Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কলা প্রতিযোগিতা ও পটলা || Shaktipada Rajguru

কলা প্রতিযোগিতা ও পটলা || Shaktipada Rajguru

পটলার মাথায় আবার পোকা নড়েছে, অর্থাৎ নতুন কিছু করার আইডিয়া এসেছে। পটলার ওই এক রোগ, বেশ আছে, হঠাৎ কি এক আইডিয়া মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো, আর সেটাকে কার্যে পরিণত করতেই হবে।

বড়লোকের নাতি-পয়সার অভাব নেই পটলচন্দ্রের। ঠাকুমার একমাত্র বংশধর। বাবার বিরাট কারখানা, মেজকাকার বিশাল ছাপাখানা, একমাত্র সরকারি নোট ছাড়া আর সবই ছাপা হয়। ছোটকাকাও কম যায় না, কাঠগোলা, করাতকল, তেলের মিল—কি নেই! এহেন বাড়ির ‘অলি বংশপ্রদীপ’ ঠাকুমার চোখের মণি পটলচন্দ্রের তাই হাতখরচা আসে নানাভাবে। এবং সেটা বেশ মোটা অঙ্কেরই। আর সেই কারণেই পটলচন্দ্রকে আমরা পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ বানিয়েছি।

অবশ্য পার্মানেন্ট সেক্রেটারি ওই হোঁৎকা। চেহারাটাও বেশ নধর, গোলগাল। আর ফি ক্লাসে দু’বার করে গড়িয়ে আরো মজবুত হয়ে এখন ক্লাস টেনে এসে নোঙর করেছে।

এছাড়া ফটিক কালচারাল সাইডের চার্জে। এখনও তিনখানা গান নিয়েই সাতবছর এলেম নিচ্ছে কোন এক ওস্তাদ খাঁ সাহেবের কাছে। ভোর থেকে তার সা রে গা মা-র চর্চা শুরু হয়। পাড়ার কুকুরগুলোও ওর সঙ্গে গলা মেলায়, সুরের এমনি যাদু।

গোবর্ধনের চেহারাটা হোঁৎকার চেয়েও সরেস। আর ওর থেকেও দুপোঁচ বেশি কালো। মামার কুমড়ো, আলুর আড়ত।

সেদিন সন্ধ্যায় ক্লাবের মাঠের জামতলায় পটলার অপেক্ষায়। তখনও তার দেখা নেই । ওদিকে ঝাল-মুড়িওয়ালা দু-তিন বার হেঁকে ফিরে গেছে।

হোঁৎকা বলে,—পটলার কাণ্ডখান দ্যাখ! কেলাবের জরুরি মিটিং, এহনও দেখা নাই বাবুর। ওদিকে এহনও নো টিফিন, নো ঝালমুড়ি, আলুকাবলি। আমি রেজিনেশন দিমু—

হোঁৎকার ওই দোষ। পেটে যেন ওর রাক্ষস পোরা আছে। গোবর্ধন অর্থাৎ গোবরা বলে, —তুই কি রে? কেবল খাই খাই।

হোঁৎকা বলে,—তর মামার তো কুমড়োর গুদাম। তুই একখান কুমড়ো খেয়েই রইয়া যাবি। আমার এইসব হাবি জাবি সয় না।

এমন সময় রেসিং সাইকেলটা নিয়ে পটলা এসে হাজির। বেশ উত্তেজিত সে।

পটলা বলে,—স্-স্-স্-

উত্তেজিত হলে পটলার জিবটা আলটাকরায় সেট হয়ে যায়। বেশ চেষ্টা করে এবার পটলা বলে,—সাংঘাতিক খবর। কু-কুলেপাড়া এসপোর্টিং এবার ব-বসে আঁকো কম্‌পিটিশন শুরু করবে। বি-বিরাট ব্যাপার!

হোঁৎকা গর্জে ওঠে,–থো ফ্যালাই তর কুলেপাড়ার কথা। আমি রেজিগনেশন দিতাছি। তগোর কেলাবে আর থাকুম না ।

হোঁৎকার পকেটে একটা রেডিমেড রেজিনেশন লেটার মজুতই থাকে। এখন সেটা ভাঁজ পড়ে বিবর্ণ। তবু সেটাই বের করে।

পটলাও জানে। সুতরাং আশপাশে ওই আলুকাবলি-ঝালমুড়ি গোকুলের মালাই কুলপির, সমবেত কোরাস শুনে বলে,—আ-আগে কিছু খেয়ে নে, তারপর তোর রেজিনেশন লেটার দিবি।

হোঁৎকা ঈষৎ মিইয়ে যায়, ওই আলুকাবলি এন্ড কোং-দের দেখে। বলে—কইছিস?

খাবার সামনে পেয়ে হোঁৎকা এবার জলবৎ তরল হয়ে গিয়ে বলে,—কুলেপাড়া বইসা আঁকো কম্‌পিটিশন করছে?

পটল বলে—হ্যাঁ… স-সকলেই নাম করছে ওদের। পোস্টার প…প্ল্যাকার্ড ছাড়ছে। ফটিক বলে ওঠে,–ঠিক আছে, আমরাও মিউজিক কম্‌পিটিশন করবো। একেবারে যাকে বলে—সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। সঙ্গীতই শ্রেষ্ঠ কলা—

হোঁৎকা গর্জে ওঠে,—চুপ মাইরা যা। সেবার তর জন্য ফ্যাংশন করতি যাই ইট পাটকেল খাইছি। প্যান্ডেলে আগুন ধরতি গেছল।

হঠাৎ পটলার মাথায় আইডিয়াটা এসে যায়। বলে, – প…প… পেয়েছি। ইউরেকা- আমরাও অবাক। পটলা কি এমন পেল যে খুশিতে টগবগিয়ে উঠেছে? শুধোই,—কি পেলি রে?

পটলা বলে,প…পেয়ে গেছি। কুলেপাড়া ক্লাবকে …….টেক্কা দেবার পথ। ওই…প্র…প্র— হোঁৎকা যোগান দেয়,– প্রতিযোগিতা ?

পটলা বলে,—হ্যাঁ। একেবারে নতুন আইডিয়া। কলা প্রতিযোগিতা ।

গোবর্ধন বলে,—তার সঙ্গে কুমড়োর এগজিবিশন দিলেও মন্দ হয় না। গুদামে একটা বাইশ কেজি কুমড়ো আছে ।

হোঁৎকা গর্জে ওঠে,—কুমড়ো ছাড়া আর কিছুই চিনতে পারস্ না ?

পটলা বলে,—না না কুমড়ো নয়, কলা প্রতিযোগিতা। কলা ভক্ষণ প্রতিযোগিতা। সে…সেদিন কোন্ এক বিরাট নেতা রসগোল্লা ভক্ষণ প্রতিযোগিতা করে কাগজে ছবি ছাপালো । রসগোল্লা তো সবাই খায়। কলা কে কত খেতে পারে তারই প্রতিযোগিতা হবে।

গোবর্ধন বলে,—কিন্তু এত কলা !

পটলাদের নিজেদের বিরাট কলাবাগান আছে চন্দননগরের ওদিকে। বেশিরভাগ সেখান থেকেই আসবে।

হোঁৎকা খাওয়ার ব্যাপার শুনে বলে,—তা মন্দ কস্নি। কদলি ভক্ষণ প্রতিযোগিতা! মন্দ হইব না। তর, বাজেট কত? আমাগোর পকেটের স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। তর বাজেটখান ক! খবরের কাগজের লোকদের খাওয়ানো, আনা—এসব লাগবো। ব্যানার–তর পাবলিসিটি চাই। চিফগেস্টে অ্যাকখান জব্বর আনতি হইব।

পটলা বলে,—ঘ…ঘটার জন্য ভাবিস না। ক্…কম্‌পিটিশন জোর করতে হবে। যে বেশি কলা খাবে, তাকে সোনার মেডেল দেবে ক্লাব।

হোঁৎকা আঁৎকে ওঠে,–সোনার মেডেল। ঠিক কইছিস ?

পটলা বলে,—ঠামাকে বলে ম্যানেজ করেছি। দাদুর স্মৃতি রক্ষার জন্য ম্…মেডেল দেবে ঠাকুমা। ক্.. কাল থেকেই নেমে পড়। টাকায় কি না হয়? পটলার টাকায় আমরা এবার ফুল পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব ওই বিচিত্র প্রতিযোগিতার প্রচারে নেমে পড়েছি। এর মধ্যে পোস্টার, ব্যানার ও এসে গেছে। তামাম পাড়ার গাছ, লাইটপোস্ট ডালে ঝুলছে নধর সাইজের কলা। তার পাশে ভক্ষণ প্রতিযোগিতার ঘোষণা।

কুলেপাড়া ক্লাবের বসে আঁকা প্রতিযোগিতার দিনই আমাদের ক্লাব প্রাঙ্গণে হবে কদলিভক্ষণ প্রতিযোগিতা। আর রামনবমীর দিনই হচ্ছে এই প্ৰতিযোগিতা।

ফটিক বলে,—রাম-এর সঙ্গে কলারও সম্পর্ক আছে।

ওর আবিষ্কারে অবাক হই,—মানে?

ফটিক বলে,—রাম-এর নাম করলেই আসে হনুমান। হনুমান আর কলা একেবারে মাখামাখি ব্যাপার। তাই তো উদ্বোধন সঙ্গীতে ওই কলা আর হনুমানকে নিয়েই গান গাওয়া হবে। আমারই রচনা। আর সুর যা দিয়েছি দেখবি।

হোঁৎকা বলে,—কিন্তু তুই গাবি না। লোকজন বেবাক তাড়াই দিবি! তবে গান চলবো না । এহেন অপমানে ফটকে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

—ইনসাল্ট করবি না হোঁৎকা। তুই গানের কি বুঝিস? আমি রেজিকনেশন দিচ্ছি এখুনিই। কোনোমতে থামাই,–এত বড় কাজ সামনে, আর তোরা এইসব করবি? ওসব পরে হবে। ফটিক থামলো তবু গজগজ করে, যা তা বলবে? গানের কি বোঝে ও ?

ওদিকে সময় নেই। প্যাণ্ডেল তৈরি হচ্ছে। প্রতিযোগীদের নামও আসছে। দশ টাকা এনট্রি ফি দিয়ে কলা খাবার লোকের অভাব যে নেই দেশে, তা বুঝেছি। তার উপর সোনার মেডেল ফার্স্ট প্রাইজ। সেকেন্ড থার্ড প্রাইজ-ও বেশ ভালোই। সারা এলাকায় শুধু কলা আর কলার

ছবি ।

আমরা কুলেপাড়ার বসে আঁকো প্রতিযোগিতাকে যে স্রেফ পথে বসিয়ে দিয়েছি, তা বেশ বোঝা যায় ৷

কুলেপাড়ার ক্লাবের কর্মকর্তারা ভাবতে পারেনি যে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব এমনি একটা নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাদের ক্লাবকে শুইয়ে দেবে। বসে আঁকতে আর কেউ আসছে না, সব ছুটেছে কলাভক্ষণ দেখতে।

কুলেপাড়ার ক্লাবের মাঠে মাত্র ক’জন ছেলেমেয়ে স্রেফ লজেন্স আর থিন এরারুট বিস্কুটের লোভে এসেছে। ওই দ্রব্য মিললেই তারাও পালাবে কলা খাওয়ার মাঠে। ওদিকে তখন মাইক বাজছে।

কুলেপাড়ার কেষ্ট বলে,—ওদের ওই কলাভক্ষণ পালার নিকুচি যদি না করি, আমার নাম কেষ্টা পালাই নয়। একেবারে ডুবিয়ে দিলে।

এদিকে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের প্যান্ডেলে লোক ধরে না। পটলার রসদের জোরে কাগজের লোকরাও এসেছে। মঞ্চে বিচারকরা বসে আছে ঘড়ি ধরে। সামনে টানা বেঞ্চে প্রতিযোগীরা। হাইবেঞ্চে রাখা আছে এক একটা ঝুড়িতে নধর পাকা কলা ।

ওদিকে ঝুলছে সারবন্দী কলার কাঁদি। ওর থেকে সুপক্ব কলা সাইজমত খুলে প্রতিযোগীদের দেওয়া হবে। যে পনেরো মিনিটে সব থেকে বেশি কলা খাবে, সেই হবে ফার্স্ট।

ক্লাবের সভ্যরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। তাই হোঁৎকা প্রথমে আপত্তি তুলেছিল। আমি বলেছিলাম,—তুই তো ফার্স্ট হবিই। লোকে বলবে পার্শালিটি করেছে।

হোঁৎকা সোনার মেডেল হাতছাড়া করতে নারাজ। বলে,—তয় নসুসামার নামটাই লিখে নে, দশটাকা দিত্যাছি।

তাই পটলা হোঁৎকার নসুমামাও এসেছে প্রতিযোগী হয়ে। শুনলাম কাল থেকেই মামা ‘ওনলি ওয়াটার’ খেয়ে স্টম্যাক শূন্য করে রেখেছে। গোল্ড মেডেল তার চাই-ই।

নসুমামার চেহারাটাও দারুণ। হাত পা-ও কলাগাছের মত। ইয়া কুমড়োর সাইজের মাথা হাঁ করলে তা প্রায় চার ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চি একটা ‘হাঁ’ মুখ দেখা যায় ৷

ওদিকে মঞ্চে প্রধান অতিথি ফিলমের হিরোইন ধরিত্রী দেবী, আর সভাপতি করা হয়েছে পাড়ার চিটেগুড়ের, তুলোর, সিমেন্টের আড়তদার–বর্তমান এম. এল. এ. কেতনবাবুকে। কেতনবাবুর ওজস্বিনী ভাষণ শুরু হয়। তাঁর ভাষণে কেতনবাবু প্রমাণ করেন কলা ভক্ষণ প্রতিযোগিতা জাতির প্রগতিরই পরিচয়। কলা চৌষট্টি প্রকার। সেই চৌষট্টিটি কলা যে সেবন করতে পারে, সে জাতির গৌরব।

এরপরই ওই ধরিত্রীদেবী উঠলেন। রং চং করা মুখ। হাতের নখগুলোও রং করা । মিউজিকের তালে তালে তিনি একটি কলা ছাড়িয়ে আলতো করে মুক্তোর মত দাঁতে ঠেকালেন, আর অমনি ‘ফুর’ করে বাঁশি বেজে উঠলো।

এরপর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। প্রতিযোগীরা দুহাতে কলার খোসা ছাড়াচ্ছে আর গর্ গর্ করে সাইজমত কলা মুখে ফেলছে। চিবোতে হয় না। কোঁৎ করে গিলে আবার অন্য কলা ভক্ষণ করছে।

ওদিকে নসুমামা যেন মেসিন চালিয়েছে। ফস্ করে কলা নিচ্ছে, একটানে চোকলা যতটা খুলল ভালো, না হলে সবসমেত মুখে দিয়ে একবার ঢোক গিলেই অ্যানাদার কলা। দর্শকরাও উত্তেজিত। তারা উৎসাহ দেয়,—জোর, আরও জোরে।

হঠাৎ এমন সময় প্যান্ডেলে একটা চাঞ্চল্য জাগে।

—হেট্…হ্যাট… ওরে বাবা !

কে আর্তনাদ করে ওঠে। পরক্ষণেই একটা চেয়ার সে শূন্যে ছুঁড়ে দেয়। সেটা তীরবেগে ছিটকে পড়ে দর্শকদের ঘাড়ে। তারপরই দেখা যায় আসরে ঢুকে পড়েছে বিরাট দু’তিনটে ষাঁড়।

ওগুলো রাসমণি বাজারের আশেপাশেই থাকে। বাতিল আনাজপত্র, বাঁধাকপির পাতা—এসব খায়। আর সকালে পাড়ার দোকানে দোকানে পাড়ার মস্তানের মত তোলা তোলে। নীরবে গিয়ে দাঁড়ায়, কিছু দিলেই চলে যায়। না দিলেই শিং-এর গুঁতোয় দোকান তছনছ করে দেয় ৷

লালু মহারাজ, শাহানশা, আর কালাপাহাড়—এসব নামেই সেই তিনমূর্তি পরিচিত। হঠাৎ সেই তিন মূর্তিকে প্যান্ডেলে ঢুকতে দেখে দর্শকরা ভয়ে এদিকে ওদিকে ছুটোছুটি শুরু করে।

ষাঁড়বাহিনীর নজর পড়ে এই রাশিকৃত সুপক্ক কদলির কাঁদিগুলোর দিকে। বাতাসে পাকা কলার খোসবু ম ম করছে। যাঁড়বাহিনী সামনে এমন স্বাদু খাবার পেয়ে এবার মরিয়া হয়ে ওঠে।

কে বাধা দিতে যাবে? কালাপাহাড় একজনকে ঘাড় দিয়ে তুলে অ্যাইসা পটকান দিয়েছে, সে ছিটকে গিয়ে পড়েছে মঞ্চে সমাসীন ধরিত্রী দেবীর ঘাড়ে। কেতনবাবুর গলায় রাশিকৃত রজনীগন্ধা, গোলাপ, তায় গাঁদা ফুলের মালা। কেতনবাবু স্থানীয় নেতা—তাই ষাঁড় তাড়াতে নামেন। আর লালু মহারাজ তাঁর গলায়, স্বাদু ফুলের মালা পেয়ে, তাই কামড়ে ধরেছে।

কেতনবাবুর গলায় যেন মালার ফাঁস পড়েছে। মশ্ মশ্ করে একমুঠো মালা খেয়ে লালু নেতাকে পটকে কলার গাদায় ফেলেছে।

নসুমামা তখন কপিলদেবের মত রেকর্ড করতে চলেছে কদলি ভক্ষণে। ষাঁড়ের গুঁতো লাগে মামার বিশাল কলা ভর্তি উদরে। ছিটকে পড়েছে নসুমামা—আর গুঁতোর চোটে এবার কুলপি মালাই বেরুবার মত মসৃণ গতিতে মামার উদরে সঞ্চিত আস্ত কলাগুলো কোঁৎ কোঁৎ করে মুখ দিয়ে বের হতে থাকে।

এদিকে ষাঁড়বাহিনী মারধোর খেয়ে ক্ষেপে উঠে চেয়ার টেবিল মঞ্চ ভাঙ্গছে মড় মড় করে। কে কোন দিকে পালাবে তার জন্যই ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেছে। আর কলার ওই খোসার স্তূপে পা পড়ে কে কোন দিকে ছিটকে পড়ে, চোট পায়, তার ঠিক নেই ।

কেতনবাবুকে দেখা যায় এক লহমার জন্য লালু মহারাজের দুই শিং-এর মাথায় সমাসীন। আর পটলা ঝুলছে কালাপাহাড়ের ল্যাজ ধরে। হোঁৎকা মাচানের বাঁশ ধরে যেন হরাইজ্যানটাল বারের খেলা দেখাচ্ছে। ফটিক জানে পাবলিক ফাংশনে কখন পালাতে হয়, গাইয়ে লোক। তাই তাক্ বুঝে যন্ত্র নিয়ে কেটে পড়েছে।

কলরব, কোলাহল, আর্তনাদ ।

শেষ অবধি পাড়ার কিছু পাবলিক এসে দর্শকদের, কলা ভক্ষণের বিচারকদের এখান ওখান থেকে টেনে উদ্ধার করে। কেতনবাবুর ঠ্যাং ভেঙেছে, ধরিত্রী দেবী অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছে। অনেককেই হাসপাতালে পাঠাতে হয়।

নসুমামাও কদিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী রয়েছে।

খবরের কাগজে খবর হল ঘটনাটা। তবে কদলি ভক্ষণ প্রতিযোগিতার ফলাফল বের করা সম্ভব হয়নি। আর সম্ভব নয়ও।

পুলিশ কেস—নানা হাঙ্গামা থেকে বেঁচে গেছি, কোনোমতে। ক্লাবের মাঠে সন্ধ্যার অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বসে আছি ক’জন।

হোঁৎকা তখনও ল্যাংচাচ্ছে। ষাঁড়ের গুঁতুনিতে কমবেশি সবাই আহত। পটলা বলে,—ষাঁড়ে মারুক ক্ষতি নাই, এমন জমাটি কম্‌পিটিশন ত…তছনছ করে দিল রে! হোঁৎকা গর্জে ওঠে, —চুপ মাইরা থাক! হালায় ষাঁড় আইল ক্যামনে তা ভাবছিস? এমন সময় গোবরাই এসে খবর দেয়। তাদের কুমড়োর গুদামের কাছে ষাঁড়গুলো পচা কুমড়ো খাচ্ছিল। হঠাৎ ওই কুলেপাড়ার কেষ্ট পালই নাকি পাকা কলার লোভ দেখিয়ে ওদের প্যান্ডেলে এনে ঢুকিয়ে দেয়।

পটলা গর্জে ওঠে,–শোন, শোন কথা!

হোঁৎকা বলে, ঠিক জানিস গোবরা ?

গোবরা বলে,—হ্যাঁ রে, ওরা মিছে কথা কেন বলবে? তাছাড়া কুলোপাড়ার বসে আঁকো প্রতিযোগিতাকে ডাউন করেছিল কলা ভক্ষণ পালা, তাই ওরাই আমাদের ‘স্যাবোটেজ’ করেছে।

এবার হোঁৎকা বলে,-তাহলে শুইনা রাখ, আমি বিভাসচন্দ্র (হোঁৎকার ভালো নাম নাকি ওইটা) ওগোরে ছাড়ুম না। ওর প্রতিশোধ লই।

পটলা বলে,—আমার আইডিয়া—ওই কলা ভক্ষণ প্র…প্রতিযোগিতা আবার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *