Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আবেদন || Abedan by Rabindranath Tagore

আবেদন || Abedan by Rabindranath Tagore

ভৃত্য । জয় হোক মহারানী । রাজরাজেশ্বরী ,
দীন ভৃত্যে করো দয়া ।
রানী । সভা ভঙ্গ করি
সকলেই গেল চলি যথাযোগ্য কাজে
আমার সেবকবৃন্দ বিশ্বরাজ্যমাঝে ,
মোর আজ্ঞা মোর মান লয়ে শীর্ষদেশে
জয়শঙ্খ সগর্বে বাজায়ে । সভাশেষে
তুমি এলে নিশান্তের শশাঙ্ক-সমান
ভক্ত ভৃত্য মোর । কী প্রার্থনা ?
ভৃত্য । মোর স্থান
সর্বশেষে , আমি তব সর্বাধম দাস
মহোত্তমে । একে একে পরিতৃপ্ত-আশ
সবাই আনন্দে যবে ঘরে ফিরে যায়
সেইক্ষণে আমি আসি নির্জন সভায় ,
একাকী আসীনা তব চরণতলের
প্রান্তে বসে ভিক্ষা মাগি শুধু সকলের
সর্ব-অবশেষটুকু ।
রানী । অবোধ ভিক্ষুক ,
অসময়ে কী তোরে মিলিবে ।
ভৃত্য । হাসিমুখ
দেখে চলে যাব । আছে দেবী , আরো আছে —
নানা কর্ম নানা পদ নিল তোর কাছে
নানা জনে ; এক কর্ম কেহ চাহে নাই ,
ভৃত্য- ‘ পরে দয়া করে দেহো মোরে তাই —
আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর ।
রানী । মালাকর ?
ভৃত্য । ক্ষুদ্র মালাকর । অবসর
লব সব কাজে । যুদ্ধ-অস্ত্র ধনুঃশর
ফেলিনু ভূতলে , এ উষ্ণীষ রাজসাজ
রাখিনু চরণে তব — যত উচ্চকাজ
সব ফিরে লও দেবী । তব দূত করি
মোরে আর পাঠায়ো না , তব স্বর্ণতরী
দেশে দেশান্তরে লয়ে । জয়ধ্বজা তব
দিগ্‌দিগন্তে করিয়া প্রচার , নব নব
দিগ্বিজয়ে পাঠায়ো না মোরে । পরপারে
তব রাজ্য কর্মযশধনজনভারে
অসীমবিস্তৃত — কত নগরনগরী ,
কত লোকালয় , বন্দরেতে কত তরী ,
বিপণিতে কত পণ্য — ওই দেখো দূরে
মন্দিরশিখরে আর কত হর্ম্যচূড়ে
দিগন্তেরে করিছে দংশন , কলোচ্ছ্বাস
শ্বসিয়া উঠিছে শূন্যে করিবারে গ্রাস
নক্ষত্রের নিত্যনীরবতা । বহু ভৃত্য
আছে হোথা , বহু সৈন্য তব ; জাগে নিত্য
কতই প্রহরী । এ পারে নির্জন তীরে
একাকী উঠেছে ঊর্ধ্বে উচ্চ গিরিশিরে
রঞ্জিত মেঘের মাঝে তুষারধবল
তোমার প্রাসাদসৌধ , অনিন্দ্যনির্মল
চন্দ্রকান্তমণিময় । বিজনে বিরলে
হেথা তব দক্ষিণের বাতায়নতলে
মঞ্জরিত-ইন্দুমল্লী-বল্লরীবিতানে ,
ঘনচ্ছায়ে , নিভৃত কপোতকলগানে
একান্তে কাটিবে বেলা ; স্ফটিকপ্রাঙ্গণে
জলযন্ত্রে উৎসধারা কল্লোলক্রন্দনে
উচ্ছ্বসিবে দীর্ঘদিন ছলছলছল —
মধ্যাহ্নেরে করি দিবে বেদনাবিহ্বল
করুণাকাতর । অদূরে অলিন্দ- ‘ পরে
পুঞ্জ পুচ্ছ বিস্ফারিয়া স্ফীত গর্বভরে
নাচিবে ভবনশিখী , রাজহংসদল
চরিবে শৈবালবনে করি কোলাহল
বাঁকায়ে ধবল গ্রীবা , পাটলা হরিণী
ফিরিবে শ্যামল ছায়ে । অয়ি একাকিনী ,
আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর ।
রানী । ওরে তুই কর্মভীরু অলস কিংকর ,
কী কাজে লাগিবি ?
ভৃত্য। অকাজের কাজ যত ,
আলস্যের সহস্র সঞ্চয় । শত শত
আনন্দের আয়োজন । যে অরণ্যপথে
কর তুমি সঞ্চরণ বসন্তে শরতে
প্রত্যুষে অরুণোদয়ে , শ্লথ অঙ্গ হতে
তপ্ত নিদ্রালসখানি স্নিগ্ধ বায়ুস্রোতে
করি দিয়া বিসর্জন , সে বনবীথিকা
রাখিব নবীন করি । পুষ্পাক্ষরে লিখা
তব চরণের স্তুতি প্রত্যহ উষায়
বিকশি উঠিবে তব পরশতৃষায়
পুলকিত তৃণপুঞ্জতলে । সন্ধ্যাকালে
যে মঞ্জু মালিকাখানি জড়াইবে ভালে
কবরী বেষ্টন করি , আমি নিজ করে
রচি সে বিচিত্র মালা সান্ধ্য যূথীস্তরে ,
সাজায়ে সুবর্ণ-পাত্রে তোমার সম্মুখে
নিঃশব্দে ধরিব আসি অবনতমুখে —
যেথায় নিভৃত কক্ষে ঘন কেশপাশ
তিমিরনির্ঝরসম উন্মুক্ত-উচ্ছ্বাস
তরঙ্গকুটিল এলাইয়া পৃষ্ঠ- ‘ পরে ,
কনকমুকুর অঙ্কে , শুভ্রপদ্মকরে
বিনাইবে বেণী । কুমুদসরসীকূলে
বসিবে যখন সপ্তপর্ণতরুমূলে
মালতী-দোলায় — পত্রচ্ছেদ-অবকাশে
পড়িবে ললাটে চক্ষে বক্ষে বেশবাসে
কৌতূহলী চন্দ্রমার সহস্র চুম্বন ,
আনন্দিত তনুখানি করিয়া বেষ্টন
উঠিবে বনের গন্ধ বাসনা-বিভোল
নিশ্বাসের প্রায় , মৃদু ছন্দে দিব দোল
মৃদুমন্দ সমীরের মতো । অনিমেষে
যে প্রদীপ জ্বলে তব শয্যাশিরোদেশে
সারা সুপ্তনিশি , সুরনরস্বপ্নাতীত
নিদ্রিত শ্রীঅঙ্গপানে স্থির অকম্পিত
নিদ্রাহীন আঁখি মেলি — সে প্রদীপখানি
আমি জ্বালাইয়া দিব গন্ধতৈল আনি ।
শেফালির বৃন্ত দিয়া রাঙাইব , রানী ,
বসন বাসন্তী রঙে । পাদপীঠখানি
নব ভাবে নব রূপে শুভ-আলিম্পনে
প্রত্যহ রাখিব অঙ্কি কুঙ্কুমে চন্দনে
কল্পনার লেখা । নিকুঞ্জের অনুচর ,
আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর ।
রানী । কী লইবে পুরস্কার ।
ভৃত্য । প্রত্যহ প্রভাতে
ফুলের কঙ্কণ গড়ি কমলের পাতে
আনিব যখন , পদ্মের কলিকাসম
ক্ষুদ্র তব মুষ্টিখানি করে ধরি মম
আপনি পরায়ে দিব , এই পুরস্কার ।
আশোকের কিশলয়ে গাঁথি দিব হার
প্রতি সন্ধ্যাবেলা , অশোকের রক্তকান্তে
চিত্রি পদতল চরণ-অঙ্গুলিপ্রান্তে
লেশমাত্র রেণু চুম্বিয়া মুছিয়া লব ,
এই পুরস্কার ।
রানী । ভৃত্য , আবেদন তব
করিনু গ্রহণ । আছে মোর বহু মন্ত্রী ,
বহু সৈন্য , বহু সেনাপতি — বহু যন্ত্রী
কর্মযন্ত্রে রত — তুই থাক্‌ চিরদিন
স্বেচ্ছাবন্দী দাস , খ্যাতিহীন , কর্মহীন ।
রাজসভা-বহিঃপ্রান্তে রবে তোর ঘর —
তুই মোর মালঞ্চের হবি মালাকর ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress