Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমি || Aami by Lila Majumdar

আমি || Aami by Lila Majumdar

এই যেটাকে আমি কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছি, সেটাকে কি লাঠি ভেবেছ? মোটেই না। ওটা হল গিয়ে আমাদের চাকর জগুর ছাতার বাঁট। জগু ওটাকে হাঁটুর ফাঁকে খুঁজে ট্রামে চেপে বাজারে যাচ্ছিল, এমন সময় একটা দুষ্টু লোক ওর মধ্যে একটা আধপোড়া বিড়ি ফেলে দিয়েছিল। তাই ছাতার কাপড়চোপড় পুড়ে একাকার। জগুর রাগ দেখে কে। বাড়ি এসে ছুঁড়ে ওটাকে সিঁড়ির নীচে ফেলে দিয়েছিল। আমি লোহার খোঁচাগুলো ছাড়িয়ে ওটাকে নিয়েছি।

লাঠির আগায় পুঁটলি বাঁধা দেখেছ? ওতে আমার টিফিন আছে। পিসিমার ডুলি থেকে বের করে নিয়েছি। ওরা আমাকে কেউ কিছু দেয় না, তাই নিজেই নিতে হয়।

আমার সঙ্গে সঙ্গে কালোমতন একটা কী যাচ্ছে দেখেছ? ওটা ছোটুকার কুকুর, পুকি। কোনো কিছু আমার নয়। খালি প্যান্টটা আর শার্টটা। জুতোটাও গন্টুর। ওকে না বলে নিয়েছি।

কোথায় যাচ্ছি জানো? রামধনুর খোঁজে। কেন জানো? রামধনুর গোড়ার খুঁটিতে এক ঘড়া সোনা পোঁতা থাকে নাকি, তাই। সোনা দিয়ে কী করব জানো? এক-শিংওয়ালা একটা ঘোড়া কিনব। কেন কিনব বলব? ওতে চেপে দিদিমার কাছে ফিরে যাব বলে।

দিদিমার কাছে কেন যাব জানতে চাও? দিদিমা আমাকে দারুণ ভালোবাসে, তাই। আমার জন্যে নারকেল-নাড় বানায়, ঘুড়ি কেনে, আপেল কেনে, রাত জাগতে দেয়ে, পড়তে বলে না, কেউ বকলে রাগ করে, কেউ নালিশ করলে বুকে টেনে নেয়, ঢোল পিটিয়ে ঘুম ভাঙালে হাসে, পড়ে গিয়ে সারা গায়ে কাদা লাগলে কোলে নেয়।

আমি খুব খারাপ ছেলে, তা জানো? মা বাবা ছোটকা, পিসিমা, বড়দি, মেজদি, সব্বাই বলেছে, আমার মতো খারাপ ছেলে ওরা কোথাও দেখেনি। আমি ঘুম থেকে উঠতে চাই না, দাঁত মাজি না, পড়তে চাই না, খাতা পেন্সিল খুঁজে পাই না, বই ছিড়ি, স্নান করতে দেরি করি, মুখোমুখি উত্তর দিই, বড়োদের কথার অবাধ্য হই। আমার মতো দুষ্টু ছেলে হয় না। জানো, আমি না বলে ছোড়দির লজেঞ্জুষ সব খেয়ে ফেলেছিলাম, একটাও রাখিনি!

জানো, আমি ভালো করে ভাত খাইনা, ফেলি, ছড়াই, রাগমাগ করি, খালিখালি কঁচা আম খেতে চাই, বাতাসা খেতে চাই। আমি দিদিমার কাছে চলে যাচ্ছি। দিদিমা আমাকে ঝকঝকে মাজা কাসার গেলাসে করে জল খেতে দেয় আর হাতে একটা লালচে বাতাসা দেয়। আমি জলের মধ্যে, বাতাসাটাকে যেই ফেলি, বাতাসাটাও অমনি জল-টুস-টুস হয়ে ডুবে যায়। তক্ষুনি চো চো করে জলটা খেয়ে ফেলতে হয়। নইলে গুঁড়ো হয়ে যায়।

আমার দিদিমা দুপুরবেলায় কেষ্টচূড়া গাছের নীচে মাদুর পেতে, বালিশ নিয়ে আমার পাশে শুয়ে, আমাকে গল্প বলে। সব সত্যি গল্প। দিদিমার বাবা-কাকারা কেমন গোরাই নদীতে কুমির দেখেছিল, তাদের বুড়ি জেঠিমাকে ভাসিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আর যেই-না মাঝিরা নৌকো করে গিয়ে কুমিরের মাথায় দাঁড়ের বাড়ি মেরেছে, অমনি বুড়িকে ছেড়ে দিয়েছে। আর ওরাও নৌকোতে তুলে নিয়েছে। আর বুড়ি কেঁদে কেঁদে বলছে, বাঁচালি বাপ, বেঁচে থাক বাপ আমার আমসত্ত্ব শুকোয়নি আর আমাকে কিনা কুমিরে নিলে!

আমার দিদিমা এই সব গল্প বলে আর ছোট্ট কাগজের ঠোঙা থেকে আমার জন্যে আমসত্ত্ব বের করে দেয়। আমি চেটে চেটে খাই আর দিদিমা আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুছিয়ে দেয়।

ওরা বলে, বাবা-কাকারা যখন কাটোয়া গেছিল আর আমি দিদিমার কাছে দু-মাস ছিলুম, দিদিমা তখন আমার মাথাটি চিবিয়ে খেয়েছে। আমার বাবা মা এইরকম বলে।

একদিন কিন্তু সত্যি সত্যি দিদিমা আর আমি মট্‌কা চিবিয়ে খেয়েছিলুম। আমরা বাঁধের ধারে গেছলুম ফেরবার সময় আর হাঁটতে পারি না। শেষটা একটা আলো ওপর বসলুম দু-জনায়। দিদিমা আমার পায়ের গুলি ধরে নেড়ে দিল, অমনি আমার সব জ্বালা যন্ত্রণা জুড়িয়ে গেল। তারপর সেখান দিয়ে মটকাওয়ালা যাচ্ছিল, দিদিমা মট্‌কা কিনে বলল কাল বাড়ি থেকে পয়সা নিয়ে যা। মাওয়ালাকে চেনে আমার দিদিমা। তারপর আমরা মটকা চিবোতে চিবোতে বাড়ি চলে এলুম। এসে লুচি খেলুম। দিদিমা আমার জন্যে রোজ রাত্রে লুচি করে দিত। বলত, মাকে যেন আবার বলিসনে, সে হয়তো রোজ লুচি খেলে রাগ করবে। মাকে আমি কিছু বলিনি।

দিদিমা আমাকে বেড়াল কোলে নিয়ে শুতে দিত। পুষি আমার বালিশে মাথা রেখে আমার পাশে রোজ ঘুমোত। আর আজ দেখোনা পুষিকে আমার থালার কোনায় একটু খেতে দিয়েছিলুম বলে সে কী বকাবকি!তাই আমি আর এখানে থাকবনা। রামধনু খুঁজে তার খুঁটির গোড়া থেকে সোনার ঘড়া বের করে তাই দিয়ে এক-শিংওয়ালা ঘোড়া কিনে, তাতে চেপে দিদিমার কাছে গিয়ে হাজির হবো। ভীষণ আশ্চর্য হয়ে যাবে না দিদিমা? আমি জানি, ওসব ঘড়া-টড়ার গল্প, এক-শিংওয়ালা ঘোড়ার গল্প দিদিমা সব বানিয়ে বলে। তাই সত্যি করে যখন এক-শিংওয়ালা ঘোড়া চেপে হাজির হব, কেমন চমকে যাবে না দিদিমা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *