Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্নপূর্ণার সংসার || Rina Ghosh

অন্নপূর্ণার সংসার || Rina Ghosh

অন্নপূর্ণার বিয়ে

ষোলো বছর বয়সে অন্নপূর্ণা বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি আসে। শহরের মেয়ের গ্রামে প্রত্যাবর্তন । সুখের ঘর ছেড়ে এমন এক সংসারে আসা যেখানকার মানুষজনকে ভালো করে সে চেনেই না। পাঁকা রাস্তা ছেড়ে মাটির রাস্তায় অবতরণ, বাস ছেড়ে সাইকেলে যাতায়াত, কখনো কখনো তো হাঁটা পথই ভরসা। মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়াতেই অন্নপূর্ণার অর্ধেকটা জীবন কেটে যায়।
অন্নপূর্ণার বাবা ওপার বাংলায় সবে একটা চাকরি পেয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক টালমাটালের জন্য জমি, বাড়ি, চাকরি – সব ছেড়ে চলে আসতে হয় এপাড়ে। এপাড়ে এসে শুরু করলেন ব্যবসা। বুদ্ধিবল আর পেশী বলের প্রয়োগে খুব অল্প দিনের মধ্যেই দুধ ঘি-র ব্যবসা জমে উঠল। অন্নপূর্ণার বাবারা দশ ভাইবোন । তিন ভাই আর সাত বোন। তাদের মধ্যে ছয় জনের বিয়ে হয় ওই দেশেই এবং এই একই কারণে তারাও ছেলে পুলে নিয়ে অন্নর বাবা কাকার সাথে চলে আসে এখানে। যখন এখানে আসে মনে হয়েছিল যেন গোটা একটা গ্রাম উঠে এসেছে। এখানে এসে চার দিদি আর তিন বোনের ছেলে মেয়ে সব সময় তাদের মামার বাড়ি অর্থাৎ অন্নর বাবার বাড়িতেই থাকত। এছাড়া কাজের লোক তো ছিলই। জমজমাট পরিবার, সবসময় খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত। অন্নপূর্ণার মা আর মেজো কাকিমা ভোর বেলা হেঁসেলে ঢুকতেন আর বেরোতেন বিকেল বেলা। তার ফাঁকেই তাদের খাওয়া দাওয়া আর স্নান সারতে হত। বাড়ি ভর্তি লোক সারাক্ষণ গমগম করত।
অভাব নেই অভিযোগ নেই। দিন রাত কাজ আর কাজ। আগেকার দিনের মানুষের মধ্যে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল – যেখানে কাজ নেই ,সেখানে ভাত নেই। অনুরূপ ভাবে অন্নপূর্ণার বাপের বাড়িতে কাজের জন্য নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না তাই কখনো ভাতের অভাব হয় নি। এই ব্যবসা করে অন্নপূর্ণার বাবা রমেন বাবু তাঁদের তিন ভাইয়ের জন্য বাজারের মধ্যে তিনটে দোকান কিনলেন। এক কথায় বড়ো পরিবার কিন্তু সুখী পরিবার ।
এই রকম পরিবার থেকে অন্নপূর্ণা এলো অজয়ের গ্রামে। কচুবাগানের মধ্যে তার নতুন সংসার। যখন তার বিয়ে হয় তখন বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা হত। শ্রাবণের সেই দিন অন্নপূর্ণা তার মামাশ্বশুরের কোলে করে মাঠ দিয়ে প্রথম শ্বশুর বাড়ি প্রবেশ করলো। বোঝাই যাচ্ছে রাস্তার থেকে মাঠের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। অন্নপূর্ণা দেবী দুর্গার মত দেখতে যেমন গায়ের রং তেমনি তার চোখ মুখের গড়ন। কি ভাবে যে রমেন বাবু তার আদরের বড়ো মেয়েকে এই রকম একটা জায়গায় বিয়ে দিলেন এই প্রশ্ন আত্মীয় স্বজন সকলের মনেই এসেছিল। কিন্তু ওই যে – হয়ত এটাই কপালের লিখন, হয়ত এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল । অন্নর মেজ কাকা এই বিয়েতে খুব একটা খুশি ছিলেন না। বাড়ির প্রথম মেয়ে, সকলের এতো আদরের, সে এই রকম পরিবেশে যাবে । কিন্তু জগদীশ্বর চাইলে ভীষণ অসম্ভবও যে সম্ভব হয়ে যায়। অজয়ের সাথে বিয়ে তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ।
অজয়ের বাড়িতে তখন একটাই পাঁকা ঘর। তার ঠাকুরদা সেই ঘরের ভীত গড়েছিলেন। বড়ো ছেলের বিয়ের জন্য সেই ঘরের পাঁকা ছাদ দেওয়া হয়। অন্নপূর্ণা এসে ওঠে সেখানে। কিন্তু অসুবিধা অনেক , প্রতিটা পদে পদে বাধা আর কষ্টের নদী। তখনও সেই বাড়িতে ইলেকট্রিক আসে নি। অজয় আর অন্নর ঘরে একটা লম্ফো ছিল রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সেই লম্ফো নিভিয়ে দিয়ে শুতে যেত। কারণ সারারাত লম্ফ জ্বললে অনেকটা তেল ফুরিয়ে যাবে । (ক্রমশঃ)

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 1 of 6 ): 1 23 ... 6পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress