ইতিহাস সাক্ষী কর্মের ফল জীবৎকালীন পেতে হয়
অনস্বীকার্য যে যেকোন মানুষ মাত্রই কর্মের ফল ভোগ করে থাকে।সে সুকর্ম বা কুকর্ম যাই হোক না কেন।ভালো কাজে ভালো ফল এবং মন্দ কাজে মন্দ ফল মানুষকেই ভুগতেই হয়।
শ্রী মদ্ভগবৎগীতায় আমরা কর্মযোগের বিষয়ে অনেককিছু জেনেছি। সেখানে স্পষ্টতঃ উল্লেখ আছে ,যেমন কর্ম তেমন ফল। অর্থাৎ মানুষ যেমন যেমন কর্ম করবে ঠিক তেমন তেমন ফল লাভ করবে। আরো উল্লেখ আছে,-” কর্মেণ বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচনা’ মানে, কর্ম করে যাওয়াই মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিত,ফলের আশা করতে নেই।কারন,ফলাফলের ভার তো স্বয়ং ঈশ্বরের উপর।তাই কর্ম করে যাও ফলের আশা করোনা। যে যেমন কর্ম করবে সে সেই কর্ম অনুসারে সেরকম ফল পাবে।
ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি রাখলে দেখতে পাই,সেখানেও ওই কর্মযোগের কথাই বলা হয়েছে। তাই দেখা যায় যে,মহাভারতের সময়েও যারাই মন্দ কাজ করেছেন তাঁরা মন্দ ফললাভ করেছেন,আর যারা বিচক্ষণতার সাথে সুকাজে মনোনিবেশ করেছেন তাঁরা সুফল ও সুযশের ভাগীদার হতে সক্ষম হয়েছেন।তাইতো দেখা যায়,কৌরবপক্ষের দুর্যোধন ও তার অন্যান্য সাঙোপাঙোরা মন্দ নিকৃষ্ট কর্মে লিপ্ত হবার ফলেই অধর্মের পথে অধার্মিক কাজ করে তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিলো। পাণ্ডবরা সর্বদাই ন্যায়নিষ্ঠ ধার্মিক ছিলো সেজন্যেই স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের সহায় ছিলেন। মহাভারতের যুদ্ধে ধর্মের জয় হয়েছিলো।
শুধু তাই নয়,রামায়ণ মহাকাব্যের মাঝেও অধর্মের সাথে ধর্মের যুদ্ধে ধর্ম জয় লাভ করে।ধর্ম অধর্মের লড়াই যখন যখন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে অবধারিত ভাবেই ধর্মের জয়গান ঘোষিত হয়।সত্য সদাই আলোকের দিশারী।আর ধর্মের বাহক হলো সত্য। বিভিন্ন পুরাণকথা,উপনিষদ বা বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থাদিতেও অধর্মের পরাজয় ও ধর্মের জয় দেখা গিয়েছে।
ইতিহাসের পাতা জুড়ে কতনা উত্থান পতনের কাহিনী,কতনা প্রতারণা ছলচাতুরীর প্রকাশ। কিন্তু পরিশেষে সেই চিরসত্য চির সুন্দর ধর্মের মাহাত্ম্য ঘোষিত হয়েছে বারেবারেই।
ইতিহাস সাক্ষী কর্মের ফল মানুষকে তাঁর জীবৎকালেই ভোগ করতে হয়।
আজ দেশ জুড়ে যে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার নেপথ্যে যারাই মদতদার আছেন তাদের কুকর্মের ফলে,লোভ লালসার ফলে নিরীহ জনসাধারণের জীবন দুর্বীসহ হয়ে উঠেছে,সমাজে নানা ব্যাভিচার,অনাচার বেড়েই চলেছে।যারা এসব কুকর্মের হোতা তারা আপাত সোনার চামচ দিয়ে সুখাদ্য মুখে তুললেও একদিন না একদিন বিচারের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে। পৃথিবীর আদালতে পার পেয়ে গেলেও ভগবানের আদালতে কোন মার্জনা নেই। নেতাস্থানীয় ক্ষমতাশালী ব্যাক্তিরা গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে কসুর করছে না।দেশে শিক্ষিত বেকারদের চাকরি নেই। সব চলে যাচ্ছে যার যার নিজের আত্মীয় বা টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে। দেশের সর্বত্র অশান্তির ছায়া। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আকাশ ছোয়া। সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেএইসব লোভী হায়েনার দল। যারা মানুষের ক্ষতি করে অসৎ ভাবে টাকা রোজগার করেছে। ভালো মানুষকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘ কাল চাকরি করে অবসর জীবনে পেনশনের বা জমাকৃত টাকা তুলতে গিয়ে সর্বসান্ত হতে হয়েছে কত বৃদ্ধকে,কত কত বৃদ্ধ অসহায়ভাবে অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।
তাই এই জন্মের কর্মের ফল এই জন্মেই ভোগ করতে হয় মানুষকে।আর সেজন্যেই বিবেকবোধ জাগ্রত হোক,চেতনার উন্মেষ হোক।তবেই হয়তো পরিত্রাণের পথ মিলতে পারে,নচেৎ নয়।