লতিফ তোমার কাছে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করি।
এখনও এখানে আছ, মনে হয়, এই বারান্দায়,
বৈঠকখানায় কিংবা ছমছমে সিঁড়ির আঁধারে।
লতিফ তোমার হিমশীতল নিঃশ্বাস
আমার জুলফি ছুঁয়ে যায়। কড়িকাঠে,
দেওয়ালে চৌকাঠে কুলুঙ্গিতে,
যেদিকেই তাকাই তোমার
চক্ষুদ্বয় জলের ফোঁটার মতো ঝুলে থাকে বিষম নাছোড়।
না, তুমি অমন করে আমাকে দেখো না,
দেখো না লতিফ।
একদা তোমাকে আমি বড় বেশি ঈর্ষা করতাম;
তোমার সোনার সিগারেট কেস, সুট-টাই, আসবাব দেখে
কেমন টাটাত চোখ, সেসব ব্যসন
করতলগত
করার নচ্ছার লোভ লুকিয়ে শার্টের অন্তরালে,
বুকের তলায়,
আমি হাসতাম, তুমি ‘নাও, সিগারেট খাও’ বলে
সুদৃশ্য সোনালি কেস দিতে খুব ব্যগ্র-হাতে নিপুণ বাড়িয়ে।
অলীক দেরাজ থেকে তোমার বিশদ জীবনের
নীল-নকশা চুরি করে, নিজে ব্যবহার
করতে চেয়েছি কতদিন বস্তুত কাঁথায় শুয়ে।
লতিফ তোমার কাছে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করি।
এই তো তোমাকে আমি কালকেও প্রবল
ঈর্ষা করতাম, আজ সেই
বিচ্ছিরি কুটিল পোকাটাকে নির্দ্বিধায়
দিয়েছি বিদায়।
নিজে বেঁচে আছি বলে তৃপ্তি। আজকেও,
যখন আমার বুক বোমা-ধ্বস্ত শহরের মতো
হুবহু হওয়ার কথা, বৈরাগ্যে অরণ্যে
মুখ লুকানোর কথা আজকেও আমি
আয়নায় নিজের পরিপাটি প্রতিচ্ছবি দেখে সুখে
ঈষৎ হেসেছি; স্ত্রীর সাথে খুনসুটি
করে কিছুকাল গলিত গলির মোড়ে
তোফা ধরিয়েছি সিগারেট।
তুমি আজ সব ঈর্ষা দ্বন্দ্ব সব কলহের পরপারে। তুমি
নিস্পন্দ তোমার খাটে। মনে হয় হয়তো চোখ মেলে
এক্ষুণি এগিয়ে দেবে তোমার সোনালি কেস আমার দিকেই
অবলীলাক্রমে, বলবে, ‘নাও, সিগারেট খাও।‘ নাকি
রয়েছ দাঁড়িয়ে ঝুলবারান্দায় কিংবা বাথরুমে
ধুতে গেছ বাসি মুখ। ইতিমধ্যে তোমার রোরুদ্যমানা স্ত্রী-র
ব্লাউজ-উপচে-পড়া কম্পমান স্তন আড়চোখে
নিলাম বিষম দেখে, অবাধ্য অসভ্য রক্তে ডাকে বার-বার
লালচক্ষু তৃষিত কোকিল।
লতিফ তোমার কাছে হাঁটু মুড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করি।