Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পরদিনের ঘটনাও লিখেছিলেন তিনি। ওই ঘটনার জের হিসেবে নয়। সেদিন সারা কলকাতায় একটা চাঞ্চল্য বয়ে গিয়েছিল। খবর রটেছিল—রুশদেশের রণতরী এসেছে বঙ্গোপসাগরে, ঘুরছে; কলকাতায় এসে উপস্থিত হবে যে কোন মুহূর্তে এবং গোলা দেগে ফোর্ট উইলিয়ম উড়িয়ে দিয়ে শহরটাকে লুটে তছনছ করে দিয়ে চলে যাবে।

সকালবেলায়ই উঠেছিলেন বীরেশ্বর রায়। রাত্রে ঘুম হয়নি। চা খেয়ে ফুরসিতে তামাক খাচ্ছিলেন। মাথা ক’ষে আছে। চাকর জলধরকে ডেকে বলেছিলেন—স্নান করব, তেল আন। তেল মাখাবার লোককে ডাক।

তেল মাখাবার জন্যে স্বতন্ত্র লোক আছে। ঘণ্টাখানেক ধরে গা-হাত-পা টিপে তেল মাখাবে। চট-পট শব্দ উঠবে। এ তেল মাখার আরাম আছে—অসুস্থ শরীর সুস্থ হয়। যে তেল মাখায়, সে প্রায় আধা-পালোয়ান-তেল মাখানোর পরিশ্রমে তার শরীরে ঘাম ছুটে যায়। তেল মাখবার সময় সেখানে চাকরবাকর ছাড়া আর কারু যাবার হুকুম নেই। তেলধুতি পরে তেল মাখা সে অবস্থাটা প্রায় উলঙ্গ অবস্থা। বীরেশ্বর রায় জলচৌকীর উপর বসে তামাক খান এবং তেল মাখেন। তেল মাখতে বসবার সময় খানিকটা হুইস্কি খান-তেল মাখা শেষ হলে, স্নানের ঠিক পূর্বে, একবার খান। তার আগে নাপিত ক্ষৌরী করে দেয়। পরামানিক ব্রজলাল—তাঁর বাঁধা মাইনে করা লোক। তেলমাখার সময় সে ব’সে গল্প বলে। একেবারে খাঁটি রূপকথার গল্প। তা ছাড়া বলে খবর। কাজ তার এক দুপুর। হুজুরের ক্ষৌরী-তারপর বাড়ীর লোকজন চাকর-বাকরের চুল কাটা ক্ষৌরী, সে বেলা তিনপ্রহর পর্যন্ত, তারপর তার ছুটি। সেই ছুটির সময় সে গিয়ে শহরের নাপিতমহলে জোটে। সেখান থেকে খবর সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

ব্রজলাল মেদিনীপুরের লোক। বাড়ী তার ঘাটালের কাছে। ঘাটালের বহু লোক, বিশেষ ক’রে মৎস্যজীবীরা, কলকাতায় এসে বাস করছে। ধর্মতলার পুব পাশটায়, যেটা জেলেপাড়া, সেখানে ঘাটালের বহু জেলের বাস। ব্রজলালের এ খবরটা নাপিতমহলের এবং ওই জেলে মহলের—দুই মহলের খবর। নাপিতেরা শুনেছে বড় বড় বাড়ী থেকে। এবং জেলেরা গঙ্গায় মাছ ধরে-সেখান থেকে শুনে এসেছে তারা। কাল জেলেরা প্রহরখানেক বেলা থাকতে জাল গুটিয়ে নৌকো নিয়ে একেবারে গঙ্গা ছেড়ে খালের ভিতর দিয়ে খালে এসে নৌকো বেঁধেছে। তাদের মধ্যে কথা হচ্ছে—আলোচনা চলছে—তারা কলকাতা ছেড়ে পালাবে কি না! কিন্তু ভয় হচ্ছে, ঘাটাল ফিরতে হ’লে গঙ্গার ভাটি ধরে যেতে হবে, ইতিমধ্যে রুশ জাহাজ গঙ্গায় ঢুকে পড়ে থাকলে মরতে হবে সবংশে। রুশদের কামান নাকি রুশদের বড় বড় চেহারার মতই বড় বড়। তেমনি নাকি তেজালো বারুদ। গোলাও তেমনি জবরদস্ত।

নাপিতেরা বলেছে—বাবুরা ভাবছে কি করবে? কেউ বলছে পালানো ভাল। গঙ্গার তীর ছেড়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে যেখানে হোক। খুব বড় বড় যারা তারা ভাবছে পাটনা কাশীর কথা। তবে যারা খুব নামজাদা লোক, কালীপ্রসন্ন সিংহের নাপিত বলেছে—আমার বাবু কাল খুব তকরার করলেন ওই দত্তবাবুদের সঙ্গে। বললেন—ইংরেজদের কামান বড়—বেশী জবরদস্ত। এদের ক্ষমতাও বেশী। আর এ গুজব ছাড়া কিছু নয়। গত বছর থেকেই এ গুজব মধ্যে মধ্যে ওঠে। বাজে—ও সব বাজে।

ব্রজলাল বললে—তা দত্তবাবু বললে—তুমি হলে ইংরেজের ভক্ত হে। ইংরেজ ছাড়া দোসরা আর কেউ নেই দুনিয়ায়। কিন্তু রুশরা কত বলবান তা দেখেছ। এক-একটার চেহারা কি? আর দেশটা কত বড়? কত লোক ওদের! আমি বলছি—আমি খুব খাঁটি খবর শুনেছি, এদিকে জাহাজ এসে কলকাতা উড়িয়ে দেবে—ওদিকে কাবুল হয়ে এসে দুম দুম ক’রে ঢুকে পড়বে। কাল বিকেল থেকে খবরটা চাউর হয়েছে—চারদিকে ফুসফুস গুজ-গুজ চলছে হুজুর।

বীরেশ্বর রায়ের ভুরু কুঁচকে উঠল। কথাটা বছরখানেক ধরে মধ্যে মাঝে উঠছে। গতবার খবরের কাগজে পর্যন্ত খবরটা উঠেছিল।

তা মন্দ হয় না। এ ব্যাটাদের বাড় বেড়ে গেছে। বড় বেড়েছে। গতকাল ঘোষাল নায়েব একটা কথা বলেছেন—খাঁটি কথা। এদেশের সব ওই ইংরেজরা করতলগত করবে। ডালহৌসি এসে তার গোড়াপত্তন করলে। এসে অবধি রাজ্যের পর রাজ্য গ্রাস করে চলেছে। প্রথমে মূলতান—তারপর রণজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর গোটা পাঞ্জাব, ওদিকে মারাঠা পেশোয়ার মৃত্যুর পর, তার পোষ্যপুত্র নাকচ করে ‘সাতারা’, তারপর ‘ঝাঁসি’, ‘নাগপুর’ কেড়ে নিলে; হায়দ্রাবাদের নিজামের বেরার নিয়েছে, বলতে গেলে গোটা ভারতরাজ্যই তো গ্রাস করেছে। ওদিকে ব্রহ্মদেশে যুদ্ধ করে জিতেছে। বাকী আর কতটুকু? অযোধ্যার নবাব ওয়াজিদ আলি শা’র এলাকা আর দিল্লীর বাদশার এলাকা খাস দিল্লী আর তার চারিদিকে খানিকটা। এ আর কতক্ষণ? এও থাকবে না। নিশ্চয় থাকবে না এ বীরেশ্বর রায় কেন একটা বালকেও তা বলতে পারে। অযোধ্যার নবাবের সঙ্গে নাকি ঝগড়া লাগাবার চেষ্টাও হচ্ছে এদের তরফ থেকে। এর পরই কোনদিন শোনা যাবে—গেল ওয়াজিদ আলি শা’র রাজ্য। এদিকে ব্যবসা করতে এসে সব ব্যবসাই একচেটে করেছে। কোম্পানীর ব্যবসা তো আছেই। নিমকমহল আফিংমহল একচেটে। তারপর নতুন নতুন সাহেবরা আসছে, কোম্পানী খুলে ব্যবসা করছে। নীলকুঠী, রেশমকুঠী, ব্যাঙ্ক, কয়লা—এ সবই ওদের হাতে। দ্বারকানাথ ঠাকুরের য়ুনান ব্যাঙ্কার টেগোর উঠে গেল, ঠাকুরবাড়ীর দেনা অগাধ। এখন দেবেন ঠাকুর সব সম্পত্তি প্রসন্নকুমার ঠাকুরের হাতে দিয়েছেন—তিনি দেনা শোধ দিচ্ছেন। আর একদিকে পাদরীরা রাজত্বের দাপটে লোককে ক্রীশ্চান করছে। থাকবার মধ্যে আছে তো দেশের দুটি জিনিস—জমি জমিদারী আর জাতধর্ম। জাত মারতে শুরু করেছে-আবার জমিদারীতেও হাত দিচ্ছে। এ যেন একবারে খুব হিসেব-নিকেশ করে ছ’কে কাজ করছে।

মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানী হচ্ছে। জন রবিনসন মহিষাদলের জমিদারী শীলেদের কাছে নিচ্ছে। ওরা সব নেবে। নায়েব ঘোষাল ঠিক বলেছেন। এদেশের মানুষকে গোলাম বানিয়ে ছেড়ে দেবে।

পুরনো বাদশাহী আমলের রাজা জমিদারদের অবস্থা আজ যেন বীরেশ্বর রায়ের কাছে নতুন চেহারায় দেখা দিল।

মহিষাদলের রাজার অনুপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট এসে জবরদস্তি ফটক খুলিয়ে রাজবাড়ীতে ঢুকেছে। রাণীর চোখের জল পড়েছে—তাতেও তার মন গলে নি। রাণীকে পাল্কী চড়ে দেওয়ানের বাড়ী গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

কারুর ইজ্জত এরা রাখবে না। বর্ধমান-দিনাজপুর—নাটোর—পুটিয়া—বিষ্ণুপুর–সব- যাবে।

হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলেন বীরেশ্বর রায়। চাকরের হাতখানা ঠেলে দিয়ে বললেন—ছাড়। লাখরাজ-ব্রহ্মত্র—দেবোত্তর—পীরোত্তর—নানকার এদেশে লোকে ভোগ করে আসছে চিরকাল। আজ কোম্পানী আইন করে তার ওপর খাজনা বসাচ্ছে। বর্ধমানের রাজা এর জন্য বিলেতে আপীল করেছেন। ভরসা সেই মামলা।

এরা কিছু রাখবে না। নায়েব ঘোষাল ঠিক বলেছেন—জনি শীলদের কাছে জমিদারী নিচ্ছে—এ ওদের এদেশে জমিদারী একচেটে ক’রে বসবার সূত্রপাত!

নীলকর হিসেবে যে অত্যাচার করে-সে বীরেশ্বর জানেন। প্রকারান্তরে তাঁরা দু পুরুষ নীলকরদের টাকা যুগিয়ে সুদ খেয়ে আসছেন। চোখ বুজে থেকেছেন।

জমিদার হলে আর রক্ষে রাখবে না জনি।

উঠে দাঁড়ালেন বীরেশ্বর রায়—এগিয়ে চললেন গোসলখানার দিকে। তেলমাখানো চাকরটা অবাক হয়ে গিয়েছিল। পিঠের তেলটা এখনও বসানো হয়নি। কিন্তু বলতে কিছু ভরসা হল না তার। রায় হুজুরের মুখ থমথম করছে।

স্নান সেরে এসে বীরেশ্বর রায় খাস কামরায় বসলেন। জলধরকে বললেন—কীর্তিহাটের নায়েব ম্যানেজার আর এখানকার নায়েবকে ডাক।

গিরীন্দ্র ঘোষাল এসে বসলেন সামনে, বললেন —কিছু ঠিক করলে বাবা?

—হ্যাঁ। ঠিকই বলেছেন। এ হল ইংরেজদের সব্বনেশে মতলব। কোম্পানীর হয়ে লর্ড ডালহৌসি যেমন গোটা দেশের রাজ্যটা গ্রাস করলে- তেমনি জনিদের মত ছুটো ইংরেজগুলো জমিদারী গ্রাস করতে লেগেছে। জন রবিনসন নিতে চাইলে—নিতে আমাদিগেই হবে। তবে এ বেলাটা থাকুন আপনি। আমি একবার বেরুব। একবার রাধাকান্ত দেব মহাশয়ের কাছ থেকে ফিরে কথা বলব।

—দেব মশায় মহাশয় লোক-মস্ত লোক-কিন্তু তিনি—মানে তাঁর কাছে—

—সেটা ফিরে এসে বলব।

সকালের এ বীরেশ্বর রায় আর এক মানুষ। সন্ধ্যার মুখ থেকে যে বীরেশ্বর রায়—ভার সঙ্গে এ বীরেশ্বরের অনেক তফাত সুলতা।

এ বীরেশ্বর বিষয়ী বীরেশ্বর—সে কালের আধুনিক বীরেশ্বর—গণ্যমান্য বীরেশ্বর। ল্যান্ডহোল্ডার অ্যাসোসিয়েসনের মেম্বার, বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রভৃতি অনেক সভার সভ্য—এমন কি সদ্য প্রতিষ্ঠিত কিশোরীচাঁদ মিত্রের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘সমাজোন্নতি বিধায়িনী সুহৃদ সমিতিরও সভ্য হয়েছেন। কিছুদিন আগে বহু-বিবাহ নিবারণপ্রথা রহিতের জন্য যে দরখাস্ত হয়েছে তাতে তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কিশোরীচাঁদ মিত্র, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রভৃতির সঙ্গে সইও করেছেন। বিদ্যাসাগরের বিধবা-বিবাহ প্রবর্তন আন্দোলনেরও তিনি পক্ষপাতী।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেদিনীপুরেরই লোক—তাঁর মতকেও সমর্থন করেন বীরেশ্বর, কিন্তু প্রীতি শ্রদ্ধা বিশেষ নেই। পণ্ডিত বড় খটরোগা লোক। বীরেশ্বর রায়ের মদ খাওয়ার কথা—সোফিয়াকে রাখার কথা—কলকাতার সমাজে গোপন নেই; তা গোপন রাখতে বীরেশ্বর নিজেও চান না। যে যাই বলুক তা গ্রাহ্যও করেন না। কিন্তু যারা এ নিয়ে খটরোগামি করে তাদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে এড়িয়েই চলেন। কাজ কি? তোমার মত নিয়ে তুমি থাক। আমার মত নিয়ে আমি আছি। আমি বীরেশ্বর রায় আমি সবই বুঝি—বুঝেই করি, তার জন্য তোমার মতামতের ধার ধারিনে। বিদ্যাসাগর তুমি পণ্ডিত, তুমি বিদ্যাসাগর থাক। আমি বীরেশ্বর রায় হয়েই থাকতে চাই। আমার দাম আমি জানি। সেদিন কিন্তু বিদ্যাসাগর মশায়ের কাছে যাওয়ার সংকল্পও তিনি করেছিলেন। কলকাতার সমাজের প্রতিষ্ঠাবান লোক। বড় বড় লোকে কথা শোনে। মহিষাদল মেদিনীপুরে। মেদিনীপুরের একটি প্রাচীন রাজবংশ, হোক তা কয়েকবার হস্তান্তরিত—বংশান্তরিত-তবু মহিষাদল রাজপাট পুরানো বনেদী রাজপাট। বর্গী হাঙ্গামার সময় অনেক করেছিলেন তাঁরা। কামান এনে বসিয়েছিলেন, গোয়া থেকে গোয়ানীজ গোলন্দাজ এনে বসিয়েছিলেন বর্গীদের সঙ্গে লড়াই দেবার জন্যে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় প্রচুর অন্নদান করেছেন। সেই রাজপাট চলে যাবে। ভুক্তান হবে নীলকর কুঠীয়ালের সম্পত্তির সঙ্গে! এই কথাটাই তিনি বলবেন পণ্ডিত বিদ্যাসাগরকে। তিনি চেষ্টা করলে অনেক কিছু হতে পারে। শীলেরা ধনী সুবর্ণবণিক। পণ্ডিত বিদ্যাসাগর যদি সুবর্ণবণিক সমাজের মল্লিক রাজাদের এবং অন্য অন্য বড় বড় ধনীদের বলেন—তবে কাজ নিশ্চয়ই হবে।

বিদ্যাসাগরকে তাঁর ভাল লাগেনি। বিদ্যাসাগর তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিলেন না বলে মনে হল। বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র কিছু বড় তাঁর চেয়ে—তিনি তাঁকে কয়েকবার আপনির মধ্যে তুমি বললেন। বললেন—শুনেছি কীর্তিহাটের কথা। আপনাদের কথা। খুব নাকি কড়া জমিদার। কুমোরেরা হাঁড়ি তৈরীর জন্যে মাটি নিলে মাশুল আদায় হয়।

রায় বলেছিলেন—হ্যাঁ তা হয়। কাঁসাইয়ের ধারে ময়নার রাজাদের তৈরী বাঁধটা ভেঙে গিয়েছিল—সেটা মেরামতের জন্য পাঁচ রকমে টাকা তুলতে হয়েছিল। সেটা মেরামত হয়েছে। নিরাপদ হয়েছে ওরাই।

—হ্যাঁ তাও শুনেছি। কিন্তু তারপর তো সেটা ওঠেনি, কায়েম হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণের এক জমিদারের রেভেন্যুর জন্যে জেল হয়েছিল; তার নায়েব সেবার প্রজাদের কাছে গারদ সেলামী চেয়েছিল-জমিদারকে খালাস করবে বলে। জমিদার খালাস পেয়েছে—বাড়িতে বসে গড়গড়া টেনে বাঈ-নাচ করিয়ে তামাক খাচ্ছে-কিন্তু গারদসেলামী ওঠেনি। তা আমার কাছে কি জন্যে আসা হয়েছে?

বীরেশ্বর রায়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তিনি যে কথা বলতে এসেছিলেন তা আর বললেন না। যাঁর জমিদার ধনীদের সম্বন্ধে এমনই ধারণা তাঁকে বলে কি হবে? বললেন-আপনি দেশের লোক–বড় লোক মহৎ লোক—দেখতে এসেছিলাম।

ঈশ্বরচন্দ্র বললেন—জমিদারদের অনেকে ভাল কাজ করছে। ইস্কুল প্রতিষ্ঠা করছে—আমাদের দেশের পুরাণশাস্ত্র অনুবাদ করে ছাপছে। তোমাদের তো টাকা শুনেছি অনেক, নীলকরকে টাকা ধার দাও—এখানে সাহেবদের সঙ্গে কারবার—তা কিছু করেন না কেন?

বীরেশ্বর থমকে গেলেন—তাঁর স্বভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠল; বড়মানুষ যেখানে কিছু চায়—সেখানে ‘না’ বললে বড়মানুষ ছোট হয় না—যে ‘না’ বলে সেই ছোট হয়। সেখানে ‘হ্যাঁ’ বললেই বড়মানুষটা ছোট হোক বা না-হোক—–অন্তত তার নাগাল পাওয়া যায়। বললেন—করতে পারি যদি আপনি চান। কত বড়মানুষ আপনি-আপনার কথা রাখতে করব।

হেসে বিদ্যাসাগর বললেন—কেন—আমার কথায় করবেন কেন। নিজের ইচ্ছেয় করবেন। দেশের—

—দেশ মানুষ তাদের মঙ্গল—ওসব আমি বুঝি না। হ্যাঁ—আপনাদের মত লোককে বুঝি-–

—কেন বুঝবেন না! পুণ্য বোঝেন-দেবসেবা আছে—সমারোহের সঙ্গে করেন। তার থেকে কি এতে কম পুণ্য?

—না বিদ্যাসাগর মশাই—–ও পুণ্য বাপ পিতামহ করে গিয়েছেন—দেবোত্তর সম্পত্তি। তা থেকে চলে, চালাতে হয় আমাকে সেবায়েৎ হিসেবে। আমি ঈশ্বর ধর্ম পুণ্য—কিছুই মানি না! কালাপাহাড় বলতে পারেন।

বিদ্যাসাগর বললেন—তা বেশ, আমিই বলছি।

—তা হ’লে করব।

—বেশ—বেশ—বেশ! আমি রাজনারায়ণবাবুকে পত্র লিখব—তিনি মেদিনীপুরে হেড মাস্টার-তিনি আপনাকে অনেক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। আলাপ আছে তাঁর সঙ্গে?

—না। হবে আলাপ। তালে আজ আসি। নমস্কার।

খোশমেজাজে ফিরেছিলেন বীরেশ্বর। খাতায় লিখেছিলেন-I feel proud. Yes I feel proud; তবে তার সঙ্গে লিখেছিলেন—এই খাটো মাথায় দুর্বলশরীরে লোকটি খুব তেজস্বী—চোখ মুখ দেখলেই বোঝা যায়। অসাধারণ মানুষ। অন্য লোক হলে আমি কড়া কথা বলতাম। কিন্তু এমন সম্ভ্রম হ’ল—যে পারিনি। মনে মনে আনন্দ হচ্ছে—যে আমি তা পারি নি।

শোভাবাজারে দেবেদের রাজবাড়ীতে এসে রায় খুশী হয়েছিলেন রাজা রাধাকান্ত দেবকে দেখে। যেমন সৌজন্যসম্পন্ন তেমনি মিষ্টভাষী, তেমনি ধর্মপরায়ণ—খবর পেয়ে নিজে বেরিয়ে এসে বলেছিলেন—আসুন —আসুন বাবা, আসুন।—

তিনি কায়স্থ—বীরেশ্বর ব্রাহ্মণ—তিনি প্রণাম করতে উদ্যত হয়েছিলেন। হাঁ-হাঁ করে উঠে পিছিয়ে গিয়েছিলেন বীরেশ্বর। তবুও তিনি হেঁট হয়ে প্রণাম না জানিয়ে ছাড়েন নি।—সে কি বাবা। আপনি ব্রাহ্মণ। তুলসীপাতার কি ছোট বড় আছে! তারপর কি প্রয়োজন বাবা?—

বীরেশ্বর যেন বেঁচে গিয়েছিলেন মানুষটিকে পেয়ে; বলেছিলেন—বিশেষ দরকারে এসেছি। আপনি জমিদার সমাজে মাথার লোক -আপনার কাছ ছাড়া আর কার কাছে যাব? আমি মহিষাদলের রাজাবাহাদুরের ব্যাপার নিয়ে এসেছি। তাঁরা আমাকে কিছু বলেন নি। আমি নিজে এসেছি। শীলেদের ব্যাপার তো শুনেছেন? কাগজে বেরিয়েছে।

—শুনেছি বাবা। শুনেছি বইকি। সংবাদ প্রভাকর পড়েছি। কি বলব বল? আমরা ভূস্বামীরা আয়ের চেয়ে বেশী ব্যয় করি—বিষয়কর্মে শৈথিল্য আমাদের; মহাজনকে বিশ্বাস করি।

একটু চুপ ক’রে থেকে বললেন—মহাজনকেই বা দোষ কি দেব। সে তো দলিলের শর্ত মত কার্য করেছে। তবে—হ্যাঁ—। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন—এত বড় বাড়ী—একটা বুনিয়াদী রাজপাট।

বীরেশ্বর বললেন—আপনি শুনেছেন—শীলেরা জমিদারী ইংরেজদের বন্দোবস্ত করছে। জন রবিনসন বলে একজন কুঠীয়াল নিচ্ছে।

—শুনেছি। একটু হেসে বললেন—সেও তো তোমাদের টাকাতেই ব্যবসা করছে। আমরাই তো আমাদের সর্বনাশ করছি। রাণী ভবানী পলাশীর আগে বলেছিলেন—খাল কেটে কুমীর আনা হবে। তাই হল। গোটা ভারতটাই গিলে ফেললে লর্ড ডালহাউসি।

—এখন জমিদারীগুলোও গিলবে? আপনারা তাই দেখবেন?

তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেববাহাদুর বললেন —আপনি ক্রয় করতে চান?

—না। আমার তো অভিপ্রায় নয়। এই এতবড় বাড়ী রক্ষা যাতে হয়—তাই চাই। আর জন রবিনসন যাতে জমিদার হয়ে না বসে তাই চাই। আপনি কলকাতা সমাজের মাথার মানুষ, আপনি অনুরোধ করুন শীলেদের।

—কিন্তু ডিক্রীর টাকা তো চাই। অন্ততঃ কিয়দংশ তো দিতে হবে। এক কার্য করুন। রাজাবাহাদুরের কিছু সম্পত্তি আপনি পত্তনী বন্দোবস্ত নিয়ে টাকা দিন। সেই টাকা শীলদের দিয়ে—নতুন দলিল করে কিস্তিবন্দি হোক। কি বলেন!

বীরেশ্বর রায় বললেন—না—তাও ঠিক আমার ইচ্ছা নয়। রাজাবাহাদুরের যে সম্পত্তি তাতে পত্তনী না দিয়েও তিনি অনায়াসে শোধ দিতে পারেন। কিস্তিবন্দি করিয়ে দিন আপনি বলে ক’য়ে। তবে রাজাবাহাদুর যদি বন্দোবস্ত করেন ইচ্ছাপূর্বক তবে আমি নিতে পারি। সেটা পরের কথা।

দেববাহাদুর বললেন—সাধু, সাধু, বাবা, আপনি সাধু লোক। আপনার নির্লোভতা দেখে সুখী হলাম। কিছু মনে করবেন না বাবা—আমি একটু পরীক্ষা করছিলাম আপনাকে। নইলে সে ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই হয়েছে। স্বর্গীয় মতি শীল মহাশয় সদাশয় লোক ছিলেন—মহৎ মানুষ ছিলেন। সামান্য শিশি-বোতলের দোকান ছিল ধর্মতলায়—ওই তো তোমাদের লালবাজারের ধারে গো। খালি শিশি কিনে বিক্রী করতেন। তারপর অদৃষ্ট খুলল। লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেছেন। দান করেছেন। ইস্কুল করেছেন কতগুলিই। তবে-ব্যবসা মহাজনী, কুসীদজীবী পেশা, ইংরেজ আমলে ব্যাঙ্কার…। হাসলেন দেববাহাদুর।—কি করবেন? তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেরা একটু কড়া হ’তে চেয়েছে। তার উপর মামলা-মোকদ্দমার জেদ! সেই জেদ অনেকটা বেশীদুর অগ্রসর হয়ে গিয়েছে আর কি! তা বড় বাপের ছেলে তো—ক’রে-কর্মে ফেলে চৈতন্য হয়েছে। তারা কিস্তিবন্দিই করে নিচ্ছে। আমি খবর পেয়েছি।

বীরেশ্বর রায় খুশী হলেন। বললেন—যাক, আমি নিশ্চিন্ত হলাম।

—একটা প্রশ্ন করব বাবা?

—বলুন?

—আপনার চিন্তাটা কিসের ছিল? ওঁদের সঙ্গে কি খুব সুখ ছিল আপনাদের? শুনি নি তো?

একটু চুপ ক’রে থেকে বীরেশ্বর বললেন-ওই রবিনসন নেবে বলে আমার দুশ্চিন্তা ছিল।

—কিন্তু সুখ তো আপনাদের ওদের সঙ্গেই ছিল! শুনেছি ওখানেই নাকি আপনি থাকতেন! আপনাদের টাকাতেই বুড়ো রবিনসন ব্যবসা করেছিল।

—সবই সত্য শুনেছেন। কিন্তু ছোট রবিনসন দিন দিন এমন উদ্ধত হচ্ছে যে, তাকে বরদাস্ত করা সম্ভবপর নয়।

একটু চুপ ক’রে থেকে দেব বললেন—এখন কি হয়েছে বাবা—এই তো কলির সন্ধ্যা। ভারত গ্রাস করলে—এরপর ইংরাজ মাথার উপর দিয়ে হাঁটবে। সারা দেশ থেকে হিন্দুত্ব বিলুপ্ত করবে। শুরু হয়েছে—তার সূত্রপাত হয়ে গেছে। সতীপ্রথা আইন করে বন্ধ করেও ক্ষান্ত হল না—বিধবা-বিবাহ প্রচলনের আন্দোলন উঠেছে। আর কৌতুক দেখ—এ সব আমরাই করছি। আমাদের দিয়েই করাচ্ছে। আমাদের দেশের ধর্মই সব বাবা। তবে ধর্মের অনেক বিকৃতি হয়েছে-তার সংস্কার প্রয়োজন এও ঠিক কথা। সংস্কারের পরিবর্তে তাকে বিসর্জন দিলে ইষ্ট দূরের কথা—অনিষ্ট সামান্য ব্যাপার, সর্বনাশ হয়ে যাবে। কিছুই আর থাকবে না। এইটে এঁরা বুঝছেন না। রামমোহন রায় মশায় মস্ত লোক ছিলেন—অধ্যয়ন অনেকেই করেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হয়েছেন—বিদ্যার সাগরও তিনি বটেন—বলতে গেলে ঈশ্বরপ্রেরিত মহাপুরুষ, নইলে পিতা পাচকের কাজ করেন…তাঁর পুত্র মেধায়, প্রতিভায় এমন পণ্ডিত হয় শুধু চেষ্টাতে? কিন্তু তিনি এ কি করছেন? বিধবা-বিবাহ?

থামলেন রাজাবাহাদুর, তারপর একটু হেসে বললেন—আপনাদের জেলাতেই তো বাড়ী গো?

—আজ্ঞে হ্যাঁ।

—আলাপ-পরিচয় আছে? করেছেন?

—দেখেছি মাত্র। আলাপ ঠিক হয়নি। একদিন কিছু বাক্য বিনিময়-তাকে আলাপ বলে না।

—সে কি গো? করবেন—করবেন—আলাপ-পরিচয় করবেন। এক জেলার লোক—তার উপর দুজনেই ব্রাহ্মণ। যাবেন।

একজন চাকর এসে হেঁট হয়ে নমস্কার করে দাঁড়াল। রাজাবাহাদুর বললেন—একবার যে গাত্রোত্থান করতে হবে বাবা। সামান্য একটু মিষ্ট-মুখ করতে হবে। তিনি নিজেই আগে উঠে দাঁড়ালেন।

বীরেশ্বর রায় না বলতে পারলেন না। এসে অবধি অনুভব করছিলেন—মানুষটি একটি বিরাট মানুষ—তাঁর বিনয়—তাঁকে ব্রাহ্মণ বলে ভক্তি—তাঁর মিষ্ট এবং শুদ্ধ ভাষার বাক্যালাপের মধ্য দিয়ে যে পরিচয় তাঁর ইতিমধ্যেই ফুটে উঠেছিল—তা এই বিরাট ঐশ্বর্যের বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেন আকাশস্পর্শী বলে মনে হচ্ছিল।

পাশে একখানি ঘরে মার্বেল টেবিলের উপর কিছু ফল, কিছু মিষ্টান্ন রাখা ছিল রূপার রেকাবীতে—রূপার গ্লাসে জল—সামনে চেয়ারের উপর কার্পেটের আসনপাতা। পাশে একখানি ছোট ঘরের দরজায় চাকর দাঁড়িয়ে আছে কাঁধে টার্কিশ তোয়ালে নিয়ে।

রাজাবাহাদুর বললেন–যান বাবা, হাত-মুখ ধুয়ে আসুন।

হাত-মুখ ধুয়ে বীরেশ্বর ফিরতেই বললেন—শুনেছি বাবা আধুনিক কেতার মানুষ—তার জন্য টেবিলেই দেওয়া হয়েছে। অবশ্য গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে দিয়েছে।

হাসলেন বীরেশ্বর রায়। বললেন-আপনার গৃহে তো অনাচারের স্থান নেই।

—শুদ্ধাচার মানেই তো পরিচ্ছন্ন জীবন গো। যা পরিচ্ছন্ন মালিন্যহীন তাই তো পবিত্র। এবং ধর্ম তো সেইখানেই।

খেয়ে-দেয়ে হাতমুখ ধুয়ে তোয়ালেতে হাত মুছে এ ঘরে এসে বসতেই রাজাবাহাদুর বললেন—আপনি একটু বসুন—আমি আসছি।

বলে চলে গেলেন। খানসামা হাতজোড় করে বললে—হুজুরের জন্য ওঘরে তামাক দেওয়া হয়েছে।

বীরেশ্বর বুঝলেন—রাজাবাহাদুর এই জন্যই উঠে গেছেন। পাশের ঘরের কাছে যেতে যেতেই তিনি চন্দন-গুঁড়ো ও আতর-মেশানো তামাকের গন্ধ পেলেন। সোনার আলবোলার নল ধরে ছিলমচী খানসামা দাঁড়িয়ে ছিল—টেবিলের উপরে সোনার ডিবায় পান। একখানি রেকাবীতে মশলা দারুচিনি, লবঙ্গ, ছোট এলাচ।

আশ্চর্য সুশৃঙ্খলা। যেন ঘড়ির কাঁটার মত, ছোট কাঁটাটিকে ঘিরে বড় কাঁটাটির ঘোরার মত অতিথিকে ঘিরে এ-বাড়ির সমারোহ-ভরা আতিথ্য-ধর্ম ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আলবোলার নল হাতে নিয়ে টানতে টানতে তিনি ভাবছিলেন। কলকাতার বিশৃঙ্খল উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রার আবর্তের মধ্যে এমন সুন্দর সুস্থ পবিত্র জীবনযাত্রার পরিচয় এর পূর্বে তিনি পান নি। অবশ্য জমিদারদের সভায় বড় বড় ব্যক্তিদের তিনি দেখেছেন—তাঁদের কথাবার্তা শুনেছেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরকে তিনি দেখেননি, তাঁর বাবার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল—তাঁর গল্প শুনেছেন। শ্রীপ্রসন্নকুমার ঠাকুরকে তিনি দেখেছেন—শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখেছেন। আলাপ নেই। চেষ্টা করেন নি। তরুণ কালীপ্রসন্ন সিংহকে দেখেছেন, তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। বয়সে সিংহ তাঁর থেকে বেশ ছোট, তবু বিদ্যার প্রখরতায় তাঁর থেকে তিনি প্রদীপ্ত। কৌতুকপ্রিয়, রসিক, বিদ্যোৎসাহী, বিদ্বান। বউবাজারের রাজেন্দ্র দত্তকে দেখেছেন—মৌখিক আলাপ আছে। সাত-সাতটা হৌসের মুৎসুদ্দি—অগাধ অর্থ উপার্জন করেও দান ক’রে ফকীর। এই অবস্থাতেও সেদিন হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজ স্থাপন করেছেন। রাজেন্দ্রনাথ মিত্রকে দেখেছেন, কথাবার্তা শুনেছেন। অগাধ পাণ্ডিত্য। আরও কত নাম করবেন। এ আমলটাই যেন দিগ্‌বিজয়ীদের আমল। তাঁদের সাড়ায় দেশ গম-গম করছে। কিন্তু রাজা রাধাকান্তকে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে যা দেখলেন—তাঁর কাছ থেকে একটি স্নিগ্ধ স্পর্শ পেলেন—এমন বোধ হয় আর কারুর কাছে পাওয়া যায় না বলেই তাঁর মনে হল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress