Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এবার কাকাবাবুর প্রতিশোধ || Sunil Gangopadhyay » Page 9

এবার কাকাবাবুর প্রতিশোধ || Sunil Gangopadhyay

সন্তু বাড়ি ফিরে আসার দুদিন পর কাকাবাবু গেলেন শঙ্করপুর। সেখানে একটা গেস্ট হাউজ বুক করা আছে। সম্ভকে দেখার জন্য যত রাজ্যের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আসছে সকাল-বিকেল। বাড়িতে সর্বক্ষণ ভিড়। সকলে একই গল্প শুনতে চায় বারবার। ভূতের বাড়িতে কে গুলি করেছিল সন্তুকে?

গল্প বলার দায়িত্ব জোজোর। সে বানাতে বানাতে ঘটনাটা এত দূর নিয়ে গিয়েছে যে, আসল ঘটনাটা আর চেনারই উপায় নেই। তার গল্পে ভূত আর ডাকাত মিলেমিশে যায়।! সন্তুর গুলিতে তিনটে ডাকাত আর দুটো ভূত ঘায়েল হওয়ার পর সন্তুর রিভলভারে গুলি ফুরিয়ে গিয়েছিল। ও আর গুলি ভরার সময় পায়নি। তার মধ্যেই একজন ওর বুকে আচমকা গুলি চালিয়ে দেয়। গুলি না ফুরোলে সন্তুকে মারার সাধ্য ছিল না কারও। সন্তু বিছানায় আধশোওয়া হয়ে এইসব গল্প শুনে মিটিমিটি হাসে। সে জানে, জোজোর গল্পের প্রতিবাদ করে কোনও লাভ নেই।

কাকাবাবু কয়েকটা দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান সমুদ্রের ধারে। সঙ্গে কয়েকটা বই এনেছেন। সারাদিন বারান্দায় বসে পড়েন সেই বই। বিকেলবেলা সমুদ্রের ধারে হাঁটতে যান। এদিক-ওদিক নজর রাখেন, কর্নেল আর তার দলের কেউ আছে কি না।

তিন দিনের মধ্যেও তাদের কারও পাত্তা নেই। এই এক ঝামেলা। মারামারি যখন হবেই, তখন চুকে গেলেই তো হয়। দিনের পর দিন অপেক্ষা করাটাই বিরক্তিকর। ওই কর্নেল লোকটা কোথায় কখন হুস করে উদয় হবে, তারও তো ঠিক নেই।

কোথাও একা থাকতে চাইলেও তো একা থাকা যায় না। গেস্ট হাউজের পাশের ঘরটিতে আছে একটি বাঙালি পরিবার। বাবা, মা একটি বারো বছরের মেয়ে আর সাত বছরের ছেলে। এদের মধ্যে মেয়েটির নাম পূর্বা, সে কাকাবাবুকে চিনে ফেলেছে। নানাসাহেবের সিন্দুক রহস্য ধরে ফেলার পর কাকাবাবুর ছবি ছাপা হয়েছিল অনেক কাগজে। পূর্বা সেই ছবি কেটে রেখেছে। সবুজ দ্বীপের রাজা সিনেমাও দেখেছে টিভিতে। সে আর তার বাবা-মা-ও প্রায়ই গল্প করতে আসেন কাকাবাবুর সঙ্গে।

পূর্বার বাবা চাকরি করেন জামশেদপুরে। তিনি দু-তিনবার বললেন, কাকাবাবু, আপনি একবার জামশেদপুরে আসুন না, ওখানেও অনেক রহস্যের সন্ধান পাবেন।

কাকাবাবু হালকাভাবে উত্তর দেন, আচ্ছা দেখি, যাব কোনও এক সময়।

পূর্বা হাততালি দিয়ে বলে, হ্যাঁ, তা হলে খুব ভাল হবে। কাকাবাবু আমাদের বাড়িতে থাকবেন। সন্তুকেও নিয়ে আসতে হবে কিন্তু।

পূর্বার বাবা কাকাবাবুরই সমবয়সি হবেন। তিনিও বলছেন, কাকাবাবু, মেয়েও বলছে কাকাবাবু! সকলের কাছেই তিনি মার্কামারা কাকাবাবু হয়ে গিয়েছেন। আজকাল সাধারণত কেউ কাকাকে কাকাবাবু বলে ডাকে না। বলে কাকু কিংবা আঙ্কল। কিন্তু রায়চৌধুরীদের বাড়িতে কাকাবাবু, জ্যাঠাবাবু, মামাবাবু বলে ডাকাই রীতি ছিল। সেই জন্য সন্তু কাকাবাবু বলে, অন্যরাও তাই বলে শুনে শুনে।

একদিন একটা পুলিশের গাড়ি থামল সেখানে।

বারান্দা থেকে দেখতে পেয়ে কাকাবাবুর ভুরু কুঁচকে গেল। পুলিশ কেন এখানে? তাঁর কাছে কেউ পাঠিয়েছে? মোবাইল ফোনে কথা হয় বাড়ির সঙ্গে। সন্তু ভালই আছে। নিজে নিজে খাট থেকে নামতে পারে, কিন্তু এখনও তার হাঁটা নিষেধ।

কাকাবাবু ধরেই নিলেন, পুলিশ এসেছে তাঁর কাছে।

আসলে তা নয়। একটু পরে পূর্বা এসে জানিয়ে গেল, পুলিশ অফিসারটি তার মাসতুতো জামাইবাবু। তিনি কাঁথি থানার ওসি, এমনিই এসেছেন পূর্বাদের খবর নিতে।

পূর্বা তাঁকে নিয়ে এল কাকাবাবুর সঙ্গে আলাপ করাতে। লোকটির নাম রমেন দত্ত। তিনিও কাকাবাবুর নাম শুনেছেন। পায়ে হাত দিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন।

কাকাবাবু মনে মনে ভাবলেন, এই রে, যদি কর্নেল ধ্যানচাঁদ কিংবা তার দলবল তাঁর উপর নজর রেখে থাকে, তা হলে তারা নিশ্চয়ই মনে করবে, কাকাবাবুই পুলিশ আনিয়েছেন। ভাববে, তিনি ভয় পেয়েছেন। তা হলে আর এখানে থাকা হবে না।

সেদিন বিকেলে সমুদ্রের ধারে খানিকক্ষণ হেঁটে কাকাবাবু গেলেন ধীবরদের গ্রামের দিকে। এখানে একটা পুরনো কালের মন্দির আছে। ভাঙাচোরা অবস্থা, বিশেষ কেউ আসে না। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে কয়েকটা টেরাকোটার মূর্তি আছে। কাকাবাবু ভাবলেন, মূর্তিগুলো দেখে আসবেন। আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। খুব শিগগিরই বৃষ্টি নামবে। হাওয়া দিচ্ছে শনশন করে। মন্দিরটার পাশ দিয়েই একটা রাস্তা গিয়েছে। কাকাবাবু আগের দিনও এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখানে একবার থেমেছিলেন। কিন্তু কাছে আসেননি। মন্দিরটার সামনেই দুধারে লাইন দিয়ে বসে আছে কয়েকজন ভিখিরি। সবাই বেশ বুড়ো। কাকাবাবুকে দেখেই সবাই বাবু দাও, কিছু দাও বলতে লাগল।

কাকাবাবু প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগটি বের করলেন। পঞ্চাশ টাকা, একশো টাকার নোটই বেশি, আর কিছু খুচরো পয়সা। আর কয়েকটা দুটাকার নোট আছে। আজকাল ভিখিরিরা খুচরো পয়সা নিতে চায় না। তিনি দুটাকার নোটগুলো দিতে লাগলেন এক-একজনকে।

একজন বলল, হায় ভগবান, সির্ফ দো রুপিয়া! এ বাবু, দশঠো রুপিয়া দেও?

কাকাবাবু বললেন, না, না, হবে না। সকলকে সমান দিচ্ছি।

বুড়িটি উঠে দাঁড়িয়ে কাকাবাবুর একটা হাত চেপে ধরল।

কাকাবাবু চমকে উঠে বললেন, লায়লা! দারুণ মেকআপ নিয়ে বুড়ি সেজেছ, কিন্তু আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। ঠিক ধরেছি!

লায়লা হেসে বলল, সত্যিই, দারুণ চোখ তো তোমার। দেখি দেখি, তাকাও আমার দিকে।

লায়লার অন্য হাতে মুঠো করা কিছু ছিল, সেগুলো ছুড়ে দিল কাকাবাবুর চোখে। কাকাবাবু উঃ করে উঠলেন।

সঙ্গে সঙ্গে অন্য বুড়িগুলোও খলখল করে হেসে উঠে দাঁড়াল। তাদের হাতের শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ছুড়তে লাগল।

লায়লা চেঁচিয়ে বলল, সবাই মিলে ওকে ধরো। বয়ে নিয়ে যাব।

পাঁচ-ছ জন মিলে কাকাবাবুকে জাপটে ধরলেও কাকাবাবু কোনওক্রমে ছাড়িয়ে নিলেন নিজেকে। টলতে টলতে খানিকটা পিছিয়ে এসে চোখ খুললেন, তাঁর চোখ টকটকে লাল।

কাকাবাবু বললেন, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু অন্ধ লোকরাও লড়াই করতে পারে। কেউ আমার গায়ে হাত ছোঁয়াতে এলেই তার আঙুলগুলো কচুকাটা হবে!

একটা ক্রাচ পড়ে গিয়েছে, অন্য ক্রাচটা তিনি ছাড়েননি। তার দুটো বোতাম টিপতেই একসঙ্গে বেরিয়ে এল ছখানা লম্বা ছুরি।

লায়লা অন্যদের বলল, সাবধান, কেউ কাছে যাবি না। দু-একটা পাথর নিয়ে আয় তো। পাথর ছুড়ে মারতে হবে ওর মাথায়।

কিন্তু বালির জায়গা, পাথর পাবে কোথায়। মন্দিরের ভাঙা ইট খুঁজতে গিয়েই একজন বলে উঠল, এই, এই, পুলিশের গাড়ি!

এমনিই মেয়েগুলো সবাই দৌড়ে পালাতে শুরু করল।

ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল একটা গাড়ি। জানলা দিয়ে মুখ বের করে রমেন দত্ত জিজ্ঞেস করলেন, কী কাকাবাবু, কিছু হয়েছে?

কাকাবাবুর দুচোখে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। কোনওক্রমে তা সহ্য করে তিনি বললেন, না, কিছু হয়নি তো! এমনই দাঁড়িয়ে আছি।

রমেন দত্ত আবার বললেন, গেস্ট হাউজে ফিরবেন? আমার গাড়িতে উঠুন না, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

কাকাবাবু বললেন, তার দরকার নেই, তুমি এগোও!

এবারে লায়লারা নির্ঘাত ধরে নেবে, পুলিশ এসে কাকাবাবুকে বাঁচাল। অথচ এটা কাকতালীয়। এই সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। কাকাবাবু মুখটা তুললেন আকাশের দিকে। বৃষ্টির জলে তাঁর চোখ জুড়িয়ে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress