Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 7

অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার || Shirshendu Mukhopadhyay

গোপাল গুছাইতের নামে

গোপাল গুছাইতের নামে বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায় বটে, কিন্তু দুঃখের কথা হল, অঘোরগঞ্জে গোরু থাকলেও বাঘের খুবই অনটন। ফলে ব্যাপারটা পরখ করে দেখা হয়নি কারও। তবে একথা ঠিক যে, দু’একজন ব্যাদড়া তোক ছাড়া এই গাঁয়ে গোপালের কথার উপর কথা বলার হিম্মত কারও নেই। নিজেকে সে অঘোরগঞ্জের রবিন হুড বলেই মনে করে। তার চোখের দিকে চোখ রেখে কেউ কথা কয় না। সে রাস্তায় বেরোলে তোকজন সটাসট এদিকওদিক সটকে পড়ে।

এহেন গোপাল একটু মুশকিলে পড়েছে। ব্যাপারটা হল, পাশের হেতমপুর গাঁয়ে অপরেশ অপেরার ‘বৈশাখী ঝড়’ যাত্রা হচ্ছে, ফাটাফাটি নাটক। তিনটে সোর্ড ফাঁইট, গোটা চারেক ঝাড়পিট, বন্দুকের লড়াই এবং হেভি সব ডায়লগে সুপারহিট পালা। দলবল নিয়ে যাত্রা দেখে কাল গভীর রাতেই গাঁয়ে ফিরছিল গোপাল। যাত্রা দেখে তার রক্ত বেশ টগবগ করে ফুটছে। এসব পালা দেখলে গা গরম হয়, মাথা পরিষ্কার থাকে, গায়ে বেশ জোরও চলে আসে। অ্যাকশনে নেমে পড়তে ইচ্ছে হয়। গোপালেরও হচ্ছিল। ভগবান যেন তার মনের কথা বুঝতে পেরে একটা অ্যাকশনের সুযোগ একেবারে প্লেটে করে সামনে সাজিয়ে দিলেন।

ইটখোলার মাঠটা পেরিয়ে গায়ে ঢুকবার মুখে ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় তারা দেখতে পেল, ষষ্ঠীতলার মোড়ে দুটো ষন্ডা চেহারার লোক একটা ছোটখাটো চেহারার লোককে রাস্তায় ফেলে বেদম পেটাচ্ছে, আর বলছে, “তুই ইচ্ছে করে আমাদের ভুল রাস্তায় ঘুরিয়ে মারছিস! আসল জিনিস কোথায় বল, নইলে খুন হয়ে যাবি!”

গোপাল এবং তার দলবলের মধ্যে তখনও ‘বৈশাখী ঝড়’ কাজ করছে। ভিতরকার সেই ঝড়ই একটা বাঘা গর্জন হয়ে গোপালের কণ্ঠ থেকে বেরোল, “কে রে তোরা? কার এত সাহস যে, এই গাঁয়ে এসে মস্তানি করে যায়?”

বলতে বলতেই গোপাল আর তার দলবল ঝড়ের মতোই গিয়ে যভাদুটোর উপর চড়াও হল। লালমোহনবাবু সেদিন বলছিলেন বটে যে, গোপালের পেটে চর্বি হয়েছে। তা গোপাল তারপর ব্যায়ামট্যায়াম করে চর্বি সারিয়ে ফেলেছে, হাতে-পায়ে বিদ্যুৎ খেলছে তার। তার সামনে কারওরই বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয়, উচিতও নয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তার প্রচণ্ড ঘুসিটা খুব শান্তভাবে এবং যেন খানিকটা বিনয়ের সঙ্গেই গ্রহণ করল প্রথম যভাটা। গোপালের অবশ্য ঘুসিটা মেরেই মনে হয়েছিল যে, সে ষভাটার বদলে ভুল করে একটা গাছের গুঁড়িতেই ঘুসিটা মেরে বসেছে। কিন্তু কাছাকাছি কোনও গাছ না থাকায় ভারী অবাক হয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করছিল সে। তারপর যে কী হয়েছিল তা গোপাল গুছাইত গুছিয়ে বলতে পারবে না। শেষ রাতে ঘুম ভাঙার পর সে যেমন বুঝতে পারছিল না, বিছানার বদলে সে একটা মাঠে ঘুমিয়েছিল কেন!

চাঁদ ঢলে পড়লেও জ্যোৎস্না এখনও একটু আছে। গোপাল চারদিকে চেয়ে তার সামনেই একটা লোককে বসে থাকতে দেখতে পেল। লোকটা ছোটখাটো, মনে হল দাড়ি-গোঁফ আছে। কিন্তু রাতের বেলা লোকটা মাঠে বসে আছে কেন তা সে বুঝতে পারছিল না। তার মাথায় আর গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল বটে, কিন্তু গোপালের তার চেয়েও বড় সমস্যা হল, সে যে কে, সেটাও সে বুঝতে পারছিল না। তাই সে করুণ গলায় লোকটাকেই জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, আমি কে বলুন তো!”

নোকটা বিরস গলায় বলল, “এ তো লাখ টাকার প্রশ্ন মশাই, আমি কে তা জানতে মানুষ কত সাধনা করেছে জানেন? আজও হায়-হয়রান হয়ে প্রশ্নের জবাব খুঁজে যাচ্ছে। তা আপনার কী মনে হয়?”

“মনে হচ্ছে প্রাণনাথ সেন কিংবা হরিপদ ঘোষ।”

“খারাপ নয় মশাই, মোটেই খারাপ নয়। আমার চেয়ে আপনার অবস্থা ঢের ভাল।”

“কেন বলুন তো!”

“আপনার তো মোটে দুটো নাম। আমার চৌষট্টিটা।”

“বলেন কী?”

“তা হবে না? যখন রাজপুত্র সাজি তখন এক নাম, যখন কাবুলিওলা সাজি তখন আর-এক নাম, যখন পুলিশ সাজতে হয় তখন ভিন্ন নাম, যখন কুলিকামারি বা রিকশাওলা সাজতে হয়, তখন ফের নতুন নাম। আর এই করতে গিয়েই তো সর্বনাশটা হল। চৌষট্টিটা নামের মধ্যে আমার আসল নামটাই গেল গুলিয়ে। এখন মাথায় ডাঙস মারলেও পিতৃদত্ত নামটা মনে পড়ে না মশাই।”

“বটে! কিন্তু ছদ্মবেশ ধরেন কেন?”

“না ধরে উপায় আছে? আমার বড় বিপদের কাজ মশাই। আমি হলুম গোয়েন্দা পোয়াবারো।”

“পোয়াবারো? কথাটা যেন কোথায় শুনেছি!”

“তা শুনে থাকবেন, তবে এটাও ছদ্মনাম।”

“আপনি তা হলে পুলিশের লোক?”

“কস্মিনকালেও নয়। পুলিশে ঢোকার বড় সাধ ছিল মশাই, সাইজের জন্য হল না। আমি প্রাইভেট গোয়েন্দা।”

গোপাল খুব কষ্টে উঠে বসল, তারপর খানিকক্ষণ ঘাড় নেড়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে মাথার ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করে বলল, “কিন্তু আমিই বা এখানে পড়ে আছি কেন, আর আপনিই বা এখানে বসে আছেন কেন?”

লোকটা মাথা নেড়ে বলল, “মরে থাকার চেয়ে পড়ে থাকা কি ঢের ভাল নয়?”

“ও কথা বলছেন কেন?”

“ঠিকই বলছি। চিরু আর শচির পাল্লায় পড়লে প্রাণ নিয়ে কম লোকই ফেরে।”

“তারা কারা?”

“তারা খুব মারকুট্টে লোক মশাই। পেশাদার খুনি৷”

“তারা কি আপনাকে মেরেছে?”

“আপনাকেও কি ছেড়েছে নাকি?”

গোপাল ভারী অবাক হয়ে বলল, “আমাকেও মেরেছে?”

“তবে! মেরে নাম ভুলিয়ে দিয়েছে।”

“এ তো ভারী অন্যায়!”

“অন্যায়! তা অন্যায় হলেও সব জিনিসেরই একটা ভাল দিকও তো আছে। আপনারা দলবল নিয়ে এসে চড়াও হওয়াতেই তো আমার প্রাণটা এ যাত্রা বেঁচে গেল! আর আপনাদের সুবিধের দিকটাও বিবেচনা করুন। অনেকজন থাকায় চিরু আর শচি কারও উপরেই সুবিচার করতে পারল না, মারটা ভাগাভাগি হয়ে গেল। আর এ তো সবাই জানে যে, কোনও জিনিস ভাগাভাগি হলে পরিমাণে কমে যায়।”

গোপাল সচকিত হয়ে বলল, “আমার দলবলও ছিল নাকি? তা তারা সব গেল কোথায় বলুন তো!”

লোকটা মাথা নেড়ে বলল, “সকলের কথা জানি না। একজনকে দেখেছি শচির রদ্দা খেয়ে ভুল বকতে বকতে ওই মাঠধরে বোধ হয় বিবাগীই হয়ে গেল। আর-একজনকে চিরু হাঁটু দিয়ে মেরুদণ্ডে মারায় সে ভেউ-ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে ওই ইটের পাঁজার পিছনে গিয়ে লটকে পড়েছে। একজন শচির চড় খেয়ে হঠাৎ গৌরাঙ্গের মতো দু’হাত তুলে মা, মা বলে ডাকতে-ডাকতে মাকে খুঁজতে যে কোথায় চলে গেল কে জানে। চার নম্বর ছোঁকরা চড়চাপড় খেয়ে সেই যে দৌড়ে গিয়ে ওই ঝুপসি গাছটায় উঠে পড়েছিল আর নামেনি।”

“কিন্তু এসব হচ্ছে কেন মশাই?” ৮০

“হচ্ছে বাবু বিশ্বাসের জন্য।”

“বাবু বিশ্বাসটা কে?”

লোকটা ডাইনে বাঁয়ে মাথা নেড়ে বলল, “বললে বিশ্বাস হবে না। তবে সে একজন খসে পড়া মানুষ।”

“খসে পড়া মানুষ আবার কী মশাই?”

“শুনেছি, সে নাকি আকাশ থেকে খসে পড়েছিল।”

“আকাশে কি মানুষের গাছ আছে যে, খসে পড়বে?”

লোকটা উদাস গলায় বলল, “দুনিয়ায় কত কী হয়!”

গোপাল গুছাইত কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কিছুই তেমন পরিষ্কার হল না তার কাছে। এমনকী সে প্রাণনাথ না হরিপদ ঘোষ, সেটাও সাব্যস্ত হল না এখনও। তার মধ্যে এই পোয়াবারো, হিরু, শচি, বাবু বিশ্বাসরা ঢুকে মাথাটা আরও গণ্ডগোল করে দিচ্ছে।

গোপাল করুণ গলায় বলল, “না হয় ধরেই নিলাম, বাবু বিশ্বাস আকাশ থেকেই পড়েছে, কিন্তু সে পড়ার ফলে হলটা কী?”

পোয়াবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সে পড়ার পরই যে কালবোশেখির ঝড় শুরু হয়ে গেল!”

“কালবোশেখির ঝড়! কালবোশেখির ঝড়!” বিড়বিড় করতে করতে হঠাৎ যেন মাথায় উপর্যুপরি বজ্রাঘাত হতে লাগল গোপালের। তাই তো! বৈশাখী ঝড়! কাল রাতে সে তো দলবল নিয়ে হেতমপুরের ‘বৈশাখী ঝড়’ যাত্রা দেখতে গিয়েছিল! সে তো মোটেই প্রাণনাথ সেন বা হরিপদ ঘোষ নয়! সে যে অঘোরগঞ্জের অবিসংবাদী রুস্তম, এক এবং অদ্বিতীয় রবিন হুড গোপাল গুছাইত!

গোপাল হঠাৎ লাফিয়ে উঠে গর্জন ছাড়ল, “আমি গোপাল! আমি যে গোপাল গুছাইত!”

পোয়াবারো বিরক্ত হয়ে বলল, “আহা, আবার নাম বাড়াচ্ছেন কেন? দুটো নাম নিয়েই দোটানায় পড়েছেন, আর-একটা নাম জুটলে যে হিমশিম খাবেন!”

গোপাল হুংকার দিয়ে উঠল, “কে বলল আমার তিনটে নাম? আমার একটাই নাম। গোপাল গুছাইত। এ নাম শুনলে অঘোরগঞ্জে সবাই কঁপে।”

লোকটা চোখ পিটপিট করে বলল, “অ! তা হলে আপনি সত্যিই গোপাল গুছাইত! ভাগ্যবান লোক মশাই আপনি! আর আমার অবস্থা দেখুন। নকল দাড়ি-গোঁফ, নকল চুল, নকল পোশাক আর নকল নামের জঙ্গলে হারিয়ে বসে আছি। আমি যে আসলে কে তা আর আমিও বুঝতে পারি না।”

গোপাল ফুসতে-ফুসতে বাঘা গলায় ধমক দিয়ে বলল, “বকোয়াস বন্ধ করো। কে বা কারা আমার আর আমার স্যাঙাতদের গায়ে হাত তুলেছে? কার এত সাহস? কোথায় চিরু আর শচি?”

পোয়াবারো মোলায়েম গলায় বলল, “হবে-হবে। ঠান্ডা হয়ে বসুন তো! সব সময় হাঁকডাক আর গায়ের জোরে কাজ হয় না। তাতে বরং কাজ ফসকে যায়।”

গোপাল কিছুক্ষণ ফোঁসফোঁস করে তারপর ধপ করে বসে পড়ল। বলল, “রাগে যে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে!”

“তা জ্বলতেই পারে। আপনি একজন পালোয়ান লোক, পালোয়ানরা মারধর খেতে একদম পছন্দ করে না।”

গোপাল ফুঁসে উঠে বলল, “তারা আমাকে খুব মারধর করেছে নাকি? তা হলে তাদের আমি এমন শিক্ষা দেব যে…!”

লোকটা মাথা নেড়ে বলল, “না মশাই, না। স্বচক্ষে দেখেছি, শচি আপনাকে মাত্র একটাই ঠোকনা মেরেছিল। আর তাইতেই–থাকগে, ওসব কথা আপনার শুনে আর কাজ নেই। বরং যা বলছি মন দিয়ে শুনুন। কথাটা হচ্ছে, বাবু বিশ্বাসকে নিয়ে।”

“কী কথা?”

“আমি যত দূর জানি, বাবু বিশ্বাস এ গাঁয়েই কারও বাড়িতে ঘাপটি মেরে আছে। কিন্তু তার বড় বিপদ। চিরু আর শচি তাকে খুঁজছে। তাদের উপর হুকুম আছে, বাবু বিশ্বাসকে দেখামাত্র খুন করে তার ঘড়িটা কেড়ে নিয়ে যেতে।”

“ঘড়ি! ঘড়ির জন্য কেউ খুন করে নাকি?”

“করে। মৃগাঙ্কবাবু করেন। নবিনগরে তার প্রাসাদোপম বাড়িতে যদি যান তা হলে ঘড়ি দেখে তাজ্জব হয়ে যাবেন। দুনিয়ায় হেন ঘড়ি তৈরি হয়নি যা তাঁর কালেকশনে নেই। গোল, চৌকো, তেকোনা, দু’কোনা, আটকোনা, অ্যানালগ, ডিজিটাল, অ্যানা-ডিজি-টেম্প, হিরে বসান, মুক্তো বসানো হাজার হাজার ঘড়ি। ওইটেই মৃগাঙ্কবাবুর শখ। ঘড়ির এমন নেশা তার যে, দুষ্প্রাপ্য ঘড়ি হাতানোর জন্য তিনি এ পর্যন্ত গোটা চারেক খুনও করিয়েছেন। আমাকে তিনি মাইনে দিয়ে রেখেছেন কেন জানেন?”

“কেন?”

আমার কাজ হল তাকে নানারকম ঘড়ির সুলুকসন্ধান দেওয়া এবং ঘড়ি হাতাতে সাহায্য করা। বাবু বিশ্বাসের ঘড়িটাই হয়েছে তার কাল।”

“কেন, বাবু বিশ্বাসের ঘড়িটা কীরকম? খুব দামি নাকি?”

“দামি হলে তো কথাই ছিল না। দাম দিতে ঘড়ি-পাগল মৃগাঙ্গবাবু এক কথায় রাজি। যেগুলো দাম দিয়ে পাওয়া যায় না সেগুলোই বাঁকা পথে আদায় করতে হয়। ঘড়ির জন্য তিনি পাহারাদার রাখেন, গুন্ডা পোষেন, গোয়েন্দা বহাল করেন। ঘড়ির জন্য টাকা খরচ করতে তাঁর ভ্রুক্ষেপ নেই। বাবু বিশ্বাসের ঘড়িটার জন্য তিনি কত কবুল করেছিলেন জানেন? পঞ্চাশ লাখ টাকা!”

শুনে হা হয়ে গেল গোপাল। কিছুক্ষণ মুখে বাক্য সরল না। তারপর অবিশ্বাসের গলায় বলল, “পঞ্চাশ লাখেও দিল না? লোকটা তো বুরবক দেখছি!”

“দেওয়ার উপায় নেই মশাই। ঘড়ি দিলে বাবু বিশ্বাস বাড়ি ফিরবে কী করে?”

“তার মানে? ঘড়ির সঙ্গে বাড়ি ফেরার সম্পর্ক কী?”

“আছে মশাই আছে। ওই ঘড়ির সংকেত ধরেই তো তার বাড়ির লোক তাকে নিতে আসবে।”

‘দুর মশাই! আপনি আমার মাথাটা ফের গুলিয়ে দিচ্ছেন।”

“মাথা গুলিয়ে যাওয়ারই কথা। আমারও গুলিয়ে গিয়েছিল কিনা!”

“সে তো আর কচি খোকা নয় যে, বাড়ির লোক নিতে না এলে যে বাড়ি ফিরতে পারবে না!”

“ভুল করছেন মশাই। মনে রাখবেন, বাবু বিশ্বাসের বাড়ি আকাশে। সে যে আকাশ থেকে খসে পড়েছিল সেটা কি ভুলে গেলেন?”

“শুনে আমারও তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। একটু খোলসা করে বলবেন ব্যাপারটা আসলে কী? আকাশে কি কারও বাড়ি থাকতে পারে মশাই?”

“যা শুনেছি তাই বলছি।”

“কার কাছে শুনেছেন? বাবু বিশ্বাসের কাছে তো! সে গুল মেরেছে।”

লোকটা চোখ বড় বড় করে ভারী অবাক হয়ে বলল, “গুল মারবে কী মশাই, সে তো মোটে কথাই বলতে পারে না।”

“মূক নাকি?”

“মৃগাঙ্কবাবু ডাক্তার ডাকিয়ে দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছে, মূকও নয়, বধিরও নয়।”

“তা হলে কথা কয় না কেন?”

“এই তো সমস্যায় ফেলে দিলেন। বাবু বিশ্বাস কথা কয় না বটে, কিন্তু তার সামনে বসে যদি শান্ত মনে তার দিকে চেয়ে থাকেন, তা হলে অনেক কিছু টের পাবেন। তা কথার চেয়ে কিছু কম নয়।”

“আচ্ছা, সে যদি কথাই না কইবে তা হলে সে যে বাবু বিশ্বাস তা জানলেন কী করে?”

লোকটা একগাল হেসে বলল, “জানি না তো! ওটাও ছদ্মনাম। আসলে কাজ-চলা গোছের একটা নাম দেওয়ার দরকার হয়েছিল বলে মৃগাঙ্কবাবুই ওর নাম দেন বাবু বিশ্বাস। কিন্তু মশাই, আর দেরি করা কি ঠিক হবে? ভোর হয়ে আসছে। এতক্ষণে যদি খুনটা না হয়ে থাকে তবে আর দেরিও নেই। বাবু বিশ্বাসকে এখনই খুঁজে বের না করলেই নয়। সেটা চিরু আর শচির আগেই।”

গোপাল লাফিয়ে উঠে বলল, “চলুন তো, দেখি তাদের এলেম!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress