Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay » Page 2

কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল || Sunil Gangopadhyay

সেই যে সকালবেলা এসেছে দেবলীনা, সারাদিন তার বাড়ি ফেরার নাম নেই। তার বাবা টেলিফোন করেছেন দুবার, সে বলে দিয়েছে, কাকাবাবুর সঙ্গে দেখা না করে যাবে না।

কাকাবাবু দুপুরে ফেরেননি।

এরকম হয় মাঝে-মাঝে। একবার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করলে ফেরার কথা আর মনে থাকে না তাঁর। দুপুরে কিছু খেতেও ভুলে যান।

অবশ্য এমনিতেই তাঁর খাওয়া খুব কম। বাড়িতে থাকলেও দুপুরবেলা খান শুধু একটা স্যান্ডউইচ। আর কফি।

ছুটির দিনে জোজো সারাদিন সন্তুর সঙ্গেই কাটায়। ওরা একসঙ্গে বই পড়ে, কবিতা মুখস্থ করে, নানারকম খেলাও খেলে। দেবলীনা থাকলেই ঝগড়া হয় অনবরত।

সন্তু আর জোজো ইচ্ছে করে মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে দেবলীনাকে রাগায়। তবে, বেশি রাগালেই মুশকিল। তখন দেবলীনা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, রাস্তা দিয়েও দৌড়য়। তখন সন্তু আর জোজোকেই ছুটে গিয়ে ধরে আনতে হয়।

দেবলীনার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার স্বভাব আছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচবার সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে, পুলিশের সাহায্য নিয়ে খুঁজে বার করতে হয়েছে তাকে। একবার সে একা-একা ট্রেনে চেপে দুর্গাপুর চলে গিয়েছিল।

দেবলীনার একটা মুশকিল, সে বাংলা বই তেমন পড়েইনি। সন্তু আর জোজো। যখন কোনও বাংলা গল্প কিংবা কবিতা নিয়ে কথা বলে, তখন দেবলীনা অনেক কিছুই বুঝতে পারে না, রেগে গিয়ে ওদের থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। দেবলীনার অবশ্য একটা গুণ আছে, যা সন্তু কিংবা জোজোর নেই, সে চমৎকার ছবি আঁকে। কিন্তু সেটা তার মুডের ব্যাপার, যখন-তখন কেউ বললেও আঁকবে না।

তিনতলায় সন্তুর ঘরের একটা দেওয়াল জুড়ে একটা বোর্ড আছে। তাতে নানারকম ছবি ও লেখা সাঁটা থাকে, সেগুলো বদলে যায় মাঝে-মাঝে। অনেক সময় প্রশ্নও থাকে।

যেমন, সন্তু একটা কাগজে বড় বড় করে লিখল, ঘ্যাঁঘো ভূত! তারপর দুজনকে জিজ্ঞেস করল, একে তোরা কেউ চিনিস?

জোজো ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করল, আমি তো চিনিই। এই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস কর।

দেবলীনা বলল, কী বিচ্ছিরি নাম!

সন্তু বলল, ভূতের নাম সুচ্ছিরি হয় নাকি? ওরা এরকম নামই পছন্দ করে।

দেবলীনা বলল, ভূতকে আমি চিনতে যাব কেন? ভূত বলে আবার কিছু আছে নাকি?

সন্তু বলল, এটা গল্পের বইয়ের ভূত। ঘ্যাঁঘো ভূত খুব বিখ্যাত।

দেবলীনা বলল, কী গল্পটা শুনি?

সন্তু বলল, ওসব চলবে না। গল্প তো শোনে বাচ্চারা। কিংবা যারা লেখাপড়া শেখে না। নিজে পড়ে নে, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখা চমৎকার সব ভূতের গল্প আছে।

দেবলীনা বলল, লেখকের নামটাও এমন বাজে..ওসব আমি পড়তে পারব না!

জোজো বলল, ভূত বলে কিছু নেই? আমিও আগে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু একবার শ্রীলঙ্কায় গিয়ে কী দেখেছি জানিস? নিজের চোখে, স্বচক্ষে যাকে বলে–

দেবলীনা বলল, তুই ভূত দেখেছিস? কীরকম, শুনি?

সন্তু বলল, এই, রাত্তির না হলে ভূতের গল্প জমে না। এখন তো সবে সন্ধে।

দেবলীনা বলল, তা হোক। এখনই বল।

জোজো চোখ নাচিয়ে বলল, যারা বলে ভূতে বিশ্বাস করি না, তারাই বেশি। বেশি ভূতের গল্প শুনতে চায়। যাই হোক, সংক্ষেপে বলছি–

দেবলীনা বলল, নো, নট সংক্ষেপে। পুরোটা।

জোজো বলল, ঠিক দু বছর আগে, সেপ্টেম্বর মাসে বাবার সঙ্গে কলম্বোয় গিয়েছিলাম। ক্রিকেট খেলোয়াড় রণতুঙ্গার বউয়ের খুব পেটে ব্যথা, কোনও ডাক্তার কিছুই ধরতে পারছে না, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও…

গল্পে বাধা পড়ল। রঘু একটা কর্ডলেস ফোন এনে বলল, লীনা দিদিমণিকে ওনার বাবা ডাকছেন।

।দেবলীনা ফোনটা নিয়ে বলল, কী বাপি, এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? কাকাবাবুর সঙ্গে আমার জরুরি দরকার আছে। দেখা না করে যেতে পারছি না। আমি ঠিক ফিরে যাব।

ওর বাবা বললেন, রাত হয়ে গেলে তুই একা ফিরবি কী করে? আমি গিয়ে নিয়ে আসব?

দেবলীনা বলল, তোমায় আসতে হবে না। আমায় জোজো পৌঁছে দেবে।

ওরা বাবা বললেন, আমি এখন গিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম।

দেবলীনা বলল, বাপি, তোমার কি একলা লাগছে? টিভি দ্যাখো না!

বাবা বললেন, কাকাবাবুর সঙ্গে তোর আজকেই এত জরুরি দরকারটা কীসের রে?

দেবলীনা বলল, বাঃ, মংলু আর ছোটলাটের কথা জিজ্ঞেস না করে যাব কী করে? রাত্তিরে ঘুম হবে না।

বাবা বললেন, মংলু আর ছোটলাট? তারা কারা?

দেবলীনা বলল, ওরা খুব ফেমাস চোর।

ওর বাবা দারুণ অবাক হয়ে বললেন, ফেমাস চোর?

সন্তু হো-হো করে হেসে উঠল।

আর দুএকটা কথা বলে ফোন ছেড়ে দিয়ে দেবলীনা সন্তুর দিকে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, হাসলি কেন?

সন্তু বলল, একে তো চোরদুটোর নাম মংলু আর ছোটলাট নয়। তারা এর মধ্যে ফেমাস হয়ে গেল? ফেমাস কাদের বলে জানিস? যাদের নাম সবাই মনে রাখে।

দেবলীনা বলল, তা হলে ওদের নাম কী?

সিঁড়িতে ক্রাচের ঠকঠক শব্দ শুনে বোঝা গেল, কাকাবাবু ফিরেছেন।

জোজো উঁকি মেরে দেখে বলল, আলমদাও একসঙ্গেই এসেছেন। চল, আলমদার বকুনি খাওয়াটা দেখি।

ওরা হুড়মুড়িয়ে নেমে এল দোতলায়।

কাকাবাবু কিন্তু শান্তভাবেই বললেন, বোসো রফিকুল। আমি জামা-প্যান্ট ছেড়ে নিই। সন্তু, কফি দিতে বল।

কাকাবাবু বাথরুমে ঢুকে গেলেন।

প্রথম কয়েক মিনিট ওরা সবাই চুপচাপ।

তারপর দেবলীনা ফস করে রফিকুলকে জিজ্ঞেস করল, তুমি গগাঁ ভূতকে চেনো?

রফিকুল ভুরু কুঁচকে বললেন, গগাঁ ভূত! গগ্যাঁ নামে একজন শিল্পীর কথা জানি।

সন্তু বলল, গগাঁ নয়, ঘ্যাঁঘো ভূত।

রফিকুল বললেন, ও, ত্রৈলোক্যনাথের গল্প? হ্যাঁ, পড়েছি! দারুণ মজার।

সন্তু বলল, তুই ছাড়া সবাই পড়েছে।

দেবলীনা জোজোকে বলল, তোর গল্পটা থেমে গেল…এখন বল?

জোজো বলল, যাঃ! অনেক সময় লাগবে, এখন বলা যাবে না।

কাকাবাবু সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে এসে বসলেন নিজের চেয়ারে। সকালবেলার মতন মুখে বিরক্ত ভাবটা নেই, বরং দেবলীনা আর জোজোর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, সকালবেলাতেও তোমাদের দেখে গেলাম, সারাদিন খুব গল্প হচ্ছে বুঝি?

দেবলীনা বলল, তুমি এত দেরি করে ফিরলে কেন? আমি তো তোমার সঙ্গে গল্প করতেই এসেছি।

কাকাবাবু বললেন, তা হলে তো খুব অন্যায় হয়ে গেছে। আগে ফেরাই উচিত ছিল।

রফিকুল বললেন, কাকাবাবু, আমাকে মাফ করবেন। সকালবেলা পৌঁছতে দেরি হয়ে গেল…

কাকাবাবু ওঁর মুখের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে রইলেন।

তারপর আস্তে-আস্তে বললেন, তোমার মাফ চাইবার কিছু নেই। কলকাতার রাস্তায় দেরি তো হতেই পারে। সকালবেলা একটা খবর পড়ে আমার মেজাজটা হঠাৎ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। জানি, এতে তোমার কোনও দায়িত্ব নেই। ওই লোকদুটোর সঙ্গে আমার কথা বলার খুব ইচ্ছে ছিল। তার আগেই তারা পালিয়ে গেল।

রফিকুল বললেন, যে কনস্টেবলটি হাসপাতালে রাত্তিরে পাহারায় ছিল, সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, সেই সুযোগে ওরা পালায়। কনস্টেবলটিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, তার নাম কী?

বিমল দুবে। আর যে-আসামি দুজন পালিয়েছে, তাদের আসল নাম শেখ গোলাম নবি আর গিরিনাথ দাস। ধরা পড়েছে টালিগঞ্জের এক বস্তিতে।

ওরা নিজেদের মধ্যে যেসব ডাকনাম চালু করে, তার বিশেষ মানে থাকে। যার নাম ভাংলু, সে নিশ্চয়ই ভাঙচুর করায় এক্সপার্ট। তালা ভাঙতে পারে, মানুষের মাথাও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আর, ওদের কারও নাম ছোটগিরি হলে বুঝতে হবে, গিরি নামে নিশ্চয়ই দলে আর একজন আছে। সে বড়গিরি।

ওরা অবশ্য ছোটখাটো ক্রাইমই করে। বাংলাদেশ বর্ডারে চোরাচালান, মানুষ পারাপার, চোরাই জিনিস বিক্রি, এইসব। খুন কিংবা ডাকাতির অভিযোগ নেই ওদের নামে।

কাকাবাবু হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠে বললেন, তুমি মোটেই সব খবর জানো না। ভয়ঙ্কর কোনও খুনি কিংবা ডাকাতের চেয়েও ওরা বড় অপরাধী।

তারপর সন্তুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, যারা ছোট-ছোট শিশুদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তারা সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু! তাদের অতি কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত। জিনিসপত্র চোরাচালানের চেয়েও ওদের আসল কাজ ছোট ছেলেমেয়েদের বিক্রি করা। এবারে ওরা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে এনে একডজন বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই বাচ্চাদের বয়েস মাত্র ছ-সাত বছর!

দেবলীনা জিজ্ঞেস করল, অত বাচ্চাদের এখানে কে কেনে?

জোজো বলল, ওদের চোখ কানা করে কিংবা হাত-পা কেটে রাস্তার ভিখিরি বানায়, তাই না?

কাকাবাবু বললেন, না। ওসব আগে হত, এখন হয় না। আরব দেশের লোকদের কাছে এই বাচ্চাদের বিক্রি করে দিলে অনেক বেশি লাভ হয়।

দেবলীনা জিজ্ঞেস করল, আরব দেশের লোকেরা ওদের নিয়ে কী করে?

কাকাবাবু বললেন, শুনলে তুমি ভয় পাবে না তো? ওখানে উটের দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। ঘোড়দৌড়ের মতন। ঘোড়দৌড়ে জকিরা ঘোড়া চালায়। উটের দৌড় কিন্তু সেরকম নয়। প্রত্যেকটা উটের পিঠে একটা করে বাচ্চা ছেলেকে বসিয়ে দেওয়া হয়, তারপর চাবুক মারলেই উটগুলো দৌড়তে শুরু করে। বাচ্চাগুলো ভয়ে চিৎকার করে, কাঁদে। তাই দেখে লোকেরা আনন্দ পায়। অনেক বাচ্চা উটের পিঠ থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে মরেও যায়।

দেবলীনা দু হাতে মুখ ঢেকে বলে উঠল, আর শুনতে চাই না। আর শুনতে চাই না!

কাকাবাবু বললেন, ওর সামনে বলাটা ঠিক হয়নি।

রফিকুল বললেন, আমি একটা ব্যাঙ্ক-ডাকাতির কেস নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম, তাই এই ব্যাপারটা ঠিক জানতাম না।

কাকাবাবু বললেন, ব্যাঙ্ক-ডাকাতির চেয়েও এটা আরও বড় অপরাধ নয়? দেবলীনা মুখ থেকে হাত সরাল। তার গাল বেয়ে কান্না গড়াচ্ছে। সে ধরা গলায় বলল, কাকাবাবু, মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কেন?

কাকাবাবু বললেন, সত্যি, কিছু কিছু মানুষ বড় নিষ্ঠুর হয়। রোমান আমলে স্টেডিয়ামের মধ্যে ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ক্রীতদাসদের ছেড়ে দেওয়া হত, হাতে একটা অস্ত্র দিয়ে। সিংহের সঙ্গে কোনও মানুষ পারে? সিংহ সেই লোকটাকে মেরে কামড়ে কামড়ে খেত আর হাজার হাজার মানুষ তাই দেখে আনন্দ পেত। তারপর কত বছর কেটে গেছে, মানুষ অনেক সভ্য হয়েছে, তবু অনেক মানুষের মধ্যে সেরকম নিষ্ঠুরতা রয়ে গেছে।

সন্তু বলল, আরব দেশের যারা এই বাচ্চাদের নিয়ে উটের দৌড় করায় তাদের অপরাধ তো আরও বেশি। তাদেরই শাস্তি দেওয়া উচিত।

কাকাবাবু বললেন, তা ঠিক। কিন্তু অন্য দেশের লোকদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। আমাদের দেশ থেকে যাতে শিশু বিক্রি বন্ধ হয়, আমরা সে চেষ্টা করতে পারি। এর একটা বিরাট চক্র আছে। এই ভাংলু আর ছোটগিরি সামান্য চুনোপুঁটি হতে পারে, কিন্তু ওরা সেই চক্রের অঙ্গ। ওদের জেরা করে সেই চক্রটা ভেঙে দেব ভেবেছিলাম।

রফিকুল বললেন, ওদের দুজনকে আবার ঠিক ধরে ফেলব।

কাকাবাবু বললেন, আজকে কাগজে খবর বেরিয়েছে, তার মানে ওরা পালিয়েছে গত পরশু রাতে। মাঝখানে প্রায় দুদিন কেটে গেছে। এখন ওরা এমন জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকবে যে, পুলিশ কিছুতেই সন্ধান পাবে না।

রফিকুল বললেন, তবু আমি কথা দিচ্ছি, যথাসাধ্য চেষ্টা করে

কাকাবাবু বললেন, দেরি হয়ে যাবে। আচ্ছা, যে পুলিশটাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তার কী যেন নাম বললে? বিমল দুবে, সে কোথায় থাকে?

রফিকুল বললেন, আলিপুর পুলিশ লাইনের ব্যারাকে।

একটুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু চিন্তা করে কাকাবাবু বললেন, সাসপেন্ড হওয়া মানে তো কিছুদিন ডিউটিতে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকা। সেখানে গিয়ে কোনও লাভ হবে না। কলকাতা শহরে ওই বিমল দুবের কোনও আত্মীয়স্বজন থাকে কিনা খোঁজ নাও তো। খুব সম্ভবত কেউ আছে।

রফিকুল বললেন, এক্ষুনি জেনে নিচ্ছি। পকেট থেকে ফোন বার করে তিনি কার সঙ্গে যেন কথা বলতে লাগলেন।

একটু পরে ফোন বন্ধ করে তিনি কাকাবাবুকে বললেন, আপনি ঠিক ধরেছেন। ওর ছোট বোনের স্বামী মাখনলাল আছে এখানে, ডালহৌসির একটা অফিসে কেয়ারটেকারের কাজ করে। জিপিও-র খুব কাছে। সেখানেই কোয়ার্টার।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সঙ্গে তো গাড়ি আছে। চলো, সেখানে একবার ঘুরে আসা যাক।

দেবলীনা সঙ্গে-সঙ্গে বলে উঠল, আমিও যাব।

কাকাবাবু বললেন, তুমি কোথায় যাবে? সন্ধে সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। এবার তোমার বাড়ি ফেরা উচিত। তোমার বাবা চিন্তা করবেন।

দেবলীনা বলল, আমি যাবই, যাবই, যাবই, যাব!

কাকাবাবু বললেন, সেখানে তো তেমন কিছু দেখার থাকবে না। হয়তো লোকটাকে বাড়িতেই পাওয়া যাবে না।

দেবলীনা আবার জোর দিয়ে বলল, আমি যাবই, যাবই, যাবই, যাব!

কাকাবাবু হেসে উঠে বললেন, এ এক পাগলি মেয়ে। চলো, তবে সবাই মিলেই যাওয়া যাক। যদি কিছু পাওয়া না যায়, তা হলে গঙ্গার ধারটায় একটু বেড়িয়ে আসা হবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress