট্টাচাৰ্য বললেন, এইবার বোধহয় আমাদের খোঁজে কোনও লঞ্চ আসছে।
সবাই উঠে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাল। কিন্তু কোনও লঞ্চ দেখা গেল না। চতুর্দিকে জমাট অন্ধকার। খানিকক্ষণ প্রতীক্ষ্ণ করেও কোনও আলো দেখা গেল না।
কাশেম বলল, ওটা স্যার বোধহয় সমুদ্রের কোনও জাহাজের ভোঁ। রাক্তিরবেলা অনেক দূর থেকে আওয়াজ পাওয়া যায়।
রণবীর ভট্টাচার্য বললেন, দূর ছাই! লঞ্চ এলে নিশ্চয়ই ভাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত! যাও হে, তোমার ফেনাভাত আর নুনই নিয়ে এসো। সারা দিন যা ধকল গেল, বেশ খিদে পেয়ে গেছে!
আধা ঘন্টার মধ্যেই ভাত এসে গেল। লঞ্চের ছাদে বসে সেই শুধু ভাত আর নুনই যেন অমৃতের মতন লাগল সবার। অভাবের সময় যা পাওয়া যায়। তাইই ভাল লাগে। কিছু না খেতে পাওয়ার চেয়ে শুধু গরম ভাতও কত উপাদেয়!
খাওয়া-দাওয়া শেষ হবার পর কাকাবাবু বললেন, এবারে আমি গোপন কুঠুরির কাগজপত্র পরীক্ষা করব। তোমরা আমাকে ওখানে নামতে একটু সাহায্য করো।
এই লঞ্চে নিশ্চয়ই আলো জ্বালার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু চোর-ডাকাতেরা ডায়নামো বা ব্যাটারি সবই চুরি করে নিয়ে গেছে। কাকাবাবু টাৰ্চটা বগলে চেপে ধরে অতি কষ্টে ছোট্ট সিঁড়ি দিয়ে গোপন কুঠুরিটার ভেতরে নামলেন।
একটু বাদেই তিনিই চেঁচিয়ে বললেন, রণবীর, এখানে ইংগামার স্মেল্ট-এর ডায়েরি রয়েছে। অনেক বইতেই তাঁর নাম লেখা। সুতরাং এই লঞ্চটাতে যে তিনি ছিলেন, তাতে আর কোনও সন্দেহই নেই। তোমরা ওপরে থাকো। আমি রাতটা এই ঘরেই কাটিয়ে দেব!