রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – লঙ্কার উৎপত্তি
অগস্ত্য বলেন, রাম বাক্যে দেহ মন।
সবাকে বিদায় দিলা দেব ত্রিলোচন।।
ভবানী সহিত গৃহে রহে পঞ্চানন।
হাস্য পরিহাসে সদা আনন্দে মগন।।
হেতা শুন হেমন্তের গৃহের কাহিনী।
বসিলা হেমন্ত-গিরি ও মেনকা রাণী।।
হেনকালে গিরিগণ মাগিল মেলানি।
রহিতে পর্ব্বতগণে বলে প্রিয়বাণী।।
স্নান সন্ধ্যা করি সবে করহ ভোজন।
তবে ত তোমরা সবে করিহ গমন।।
স্নান সন্ধ্যা কৈল সবে ভাগীরথী জলে।
একঠাঁই হৈল সবে ভোজনের কালে।।
সুবর্ণের থালে অন্ন দিলা পরিপাটী।
সারি দিয়া বসিলা পর্ব্বত তিনকোটী।।
বসিল সুমেরু মধ্যে করিতে ভোজন।
অদূরে থাকিয়া তাহা দেখিল পবন।।
সম্বর্ত্ত আবর্ত্ত দ্রোণ আর সে পুষ্কর।
চারিমেঘে হাঁকারিয়া আনে পুরন্দর।।
আগে বায়ু মাঝে ইন্দ্র পিঠে-জলেশ্বর।
ঝড় বরিষণ করে সুমেরু-উপর।।
সুমেরু কাঞ্চনশৃঙ্গ যতেক যোজন।
ভাঙ্গিয়া দিলেন শৃঙ্গ দেবতা পবন।।
পর্ব্বতের শৃঙ্গ লয়ে পবনকুমার।
মাথায় কাঞ্চনশৃঙ্গ সিন্দু হৈল পার।।
সুমেরুর শৃঙ্গ পরে ত্রিকূটের চূড়ে।
দুই গিরি চূড়া লয়ে সাগরেতে এড়ে।।
বিশ্বকর্ম্মা লয়ে গেলা দেব পুরন্দর।
মধ্যে পুরী নির্ম্মাইল চৌদিকে সাগর।।
সাতটা প্রাচীর তাহে করিল গঠন।
লোহাতে প্রাচীর গড়ে উপরে কাঞ্চন।।
পরিখা যোজন শত লঙ্ঘিতে না পারি।
প্রসর যোজন দশ বিশাল চউরী।।
সুবর্ণে গড়িল আর অষ্টাদশ পুরী।
নাটশাল পাঠশাল বিচিত্র চউরী।।
খাট পাট নির্ম্মাইল সোণার আওয়াস।
স্বর্ণপুরী নির্ম্মাইল বিরিঞ্চির হাস।।
সুবর্ণে বান্ধিল ঘাট দীঘি ও পোখরী।
রাজগৃহ প্রজাগৃহ গড়ে সারি সারি।।
যত্ন করি গড়িল রাজার অন্তঃপুরী।
বাহির ভিতরে সব কাঞ্চনের পুরী।।
নির্ম্মাইল চিত্র ঘর বিদ্যুতের ছটা।
অন্তঃপুরে নির্ম্মাইল অযুতেক কোঠা।।
নির্ম্মাল সহস্র স্তম্ভে দেয়ান চৌতারা।
নানা রত্ন খচিল মাণিক্য-মণি-হীরা।।
ঘরের উপরে শোভে সোণার বাহারা।
চারিভিতে লম্বে গজমুকুতার ঝাড়া।।
সুবর্ণের আয়তন গড়ে সিংহাসন।
চতুর্দ্দোল হেরি যেন রবির কিরণ।।
রত্নে নির্ম্মাইল ঘর করে ঝলমলি।
নির্ম্মাইল সুবর্ণের পাখা-পাখী-আলি।।
বড় বড় বৃক্ষকাণ্ড সুবর্ণে বান্ধিল।
অযুত প্রশস্ত ঘর স্বর্ণে নিরমিল।।
সোণার পতাকা উড়ে দেখিতে রূপস।
ঘরের উপরে শোভে সুবর্ণ-কলস।।
বান্ধিল সোণায় তবে পুষ্করিণী ঘাট।
নির্ম্মাইল সুবর্ণেতে ঘরের কপাটে।।
সুবর্ণেতে নির্ম্মাইল স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
সোণায় রচিল যত দীঘি ও পোখরী।।
হইল অদ্ভুত পুরী দেখিতে সুন্দর।
সপ্তকোটি আছে তাহে ইষ্টকের ঘর।।
নবকোটি কৈল তাহে আশ্রিত আলয়।
চারিলক্ষ কৈল তাহে পর্ব্বত দুর্জ্জয়।।
হেনমতে নির্ম্মাইল স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
দানব গন্ধর্ব্ব দেব লঙ্ঘিতে না পারি।।
সুমুদ্রের মাঝে পুরী করিল নির্ম্মাণ।
জিনিয়া অমরাবতী তাহার বাখান।।
স্বর্ণময় পুরীখান দিব্য পরকাশ।
গাইল উত্তরকাণ্ডে কবি কৃত্তিবাস।।