রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শ্রীরাম কর্ত্তৃক পৃথিবী কাটিতে উদ্যোগ এবং ব্রহ্মা কর্ত্তৃক নিবারণ
দুয়ের ক্রন্দনে রাম কান্দেন আপনি।
উভয়ের নেত্রজলে তিতিল মেদিনী।।
দুয়েরে বাল্মীকি মুনি দেন পাতিয়ান।
সীতা হেতু কান্দিয়া শ্রীরাম হতজ্ঞান।।
সীতার সমান নারী না হেরি নয়নে।
কি করিব রাজা হৈয়া সীতার বিহনে।।
মোর অগোচরে সীতা লইল রাবণে।
সবংশেতে মরিল সে জানকী কারণে।।
আমার সাক্ষাতে সীতা হরিলেন ধরা।
তাহারে খুঁদিয়া লব সীতা মনোহরা।।
যজ্ঞেতে জনক-রাজা যজ্ঞভূমি চষে।
পৃথিবীর মধ্যে সীতা উঠিলেন চাষে।।
চাষভূমি সীতার জন্মের অনুবন্ধ।
তেকারনে বসুমতী শাশুড়ী সম্বন্ধ।।
আর যত স্ত্রী জন্মিল ভারত ভুবনে।
সীতা তুল্য নারী নাহি আমার নয়নে।।
কৃতাঞ্জলি শুন বলি শাশুড়ী গর্ব্বিতা।
না দেহ আমারে দুঃখ আনি দেহ সীতা।।
কাতর হইয়া রাম বলিলেন যত।
তদুত্তর না পাইয়া জ্বলিলেন তত।।
শ্রীরাম বলেন ভাই আন ধনুর্ব্বাণ।
পৃথিবী কাটিয়া আজি করি খান খান।।
শাশুড়ী না দিলা তবে এই বাণ যুড়ি।
কেমনে বাঁচিবে তুমি কাহার শাশুড়ী।।
সীতা নিতে যখন করিলে আগুসার।
তখনি যে পাঠাতাম যমের দুয়ার।।
পৃথিবী কাটিতে রাম পূরেন সন্ধান।
ত্রাস পাইয়া পৃথিবী হলেন আগুয়ান।।
দেখিয়া রামের কোপ ব্রহ্মা চিন্তে মনে।
সত্বর আসিল ব্রহ্মা রাম-বিদ্যমানে।।
বলিলেন রাম তুমি বিষ্ণু-অবতার।
সংসারে হইল তব গুণের প্রচার।।
জন্ম না হইতে রাম তোমার চরিত।
অবতার না হইতে হৈল তব গীত।।
ভূত ভবিষ্যৎ যে সকল মুনি জানে।
সর্ব্ব দুঃখ খণ্ডে যেই রামায়ণ শুনে।।
আদি কবি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ।
শুনিলে পাপের ক্ষয় দুঃখ বিমোচন।।
আপনি শ্রীরাম যে সাক্ষাৎ নারায়ণ।
পৃথিবীতে প্রচার হইল গুণগান।।
অনাথের নাথ তুমি সকলের গতি।
পৃথিবী কাটিয়া তুমি রাখিবে অখ্যাতি।।
তোমার স্মরণে পাপীর পাপ নাহি থাকে।
বিকল হইলে রাম জানকীর শোকে।।
ইন্দ্র আদি করিয়া দেবতা আর ঋষি।
দেবলোকে রামায়ণ শুনে ভালবাসি।।
দেবগণ মুনিগণ বসিয়া কৌতুকে।
মহাসুখে রামায়ণ শুনে সর্ব্বলোক।।
বাল্মীকি করিল যে অদ্ভুত নিরমাণ।
শুনিলে পাপের ক্ষয় দুঃখ অবসান।।