Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta » Page 9

একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta

বার্গার হাউসের মালিক দিলীপ শৰ্মা নিজেই এখন দোকানটাকে ম্যানেজ করছেন। ভেতরে অফিস ঘরে বসেছিলেন। দেখেই বুঝলাম খুবই স্ট্রেসের মধ্যে আছেন। একেনবাবুর পরিচয় দিতেই উনি চিনতে পারলেন। এখন ইস্ট কোস্টে একেনবাবুর নাম অনেকেই শুনেছেন। বললাম, “আমরা পুলিশ চিফ টিম হোড়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। একেনবাবু প্রাইভেটলি এই ব্যাপারটা একটু অনুসন্ধান করবেন।”

দিলীপ শৰ্মা বললেন,”আমি ব্যাপারটা সম্পর্কে অল্পই জানি। যা জানি সবই পুলিশকে জানিয়েছি। আমার শুধু একটাই প্রশ্ন, এরকম একটা ভালো লোককে কে এভাবে খুন করল!”

“জানি স্যার,”এবার একেনবাবু বললেন। “সেটাই আমাদের বের করতে হবে। আপনি শুধু আমাকে বলুন, অজয়বাবু কি দেশে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন?”

“না, গিয়েছিল মায়ের অসুখের খবর শুনে। দু’সপ্তাহের জন্যে গিয়েছিল, কিন্তু দশ দিনের মাথায় ফোন করে আরও দু’সপ্তাহের ছুটি নিল। বলল, মা চাপ দিচ্ছে বিয়ে করে যাবার জন্যে। এরপর দু’-একটা ই-মেল পেয়েছি, ফোন পাইনি। মা’র মৃত্যুর খবরটা ই মেলেই পেয়েছি।”

“বিয়ের খবর?”

“না, সেটা পাইনি। ধরে নিচ্ছি হয়েছে, মাতৃশোকে হয়তো আমাকে আর জানায়নি। আর এসে তো আমার সঙ্গে ঠিকমতো দেখাও হয়নি, যেদিন এল সেদিনই মারা গেল!”

“ওঁর সঙ্গে কারও কোনো সমস্যার কথা জানতেন কি?”

“না, সেরকম তো কিছু শুনিনি। আগে যেখানে থাকত সেখানে কিছু ঝামেলা হয়েছিল।”

“কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত দেখেননি স্যার?”

“চাকরি চলে যাওয়ায় চিন্তিত ছিল টাকাকড়ি নিয়ে। তারপর তো এখানে চাকরি নিল। হইহই করে বন্ধুদের সঙ্গে তো গাড়ি নিয়ে ক্রস কান্ট্রি করতে গেল। তবে বন্ধুদের সঙ্গে মনে হয় এবার একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল।”

“কীরকম স্যার?”

“সেটা বলেনি। আমার চেনাজানা ট্রাভেল এজেন্টকে দিয়ে যখন ওর টিকিটটা বুক করছিলাম, তখনই যেটুকু কথা হয়েছিল। একটু গুম হয়েই ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম মাকে নিয়ে দুর্ভাবনা করছে। পরে হঠাৎ বলল, ‘দিলীপ, মানুষকে চেনা খুব কঠিন ব্যাপার।’ বুঝলাম অন্য কিছু, কিন্তু মায়ের অসুখ– দেশে যাচ্ছে, আমিও আর ও নিয়ে পীড়াপীড়ি করিনি।”

“দেশ থেকে ফিরে আসার পর আপনার সঙ্গে কথা হয়নি?”

“ও দোকানে আসতে না আসতেই আমাকে একটা কাজে বেরিয়ে যেতে হয়। কথা হবার মধ্যে ও বলেছিল, সোমবার ওর আসতে দেরি হবে। ওর ড্রাইভার লাইসেন্সটা খুঁজে পাচ্ছে না, সেটা করিয়ে একজনের সঙ্গে দেখা করে তারপর আসবে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর রাইড লাগবে কি না। বলেছিল, না। আর কোনো কথা হয়নি।”

“কার সঙ্গে দেখা করবেন, কিছু বলেছিলেন স্যার?”

“না, আমি জিজ্ঞেসও করিনি… তাড়াহুড়ো করে বেরোচ্ছি তখন।”

“উনি যে বেড়াতে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন –সেটা নিয়ে আপনাকে কিছু বলেননি?”

“তাই নাকি, এটা তো জানতাম না! তাহলে কি সেটা নিয়েই চিন্তা করছিল? স্ত্রীকে নিয়ে কোনো সমস্যা?”

“আপনার সঙ্গে স্যার সুব্রতবাবুর দেখা হয় না?”

“অনেকদিন হয়নি। এখন তো আর এখানে থাকে না। মধ্যে মাঝে মাঝে কথা হয়েছে ফোনে। অজয় পয়লা আসছে শুনে বলল এসে একবার দেখা করে যাবে। অজয়ের ইনকাম ট্যাক্সের কাজগুলো সুব্রতই বরাবর করে দেয়। ১৫ তারিখে তো সেটা করার লাস্ট ডেট।”

দিলীপ শর্মার দোকান থেকে আমরা দিনুকাকার বাড়িতে ফিরে এলাম। লাঞ্চ না খেয়ে গেলে কেয়া আমাদেরই খুন করবে। ঘরে ঢুকে দেখি দিনুকাকা এক সাহেবের সঙ্গে কথা বলছেন। আমাদের দেখা মাত্র বললেন, “এসো এসো তোমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। এ হল আমার বহুদিনের বন্ধু জ্যাক মিশকা। জ্যাক বোধহয় কিংস্টনের সবার লাইফ ইন্সিওরেন্স করেছে।”

“কাম অন ডিনু!” জ্যাক থামিয়ে দিল।

“এ হচ্ছে আমার ভাইপো। নিউ ইয়র্ক ইউনিভারসিটির একজন বিরাট অধ্যাপক। আর ইনি হলেন বিখ্যাত ডিটেকটিভ মিস্টার একেন্দ্র সেন।”

বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা দিনুকাকার স্বভাব।

“প্লিজড টু মিট ইউ।” জ্যাক উঠে এসে আমাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বললেন, “আপনারা গল্প করুন, আমার কাজ শেষ। ডিনু তাহলে ওই কথাই রইল। আমার মনে হয় না এতে অসুবিধা হবে বলে। চলি।”

“ও হ্যাঁ, একটা ভালো কথা। ওরা এসেছিল, তাই মনে পড়ে গেল,… এজের খবর জানো তো?”

“এভরিবডি নোজ। হোয়াট এ ট্র্যাজেডি।”

“এজেও তোমার ক্লায়েন্ট ছিল নাকি?”

“ইয়েস। ও, ওর বন্ধু সুব্রত –দু’জনের লাইফ ইন্সিওরেন্সই আমি করেছি। অ্যামাউন্টটা খুবই অল্প। কালকেই খবরটা শুনে দেখছিলাম। বেনিফিশিয়ারি হচ্ছেন ওর মা। সুতরাং তাঁকে এখন ক্লেইম করতে হবে।”

“তিনি স্যার মারা গেছেন,”একেনবাবু বললেন।

“তাই নাকি! ঐ যাঃ, ওরটাতে তো আবার ‘পার স্ট্রাইপস’ ক্লজ আছে” মাথা নাড়লেন, জ্যাক মিশকা।

“তার মানে?” দিনুকাকা প্রশ্ন করলেন।

“তার মানে খুঁজে বার করতে হবে ওঁর মায়ের নিকটাত্মীয় কে কে আছে। সেখানকার আইন আবার কী…হু নোজ! টাকার অ্যামাউন্ট যা –এইসব খোঁজ করতেই সেটা খরচা হয়ে যাবে।”

“ওঁর স্ত্রী কিছু পাবে না?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“এজের স্ত্রী আছে নাকি?”

“উনি বিয়ে করে দেশে গেছেন।”

“এমনিতে কিছুই পেতেন না, কিন্তু এটা তো কমপ্লিকেটেড সিচুয়েশন। তবে পান বা না পান –টাকার দিক থেকে শি উইল নট মিস মাচ।”

ইতিমধ্যে দেখি একেনবাবু রান্নাঘরে গিয়েছেন। নিশ্চয়ই কেয়ার সঙ্গে কথা বলতে। দিনুকাকা আমার সঙ্গে গল্প জুড়লেন।

বিকেল চারটেতে আমরা বাড়ি ফিরলাম। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই কেয়ার ফোন। আমার সঙ্গে নয়, একেনদার সঙ্গে ওর দরকার।

“বাঁদর মেয়ে!” বলে একেনবাবুকে ফোন দিলাম।

একেনবাবু দেখলাম খুব ‘থ্যাঙ্ক ইউ দিদি’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ দিদি’ করছেন।

ফোন শেষ হলে সোফায় গা এলিয়ে বসে পা নাচাতে নাচাতে বললেন, “আচ্ছা স্যার, অজয়বাবু কিসের জন্য এত দুশ্চিন্তা করছিলেন বলে আপনার মনে হয়? মায়ের অসুস্থতার জন্য তো নয়।”

“এগ্রি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, এই বিয়ের খবরটা মাকে কী করে দেবেন সেই নিয়েই। আমাদের দেশের বাবা- মায়েদের ব্যাপার তো জানেন! একে বিদেশিনী, তার ওপর বিধবা। শুধু তাই নয়, একটা বাচ্চা আছে। একেবারে ত্র্যহস্পর্শ! কিন্তু মানুষকে চেনা কঠিন ব্যাপার” কথাটার অর্থ মনে হয় দিলীপ শৰ্মাই ঠিক ধরেছেন। হয়ত বিয়ের পর নাদিয়ার কোনও সিক্রেট জেনে ফেলেছেন।”

“সেই জন্যেই এসে নাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, ভেরি গুড স্যার।”

চুপ করে আবার একটু পা নাচালেন, “যাই বলুন স্যার, কেয়াদিদি কিন্তু দুর্ধর্ষ।”

“কী ব্যাপার বলুন তো? কী এমন সংবাদ দিল আপনাকে?”

“ছোট বোন বলে নেগলেক্ট করবেন না স্যার। অসাধারণ বুদ্ধিমতী আমাদের দিদি।”

“তা তো বুঝলাম, কিন্তু ঠিক কী ভাবছেন একটু বলবেন?”

“বলার কিছু নেই স্যার। শুধু ভাবছি, পরশু কি আপনি খুব ব্যস্ত?”

“না পরশু আমার কোনো ক্লাস নেই।”

“তাহলে চলুন না, আরেকবার কিংস্টন যাই।”

“সে কী! এই তো ঘুরে এলাম!”

“কিন্তু সমস্যাটা এখনও তো মিটল না।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *