Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আহ্লাদী থেকে অপরাজিতা || Subhra Saha Shelley

আহ্লাদী থেকে অপরাজিতা || Subhra Saha Shelley

আহ্লাদী থেকে অপরাজিতা

প্রথম রক্তের দাগ যা জীবনটাকে পুরো বদলে দিয়েছিলো আহ্লাদীর জীবনটা।
বাবার আহ্লাদের মেয়ে ছিলো বলেই বাড়ির সবাই আহ্লাদী বলেই ডাকতো অপরাজিতাকে।
দুই প্রজন্ম পরে মা লক্ষীর আগমন বলে বাড়ির সকলের নয়ণের মণি অপরাজিতা ওরফে আহ্লাদী।
ফুল দিয়ে টোকা মারলেও যেন মেয়ের আঘাত না লাগে তাতে সদাই তৎপর আহ্লাদীর পরিবারের সকলে– বিশেষত বাবা।
বাবা মণীষবাবু মেয়েকে চক্ষে হারান।
সবিতাদেবীর সাথে মণীষবাবুর ঝগড়ার কারন একটাই –সেটা মেয়ে।
সবিতাদেবী কত বুঝিয়েছেন ” দেখো এত আতুপুতু করো না — মেয়ে হয়ে জন্মেছে পরেরবাড়ি গিয়ে অসুবিধে হবে।”
ব্যাস মণীশবাবুর পাল্টা যুক্তি ” ওমনবাড়িতে মেয়েকে দেব কেন যেখানে আমার মেয়ের অসুবিধে হবে। আমি আমার আহ্লাদীর জন্য সাতরাজার ধন রাজপুত্তুর খুঁজে আনবো।”
বাপেরবাড়ির আহ্লাদে আহ্লাদীও স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ করতে থাকে একদিন পক্ষীরাজ ঘোড়ায় করে রাজপুত্তুর এসে নিয়ে যাবে।
মণীষবাবু আহ্লাদীকে পড়াশুনার সাথে সততা , ভদ্রতা , নম্রতার পাঠ পড়ালেন—-
আহ্লাদীর রূপে গুণে আচার আচরণে যে কারোর নজর খুব সহজেই কাড়ে।
মণীষবাবু নিজে উদ্দ্যোগ নিয়ে সেরার সেরা পাত্র পছন্দ করলেন আদরের ধনটির জন্য।
বনেদী পরিবারের ছেলে।তবে এখন যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট্ট পরিবার। বাবা ,মা আর ছেলে — একটাই বোন তারও বিয়ে হয়ে গেছে। নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার।
পাত্র উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী। পাত্রের বাবা মা আজীবন শিক্ষকতা করে বছর কয়েক হলো অবসর গ্রহন করেছেন।
সব দেখেশুনে দুই পরিবারের মতে পুণ্যলগ্নে আহ্লাদীকে সম্প্রদান করেন রাজার হাতে।
রাজা নামটা মণীষবাবুরই দেওয়া —
রাজা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আহ্লাদীকে সুখে রাখবে — সমস্ত বিপদ থেকে আগলে রাখবে।
বৌভাতের পরে আত্মীয়স্বজন চলে গেলে আহ্লাদীর শ্বশুরশাশুড়ি “আমরা কিন্তু বাপু ভেবেছিলাম তোমার বাবা বিয়েতে উপুর করে খরচাপাতি করবে। সোনাগয়নাও আরো দেবে। তোমাকে রাজকন্যা বলে যা আদেখ্যিতা করেন উনি সবসময়–“
শ্বশুরবাড়িতে আসতে না আসতেই আহ্লাদীর স্বপ্নের জালে জোরালো একটা ধাক্কা লাগে।
নিজের নম্র স্বভাবের জন্য কোন প্রতিবাদ করে না।
রাতে রাজা কাছে আসতেই যত অভিমান সব উজার করে দেয় আহ্লাদী।কিন্তু রাজা তো তখন শুধু নিজের পাওনাটুকু ষোলআনা বুঝে নিতে ব্যস্ত।
সরল আহ্লাদীও এটাকেই রাজার ভালোবাসা মনে করে।
কিছুদিন যেতে না যেতেই রাজা বলেছিলো ” তোমার বাপটা শালা হাড় কিপটে — ভাবলাম পণ না চাইলে কত কিছু দেবে। দিলো কি শালা যতসব পাতি মাল।আমার অফিসের চাপরাশিও বিয়েতে এর থেকে ভালো জিনিসপত্র পেয়েছে। “
হতভম্ব আহ্লাদীর স্বপ্নের জাল খান খান হয়ে ছিঁড়ে যায় চোখের জল মুছে বলে ” ছিঃ রাজা তুমি আমার বাপ তুলে কথা বলছো।তুমি না —“
কথাটা শেষ হবার আগেই হিংস্র হয়ে তেড়ে আসে রাজা আহ্লাদীর দিকে —
ভয়ে জড়সড় আহ্লাদী মিনমিন করে ” তোমার মুখে এমন কথা মানায় না।”
গগনভেদী চিৎকার করে রাজা তার রাজকীয় পৌরুষ প্রদর্শন করে বলে ” কি মানায় কি না মানায় তোর কাছে শিখবো শালি বলে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ধাক্কা মেরে ছুঁড়ে দেয় “—
আহ্লাদী টাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়ে টেবিলের কোনায় —
কপাল ফেঁটে রক্ত ঝড়তে থাকে।এই প্রথম আহ্লাদী রক্তকে এত কাছ থেকে দেখা।
পরখ করে সেইরক্তের টাটকা তাজা টকটকে লালরঙ।ইতিমধ্যে দু একফোঁটা রক্তের নোনা স্বাদও আস্বাদন করে ফেলে আহ্লাদী।
সেইদিনই সে সপথ নেয় সে আহ্লাদীর খোলস থেকে বেড়িয়ে এসে অপরাজিতা হয়ে নিজের লড়াই লড়বে।
এমনি করেই হয়তো কত বাবামায়ের আহ্লাদীরা সংগ্রামী হয়ে ওঠে — তার খবর ক ‘জন রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress