পর্ব – ৬
শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষ চতুর্দশী তিথি, ঝোঁপ জঙ্গলে ঘেরা এক খণ্ডহরের সামনে এসে দাঁড়ালেন শ্রীকৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠির। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, মহারাজ চিনতে পারছেন এই স্থান? যুধিষ্ঠির কিয়ৎক্ষণ মৌন রইলেন তারপর বললেন,হ্যাঁ মাধব এই স্থানেই ছিলো সেই অভিশপ্ত জতুগৃহ, দূর্যোধনরা পুরোচনকে দিয়ে এখানেই আমাদের জীবন্ত দগ্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল। তাত বিদুরের জন্যই আমরা সেসময় নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলাম •••
ঠিক তখনই ওই জঙ্গলের সংকীর্ণ পথ দিয়ে পাঁচজন বিধবা স্ত্রীলোককে অবশিষ্ট পূজা সামগ্রী নিয়ে রোদন করতে করতে বেড়িয়ে আসতে দেখে বিস্মিত যুধিষ্ঠির বললেন, এরা কারা? এই গভীর জঙ্গলে কোন দেবালয় আছে বলে স্মরণ হচ্ছে না! আর এই পাঁচজন রোদনই বা করছেন কেন? শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এদের জিজ্ঞাসা করলেই সত্যতা জানা যাবে।
বিধবা স্ত্রীলোক পাঁচজন নিকটে আসতেই শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে মাত! আপনারা কারা? এই জঙ্গলে পূজা সামগ্রী নিয়ে রোদন করছেন কেন ? এখানে কি কোন দেবালয় আছে? স্ত্রী লোক পাঁচজন নিঃশব্দে সেই স্থান পরিত্যাগ করার চেষ্টা করলে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, মাত আপনারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছেন এ অত্যন্ত অন্যায়! আপনাদের দেখে খুবই বিচলিত মনে হচ্ছে, আপনাদের কি কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে? মহারাজ যুধিষ্ঠিরের সাম্রাজ্যে সকলের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা কেন রোদন করছেন জানতে পারলে তিনি নিশ্চয়ই আপনাদের সাহায্য করবেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির একজন সত্যবাদী ন্যায়নিষ্ঠ এবং প্রজাবৎসল সম্রাট তিনি সকল প্রজাকেই সন্তানের মতো •••|
শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে একজন স্ত্রীলোক ক্রুদ্ধ সর্পিনীর মতো ফুঁসে উঠলেন, তিনি বললেন, মহারাজ যুধিষ্ঠির কি সাহায্য করবেন আমাদের? তাঁর জন্যইতো আমাদের আজ এই বৈধব্য অবস্থা।
শ্রীকৃষ্ণ অবাক হয়ে বললেন ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো না, মহারাজ যুধিষ্ঠির কিভাবে আপনাদের এই দশার জন্য দায়ী যদি বিস্তৃত বলেন •••
দ্বিতীয় স্ত্রীলোক বললেন, দেখে মনে হচ্ছে আপনারা আর্য গোত্রের বৈশ্যজাতি, আমরা অনার্য নিষাদ বংশীয়, আপনাদের মতো জ্ঞান আমাদের নেই তবুও আমরা প্রতিদিন মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে অভিশাপ দিয়ে যাবো আমাদের এই দশার জন্য।
কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে যুধিষ্ঠির বললেন, আপনাদের এই দশার জন্য যুধিষ্ঠির কিভাবে দায়ী?
তৃতীয় স্ত্রীলোকটি বললেন সে এক বিস্তৃত করুণ কাহিনী , সারা বিশ্ববাসী জানে মহারাজ যুধিষ্ঠির একজন সর্বগুণ সম্পন্ন মানুষ কিন্তু আমি বলবো তাঁর মতো স্বার্থপর অধার্মিক ও কুটিল মানুষ আর একজনও নেই।
তৃতীয় জনকে থামিয়ে দিয়ে চতুর্থ স্ত্রীলোকটি বললেন, দিদি অপরিচিত আর্য বংশীয় কারও কাছে এসব কথা বলতে যেও না ফল ভয়ংকর হতে পারে।
পঞ্চম জন বললেন, কি এমন ভয়ংকর হবে? আমরাও চাই মহারাজ আমাদের স্বামীদের মতো একই ভাবে হত্যা করুন আমাদেরও।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, মাত! আর্য বংশীয় হলেও আপনাদের জন্য আমরা সমব্যথী! যদি বিস্তৃত বলেন আমি শপথ করে বলছি আপনাদের প্রতি ন্যায় হোক সেই চেষ্টাই করবো •••