Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » করম পরব – জঙ্গলমহলের লোক উৎসব || Manisha Palmal

করম পরব – জঙ্গলমহলের লোক উৎসব || Manisha Palmal

প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে করম উৎসব পালিত হয়! এটি একটি আরণ্যক কৃষি ভিত্তিক লোক উৎসব। জঙ্গলমহলের 38টি বিভিন্ন জনজাতি এই উত্সব পালন করে।

ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। এর সাত/পাঁচ/তিন দিন আগে মেয়েরা ভোর বেলায় শালের দাঁতন কাঠি ভেঙে
নদী বা পুকুরে স্নান করে বাঁশ দিয়ে বোনা ছোট টুপা(টকা–চারকোনা ঝুডি) ও ডালায় বালি ভরতি করেন। তারপর গ্রামের প্রান্তে ডালা গুলিকে রেখে জওয়া গান গাইতে গাইতে ওই ডাল গুলিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করেন। এরপর তাতে তেল ও হলুদ দিয়ে মটর,মুগ,বুট(ছোলা) জনারও কুথ্থির বীজ মাখানো হয়। অবিবাহিত মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ছোট শালপাতার থালায় বীজ গুলিকে বুনে দেন ও তাতে সিঁদুর ও কাজলের তিনটি দাগ টানা হয়।একে “বাগাল জাওয়া “বলা হয়। এরপর ডালা ও টুপাতে বীজ বোনা হয় । প্রত্যেকের জাওয়া চিহ্নিত করার জন্য কাশ কাঠি পুতে দেওয়া হয়। একে “জাওয়া পাতা ” বলে”!
যে ডালায় একাধিক বীজ পোঁতা হয় তাকে “সাঙ্গী জাওয়া ডালা” ও যে ডালায় একটিমাত্র বীজ পোঁতা হয় তাকে”একাঙ্গি জাওয়া ডালা” বলে। যে সমস্ত কুমারী মেয়েরা এই কাজ করেন
তাদের”জাওয়ার মা” বলা হয়!” বাগাল জাওয়া”গুলকে লুকিয়ে রেখে টুপা ও ডালার জাওয়া গুলিকে নিয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসে ।
দিনের স্নান সেরে পাঁচটি ঝিঙ্গা পাতা উল্টো করে বিছিয়ে প্রতিটি পাতায় একটি করে দাঁতন কাঠি রাখা হয়। পরদিন গোবর দিয়ে পরিষ্কার করে নিকিয়ে আলপনা দেওয়া হয়ও দেওয়ালে সিঁদুরের দাগ দিয়ে কাজলের ফোঁটা দেওয়া হয়
পুরুষেরা শাল গাছের ডাল বা ছাতা ডাল সংগ্রহ করে আনেন। গ্রামের বয়স্ক দের নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থানে দুটি করম ডাল এনে পুঁতে রাখা হয় যা সন্ধ্যার পরে করম ঠাকুর বা করম গোঁলায় এবং ধরম ঠাকুর হিসেবে পূজিত হন। কুমারী মেয়েরা সারা দিন উপোস করে সন্ধ্যার পর থালায় ফুল ফল সহকারে নৈবেদ্য সাজিয়ে এই স্থানে পূজা করেন। এরপর সারারাত ধরে নাচ-গান চলে। পরদিন সকালে মেয়েরা জাওয়া থেকে অঙ্কুরিত বীজ গুলি উপডে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এই বীজগুলি বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেন। এরপর করমডালটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় । পূজার পর মেয়েরা পরস্পরকে “করমডোর”বা রাখী পরিয়ে দেন। এই “করম সখী”রা কর্মস্থলে একে অপরকে রক্ষা করে। জঙ্গলে পাখির ডাকের নকলে” করমড্যের” ডেকে বিপদ জানায়।
করম উৎসবের সময় সমস্ত রাত ধরে সূর্যোদয় পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে ” ভাদরিয়া ঝুমুর গান” ও যৌথ নাচ পরিবেশিত হয়। এই নাচ শুধুমাত্র অবিবাহিতও প্রথম বছরের নব বিবাহিতা মেয়েরাই অংশগ্রহণ করতে পারেন। অর্ধবৃত্তাকারে হাত ধরাধরি করে এক পা এগিয়ে পিছিয়ে জাওয়াডালি গুলি কে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে ঘুরে নাচ করে। একজন উচ্চস্বরে গান শুরু করার পর নূত্য শিল্পীরা গান শুরু কর ধীরে ধীরে সুর নামিয়ে আনেন। একই কথা বারে বারে গাওয়া হয় ধ্রুবপদ এর মত।
মেয়েদের পরনে লুঙ্গি গামছা বা শাড়ি, রুপার গহনা ও মাথায় ফুল । এই নাচে গৃহকাজে ও কৃষিকাজ ফুটিয়ে তোলা হয় ।
করম উৎসবের প্রধান আকর্ষণ এই করমগীত বা জাওয়া গীত ও নৃত্য। শক্তি যৌবন ও সমৃদ্ধির প্রতীক এই করম পরব জঙ্গলমহলের খুবই লোকপ্রিয় আরণ্যক কৃষিভিত্তিক লোক উৎসব।
প্রকৃতি ও মানব সমাজের ভালোবাসার বন্ধনের উদাহরণ এই লোক উৎসব।

তথ্য সূত্র- লোকভাষ, গুগোল, বিভিন্ন সংবাদপত্র!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *