আনন্দের চড়ুইভাতি
চড়ুইভাতি বলতে নদীর পারে, কিংবা বাগানবাড়িতে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করে সবাই মিলে খাওয়া। প্রাতঃরাশ দিয়ে শুরু, মধ্যাহ্ন ভোজন করে বিকেলে প্রত্যাবর্তন।
কিন্তু এ গল্পের চড়ুইভাতির স্বাদ বেশ অন্যরকমের।
জন্ম থেকে মায়ের সাথে আছি। যদিও এটা স্বাভাবিক। সামান্য কারণে মা – বাবার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি , খুঁটিনাটি কারণে ঝগড়া তারপর বাবা – মায়ের ছাড়াছাড়ি।
পরে জানতে পারি আমি ও আমার বোন যমজ। আমি ফর্সা ও বোন শ্যামলা।বোন মায়ের রং ,আমি বাবার গায়ের রং পেয়েছি।
বাবা মাকে নাকি বলেছিলেন ,এমা একটা কালো মেয়ে জন্মালো।ব্যস এই ঝগড়া টানা এক বছর। তারপর আমি মার কাছে বাবা বনুকে নিয়ে চলে যায়।তাই অনেকে জিজ্ঞেস করে তুইতো মায়ের রং পাসনি! এইভাবে একা একা মা ও মেয়ে কুড়ি বছর কাটিয়ে দিলাম। কোনো দিন বাবা ও বনুকে দেখি নি।
আমি বর্তমানে আলিপুর বিহারী লাল কলেজের বি -এস- সি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। বড়দিনের ছুটিতে দশজন বন্ধু মিলে পিকনিক করতে মিলেনিয়াম পার্কে গেছি।যে যার বাড়ি থেকে পছন্দ মতো রান্না করে নিয়ে গেছিলাম। পিকনিক মনে হচ্ছিল, কেননা অনেক জায়গা থেকে বহুজন পিকনিক করতে এসেছিল।জোড়ে ডিসকো গান চলছিল। মধুমিতা চড়ুইভাতি নিয়ে একটি কবিতা বলল।
আমি আর দীপা ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। হঠাৎ সার্টেল কর্কটা একটু দূরে গিয়ে পড়ে। ওখানে এক ভদ্রলোক আর্ট পেপারে আঁকছিলেন।আমরা যখন দশটায় পার্কে ঢুকি তখন দেখেছি মহিলার স্কেচ আঁকছিলেন।সার্টেল কর্ক কুড়োতে গিয়ে দেখি এ’তো আমার মায়ের ছবি। আমি পিকনিক স্পটে গিয়ে এক কাপ চা কাগজের কাপে নিয়ে ভদ্রলোককে চা দেবার চেষ্টা করি।এই নিন চা খান, সেই সকাল থেকে আঁকছেন। ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি বলি যাকে আঁকছেন উনি কে?
এমন সময় আমার মতো একজন মেয়ে এসে বলে , উনি আমার মা!
আমি চিৎকার করে বলি হতেই পারে না! আমার বন্ধুরা আমায় টেনে যাবার চেষ্টা করে।চল সোমা পিকনিক করতে এসেছি ,মজা করব চল। ভদ্রলোক বলে তোমার মা’কে এরকম দেখতে বুঝি! তোমার মা কোথায়? আমি বলি বাড়িতে। বন্ধুরা মিলে এসেছি , এখানে মা আসবে কেন!
ভদ্রলোক বেশ ফর্সা, ওনার মেয়ে হুবহু আমি। কিন্তু ও শ্যামলা দেখতে।তবে উনি কি আমার বাবা!!
ভদ্রলোক বললেন তুমি কোথায় থাকো? তুমি কি মলির মেয়ে!!
দুই বোন একে অপরকে দেখে যাচ্ছিলাম। মা আমি তোর বাবা
রে!
নিয়ে যাবি আমাদের’কে, তোদের বাড়িতে।
আমরা বাপ বেটিতে একটা ওলা করে বাড়ি এলাম।মা – বাবার অভিমান শেষ।
দুদিন বাদে আমরা চারজন মিলে ডায়মন্ডহারবারে ফ্যামেলি পিকনিক করতে গেলাম।দুই বোনে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। বাবা – মা ফাঁকা মাঠে স্টোভ জ্বালিয়ে মাংস ভাত করতে ব্যস্ত। বিগত উনিশ বছরের কথা মা – বাবার জমে আছে,তা ওঁরা চোখের জলে বহির্প্রকাশ করছেন।
আমরা দুই বোনে গান ধরলাম চল বনভোজনে ,আজ ছুটি রে ভাই ছুটি…।
আমাদের সুখের সংসারে প্রায় পিকনিক লেগেই আছে।