Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কলকাতার জঙ্গলে || Sunil Gangopadhyay » Page 2

কলকাতার জঙ্গলে || Sunil Gangopadhyay

হালকা ঘি-রঙের হাওয়াই শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরে যিনি ঘরে ঢুকলেন, তাঁকে দেখলে টেনিস খেলোয়াড় মনে হলেও আসলে তিনি পুলিশের একজন বড়কতা, তাঁর নাম ধ্রুব রায়।

কী ব্যাপার, শৈবাল, তুমি কালপ্রিটকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছ?

এই বলেই তিনি কাকাবাবুকে দেখে চমকে গেলেন। এগিয়ে এসে বললেন, আরে, কাকাবাবু, আপনি এখানে?

কাকাবাবু বললেন, তোমার বন্ধু আমাকেই কালপ্রিট ভেবেছিলেন।

শৈবাল দত্ত ধ্রুব রায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এঁকে চেনো?

ধ্রুব রায় হাসতে হাসতে বললেন, আরো কাকাবাবুকে কে না চেনে? তোমাকে সেই আন্দামানের ঘটনাটা বলেছিলুম না, সেই যে জারোয়াদের দ্বীপে রাজা হয়েছিলেন একজন বৃদ্ধ বিপ্লবী! এর জন্যই তো সেই সব কিছু জানা গিয়েছিল, ইনিই তো সেই রাজা রায় চৌধুরী!

শৈবাল দত্ত বললেন, আমি খুব দুঃখিত। মানে, ইনি অন্ধকারের মধ্যে এলেন, ভাল করে চেহারাটা দেখতে পাইনি, ওঁর কথাগুলোও ঠিক ধরতে পারছিলুম না, তাই আমার মনে হল উনি র‍্যানসাম চাইতে এসেছেন, আমার ওপর চাপ দিচ্ছেন।

কাকাবাবু বললেন, তোমার বন্ধুটি খুব সাবধানী। তোমাকে তাড়াতাড়ি আমরা পালিয়ে না। যাই!

ধ্রুব রায় জানলার কাছে গিয়ে বাইরে কাকে যেন বললেন, সব ঠিক আছে। তোমরা চলে যাও, আমি একটু পরে যাচ্ছি।

তারপর ফিরে এসে বললেন, খুকুকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শৈবাল একেবারে দারুণ বিচলিত হয়ে আছে। আমি তো বলেছি, এত নাভাস হবার কিছু নেই, ও নিজেই ঠিক ফিরে আসবে। এই তো প্রথম নয়, আগেও তো এরকম চলে গিয়েছিল।

কাকাবাবু বললেন, আগেও চলে গিয়েছিল?

ধ্রুব রায় হালকাভাবে বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ। রাগ হলেই ও বাড়ি থেকে চলে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। ওর মা তো নেই, বাবাও মেয়ের জন্য বেশি সময় দিতে পারে না। ওকে ঠিকমতন দেখাশুনো করার কেউ নেই, সেই জন্যেই, ফ্র্যাংকলি বলছি, শৈবালের সামনেই বলছি, মেয়েটা বেশ স্পয়েন্ট চাইলড হয়ে গেছে! কারুর কথা শোনে না।

শৈবাল দত্ত বললেন, ওর জন্য তিন জন টিচার রেখেছি।

ধ্রুব রায় বললেন, আরে বাবা, টিচার রাখলেই কি ছেলেমেয়ে মানুষ করা যায়? বাবা-মায়ের শিক্ষাটাই আসল। ওকে ছোটবেলায় একটু শাসন করা উচিত ছিল। এখন অবশ্য বড় হয়ে গেছে। কিন্তু জানেন, কাকাবাবু, মেয়েটা খুব ব্রিলিয়ান্ট! এক্সট্রাঅর্ডিনারি। আর পাঁচটা মেয়ের সঙ্গে ওর তুলনাই চলে না। যেমন লেখাপড়ায় মাথা, তেমনি ওর সাহস। ঠিকমতন চললে ও মেয়ে অনেক বড় কিছু হতে পারবে। তা আপনি এ ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লেন কী করে?

কাকাবাবু বললেন, ওই দেবলীনা আমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। কোনও রকম ভুমিকা না করেই বলল, পরের অ্যাডভেঞ্চারে ও আমার সঙ্গে যেতে চায়!

ধ্রুব রায় বললেন, আপনার সঙ্গে যেতে আমাদেরই লোভ হয়। ওই বয়েসের ছেলেমেয়েদের তো হবেই। এবারে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমায় নিয়ে চলুন!

কাকাবাবু বললেন, মেয়েটি সম্পর্কে তা হলে বিশেষ চিন্তা নেই বলছ? আমার একটু অপরাধ-বোধ হচ্ছিল। আমার সঙ্গে দেখা করতে গেল, তার পর থেকেই নিরুদ্দেশ, তাই ভাবছিলুম, আমিও বোধহয় কিছুটা দায়ী!

ধ্রুব রায় বললেন, না, না, না, ও ঠিক ফিরে আসবে। বুদ্ধিমতী মেয়ে, ও কোনও বিপদে পড়বে না।

রাগ করে ও কোথায় গিয়ে থাকে?

এক-একবার এক-এক জায়গায় যায়। এই তো সেবারে, তখন ওর বয়েস কত হবে, বড়জোর তেরো, একলা ট্রেনে টিকিট কেটে পাটনায় চলে গিয়েছিল।

শৈবাল দত্ত বললেন, কিন্তু এবারে ও কোথায় যাবে? পাটনায় তো কেউ নেই, দুৰ্গাপুরেও যায়নি, আমি টেলিফোনে খবর নিয়েছি।

ধ্রুব রায় বললেন, কেন, ভিলাইতে ওর মামার বাড়ি যদি চলে যায়? সেখানেই গেছে আমার ধারণা।

ওর মামা তো ভিলাইতে এখন থাকে না, আমেরিকা চলে গেছে!

তা হলে কলকাতাতেই ওর কোনও বন্ধু-টঙ্কুর বাড়িতে আছে নিশ্চয়ই। তুমি চিন্তা করো না, আমি লোক লাগিয়েছি।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, এ-বাড়িতে আর-কেউ থাকে না?

শৈবাল দত্ত বললেন, আমার স্ত্রী মারা গেছেন অনেক দিন আগে। আমার এক পিসিমা আর তাঁর ছেলে থাকতেন। আমার এখানে। পিসতুতো ভাইটি একটা চাকরি পেয়েছে দুগাপুরে। পিসিমা কয়েক দিনের জন্য সেখানে গেছেন। এই কদিন খুকু বলতে গেলে একাই ছিল। চাকরির কাজে আমাকে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই বাইরে যেতে হয়।

ধ্রুব রায় বললেন, এত বড় বাড়িতে এক-একা থাকতে কারুর ভাল লাগে? মাথার মধ্যে নানারকম উদ্ভট চিন্তা তো আসবেই! শৈবাল, তুমি এবারে মেয়ের দিকে একটু মনোযোগ দাও!

কাকাবাবু বললেন, আমরা তা হলে এবার উঠি। চলা রে, সন্তু!

ওঁরা দুজন কাকাবাবুদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।

বাইরে রাস্তায় দুতিনটি ছেলে দাঁড়িয়ে গল্প করছে, সে-দিকে তাকিয়ে কাকাবাবু বললেন, সন্তু, ওদের মধ্যে তোর বন্ধু রানা আছে?

সন্তু বলল, না তো!

আমি বড় রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি, তুই গিয়ে রানার খোঁজ কর। সে দেবলীনা সম্পর্কে কী কী জানে, কেন সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, এসব জেনে আসার চেষ্টা কর। দশ মিনিটের মধ্যে আসিস।

কাকাবাবু ক্ৰাচে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে এলেন বড় রাস্তার দিকে। এর মধ্যেই রাস্তা বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। বৃষ্টি পড়ছে। টিপটপ করে। কাকাবাবু একটা গাছতলায় দাঁড়ালেন। তাঁর মনটা খারাপ লাগছে।

সন্তু একটু বাদেই ফিরে এল। সে বলল, রানার বাড়ি ওই মেয়েটির বাড়ির পাশেই। কিন্তু রানার খুব জ্বর হয়েছে, ও ঘুমোচ্ছে, তাই কিছু জিজ্ঞেস করা গেল না,

কাকাবাবু বললেন, ঠিক আছে। এবারে দ্যাখ দেখি একটা ট্যাক্সি পাওয়া যায় কি না।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও সেখানে ট্যাক্সি পাওয়া গেল না, কাকাবাবুর সঙ্গে সন্তু সামনের দিকে হাঁটতে লাগল।

যদিও লোডশেডিং নেই, তবু রাস্তাটা বেশ অন্ধকার। দুচারটে সাইকেল-রিকশা মাঝে-মাঝে বেল দিতে-দিতে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। বৃষ্টি টিপটপ করে পড়েই চলেছে।

খানিকটা এগোতেই হঠাৎ ছায়ামূর্তির মতন তিনটি লোক ঘিরে ধরল ওদের। একজন চেপে ধরল। সন্তুর কাঁধ, একজন একটা ছুরি বার করে কাকাবাবুর মুখের সামনে ধরল, অন্যজন হিসহিসিয়ে বলল, কী আছে চটপট বার করে তো চাঁদু!

কাকাবাবু লোক তিনটিকে দেখলেন। কারুরই বয়েস খুব বেশি না, পাঁচশ-ছাবিবশের মধ্যে। খুব একটা গাঁট্রাগোট্টা চেহারাও নয়। তবে মুখে গুণ্ডা-গুণ্ডা ভাব ফুটিয়ে তুলেছে।

কাকাবাবু বললেন, এত কম বয়েসে জেলে যাবার শখ হয়েছে বুঝি?

ওদের একজন বলল, এই বুড়ো, বেশি কথা নয়, বার করো, যা আছে বার করো?

কাকাবাবু বললেন, আমার কাছ থেকে কী-ই বা পাবে? আমি খোঁড়া মানুষ। আমার সঙ্গে রয়েছে একটা বাচ্চা ছেলে। আমাদের ওপর জুলুম কোরো না। আমাদের ছেড়ে দাও!

যার হাতে ছুরি সে বলল, হাতে ঘড়ি তো রয়েছে, খোলো শিগগির।

আর একজন বলল, পকেটে মানিব্যাগও আছে। সব আমাদের চাই।

কাকাবাবু বললেন, এটা একটা সস্তার ঘড়ি, তাও অনেকদিনের পুরনো। নিয়ে তোমাদের বিশেষ কিছু লাভ হবে না।

ছুরিওয়ালা ছেলেটি এবার ধমক দিয়ে বলল, ভালয়-ভালয় দেবে, না পেট ফাঁসাব?

কাকাবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তা হলে নাও! পকেট থেকে মানিব্যাগটা বার করেই কাকাবাবু সেটা বেশ জোরে ছুঁড়ে দিলেন রাস্তার উল্টোদিকে।

একজন বলল, এটা কী হল? চালাকি?

বলেই সে ছুটে গেল ব্যাগটা খুঁজবার জন্য। ছুরিওয়ালা ছেলেটি বলল, আমাদের সঙ্গে চালাকি করলে জানে মেরে দেব।

কাকাবাবু একবার সন্তুর চোখের দিকে তাকালেন, তারপর ঘড়িটি খুললেন আস্তে-আস্তে। ছুরিওয়ালা ছেলেটি সেটা হাত বাড়িয়ে নেবার আগেই কাকাবাবু সেটাকেও ছুঁড়ে দিলেন ওপরের দিকে।

গুণ্ডা দুজন ওপরের দিকে তাকাতেই কাকাবাবু একটা ক্রাচ তুলে ছুরিওয়ালার হাতটাতে আঘাত হানলেন। সন্তুও অন্য লোকটিকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে ঘড়িটাকে লুফে নেবার চেষ্টা করল। ঠিক পারল না। অন্ধকারে তো ভাল দেখা যাচ্ছে না, ঘড়িটা সন্তুর হাতে লেগে মাটিতে পড়ল। সন্তু ঘড়িটা তোলবার জন্য নিচু হতেই একজন তার পিঠের ওপর দিয়ে হাত বাড়াল, সন্তু নিখুঁত ক্যারাটের কায়দায় সেই হাতটা চেপে ধরে তাকে আছাড় মারল সপাটে।

ছুরিটা পড়ে গেছে রাস্তায়। কাকাবাবু সেই লোকটির চোখের দিকে চেয়ে থেকে বললেন, তুমি ছুরিটা তোলার চেষ্টা করলেই আমি তোমার মাথাটা গুঁড়ো করে দেব। সেটা কি ভাল হবে?

যে-লোকটা রাস্তার উলটো দিকে মানিব্যাগটা খুঁজতে গিয়েছিল, সে সেটা তুলে নিয়ে একবার এদিকে তাকাল। এদিকে এইসব কাণ্ড দেখে সে আর ফিরল না। চৌ-চোঁ দৌড় মেরে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

ছুরি তুলে যে ভয় দেখাচ্ছিল, তাকে কাকাবাবু হুকুম করলেন, মাটিতে বসে পড়ে। কী সব বন্ধু তোমাদের, একজন তো একলা পালিয়ে গেল তোমাদের ফেলে?

সন্তু যাকে আছাড়ি মেরেছে, সে এমনই ভ্যাবাচ্যাক খেয়ে গেছে যে, উঠে বসে গোল-গোল চোখে তাকিয়ে আছে। একটা বাচ্চা ছেলের কাছে সে এরকম জব্দ হবে, কল্পনাই করতে পারেনি।

কাকাবাবু বললেন, আমি তোমাদের প্রথমেই বারণ করেছিলুম, তখন শুনলে না। ওই যে দূরে একটা গাড়ি আসছে, ওই গাড়িটা থামিয়ে তোমাদের থানায় নিয়ে যাব! কিংবা, এখান থেকে কাছেই একটা গাড়িতে পুলিশের একজন

ওদের একজন কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, স্যার, এবারকার মতন ছেড়ে দিন! এবারকার মতন মাপ করুন।

কাকাবাবু বিরক্ত ভঙ্গি করে বললেন, একটু আগে আমাকে বলেছিলে বুড়ো আর তুমি, এখন হয়ে গেলুম স্যার আর আপনি। কাপুরুষ! নিরীহ লোকদের ওপর হামলা করার সময় লজ্জা নেই, ধরা পড়লেই অমনি কান্না!

সন্তু ছুরিটা কুড়িয়ে নিয়ে ওদের পাহারা দিচ্ছে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী রে, সন্তু, ওদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া উচিত নয়?

একজন মরিয়া হয়ে ছুট লাগাল। অন্যজন উঠতে যাচ্ছিল, কাকাবাবু বললেন, শোনো, তোমাদের মতন ছিচকে গুণ্ডাদের নিয়ে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। যাও, তোমাকেও ছেড়ে দিলাম। তবে, তোমার যে স্যাঙাত আমার মানিব্যাগটা নিয়ে পালাল, তার কাছ থেকে ওটা আমায় ফেরত দিতে পারবে? ওর মধ্যে আমার ঠিকানা লেখা কার্ড আছে। ওর মধ্যে টাকা পয়সা বেশি নেই, কিন্তু ওই ব্যাগটা আমার পছন্দের।

লোকটি বলল, হ্যাঁ, দেব স্যার, নিশ্চয়ই দেব স্যার!

কাকাবাবু বললেন, মিথ্যে কথা বলতে তোমাদের মুখে আটকায় না। তা জানি। হয়তো ফেরত দেবে না। তবে এইসব গুণ্ডামি বদমাইশি ছেড়ে যদি ভদ্রভাবে জীবন কাটাতে চাও, তবে আমার কাছে এসো, আমি তোমাদের কাজ যোগাড় করে দেবী! যাও!

লোকটা চোখের নিমেষে মিলিয়ে গেল।

দূর থেকে যে গাড়িটা আসছিল, সেটা বেঁকে গেল। ডানদিকের একটা রাস্তায়।

আবার হাঁটতে শুরু করে কাকাবাবু বললেন, কী আশ্চর্য ব্যাপার। মাত্র রাত সাড়ে নটা এখন। এরই মধ্যে এত বড় রাস্তায় গুণ্ডার উপদ্রব। কলকাতা শহরটা কি নিউ ইয়র্ক কিংবা শিকাগো হয়ে গেল নাকি?

সন্তু বলল, কাকাবাবু, আপনার ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে!

কাকাবাবু হাত বাড়িয়ে ঘড়িটা নিয়ে বললেন, ঘড়ির জন্য আমার অত মায়া নেই। এটা সারিয়ে নিলেই চলবে। আমার নাকের ডগায় কেউ ছুরি দেখালে বড্ড রাগ হয়।

কাকাবাবু, আমি কিন্তু ওদের ছুরিটা নিয়ে এসেছি।

বেশ করেছিস! তোর একটা ছুরি লাভ হল। রেখে দে, পরে কাজ দেবে।

দূর থেকে আবার একটা গাড়ি আসছে, এটা কি ট্যাক্সি হতে পারে? অনেক সময় ট্যাক্সির ওপরের আলোটা জ্বলে না। কাকাবাবু থমকে দাঁড়ালেন।

না, ট্যাক্সি নয়, প্রাইভেট গাড়ি। ড্রাইভারের সিটে শুধু একজন লোক। গাড়িটা ওদের ছড়িয়ে খানিকটা চলে যাবার পর হঠাৎ থেমে গেল। তারপর ব্যাক করে চলে এল ওদের কাছে।

গাড়ির চালক মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, মিঃ রায়চৌধুরী না? আরেঃ, আপনি এখানে কী করছেন?

কাকাবাবু লোকটিকে চিনতে পারলেন না। লোকটি মধ্যবয়স্ক, বেশ ভারী চেহারা, মুখে সরু দাড়ি।

কাকাবাবু বললেন, এদিকে এসেছিলাম একটা কাজে… এখন ট্যাক্সি খুঁজছি।

লোকটি বলল, এত রাত্রে এদিকে তো ট্যাক্সি পাবেন না। কোথায় যাবেন? চলুন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

কাকাবাবু বললেন, আপনার অসুবিধে হবে। আমরা তো বাড়িতে যাব, আপনার বাড়ি কোন দিকে?

লোকটি বলল, কোনও অসুবিধে নেই। উঠে পড়ুন, উঠে পড়ুন। শুধু শুধু বৃষ্টিতে ভিজবেন…

লোকটি গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে পীড়াপীড়ি করতে কাকাবাবু সন্তুকে নিয়ে উঠে পড়লেন গাড়িতে। ভদ্রতা করে তিনি বসলেন সামনের সিটে। সত্যি তখন বৃষ্টিটা জোর হয়ে এসেছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress