ক্রুদ্ধ-কবির ব্রাত্য-কাব্য
গাল দু’টি ভিতরে ঢোকা। উচু খাঁড়া নাক। চোয়াল ভাঙা। মুখটা অনেকটা তোবড়ানো ঘটির মতো। মাথাটা কাতলা মাছের মতা বড়। চশমার পুরু কাচের আড়ালে বড় বড় চোখ দুটি টুনি লাইটের মতা জ্বলছে। ইনি হচ্ছেন সেই কবি যিনি কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন ‘ধূর্তের ধারাপাত’। তারও কয়েক বছর আগে তার ‘পন্ডিতের পন্ডশ্রম’ প্রকাশিত হয়ে বোদ্ধা পাঠকের মনে আলােড়ন তুলেছিল। একেবারে তার প্রথম দিকের কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বিভ্রান্তের বৈভব’, যা পড়ে পাঠকরা হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন। কী আপসোসের কথা, এমন একটা শ্যাওলা ধরা স্যাতস্যাতে অন্ধ কুঠরির মধ্যে তিনি বাস করেন। আজকের দিনে এমন হওয়া কি সত্যিই উচিৎ। যখন দেখা যাচ্ছে তার সময়কার সব স্মার্ট কবি-লেখকরা, আগাম টাকা পেয়ে, গ্রান্ট পেয়ে, পুরস্কার পেয়ে, নতুন গদীর নরমে শরীর ডুবিয়ে আরামে দিন কাটাচ্ছেন। কবিতা উৎসেবে দেশ বিদেশ ঘুরে আসছেন প্লেনে। সরু প্যাকাঠির মতোে লম্বা পা ফেলে তিনি বকের মতাে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ছাদে মাথা তার ঠেকে যাবার উপক্রম। এতটা নীচু ছাদ। এ জন্য তিনি মাথা নিচু করে, পিঠটা কুজো করে নিলেন খানিকটা। আমাকে দেখে বললেন, কি চাই আপনার?
– আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি।
– আমি কি সিনেমা আর্টিষ্ট না পলিটিক্যাল নেতা যে আমার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন?
– না তা নয়। আপনি একজন কবি, তাই আপনার কাছে আপনার লেখা সম্পর্কে কিছু জানতে এসেছি।
– আমি কাউকে সাক্ষাৎকার দিই না।
– কেন?
– আমার ইচ্ছে। আপনার আর কিছু বলার আছে?
কথাটা শুনে আমি তার মুখের দিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকি। তিনি তখন জানলা থেকে সরে গিয়ে আমার মুখের উপর জানলাটা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিলেন। আমি তখন শেষকুটো আকড়ে ধরার মতো বললাম,ঠিক আছে সাক্ষাৎকার দিতে হবে না। আমি আপনার কবিতার বই ‘ধূর্তের ধারাপাত’ প্রসঙ্গে কিছু জানতে চাই। আমার এই কথা শুনে কি মনে হলো তার, ক্যাচম্যাচ আওয়াজ করে আধভাঙা দরজার খিলটা খুলে দিয়ে, বললেন, ভিতরে আসুন। বহুল প্রচারিত বাণিজ্যিক একটি পত্রিকা একসময় তার প্রথম প্রকাশিত বই ‘বিভ্রান্তের বৈভব’-এর সমালোচনা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, সমসাময়িক কবিদের মধ্য তিনিই কবিতা সাম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট। সে সব অনেকদিন আগেকার কথা। পরে বোধহয় সে’সব কথা তারা বেমালুম ভুলে গেছেন কিংবা হজম করে ফেলেছেন। একদা তার কয়েক বছরের প্রেমিকা, পরে তার বিবাহিত বৌ, তাকে ছেড়ে চলে গেছেন, তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে। তারপর থেকে বন্ধুরাও কেউ আর খুব একটা আসে না তার সঙ্গে দেখা করতে। সে একা, নিঃসঙ্গ বড়। কবিতাই একমাত্র সঙ্গী তার এখন। ঘরটি একটি চৌকো কুঠরি। আসল এটি একটি গ্যারেজ। কোন এস সহৃদয় ধনী ব্যক্তি দয়া পরবশ হয়ে তাকে থাকতে দিয়েছেন। তবে কবি কারও কৃপা প্রার্থী নন। তার মতে, সে ধনী ব্যক্তি তাকে তার কবি প্রতিভার প্রতি স্বীকৃতি স্বরূপ এ ঘরটি দান করেছেন। এ’ছাড়া বর্তমানে আর কোন উপায় নেই বলেই, তিনি এ ঘরে আছেন, না হলে কবেই অন্যত্র সরে পড়তেন। ছাদ এতাে নিচু যে প্রত্যেকের মাথা ঠুকে যাবে এখানে, এ’কথা ভাবলে, তার বউ ওরফে প্রেমিকা পালানাের ব্যাপারটা মোটেও আশ্চর্য মনে হয় না। সেই স্যাতস্যাতে গ্যারেজ ঘরটিতে গিয়ে ঢুকলেন তিনি। জরাজীর্ণ সােফায় ধুপ করে বসে পড়লেন। ভঙ্গিটা এমন যে, এই অবস্থার মধ্যেই ভাল মানুষের মতো তাকে বাস করতে হবে। আমায় তিনি বললেন, আমার কাছে আপনার কী দরকার ? আমার এখন অনেক কাজ আছে। চর্মসার ঐ পাঁজর ভেদ করে, কী ভীষণ গুরুগন্তীর কন্ঠ বেরিয়ে এলো,এতে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। তিনি আরও বলেন, আমি কে তা জানার জন্য, আপনার কোনো কৌতূহলের কারণ থাকতে পারে না , বলতে বলতে তিনি চশমাটা চোখ থেকে খুলে নিয়ে, হাতে ধরে তার ময়লা পাঞ্জাবি দিয়ে ঘষে ঘষে পরিস্কার করতে লাগলেন। তারপর বললেন, সে যাই হোক …. সৌজন্যের খাতিরে আমি জানাই, আমার নাম বাৎসায়ন মিত্র। নামটা শুনে আপনার মনে কি কোন কৌতূহল হচ্ছে? কুন্ডলী পাকানাে মুর্তির মতো,তিনি আমার দিকে তাকালেন। পুরাে কাঁচ ভেদ করে সে দৃষ্টি যেন আমাকে সম্মোহিত করে ফেললাে। যেন কোনো জ্যোতির্বিদ চেয়ে আছেন দুরবীনে কোনো রহস্য উন্মোচনের জন্য। হঠাৎ তিনি উৎকট ভাবে হেসে উঠলেন। মাঝ পথে হাসি থামিয়ে তিনি বললেন, আমি ভাবছি একজন যথার্থ সুন্দরী যুবতীর কাছে নামটা আমার কেমন শোনাবে, কথাটা বলে তিনি যেন খুব তৃপ্তি পলেন। নামটা কতাে পুরুষালী, কতােটা যৌন আবেদন আছে এতে?
কথাটা বলেই হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, আমার অনেক সময় নষ্ট করে দিচ্ছেন আপনি। সহসা জরাজীর্ণ সােফা থেকে উঠে দাঁড়ানােয় সেটা যেন প্রতিবাদে ক্যাচ ক্যাচ করে উঠলো। তিনি আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেন, আপনি কি আমার নাম শোনেন নি কখনও ? আমি একটু অস্বস্তি বাধ করলাম। আমি বলতে যাচ্ছিলাম, সমালােচকরা বলেন, আপনি – কথাটা শেষ করতে পারলাম না। ‘সমালােচক’ কথাটা কানে যেতেই তিনি যেন ক্রোধে ঝলসে উঠলেন, ‘সমালোচক বলে একটু থামলেন তিনি, পরে তার মাথাটা বিড়ালের মতাে আমার দিকে ঝুঁকিয়ে বললেন, যান বেরিয়ে যান এখান থেকে। তার চোখ কুঁচকে গেল। মুখটা পাথরের মতোেন কঠিন হয়ে উঠল। সমালােচক, নিজেদের কিছু করার মুরোেদ নেই। নপুংসক। খাসি সব। ওরা সকালের দুধ মেশানো চা-তে এক টুকরো রুটির মতো, লেখা ডােবাতে থাকে, যতক্ষণ না সেটা তাদের ফোকলা মাড়ির পক্ষে যথেষ্ট নরম হয়ে পড়ে এবং যে মানুষটা শতবর্ষ আগে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের জন্য ক্রীতদাসের মতো পরিশ্রম করে গেলেন, যখন তার অস্থি মজ্জা অনেক আগেই মিশে গেছে মাটিতে আমাদের চারপাশের ধুলােয়, তখন তার ডি.এন.এ. টেস্ট করে চেঁচাতে থাকে শতবার্ষিকীর জন্য। – যান বেরিয়ে যান। তিনি ক্ষু্ব্ধ স্বরে উদ্ধত ভঙ্গিতে বললেন আমাকে। শিরদাঁড়ায় হূল ফুটছিল। সহ্য করলাম। তাকিয়ে রইলাম সেই মাথার দিকে, যে মাথা দিয়ে বেরিয়েছে ‘বিভ্রান্তের বৈভব’ কিংবা ‘ধূর্তের ধারাপাত’ অথবা ‘পণ্ডিতের পন্ডশ্রম’। ঐ সেই মাথা যা থেকে এমন সব চিন্তা ভাবনার ফুলকি বেরিয়েছে। ভাবলাম এই মাথা থেকেই বেরিয়ে ছিল এমন সব ভাবনা, যা আগে কেউ কখনো তেমন ভাবেননি, প্রকাশ করেন নি। সত্যিই আমি তার সময় নষ্ট করছি, ভাবলাম মনে মনে, সে যা বলছে, তাতে আমার আঁতে ঘা লাগলেও, তার কিছু করার নেই। সে যা বলছে তা তো ভুল নয় মোটেও। বললাম, এক্ষুণি আমি চলে যাব। একটা কথা শুধু জানতে চাই। আপনি জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছেন কিভাবে ? মানে আমি বলতে চাইছি, আপনার কাজ এবং জীবন যাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ এই দুই-এর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখছেন কিভাবে আপনি ? মাফ করবেন, আমি জানি আপনার বই বিক্রি হয় না মােটেও। আপনি কোন রাজনৈতিক দলের নন। কোন গোষ্ঠীর নন। কানাে পত্রিকার সম্পাদক সম্প্রতি আপনার কবিতার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখান না। লোক চক্ষুর সামনে আপনাকে তুলে ধরার জন্য কোনো ইনলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা কোনোে প্রকাশক এগিয়ে আসেন না। নিজেই নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। পুরুস্কার যারা দেন তারা বোধহয় আপনার নামও শােনেন নি তবু আপনি লিখে চলেছেন আপন খেয়ালে। কিন্তু কেন ? তিনি আমার কথা শুনলেন ধৈর্য ধরে, স্থির দৃষ্টিতে আমার চোখে চোখ রেখে। তারপর চোখ থেকে তার চশমাটা খুলে ফেললেন। গায়ে পরে থাকা নােংরা পাঞ্জাবিটা দিয়ে পুরাে কাচদুটি ঘষে ঘষে মুছলেন। খানিকক্ষণ। মাথা নীচু করে চশমার কাচ মুছছিলেন, সেভাবে থেকেই বললেন, ঠিক কথা। কেন লিখি ? সত্যি কথা বলতে তার উত্তর আমি নিজেও জানি না। কেন লিখি? লিখে কি লাভ ? সত্যিই তাে – বলে একটু থামলেন তিনি। চশমাটা চোখে পরে বললন, না লিখে যখন আর কোন উপায় থাকে না, তখন লিখি। না লিখলে, হয়তা আমি এতদিনে পাগল হয়ে যেতাম। তাই কেউ যেন আমাকে দিয়ে এসব লিখিয়ে নেয়। আমি ঠিক জানি না। লেখা আমার কাছে বাঁচবার জন্য। বেচবার জন্য নয়। কিছুদিন ইচ্ছে করেই কিছু লিখিনি। নিজেকে মনে হয়েছিল, একটা লাশ হয়ে যেন বেঁচে আছি, অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম ভিতরে ভিতরে। অসহায় লাগতাে বড়, অস্থিরতা ঘুণ-পােকার মতাে কুরে কুরে মগজ খেতো। অনেক সময় এ’কথা একা একা ভাবতে ভাবতে মনে হয়েছে, কবিতা লেখা এক রকম মােহ। কিংবা তীব্র কোন আরকের নেশা যা একবার ধরল আর ছাড়া যায় না। হেরােয়িনের নেশার মতাে। আমি টের পেয়েছি, একটা লেখা শেষ করার পর, নিজেকে খুব বিধ্বস্ত লাগে। হ্যাঁ, হ্যাঙ্গওভারের মতো। তখন একটু ড্রিঙ্ক করি। খুব মদ টেনে নিয়ে লিখি এমন কথা ভাববার কোন কারণ নেই। বোতলের দরকার হচ্ছে লেখার পরে। চোখের সামনে তখন সরষে ফুলের মতো হলুদ হলুদ বিন্দু ভাসতে থাকে। মাথার ভিতরটা দপদপ করে। বুকের ভিতরের সবকিছু যেন চুরমার হয়ে ভাঙতে থাকে। ঠিক সেই সময় দরকার হয় বোতলের। সব কবিরাই কেবল মদে চুর হয়ে কবিতা লেখে। সাধারণ লোকের এ ধারনা ঠিক নয়। শতকরা নব্বুইভাগ লেখা পড়ে তাে মনেই হয় না যে তারা পূর্বসূরীদের লেখা মন দিয়ে পড়ে। লেখাপড়ার জন্য কমপক্ষ ঘন্টা আট দশ ব্যয় করি আমি , এটা নির্ভর করে দমের ওপর। বাকি যা পড়ে রইল, তার কিছুটা ঘুমের জন্য। কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গ যাপনের জন্য। বাইরে গিয়ে অপরূপ রমণীয় রূপকথার পরীদের দেখে চোখের শুশ্রুষার জন্য, না হলে এই ঘরেই শারীরিক ক্রিয়াদি গ্রহণ-বর্জন, প্রাতরাশ-প্রাতঃকৃত্য, সাজগোজ ইত্যাদি । কিন্তু একটা কথা ভুললে চলবে না, কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখতেই হবে, মনকে নিয়ে একটু খেলা করবার জন্য। বেঁচে থাকার জন্য কিছু রোজগার করা প্রয়োজন। এর জন্য দু-একটি ছাত্র পড়াই আমি। কিছু অনুবাদের কাজ করি বেনামে। কিন্তু যা’ই করি, এসব সত্ত্বেও প্রতিটি শব্দকে থাকা চাই তার যথা স্থানে। কঠিন হোক, সহজ হোক,দৃঢ় হোক, আলগা হােক, তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু দারােগ্য যেন আবার বিচারকের চেয়ারে গিয়ে না বসেন, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন অবান্তর ব্যাপারে কবি আবার যেন না জড়িয়ে পড়েন,সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে। যাক এসব ব্যাপার স্যাপার বলে তিনি থামলেন হঠাৎ। আমি বললাম, বিগত সরকারের গ্র্যান্ট প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কেন?
তিনি এবার ধমকে উঠলেন আমাকে, যারা আমার কোনাে লেখার খবরই রাখেন না, পড়েন নি আমার কোন লেখা, তারা আমায় গ্রান্ট দেবেন কেন, এতে যদি তাদের কোন স্বার্থ না থাকে। আমি কি তাহলে, আমার মেধা বিকিয়ে দেবো তাদের স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য, আপনি কি বলেন? তার চেয়ে না খেয়ে থাকলে বাজারে আলু, পটল বেচবাে। আমার মেধা আমি বেচবাে না কখনোই। সেজন্যই আমি এসেছি আপনার কাছে। আপনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিভ্রান্তের বৈভব’ যখন বের হয়, তখন তার সমালােচনা প্রসঙ্গে আমি লিখেছিলাম, স্বার্থের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা আপনার কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । তারপর আপনি আরও দূটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, সেগুলাের গুরুত্বও কম নয়। পড়লে মগজে আলোড়ন তােলে। তিনি আমার কথা শুনে নীরবে হাসলেন, যেন আত্ম-তৃপ্তির হাসি। আমার কথা শুনে বললেন, আপনাকে ধরে নিয়ে এ পর্যন্ত খুব বেশি হলে আমার পাঠক সংখ্যা ঊনত্রিশজন মাত্র, যারা আমার বই ভালো করে পড়েছেন, বুঝেছেন। আরাও বললেন, আমার আসল নাম বৃন্দাবন মেটে। আদি-বাস ছিল নানুরে, বীরভূমে। বর্তমানে এখানে কলকাতা শহরে থাকি। এখানে প্রথম যখন কবিতা লিখত শুরু করি, তখনকার আমার এক সাহিত্য যশঃপ্রার্থী বন্ধুকে তা দেখালাম। সে বললা, লেখাগুলি মন্দ হয়নি। তবে বৃন্দাবন মেটে নামে কেউ কবিতা ছাপবে না। যতােই ভাল হােক লেখাগুলো। আর অনুগ্রহ করে ছাপলেও, কেউ তা পড়ে দেখবে না ভুলেও এই নামের জন্য। সে-ই আামার নাম পালটে করে দিল ‘বাংসায়ন মিত্র। তারপর থেকে ঐ নামেই আজ অবধি লিখে আসছি। তাতে আর কি লাভ হলো? কেউ কি এখনও পডে আমার লেখাগুলি ? সে বন্ধুর নামটা বলতে পারছি না সৌজন্য বশতঃ। কারণ সে এখন একজন জনপ্রিয় উপন্যাসিক। প্রখ্যাত এক বাণিজ্যিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সে এখন। নামটা আমার সে পাল্টালে কি হবে? লেখা তাে তার মতাে আর পাল্টাতে পারলাম না আমি। ‘জনমােহিনী’ লেখা লিখতে পারলাম কই তার মতাে। রুচিতে বাঁধলাে আমার নিজেকে বিকিয়ে দিতে জনরুচির কাছে। আমি তাে আর সকলের মতাে নই। আমি আমার মতাে। নিজের মেধা বেচবো কি বেচেবাে না, সেটাই হলা আসল কথা। আমি জনপ্রিয় কবি হতে চাই না। বিক্রীত কবি নই আমি বটে । আমার লেখা নিয়ে কোনদিন ‘পপুলার সংস্করণ’ বের হবে না। বহু বিকৃত কবি-লেখক বাজারে পাবেন, যাদের লেখা নিয়ে সম্পাদকরা পত্রিকা ভরান। এবার যান দয়া করে। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। অনেক সময় নষ্ট হলো অযথা আপনার সাথে বকবক করে। বলেই তিনি উঠে দাঁড়লেন সোফা থেকে। আমিও মানে মানে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।