রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – রাবণের সহিত কুবেরের যুদ্ধ
মণিভদ্র পড়ে রণে কুবের চিন্তিত।
আপনি আইল রণে পাত্রেতে বেষ্টিত।।
ডাক দিয়া বলে শুন ভাই রে রাবণ।
আমার সহিত তব যুদধ কি কারণ।।
মণিভদ্রে পাঠালাম যুঝিবার তরে।
কুড়ি হাতে চাপি তুমি বধিলে তাহারে।।
নিরুপায় পক্ষে আমি এসেছি যুদ্ধেতে।
বধিতে নারিবে আর চেপে কুড়ি হাতে।।
করেছ অনেক তপ অস্থিচর্ম্ম সার।
নারিলে অমর হতে কোন্ অহঙ্কার।।
অমর হইনু আমি তপের প্রসাদে।
কুকর্ম্ম করিয়া ভাই পড়িবে প্রমাদে।।
যথা তথা যুদ্ধ করে অব্শ্য মরণ।
মৃত্যুকালে মনে করো আমার বচন।।
অমর হয়েছি কিসে লইবে পরাণ।
হারি যদি রণেতে করিবে অপমান।।
এত যদি কহিল কুবের যক্ষরাজে।
রাবণের পাত্র মিত্র সবে পড়ে লাজে।।
কুবুদ্ধি ঘটিল রাজা দুষ্ট নিশাচরে।
দোহাতিয়া বাড়ি মারে কুবেরের শিরে।।
ছি ছি বলি কুবের দিলেন টিটকারী।
এই মুখে যাবে ভাই স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।।
দুই কটকেতে যুদ্ধ হইল বিস্তর।
কুবেরের বাণে রাজা হইল জর্জ্জর।।
ঘায়ে জর জর রাবণ কুবেরের বাণে।
কেমন জিনিব রণ ভাবে মনে মনে।।
সংসারের মায়া জানে পাপিষ্ঠ রাবণ।
মায়ারূপে করে কুবেরের সনে রণ।।
শার্দ্দূল হইয়া কেহ কামড়ায়ে মারে।
বরাহ হইয়া কেহ দন্ত দিয়া চিরে।।
মেঘ হৈয়া পড়ে কেহ অঙ্গের উপরে।
ঝঞ্ঝনা পড়য়ে যেন গদার প্রহারে।।
শেল শূল মারে কেহ গজের গর্জ্জনে।
কুবেরে প্রহার করে রাজা দশাননে।।
রক্তে আক্ত কুবের পড়িল ভূমিতলে।
উপাড়িয়ে বৃক্ষ যেন পড়য়ে সমূলে।।
কুবেরে ধরিয়া লয় যত অনুচরে।
ধরিয়া রাখিল লয়ে পুরীর ভিতরে।।
কুবেরের ভাণ্ডার লুটিল দশানন।
বিশেষ পুষ্পক-রথ আর বহু ধন।।
প্রবেশিল রাবণ তাহার অন্তঃপুরী।
দেখিয়া পলায় সবে যত ছিল নারী।।
কুবেরের অন্তঃপুরে হৈল হাহাকার।
রাবণ লুটিয়া সব করে ছারখার।।