আজব আচরণে
কি আশ্চর্য ঘটনা পৃথিবীতে এমনও ঘটে! মানুষ কেন এত পাশবিক নৃশংস হয়? কি সব হচ্ছে আজকাল? -স্বগোক্তির মতন বলতে বলতে সুখদ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে। বন্ধুকে এমন আনমনা বিড়বিড় করে কিসব বলতে দেখে অপাল শুধোয়, কি রে, উন্মাদ হয়ে গেছিস নাকি?
কেন? কেন?
যে কোনো সময় তুই দুর্ঘটনায় পা হড়কে পড়বি! এমন উন্মনা হয়ে কেউ কি রাস্তায় হাঁটে?
একটু ধাতস্থ হলো সুখদ। বুঝতে পারে অন্যমনা অবস্থায় মানুষের কত বিপদ ঘটতে পারে!
অপালের দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবতে পারিস একটা অবোধ শিশুর অস্ফুট কান্না পাশের পাড়ার এক পরিত্যক্ত কূয়ো থেকে ভেসে আসছিল।
তাই নাকি?
সেজন্যই ভাবছি, কে বা কারা ঐ দুগ্ধপোষ্য বাচ্চাকে ঐ জলাশয়ে ফেলে দিয়ে গেছে? কতটা কতটা অমানবিক কাজ! একবার ভেবে দেখ।
চল তো সরেজমিন তদন্ত করেই দেখা যাক। অপালের অসীম উৎসাহে সুখদ নড়েচড়ে বসে।
বন্ধুকে নিয়ে সে অকুস্থলে আসে।বহু লোকের জমায়েতে জায়গাটা সরগরম। উদ্ধারকর্মীরা শিশুটিকে সুস্থ জীবন্ত অবস্থায় ফুটপাতে শুইয়ে রেখেছে। সব্বাই অনুধাবন করার চেষ্টা করে, বেওয়ারিশ বাচ্চাটা কার? আপনাআপনি ওই নাদান বাচ্চাটা এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখে নি। তবে তাকে অন্ধকারে কে নিক্ষেপ করলো?
উৎকন্ঠিত জনতা সেই কসাইয়ের খোঁজ পাবার জন্য সত্যি মরীয়া। শূণ্য দৃষ্টিতে সুখদ আর অপাল দুজনেই পরষ্পরের দিকে তাকায়।
নিরুত্তর হাওয়া কানে কানে বলে যায়, সেই দোষীকে নিশ্চয়ই খুব কাছেপিঠে খুঁজে পাওয়া যাবে।
ইতিমধ্যে কিছুদূরের একটা বাড়ী থেকে বেশ চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসে। সব্বাই খুব তটস্থ।
স্ত্রী চিল চিৎকারে শুধোয়, তুমি আমার কচি ছেলেটাকে কোথায় রেখে এসেছো? তন্দ্রায় আমার চোখ বুঁজে এসেছিল। তারপর দেখি ছেলে নেই।
আসলে হতদরিদ্র পরিবারের স্বামী ব্যক্তিটি এখন নিশ্চুপ। অন্যদিকে স্ত্রীও নাছোড়বান্দা। অনেকক্ষণ কথা-কাটাকাটির পর অবশেষে স্বামী মিউমিউ কন্ঠে হাত নির্দেশে জানায়, ঐ ঐ কূয়োয়। তক্ষুণি বাতাসে উড়ে এলো বাক্যগুলো দুই বন্ধুর কর্ণকুহরে।
রহস্যের পরিসমাপ্তি তারপরই সেই পাষন্ডকে অনেক মারধোর আর মারধোরের পর।