Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এক পাড়া গাঁয়ের রুপকথা || Samarpita Raha

এক পাড়া গাঁয়ের রুপকথা || Samarpita Raha

গ্রামের নাম গোচারন।সবাই সংক্ষেপে চরন বলে।ঐ যে শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখায় এসে লক্ষিকান্তপুর লোকাল ধরতে হবে।বারুইপুরের পর শাসন,ধপধপি হয়ে আরো কয়েকটি স্টেশনের পর চরন।

ওখানে বিয়ে হয়েছিল বড়দির।তখন সোমার বয়স তিন।বড়দি সোহাগি বোন বড়দির বিয়ের পর কেঁদে কেঁদে যাই যাই অবস্থা।তখন জামাইবাবু সেই পুচকিকে নিয়ে গেছিল।সবাই মজা করে বড়দিকে বলত সোমা হচ্ছে কবিতার ভ‍্যানিটি ব‍্যাগ।

সোমার আকর্ষণ ছিল মাতৃসমা বড়দি।আরেকটি আকর্ষণ সেই গ্রাম।স্টশনের থেকে মিনিট দশেক দূরে দিদির পেল্লায় শ্বশুর বাড়ি। শান বাঁধানো পুকুরঘাট।তিন বিঘা জমির উপর বিশাল অট্টালিকা।জামাবাবু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।পাথর প্রতিমায় চাকরি করতেন।তাই বড়দির সাথী ঐ পুচকি বোন সঙ্গ দিত।।এছাড়া শ্বশুরবাড়িতে দিদির জায়েরা থাকতো।

স্টেশন থেকে নামার পর দুই পাশে হোগলা বন,ধানের ক্ষেত। চল্লিশ -বিয়াল্লিশ বছর আগের কথা।লাইট বলতে ঐ দিদির বাড়ি।আর আশে পাশে গুণে বলা যায়,কাদের বাড়িতে আলো আছে।

বর্ষাকালে সারাদিন ব‍্যাঙের গাঙর গাঙর শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যেত।পিছনে কান্তদের একটা একবিঘা জমির ওপর শুধু কলাগাছ ছিল।সোমা বন্ধু দের সাথে ঐ কলা বাগানে খেলা করত।সবচেয়ে চোখ জুড়িয়ে যেত বিঘার পর বিঘা জমিতে হলুদ ও সবুজ রঙা সর্ষে ক্ষেত।

তখন মানুষের মধ্যে নোংরা প্রবৃত্তি ছিল না।ব‍্যাস প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়াও।সকাল হলে সব বাড়ির হাঁসগুলি প‍্যাক প‍্যাক করে বলত এই সোমা আমরা পুকুরে যাচ্ছি।যাবি নাকি রে?

তখন সোমা বলত হাসিখুশী বইটা শেষ করেই যাচ্ছি।কিছুদিন থাকত আবার নিজের বাড়ি ব‍্যারাকপুরে চলে যেত।
এরপর সোমা স্কুলে ভর্তি হয়।ঐ গরমের ছুটি,পূজার ছুটি,বড়দিনের ছুটি,তারপর বার্ষিক পরীক্ষার ছুটি পড়লেই সেই দশ বছর বয়স থেকে একাই ব‍্যারাকপুরে থেকে চরণ চলে যেতট্রেনে করে।
সোমা চরণে গেলেই সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে ঘুরে বেড়াতো।
রাস্তায় ঘুরত না ,বিঘার পর বিঘা জমিতেঘুরে বেড়াতো।সবেদা,লিচু,তেঁতুল খেয়ে বেড়াত।এখন পলাশ গাছ দেখে আবেগে গদগদ হয়ে কবিতা,গল্প লিখছেন।পলাশ ফুল শুধু সরস্বতী পূজায় লাগে।সবাই বসন্ত এসে গেছে বলে ক্ষেপে ওঠে।কিন্তু যারা বারোমাস গ্রামের শোভা দেখেন তারা পলাশ দেখে নাচে না।গরম কালে কাদি কাদি ডাব শীতকালে খেঁজুরের রস।কুল পেড়ে,নুন লঙ্কা দিয়ে আচার,পাকা তেঁতুল মাকা। কদবেল মাখা,স্বর্গীয় জীবন ছিল সোমার।
পলাশ প্রেমিকরা দেখেছ কি?
সন্ধ্যা হলে পুকুরঘাটে গিয়ে ডাকা হতো প‍্যাঁক প‍্যাঁক আয় আয় চই চই।ঠিক হাঁসরা লাইন বেঁধে হাঁসঘরে চলে যেত।

সোমা একবার মাধ্যমিক দিয়ে বড়দির বাড়ি গেছে,বড়দি বলল এবার তো বনে বাদাড়ে ঘুরবি।রাস্তা ক্রস করে ওপারে যাস না।মটরসুঁটি বনে পঙ্গপাল ভরে গেছে।
সোমা বারন সত্ত্বেও ওখানে যায়।জঙ্গলের মধ্যে সবাই বাজনা বাজাচ্ছে।পঙ্গপালের দল দেখে মনে হচ্ছিল,কে যেন মুঠো মুঠো সবুজ রঙ আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে।
গ্রামে একটা অসুবিধা সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার,ডাকাতির ভয়।আগে চিঠি দিয়ে জানান দিত ডাকাত আসবে।সব ছেলে মেয়েদের কালি মাখিয়ে খাটের তলায় ঢুকিয়ে দিত।তারপর আবার চিঠি আসত সূর্যপুর ইটখোলায় দশ হাজার টাকা রেখে আসবি।তারপর জামাইবাবুর বাবা রেখে আসতেন।এটাও একটা গ্রামের অভিজ্ঞতা।

এখন পুকুরে দাপাদাপি,মাছ ধরা সব হারিয়ে গেছে।এখন আমরা সবাই ভাসছি।

কঠোরে-কোমলে-মেশা অনুপম রুপময় আমাদের এই গৌর-শ‍্যামল পশ্চিমবঙ্গ।রুপমুগ্ধ কবিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই তাকে বলেছেন সোনার বাংলা।প্রতিটি ঋতু এখানে তার আপন রুপের ডালি নিয়ে আসে,প্রকৃতিকে সাজায় অনুপম রুপসজ্জায়,তারপর তা নিঃশেষে মুছে নিয়ে চলে যায়।

আজ সকল গ্রাম শহরের সাথে পাল্লা গাছপালা কেটে বসতি বানাচ্ছে।আর বিঘা বিঘা জমি নেই।
পল্লীর “ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি” সুখ সমৃদ্ধির আগার ছিল।গোলাভরা ধান,গোয়ালভরা গরু,পুকুরভরা মাছ,টাটকা পুষ্টিকর শাকসবজির প্রাচুর্য ছিল।কবিগান,কথকতা যাত্রা,কীর্তন প্রভৃতির মাধ্যমে গ্রামের জীবন বড় সুখের ছিল।
তাইতো নিজের বাড়ি ছেড়ে সবুজ হতে সোমা চরন ছুটত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress