Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আস্তাকুঁড়ে দেবীপক্ষ শুরু! || Suchandra Basu

আস্তাকুঁড়ে দেবীপক্ষ শুরু! || Suchandra Basu

আস্তাকুঁড়ে দেবীপক্ষ শুরু!

চলছে দেবীপক্ষ। উমা এসেছেন বাপের বাড়ি। এই মহামারীর মধ্যেও তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে সকলে। তিনি তো মৃন্ময়ী। আর রক্তমাংসের উমা?‌ তার জায়গা আস্তাকুঁড়ে?‌নবমীর সকালে কালীতলার মোড়ে ডাস্টবিন থেকে এক সদ্যোজাত শিশুকন্যার কান্নার আওয়াজ পেলেন মোহিনী মহিলা।কোলে তুলে নিয়েছেন ওই শিশুকে সহৃদয় মহিলা।তিনি যাচ্ছিলেন ঠিকা কাজে। বাসন মাজতে যাওয়া তার আর হল না।একদল কুকুর ওই শিশুকন্যাকে আগলে রেখেছিল। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।স্বামীকে রাজি করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে নিয়ে যায়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির বয়স ১ দিন। সে একেবারে সুস্থ।
ওই শিশুকে হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। ঠিক হয়েছে কোন এক হোমে পাঠানো হবে। সেটা
মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ‌আক্ষেপ এখানেই ‘দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। সোনায় মোড়া দেবীমূর্তির সামনে মাথা নত হয়ে আসে আমাদের। আর এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কন্যাসন্তানের জায়গা হয় গলির মোড়ের ডাস্টবিন। হায় রে মানুষ। হায় রে দুর্ভাগা দেশ!‌’‌
মোহিনী ভাবছে ফুটফুটে ওই শিশুই আজকের কুমারী।
কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্ত্বিক রূপ।জগন্মাতা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী হয়েও চিরকুমারী।কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মূলত নারীর যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা।কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি, পবিত্রতা ,সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্ম রূপে বিরাজিতা।-
তাঁর আবেদন রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ছোট্ট উমা ই সেই প্রতিমূর্তি।
দুর্গা পুজোর অন্যতম অঙ্গ কুমারী পুজো। তন্ত্রমতে কুমারী তো সাক্ষাৎ যোগিনী । বিভিন্ন পুরাণে কুমারীর স্তুতিবাচক নানা পদ রচনা করা হয়েছে। বাংলার দুর্গাপুজোয় বহু জায়গায় সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। এক বছর থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত ঋতুমতী না হওয়া বালিকাদের কুমারী রূপে পুজো করা যায়। এক এক বয়সের কুমারীকে এক এক নামে পুজো করা হয়।
পুজোর বিধানে বলা হয় পাদ্য, অর্ঘ্য, কুঙ্কুম, চন্দন দিয়ে কুমারীকে পুজো করতে হয়। পুজোর আগে কুমারী কে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে পায়ে আলতা ও কপালে সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। এরপর কুমারীকে দেবতা জ্ঞানে নানান উপাচারে পুজো করা হয়। পূজক ও ভক্তগণ কুমারীর মধ্যেই দেবীর প্রকাশ অনুভব করেন।
সমস্যা হলো যোগিনীতন্ত্র অনুসারে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা যায়। তবে অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পূজা করতে বাধা নেই।কিন্তু অবশ্যই তাদের ঋতুবতী হওয়া চলবে না। ধর্মের বিধান অনুযায়ী একেক বয়সের কুমারীর একেক নাম রয়েছে যেমন-এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা, দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী,তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি, চার বছরের কন্যার নাম কালিকা পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা,ছয় বছরের কন্যার নাম উমা, সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী, আট বছরের কন্যার নাম কুব্জিকা, নয় বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা,দশ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা, এগার বছরের কন্যার নাম রুদ্রাণী, বার বছরের কন্যার নাম ভৈরবী,তের বছরের কন্যার নাম মহালক্ষ্মী, চৌদ্দ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা, পনের বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোল বছরের কন্যার নাম অম্বিকা। সদ্যোজাত কুমারী
যে কোন জাতের সন্তান সেটাই অজানা।
যোগিনী তন্ত্রে কুমারী পূজা সম্পর্কে উল্লেখ আছে-ব্রহ্মা শাপবশে মহাতেজা বিষ্ণুর দেহে পাপ সঞ্চার হলে সেই পাপ থেকে মুক্ত হতে হিমাচলে মহাকালীর তপস্যা শুরু করেন । বিষ্ণুর তপস্যায় মহাকালী খুশি হন। দেবীর সন্তোষ মাত্রেই বিষ্ণুর হূদ্পদ্ম হতে সহসা ‘কোলা’ নামক মহাসুরের আবির্ভাব হয়।সেই কোলাসুর ইন্দ্রাদি দেবগণকে পরাজিত করে অখিল ভূমণ্ডল, বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠ এবং ব্রহ্মার কমলাসন প্রভৃতি দখল করে নেয়।তখন পরাজিত বিষ্ণু ও দেবগণ ‘রক্ষ’ ‘রক্ষ’ বাক্যে ভক্তিবিনম্রচিত্তে দেবীর স্তব শুরু করেন। বিষ্ণু আদি দেবগণের স্তবে সন্তুষ্টা দেবী বলেন,’হে বিষ্ণু!আমি কুমারী রূপ ধারণ করে কোলানগরী গমন করে কোলাসুরকে সবান্ধবে হত্যা করব।’ দেবী কথামতো কাজ করেন। সেই থেকে দেব-গন্ধর্ব, কিন্নর-কিন্নরী,দেবপত্নীগণ সকলে সমবেত হয়ে কুসুম-চন্দন-ভারে কুমারীর অর্চনা করে আসছেন।
মোহিনীর মনে হয়েছে করোনাসুরকে বধ করতেই
আস্তাকুঁড়ে এই কুমারীর আবির্ভাব।বিশ্ব আজ
করোনা ভাইরাসের কবলে।সেই ভাইরাস নাশ
করতেই হয়তো এসেছে আজ নবমী তিথিতে।তাই একদিন বয়স হলেও এই শিশুকেই কুমারী সাজিয়ে হোক পূজো।যেহেতু কুমারী পূজা শারদীয় দুর্গোৎসবের এক বর্ণাঢ্য পর্ব।
ঘট সাজিয়ে আস্তাকুঁড়ে দেবীপক্ষের সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress