ছেলেটা থাকে এক নিভৃত গ্রামে
ছেলেটা কোনোদিন বলেনি – মা আমি ইস্কুলে যাব
ছেলেটা জানেনা মিড ডে মিলের
শস্তার খিচুড়িতে কেমন ধোঁয়া ওঠে ,
ছেলেটা জানেনা স্বপ্ন কাকে বলে
ছেলেটা বোঝে না উঁচু নীচু ভেদা ভেদ ।
ছেলেটা চেনে আকাশ , চেনে মাটি
বোঝে গাছ-গাছালির কথা , সে জানে
নদীর জল , নদীর গভীরতা ,
ছেলেটা মাঠে মাঠে ঘোরে
প্রতিটি ফসলের বেড়ে ওঠার ঘ্রাণ পায় ,
বাঁশি বাজায়, গান গায়
সাঁতরে নদী পার হয় , পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে
বৃষ্টিতে ভেজে , আকাশে রামধনু দেখে
প্রজাপতির পেছনে ছোটে , আকাশের
সব ক’টা মেঘকে উড়তে দেখে, আর দেখে
মেঘের বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়া , কোন মেঘ
ফাঁকি দিয়ে চলে গেল , সে জানে !
ছেলেটার বাড়ি ফেরার তাড়া নেই
সারারাত বনজোৎস্নাকে গায়ে মেখে
আকাশের দিকে চেয়ে থাকতেও তার আলস্য নেই ,
স্নিগ্ধতা জড়ানো তার চোখে
মায়াময় অপার্থিব সৌন্দর্যের উৎস
যেন খুঁজে পায়
খুঁজে পায় জীবনের সার্থকতা ।
তবু ছেলেটার কথা আমি ভাবি
অথচ কোনোদিন সে বলেনি আমি ভালো নেই
হয়ত বা বুকের মধ্যে সুপ্ত কোনো ছেলেবেলা
জেগে ওঠে , হয়ত বা দূরের আকাশ দেখতে দেখতে
আর ঘরে ফেরা হয় না ,
হয়ত বা নদীর বুকে ডিঙায় চড়ে নিরুদ্দেশে
পাড়ি দেওয়া
হয়ত বা নিঝুম রাত গভীর হলে
জেগে ওঠে হারানো ফুলের সুবাস
কাগজের নৌকোর সাগর পারের সাধের মত
ইচ্ছেগুলো আজো ডানা মেলে
উড়তে চায় সুদূর নীলাকাশে
মেঘেদের দেশে , মেঘবালিকারা যেখানে
ঘুরে বেড়ায় নীল পরীদের সাথে ,
সেই ছেলেটা এখনো মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে
সেই ছেলেটার ঘরে ফেরার তাড়া নেই
সেই ছেলেটার কোথাও কোনো প্রতিশ্রুতি নেই
আমি উপলোব্ধি করি
সেই ছেলেটা ইস্কুলে যাক বা না যাক
সেই ছেলেটা শস্তার খিচুড়ির গল্পের কাছে
থাক বা না থাক ,
তার কিচ্ছুটি যায় আসে না ,
পিপীলিকার যে ঝাঁপ অজেয় শান্তির
নীড় ছুঁয়ে মৃত্যুর অনলে
তার জীবনও উৎসর্গিত প্রকৃতির এক
আনন্দ সোপানে ।