সাদা মাথা-অলা ঈগল আমি,
আমার নিজস্ব নিঃসঙ্গতার সুউচ্চ চূড়ায়
অধিষ্ঠিত। সম্প্রতি ক্ষীণদৃষ্টিহেতু উড়ালে
অবাধ গতি নেই, নিচে খুব তীক্ষ্ম নামার কালে
কণ্ঠ চিরে বেরোয়া না জোরালো চিৎকার। শীতের
কনকনে হাওয়ায় আমার পালকগুলো থরথর
কাঁপে বাঁশপাতার মতো। কাদাজলে
পড়ে-থাকা গাছের পাতার গন্ধের মতো
কী একটা আমাকে নিয়ত বিরক্তির
উৎকট বৃত্তে ঘোরায়।
দৃষ্টির প্রাক্তন উজ্জ্বলতা কমলেও চাঁদ ঝলসে ওঠে
আমার চোখে, চাঁদকে ফুঁ দিয়ে কয়েকটি রূপালি বুদ্বুদ
সৃষ্টি করি; কিছু নক্ষত্র টাকশালের নতুন মুদ্রা হয়ে ঝনঝনায়
চৌদিকে আমার আহ্বানে। কখনো মেঘের ছায়া
ভেসে যায় আমার উপর, কখনো
সাপের মতো বিদ্যুৎ ঝলসায় আকাশে। মাঝে মাঝে
ঝিমুনি ধরে। কী যেন একটা পাশ দিয়ে
চলে যায়, টের পাই, স্পষ্ট দেখি না। শক্তি
অবসিত প্রায়, অথচ ক্ষুধা ও তৃষ্ণা
নাছোড় সঙ্গী। চলে কোনোমতে শ্বাসটানার সংগ্রাম নিরন্তর। মাঝেমাঝে
অনুভবে আসে লাস্যময়ী তৃণের নাচ। বুকের কাছে রেশমি ফুলের উন্মীলন আর
আমার মাথার ভেতর বিভিন্ন ঋতু
স্বপ্ন তৈরি করে, স্বপ্নেরা আমার ডানায় জাগায়
উড়ালের অদম্য স্পৃহা, ধারালো চিৎকার
পূর্ণিমার নিশীথের তৃতীয় প্রহরে
বুকে তোলপাড় করে প্রণয়িনীর সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষায়,
যে এখন অনুপস্থিতির ঘেরাটোপে বন্দিনী।
দুঃসহ বেদনাপ্রতিম প্রণয় আর বিচ্ছেদের
প্রহারে কাতর আমি এই নির্দয় চূড়ায় আঁধারে
ক্ষুধার্ত নিঃসঙ্গতাকে আহার জোগাই অন্তর-ছেঁড়া
গান দিয়ে, এই গান কী করে উৎসারিত, জানি না।
এ কি এক ধরনের দেহমনের যুদ্ধ?
এ কি প্রকৃত শান্তি? জানি না, জানি না, জানি না।