রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – যজ্ঞাশ্ব রক্ষার্থ শত্রুঘ্নের যাত্রা ও পূর্ব্ব-উত্তর-পশ্চিম দিগ্বীজয়
তুরঙ্গ-নগর হৈতে আইল তুরঙ্গ।
তুরঙ্গ সোয়ার তার কত শত সঙ্গ।।
শ্যামবর্ণ অশ্ব শ্বেতবর্ণ চারি খুর।
নানা অলঙ্কার শোভে সুহার কেয়ূর।।
লেজ শোভা করে যেন ধবল চামর।
কপালে চামর তার অতি শোভাকর।।
সর্ব্ব গায় খামি খামি সুবর্ণ অদ্ভুত।
জলদ-মণ্ডলে যেন খেলিছে বিদ্যুৎ।।
স্বর্ণবর্ণ কর্ণ তার ধরে নানা জ্যোতি।
দুই চক্ষু জ্বলে যেন রতনের বাতি।।
গলে লোমাবলি যেন মুকুতার ঝারা।
রাঙ্গা জিহ্বা মেলে যেন আকাশের তারা।।
জয়পত্র ঘোড়ার কপালেতে লিখন।
দিলেন শত্রুঘ্ন-বীরে ঘোড়ার রক্ষণ।।
শ্রীরাম বলেন শুন শত্রুঘন ভাই।
যজ্ঞপূর্ণকালে য্নে এই ঘোড়া পাই।।
দুই অক্ষৌহিণী ঠাটে যান শত্রুঘন।
রঙ্গেতে সঙ্গেতে চলে শত শত জন।।
বসিলেন রাম যজ্ঞস্থানে মুনিবেশে।
ছাড়িয়া দিলেন ঘোড়া ভ্রমে দেশে দেশে।।
পূর্ব্বদেশে গেল ঘোড়া বহুদূর পথ।
নদ নদী এড়াইয়া উঠিল পর্ব্বত।।
ঘোড়ার পশ্চাতে যান বীর শত্রুঘন।
পর্ব্বত উপরে ভ্রমে স্বেচ্ছায় গমন।।
সেই পর্ব্বতের নাম বিরূপাক্ষ গিরি।
মহাবল সে রাজা পর্ব্বত নামধারী।।
রাজপুরে অগ্নিগড় জ্বলে চারিভিতে।
ঘোড়া গড় লঙ্ঘিয়া চলিল আনন্দেতে।।
গড়ের ভিতরে ঘোড়া করিল প্রবেশ।
হেনকালে শত্রুঘন গেলেন সেই দেশ।।
সকল কটকে ঘোড়া চারিদিকে ঘেরে।
শত্রুঘ্ন কটক লয়ে রহিল বাহিরে।।
শত্রুঘ্নের কটক যে দুই অক্ষৌহিণী।
নিভাইল সে সকল গড়ের আগুনি।।
গড় মধ্যে প্রবেশ করেন শত্রুঘন।
শত্রুঘ্নের সহিত রাজার বাজে রণ।।
রাম সম শত্রুঘন বীর-অবতার।
শত্রুঘ্নের বাণেতে রাজার চীৎকার।।
মহাবল শত্রুঘ্ন বাণের জানে সন্ধি।
হাতে গলে সে রাজারে করিলেন বন্দী।।
বান্ধিয়া পাঠায় তারে বীর শত্রুঘন।
রাম-দরশনে তার বন্ধন মোচন।।
পূর্ব্বদিক জয় করি আইল শত্রুঘন।
উত্তরদিকেতে ঘোড়া করিল গমন।।
উত্তরদিকেতে গেল ঘোড়া বায়ুগতি।
শত্রুঘ্ন কটক লয়ে তাহার সংহতি।।
দিগদিগন্তরে ঘোড়া যায় দেশে দেশে।
ছয়মাসের পথ যায় চক্ষুর নিমিষে।।
জয়পত্র ঘোড়ার কপালেতে লিখন।
ঘোড়া দেখি প্রাণ উড়ে যত রাজগণ।।
মিলিল সকল রাজা আসিয়া তথাই।
পরাজয় মানিলেক শত্রুঘ্নের ঠাঁই।।
ঘোড়া গেল হিমালয়-পর্ব্বতের পার।
সেই দেশী রাজা যেই বিক্রমে অপার।।
ঘোড়া দেখি রাজার ধরিতে গেল সাধ।
শত্রুঘ্ন রাজার সহ লাগিল বিবাদ।।
কেহ কারে নাহি পারে তুল্য দুই জন।
দোঁহাকার বাণ গিয়া ছাইল গগন।।
বাছিয়া বাছিয়া বাণ এড়ে শত্রুঘন।
সে বাণ ফুটিয়া রাজা হয় অচেতন।।
না পারে কহিতে কথা অত্যন্ত কাতর।
তারে বান্ধি পাঠাইল অযোধ্যা-নগর।।
দর্শন দিলেন তারে কমল-লোচন।
তাহাতে হইল তার বন্ধন মোচন।।
সে ঘোটক আটক না হয় কোন কোটে।
পশ্চিম দিকেতে অশ্ব তারা যেন ছুটে।।
এক দিকে ঘোটক না যায় দুইবার।
পশ্চিম দিকেতে গেল সিন্ধুনদ-পার।।
শত্রুঘ্ন ফাঁফর হৈল ঘোড়া নাহি দেখে।
সিন্ধুনদ-পারে গেল সকল কটকে।।
বিকৃত আকার তারা হাতে চেরা বাঁশ।
হস্তী ঘোড়া মারি খায় যত রক্ত মাস।।
পিশাচ ভোজন আর পিশাচ-আচার।
জীব জন্তু মারি করে তাহারা আহার।।
সকল ব্যাধেতে ঘোড়া ঘেরে চারিভিতে।
কুপিল শত্রুঘ্ন বীর ধনুর্ব্বাণ হাতে।।
মহাবল শত্রুঘন বীর-অবতার।
এক বাণে সব ব্যাধে করিল সংহার।।
তিন দিক্ শত্রুঘন করি আইল জয়।
ঘোড়া লয়ে শত্রুঘ্ন যজ্ঞের কাছে যায়।।