সত্যজিৎ রায় (বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক)
সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ২রা মে ১৯২১ সালে,
কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে ভারত)।
সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় এবং মা সুপ্রভা দেবী। তিনি দীর্ঘদেহী পুরুষ ছিলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল – ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৬ মিটার)।
সত্যজিৎ রায়ের বংশানুক্রম প্রায় দশ প্রজন্ম অতীত পর্যন্ত বের করা সম্ভব। রায় পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) নদীয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ভাগ্যান্বেষণে তিনি পূর্ববঙ্গের শেরপুরে গমন করেন। সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তার সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে। রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তার সাথে তার জমিদারিতে নিয়ে যান। যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তার জামাতা বানান। সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন। তার বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ধারে মসুয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন।তাঁর আদি পৈত্রিক ভিটা বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে তাঁদের প্রায় ৪ একরের এই বিশাল জমি ও বাড়ি বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে এবং তারা এই বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। এছাড়া সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরী প্রায় ২০০ বছর আগে মসূয়া গ্রামে শ্রীশ্রী কালভৈরব পূজা উপলক্ষে একটি মেলার আয়োজন করেছিলেন। এখনও প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এই মেলা পালিত হয়ে আসছে।
সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং বাবা সুকুমার রায় দুজনেরই জন্ম হয়েছিল এখানে।
উপেন্দ্রকিশোরের সময়েই সত্যজিতের পরিবারের ইতিহাস এক নতুন দিগন্তে মোড় নেয়। লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও শখের জ্যোতির্বিদ উপেন্দ্রকিশোরের মূল পরিচিতি ১৯ শতকের বাংলার এক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম নেতা হিসেবে। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। ১৯২১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন সুকুমারের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমারের মৃত্যু ঘটে। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন। সত্যজিৎ বড় হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে যান, যদিও চারুকলার প্রতি সবসময়েই তার দুর্বলতা ছিল।
১৯৪০ সালে সত্যজিতের মা তাকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কলকাতাপ্রেমী সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার পরিবেশ সম্বন্ধে খুব উঁচু ধারণা পোষণ করতেন না, কিন্তু শেষে মায়ের প্ররোচনা ও রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার ফলে রাজি হন। শান্তিনিকেতনে গিয়ে সত্যজিৎ প্রাচ্যের শিল্পের মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে, সেখানকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। সত্যজিৎ বিনোদবিহারীর ওপর পরবর্তীকালে একটি প্রামাণ্যচিত্রও বানান। অজন্তা, ইলোরা এবং এলিফ্যান্টায় ভ্রমণের পর ভারতীয় শিল্পের ওপর সত্যজিতের গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জন্মায়।
১৯৪৩ সালে ২২ বছর বয়সী সত্যজিৎ
নিয়মানুযায়ী বিশ্বভারতীতে সত্যজিতের পাঁচ বছর পড়াশোনা করার কথা থাকলেও তার আগেই ১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে যোগ দেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিতের পছন্দের একটি বিষয় ছিল ও সংস্থাটিতে তিনি ভালো সমাদরেই ছিলেন, কিন্তু সংস্থাটির ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল (ইংরেজ কর্মচারীদেরকে অনেক বেশি বেতন দেয়া হত), আর সত্যজিতের মনে হত প্রতিষ্ঠানটির “ক্লায়েন্টরা ছিলেন মূলত বোকা।” ১৯৪৩ সালের দিকে সত্যজিৎ ডি কে গুপ্তের প্রকাশনা সংস্থা ‘সিগনেট প্রেস’-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডি কে গুপ্ত তাকে সিগনেট প্রেস থেকে ছাপা বইগুলোর প্রচ্ছদ আঁকার অনুরোধ করেন ও এ ব্যাপারে তাকে সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা দেন। এখানে সত্যজিৎ প্রচুর বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন, যার মধ্যে জিম করবেটের ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন ও জওহরলাল নেহেরুর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী বাংলা উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণ আম আঁটির ভেঁপু-র ওপরেও কাজ করেন। বিভূতিভূষণের লেখা এ উপন্যাসটি সত্যজিৎকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে এবং এটিকেই পরবর্তীকালে সত্যজিৎ তার প্রথম চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করেন। বইটির প্রচ্ছদ আঁকা ছাড়াও তিনি এর ভেতরের বিভিন্ন ছবিগুলোও এঁকে দেন। এই ছবিগুলোই পরে দৃশ্য বা শট হিসেবে তার সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রে স্থান পায়।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিতের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয়: Ladri di biciclette, বাইসাইকেল চোর) দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও অন্যান্যদের সাথে মিলে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোসাইটির সদস্য হবার সুবাদে তার অনেক বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়। এ সময় তিনি প্রচুর ছবি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন; তিনি তাদের কাছ থেকে শহরে আসা নতুন মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর খবর নিতেন। এ সময় তিনি নরম্যান ক্লেয়ার নামের রয়েল এয়ার ফোর্সের এক কর্মচারীর সংস্পর্শে আসেন, যিনি সত্যজিতের মতোই চলচ্চিত্র, দাবা ও পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী সঙ্গীত পছন্দ করতেন। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ তার দূরসম্পর্কের বোন ও বহুদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক। ঐ একই বছরে জঁ রনোয়ার তার দ্য রিভার চলচ্চিত্রটির শুটিং করতে কলকাতায় আসেন। সত্যজিৎ রনোয়ারকে গ্রামাঞ্চলে চিত্রস্থান খুঁজতে সহায়তা করেন। ঐ সময়েই সত্যজিৎ রনোয়ারের সাথে পথের পাঁচালীর চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন এবং রনোয়ার এ ব্যাপারে তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন।
১৯৫০ সালে ডি জে কিমার সত্যজিৎকে লন্ডনে তাদের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতে পাঠান। লন্ডনে তিন মাস থাকাকালীন অবস্থায় সত্যজিৎ প্রায় ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এদের মধ্যে ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয়: Ladri di biciclette, “সাইকেল চোর”) তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরে সত্যজিৎ বলেছেন যে ঐ ছবিটি দেখে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার সময়েই তিনি ঠিক করেন যে তিনি একজন চলচ্চিত্রকার হবেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তার কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানুষে-আবর্তিত প্রামাণ্যচিত্র” (Best Human Documentary) পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) – এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১টি গোল্ডেন লায়ন, ২টি রৌপ্য ভল্লুক লাভ করেন।
তিনি বেশ কয়েকটি ছোট গল্প এবং উপন্যাস রচনা করেছেন, প্রাথমিকভাবে শিশু-কিশোরদের পাঠক হিসেবে বিবেচনা করে। কল্পবিজ্ঞানে তার নির্মিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু। সত্যজিৎ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। সত্যজিৎ ভারত রত্ন এবং পদ্মভূষণসহ সকল মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।
২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় সত্যজিৎ ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন।
তাঁর কর্মজীবন ছিল ১৯৫০ সাল থেকে –১৯৯২ সাল। তার দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন – বিজয়া দাস (জন্ম. ১৯৪৯– মৃত্যু.১৯৯২ সাল)।
তাঁর পারিবারিক পরিচয় – (রায় পরিবার)
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (পিতামহ)
বিধুমুখী (মাতামহী)
সুকুমার রায় (পিতা)
সুপ্রভা রায় (মাতা)
সুখলতা রাও
সুবিনয় রায়
সুবিমল রায়
পূন্যলতা চক্রবর্তী
শান্তিলতা
সন্দীপ রায় (পুত্র)
ললিতা রায়
সৌরদীপ রায়
২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে (বয়স ৭০)
কলকাতায় হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে তিনি মারা যান।
তাঁর একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে সল্ট লেক, কলকাতায়।
চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৭৪ সালে অশনি সংকেত ৩৭তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৭৫ সালে সোনার কেল্লা) ৩৮তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৮৬ সালে ঘরে বাইরে ৪৯তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৯৩ সালে আগন্তুক ৫৬তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, ডেনিশ ফিল্ম সমালোচক সমিতি প্রতিবছর কোপেনহেগেনের একটি অনুষ্ঠানে বোদিল পুরস্কার উপস্থাপিত করে। রায় দুটি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
অপরাজিত ২১তম বোদিল পুরস্কার সেরা অ-ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের জন্য বিজয়ী।
১৯৬৯ সালে পথের পাঁচালী ২৩তম বোদিল পুরস্কার সেরা অ-ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের জন্য বিজয়ী।
ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার হল ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) আয়োজিত একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান। রায় তিনটি মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৮ সালে পথের পাঁচালী ১১তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত
১৯৫৯ সালে অপরাজিত ১২তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত
১৯৬২ সালে অপুর সংসার ১৫তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত
একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক এবং লেখক যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে বিবেচিত।রায় ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৪ সাল) এবং ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন (১৯৯২ সাল) সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পদক ন্যাশনাল অর্ডার অব দ্য লেজিওঁ অফ অনারের (১৯৮৭ সাল) কমান্ডার সম্মাননা এবং ৬৪তম একাডেমি পুরস্কারে একটি সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত হন।
তাঁকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে গণ্য করা হয়,রায় ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসাবে তার অভিষেক ঘটান। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা পায় এবং বিভিন্ন পুরস্কার অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে, তন্মধ্যে ৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৫ সাল), ৭ম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৭ সাল), ১ম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৫৭ সাল) উল্লেখযোগ্য। পথের পাঁচালী ৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৫৬ সাল) “শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল” (প্রিক্স দু দকুমেন্ট হুমাইন) পুরস্কারে ভূষিত হয়। রায় তার চার দশকের কর্মজীবনে মোট পঁয়ত্রিশটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার — পথের পাঁচালী, অপুর সংসার (১৯৫৯ সাল), চারুলতা (১৯৬৪ সাল),গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৮ সাল), সীমাবদ্ধ (১৯৭১ সাল), ও আগন্তুক (১৯৯১ সাল) — এ ছয়টি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। তিনটি চলচ্চিত্র — জলসাঘর (১৯৫৮ সাল), অভিযান (১৯৬২ সাল), ও প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০ সাল) — এ তিনটি চলচ্চিত্র দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্রের পুরস্কার এবং মহানগর (১৯৬৩ সাল) চলচ্চিত্রটি তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্র হিসাবে সাব্যস্ত হয়। ১৯৬১ সাল সালে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর নির্মিত তাঁর তথ্যচিত্র লোকার্নো ও মন্টেভিডিও চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার এবং নন-ফিচার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। তাঁর হিন্দি চলচ্চিত্র শতরঞ্জ কে খিলাড়ি (১৯৭৭ সাল) হিন্দি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং সেরা পরিচালকের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিল। রায়ের অপু ত্রয়ী (১৯৫৫-৫৯ সাল),- পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬ সাল) এবং অপুর সংসার (১৯৫৯ সাল), ২০০৫ সালে টাইম পত্রিকার সর্বকালের ১০০ চলচ্চিত্র তালিকায় স্থান পেয়েছিল।
রায় তাঁর পরিচালনার জন্য ২১টি পুরস্কার জিতেছিলেন, এর মধ্যে রয়েছে সাতটি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (বিএফজেএ), ছয়টি ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি সিলভার বিয়ার এবং সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি গোল্ডেন গেট পুরস্কার। পরিচালনার পাশাপাশি রায় একজন সংগীত রচয়িতা ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, গীত এবং সংলাপও লিখেছিলেন। চিত্রনাট্য রচনার জন্য, ১৯৯৪ সালে একটি মরণোত্তর পুরস্কার সহ, তিনি বারোটি পুরস্কার জিতেছিলেন। এছাড়াও তিনি মূল গল্প ধারণার জন্য একটি পুরস্কার, সংলাপ রচনার জন্য সাতটি পুরস্কার, সংগীত রচনার জন্য পাঁচটি পুরস্কার এবং গীতি রচনার জন্য দুটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
রায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। পুরস্কারের মধ্যে ৯ম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৩ সাল), ২৮তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৮ সাল), ১১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৯ সাল), ৩৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৮২ সাল), ৩৯তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৮২ সাল), ৪র্থ টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯১ সাল), এবং ৩৫তম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯২ সাল) উল্লেখযোগ্য। তিনি রয়েল কলেজ অফ আর্ট থেকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (১৯৭৪ সাল), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডক্টর অফ লেটারস (১৯৭৮ সাল), ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট ফেলোশিপ (১৯৮৩ সাল), এবং দুইটি সংগীত নাটক একাডেমি (১৯৫৯ সাল, ১৯৮৬ সাল) পুরস্কারে ভূষিত হন।
(সম্মাননা পুরস্কার)
বছর পুরস্কার ও সম্মাননা পুরস্কারদাতা সংস্থা
১৯৫৮ পদ্মশ্রী ভারত সরকার
১৯৬৫ পদ্ম ভূষণ ভারত সরকার
১৯৬৭ রামন ম্যাগসাসে পুরস্কার রামন ম্যাগসাসে পুরস্কার ফাউন্ডেশন
১৯৭১ যুগোস্লাভিয়ার তারকা যুগোস্লাভিয়া সরকার
১৯৭৩ ডি লিট দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৪ ডি লিট রয়েল কলেজ অফ আর্ট, লন্ডন
১৯৭৬ পদ্ম ভূষণ ভারত সরকার
১৯৭৮ ডি লিট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৮ বিশেষ পুরস্কার বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব
১৯৭৮ দেশিকোত্তম বিশ্ব-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৭৯ বিশেষ পুরস্কার মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব
১৯৮০ ডি লিট বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৮০ ডি লিট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৮১ ডক্টরেট বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৮১ ডি লিট উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৮২ Hommage à Satyajit Ray কান চলচ্চিত্র উৎসব
১৯৮২ সেন্ট মার্কের বিশেষ গোল্ডেন লায়ন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব
১৯৮২ বিদ্যাসাগর পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ সরকার
১৯৮৩ ফেলোশিপ ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট
১৯৮৫ ডি লিট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৮৫ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ভারত সরকার
১৯৮৫ সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার
১৯৮৬ ফেলোশিপ সঙ্গীত নাটক একাডেমি, ভারত
১৯৮৭ লেজিওঁ দনর (Légion d’Honneur) ফরাসি সরকার
১৯৮৭ ডি লিট রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
১৯৯২ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার) একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস
১৯৯২ ভারত রত্ন ভারত সরকার
(চলচ্চিত্র পুরস্কার)
১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি দ্বারা প্রতিবছর বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার দেওয়া হয়, এটি বিএফজেএ পুরস্কার নামে পরিচিত। রায় রায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে ষোলটির জন্য উনত্রিশটি পুরস্কার এবং অন্য দুই পরিচালক নিত্যানন্দ দত্ত এবং সন্দীপ রায়ের দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে প্রদান করা বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৬২ তিন কন্যা ২৫তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী। ১৯৬৩ অভিযান ২৬তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
কাঞ্চনজঙ্ঘা সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৬৫ মহানগর ২৭তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৬৫ চারুলতা ২৮তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংগীত পরিচালক বিজয়ী
১৯৬৬ বাক্স বদল ২৯তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা সংলাপ বিজয়ী
কাপুরুষ-ও-মহাপুরুষ
• কাপুরুষ
• মহাপুরুষ সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৬৭ নায়ক ৩০তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৭০ গুপী গাইন বাঘা বাইন ৩৩তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংগীত পরিচালক বিজয়ী
সেরা গীতিকার বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৭১ অরণ্যের দিনরাত্রি) ৩৪তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
প্রতিদ্বন্দ্বী সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা পরিচালক বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৭২ সীমাবদ্ধ ৩৫তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা সংলাপ বিজয়ী
১৯৭৪ অশনি সংকেত ৩৭তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৭৫ সোনার কেল্লা) ৩৮তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৮৬ ঘরে বাইরে ৪৯তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৯৩ আগন্তুক ৫৬তম বার্ষিক বিএফজেএ পুরস্কার সেরা পরিচালক বিজয়ী
সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা মৌলিক গল্প বিজয়ী
গুপী বাঘা ফিরে এলো[গ] সেরা সংগীত পরিচালক বিজয়ী
সেরা গীতিকার বিজয়ী
শাখা প্রশাখা সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র বিজয়ী
বোদিল পুরস্কার।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, ডেনিশ ফিল্ম সমালোচক সমিতি প্রতিবছর কোপেনহেগেনের একটি অনুষ্ঠানে বোদিল পুরস্কার উপস্থাপিত করে। রায় দুটি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা বোদিল পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৬৭ অপরাজিত ২১তম বোদিল পুরস্কার সেরা অ-ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের জন্য বিজয়ী
১৯৬৯ পথের পাঁচালী ২৩তম বোদিল পুরস্কার সেরা অ-ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের জন্য বিজয়ী।
ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার হল ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) আয়োজিত একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান। রায় তিনটি মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৮ পথের পাঁচালী ১১তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত ।
১৯৫৯ অপরাজিত ১২তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত ।
১৯৬২ অপুর সংসার ১৫তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার যে কোনও উৎস থেকে সেরা চলচ্চিত্র মনোনীত।
(ফিল্মফেয়ার পুরস্কার)
প্রতি বছর দ্য টাইমস গ্রুপ বলিউড চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার উপস্থাপন করে। রায় দুটি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের তালিকা –
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৭৭ শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ২৬তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্রের সমালোচক পুরস্কার বিজয়ী।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী।
১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, মোশন পিকচারের জন্য জাতীয় পর্যালোচনা বোর্ড প্রতি বছর জাতীয় পর্যালোচনা পুরস্কার প্রদান করে। রায় চারটি পুরস্কার অর্জন করেন।
সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের জন্য প্রদান করা জাতীয় পর্যালোচনা পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল সূত্র
১৯৫৮ পথের পাঁচালী ৩০তম ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিজয়ী।
শীর্ষ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রসমূহ বিজয়ী
১৯৬০ অপুর সংসার ৩২তম ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ পুরস্কার শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিজয়ী।
(শীর্ষ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রসমূহ বিজয়ী
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার)
চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর বার্ষিক অনুষ্ঠানে, প্রদত্ত বছরে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা চলচ্চিত্রগুলিকে সম্মান জানাতে ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উপস্থাপন করে। রায় তাঁর পঁচিশটি চলচ্চিত্রের জন্য পঁয়ত্রিশটি পুরস্কার এবং তাঁর পুত্র সন্দীপ রায় পরিচালিত একটি চলচ্চিত্রের জন্য মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি সেরা পরিচালক হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার (ছয়) জিতেছেন।
ধারালো মেধার শংসাপত্র বোঝায় double-dagger মরণোত্তর পুরস্কারর বোঝায়
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা।
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৫ পথের পাঁচালী ৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের বাংলা চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৫৮ জলসাঘর ৬ষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দ্বিতীয় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ছুরি বিজয়ী।
সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ছুরি বিজয়ী
১৯৫৯ অপুর সংসার ৭ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬০ দেবী ৮ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬১ তিন কন্যা[ঘ] ৯ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৯ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা তথ্যচিত্র বিজয়ী।
১৯৬২ অভিযান ১০ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দ্বিতীয় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ছুরি বিজয়ী।
১৯৬৩ মহানগর ১১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তৃতীয় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ছুরি বিজয়ী।
১৯৬৪ চারুলতা ১২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬৬ নায়ক ১৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী।
১৯৬৭ চিড়িয়াখানা ১৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী।
১৯৬৮ গুপী গাইন বাঘা বাইন ১৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী
১৯৭০ প্রতিদ্বন্দ্বী ১৮তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দ্বিতীয় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী
সেরা চিত্রনাট্যে বিজয়ী
১৯৭১ সীমাবদ্ধ ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৭২ দ্য ইনার আই ২০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা তথ্য ছায়াছবি (তথ্যচিত্র) বিজয়ী।
১৯৭৩ অশনি সংকেত ২১শ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী ।
সেরা সংগীত পরিচালনা বিজয়ী
১৯৭৪ সোনার কেল্লা ২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী।
সেরা চিত্রনাট্য বিজয়ী
সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৭৫ জন অরণ্য ২৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী।
১৯৭৭ শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ২৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা হিন্দি পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৭৮ জয় বাবা ফেলুনাথ ২৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা শিশু চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৮০ হীরক রাজার দেশে ২৮তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা সংগীত পরিচালনা বিজয়ী।
সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী
১৯৮১ সদগতি ২৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিশেষ জুরি পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৮৪ ঘরে বাইরে ৩২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৮৯ গণশত্রু ৩৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৯১ আগন্তুক ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী
১৯৯৪ উত্তরণ[ঙ] ৪১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চিত্রনাট্য double-dagger বিজয়ী।
(অন্যান্য বার্ষিক চলচ্চিত্র পুরস্কার)
সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য প্রদান করা অন্যান্য বার্ষিক চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা –
বছর চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান বিভাগ ফলাফল
১৯৬৭ পথের পাঁচালী ৪০তম কিনেমা জুনপো পুরস্কার সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬৮ চিড়িয়াখানা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা নির্দেশনা বিজয়ী।
১৯৭৩ অশনি সংকেত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৭৪ সোনার কেল্লা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৭৫ জন অরণ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
(আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার)
বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হল জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসব। একে বার্লিনালও বলা হয়। রায় তাঁর সাতটি ছবির জন্য নয়টি পুরস্কার এবং তিনটি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। একাধিকবার সেরা পরিচালকের রৌপ্য ভল্লুক জেতা চার পরিচালকের মধ্যে তিনি একজন। তিনি সেরা চলচ্চিত্রের স্বর্ণ ভল্লুকের জন্য সর্বাধিক সংখ্যক মনোনয়ন (সাত) পেয়েছিলেন।
বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলির জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র উৎসব বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৭ পথের পাঁচালী ৭ম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য সেলজনিক সোনালি লরেল বিজয়ী।
১৯৬০ অপরাজিত ১০ম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য সেলজনিক সোনালি লরেল বিজয়ী।
১৯৬৩ তিন কন্যা ১৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য সেলজনিক সোনালি লরেল বিজয়ী।
১৯৬৪ মহানগর ১৪তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য স্বর্ণ ভল্লুক মনোনীত।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক বিজয়ী।
১৯৬৫ চারুলতা ১৫তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য স্বর্ণ ভল্লুক মনোনীত ।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক বিজয়ী।
ওসিআইসি ক্যাথলিক পুরস্কার বিজয়ী
১৯৬৬ নায়ক ১৬তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য স্বর্ণ ভল্লুক মনোনীত
বিশেষ স্বীকৃতি বিজয়ী।
সমালোচক পুরস্কার (ইউনিক্রিট পুরস্কার) বিজয়ী।
১৯৭৩ অশনি সংকেত ২৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য স্বর্ণ ভল্লুক বিজয়ী।
কান চলচ্চিত্র উৎসব)
মূলত ১৯৩৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য, কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত কান চলচ্চিত্র উৎসব ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসব। রায় এখানে তাঁর চারটি চলচ্চিত্রের জন্য দুটি পুরস্কার এবং চারটি মনোনয়ন অর্জন করেছিলেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলির জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র উৎসব বিভাগ ফলাফল –
১৯৫৬ পথের পাঁচালী ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পাল্ম দর মনোনীত।
প্রিক্স ডু ডকুমেন্ট হুমাইন বিজয়ী
ওসিআইসি ক্যাথলিক পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৫৮ পরশপাথর ১৯৫৮ কান চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পাল্ম দর মনোনীত
১৯৬২ দেবী ১৯৬২ কান চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পাল্ম দর মনোনীত।
১৯৮৪ ঘরে বাইরে ১৯৮৪ কান চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পাল্ম দর মনোনীত।
(সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব)
সান ফ্রান্সিসকো ফিল্ম সোসাইটি দ্বারা সংগঠিত এবং ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব “আমেরিকার দীর্ঘতম চলমান চলচ্চিত্র উৎসব” হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। এখানে রায় তাঁর দুটি ছবির জন্য চারটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রগুলির জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র উৎসব বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৭ পথের পাঁচালী প্রথম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন গেট পুরস্কার বিজয়ী।
সেরা পরিচালকের জন্য গোল্ডেন গেট পুরস্কার বিজয়ী
১৯৫৮ অপরাজিত দ্বিতীয় সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন গেট পুরস্কার বিজয়ী।
সেরা পরিচালকের জন্য গোল্ডেন গেট পুরস্কার বিজয়ী।
(ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব)
প্রাথমিকভাবে “এসপোসিজিওন ডি’আর্ট সিনেমাটোগ্রাফিকা” নামে নামকরণ করা ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ১৮তম ভেনিস বাইএনালের অংশ হিসাবে ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।এখানে রায় তাঁর চারটি চলচ্চিত্রের জন্য পাঁচটি পুরস্কার এবং একটি মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র উৎসব বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৭ অপরাজিত ১৮তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন লায়ন বিজয়ী।
সিনেমা নুভো পুরস্কার বিজয়ী।
ফিপ্রেসি সমালোচক পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৬৫ কাপুরুষ ২৮তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন লায়ন মনোনীত।
১৯৭২ সীমাবদ্ধ ৩৩তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ফিপ্রেসি সমালোচক পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৯১ আগন্তুক ৪৮তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ফিপ্রেসি সমালোচক পুরস্কার বিজয়ী।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার
সম্পাদনা
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের তালিকা
বছর চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র উৎসব বিভাগ ফলাফল তথ্যসূত্র
১৯৫৬ পথের পাঁচালী ৯ম এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব মেধা ডিপ্লোমা বিজয়ী।
ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসব গোল্ডেন কারবাও বিজয়ী
রোম চলচ্চিত্র উৎসব ভ্যাটিকান পুরস্কার বিজয়ী
১৯৫৮ পথের পাঁচালী স্ট্রাটফোর্ড চলচ্চিত্র উৎসব বছরের সেরা চলচ্চিত্রের জন্য সমালোচকদের পুরস্কার বিজয়ী।
ভ্যাঙ্কুভার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৫৮-৫৯ অপরাজিত ইউএসএ চলচ্চিত্র উৎসব সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রের জন্য সোনালি লরেল বিজয়ী।
১৯৫৯ জলসাঘর ১ম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গ্রাঁ প্রি মনোনীত।
পথের পাঁচালী নিউ ইয়র্ক চলচ্চিত্র উৎসব সাংস্কৃতিক পুরস্কার: সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬০ অপুর সংসার ৭ম লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব সেরা মৌলিক এবং কল্পনামূলক চলচ্চিত্রের জন্য সাদারল্যান্ড ট্রফি বিজয়ী।
১৯৬১ অপুর সংসার ১৪তম এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব মেধা ডিপ্লোমা বিজয়ী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৪তম লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছোট চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন সেল বিজয়ী।
১৯৬২ দুই কন্যা[চ] ১০ম মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন বুমেরাং বিজয়ী।
১৯৬২ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মন্টেভিডিও চলচ্চিত্র উৎসব বিশেষ উল্লেখ বিজয়ী।
১৯৬৫ চারুলতা অ্যাকাপুলকো চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৬৯ গুপী গাইন বাঘা বাইন অকল্যান্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা পরিচালনা এবং মৌলিকতার জন্য সিলভার ক্রস পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৭০ গুপী গাইন বাঘা বাইন ১৮তম মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্র বিজয়ী।
টোকিও চলচ্চিত্র উৎসব মেধা পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৭৩ অশনি সংকেত ৯ম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্রের জন্য সোনার হুগো বিজয়ী।
১৯৭৫ সোনার কেল্লা শিশু এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য চলচ্চিত্রের দশম তেহরান আন্তর্জাতিক উৎসব সেরা লাইভ পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্রের জন্য সোনার মূর্তি বিজয়ী।
১৯৭৬ জন অরণ্য ৩০তম কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎস কার্লোভি ভ্যারি পুরস্কার বিজয়ী।
১৯৭৯ জয় বাবা ফেলুনাথ তৃতীয় হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেরা পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্র বিজয়ী।
১৯৮০ পথের পাঁচালী ২৭তম লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব উইংটন পুরস্কার বিজয়ী।
(অপরাজিত বিজয়ী,অপুর সংসার বিজয়ী)
কর্মজীবন
অপুর বছরগুলো (১৯৫০–৫৯ সাল)
অপু ত্রয়ী ও সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র
সত্যজিৎ ঠিক করেন যে, বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী “বিল্ডুংস্রোমান” পথের পাঁচালী-ই হবে তার প্রথম চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই প্রায়-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটিতে বাংলার এক গ্রামের ছেলে অপু’র বেড়ে ওঠার কাহিনী বিধৃত হয়েছে।
পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনায় সত্যজিতের সাথে রবি শংকর, ১৯৫৫
এ ছবি বানানোর জন্য সত্যজিৎ কিছু পূর্ব-অভিজ্ঞতাবিহীন কুশলীকে একত্রিত করেন, যদিও তার ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র ও শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিলাভ করেন। এ ছাড়া ছবির বেশির ভাগ অভিনেতাই ছিলেন শৌখিন। ১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তার নিজের জমানো পয়সা খরচ করে দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রাথমিক দৃশ্যগুলো দেখার পরে হয়ত কেউ ছবিটিতে অর্থলগ্নি করবেন। কিন্তু সে ধরনের আর্থিক সহায়তা মিলছিল না। পথের পাঁচালী-র দৃশ্যগ্রহণ তাই থেমে থেমে অস্বাভাবিকভাবে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পন্ন হয়। কেবল তখনই দৃশ্যগ্রহণ করা সম্ভব হত যখন সত্যজিৎ বা নির্মাণ ব্যবস্থাপক অনিল চৌধুরী প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান করতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবিটি নির্মাণ সম্পন্ন হয় ও সে বছরই এটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে ও বহু পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি বহুদিন ধরে ভারতে ও ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়। ছবিটি নির্মাণের সময় অর্থের বিনিময়ে চিত্রনাট্য বদলের জন্য কোন অনুরোধই সত্যজিৎ রাখেননি। এমনকি ছবিটির একটি সুখী সমাপ্তির (যেখানে ছবির কাহিনীর শেষে অপুর সংসার একটি “উন্নয়ন প্রকল্পে” যোগ দেয়) জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধও তিনি উপেক্ষা করেন।
ভারতে ছবিটির প্রতিক্রিয়া ছিল উৎসাহসঞ্চারী। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-তে লেখা হয়, “It is absurd to compare it with any other Indian cinema … Pather Panchali is pure cinema” (“একে অন্য যেকোনও ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে তুলনা করা অবাস্তব… পথের পাঁচালী হল বিশুদ্ধ চলচ্চিত্র”)। যুক্তরাজ্যে লিন্জি অ্যান্ডারসন চলচ্চিত্রটির অত্যন্ত ইতিবাচক একটি সমালোচনা লেখেন। তবে ছবিটির সব সমালোচনাই এ রকম ইতিবাচক ছিল না। বলা হয় যে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছিলেন: “কৃষকেরা হাত দিয়ে খাচ্ছে – এরকম দৃশ্যসম্বলিত ছবি আমি দেখতে চাই না।” দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী সমালোচক বসলি ক্রাউদার ছবিটির একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সেটি পড়ে মনে করা হয়েছিল যে ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেও ভাল করবে না। কিন্তু এর বদলে ছবিটি সেখানে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে প্রদর্শিত হয়।
সত্যজিতের পরবর্তী ছবি অপরাজিত-এর সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে। এই ছবিটিতে তরুণ অপুর উচ্চাভিলাষ ও তার মায়ের ভালবাসার মধ্যকার চিরন্তন সংঘাতকে মর্মভেদী রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। বহু সমালোচক, যাদের মধ্যে মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক অন্যতম, ছবিটিকে সত্যজিতের প্রথম ছবিটির চেয়েও ওপরে স্থান দেন। অপরাজিত ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জেতে। অপু ত্রয়ী শেষ করার আগে সত্যজিৎ আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ সমাপ্ত করেন। প্রথমটি ছিল পরশ পাথর নামের একটি হাস্যরসাত্মক ছবি। আর পরেরটি ছিল জমিদারী প্রথার অবক্ষয়ের ওপর নির্মিত জলসাঘর, যেটিকে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সত্যজিৎ অপরাজিত নির্মাণের সময় একটি ত্রয়ী সম্পন্ন করার কথা ভাবেননি, কিন্তু ভেনিসে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা শুনে তার মাথায় এটি বাস্তবায়নের ধারণা আসে। অপু সিরিজের শেষ ছবি অপুর সংসার ১৯৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়। আগের দুটি ছবির মত এটিকেও বহু সমালোচক সিরিজের সেরা ছবি হিসেবে আখ্যা দেন (রবিন উড, অপর্ণা সেন)। এ ছবির মাধ্যমেই সত্যজিতের দুই প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুরের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছবিটিতে অপুকে দেখানো হয় কলকাতার এক জীর্ণ বাড়িতে প্রায়-দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করতে। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপর্ণার সাথে অপুর বিয়ে হয়। তাদের জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যে “বিবাহিত জীবন সম্পর্কে ছবিটির ধ্রুপদী ইতিবাচকতা ফুটে ওঠে”, কিন্তু শীঘ্রই এক বিয়োগান্তক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। একজন বাঙালি সমালোচক অপুর সংসার-এর একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সত্যজিৎ এর উত্তরে ছবিটির পক্ষে একটি সুলিখিত নিবন্ধ লেখেন – যা ছিল সত্যজিতের কর্মজীবনে একটি দুর্লভ ঘটনা (সত্যজিতের প্রত্যুত্তরের এরকম ঘটনা আরেকবার ঘটে তার পছন্দের চারুলতা ছবিটি নিয়ে)।
সত্যজিতের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর তার কর্মজীবনের সাফল্যের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। সত্যজিতের নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না; তিনি তার মা, মামা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে এক ভাড়া বাড়িতেই সারা জীবন কাটিয়ে দেন। তার স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই তার কাজের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। বেশির ভাগ চিত্রনাট্য বিজয়াই প্রথমে পড়তেন এবং ছবির সঙ্গীতের সুর তৈরীতেও তিনি স্বামীকে সাহায্য করতেন। আয়ের পরিমাণ কম হলেও সত্যজিৎ নিজেকে বিত্তশালীই মনে করতেন, কেননা পছন্দের বই বা সঙ্গীতের অ্যালবাম কিনতে কখনোই তার কষ্ট হয়নি।
দেবী থেকে চারুলতা (১৯৫৯–৬৪)
স্থিরদৃষ্টির বিপরীতায়ন, চারুলতা অমলের দিকে তাকিয়ে
কর্মজীবনের এই পর্বে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন রাজ পর্বের ওপর চলচ্চিত্র (যেমন দেবী), রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি হাস্যরসাত্মক ছবি (‘‘মহাপুরুষ’’) এবং মৌলিক চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে তার প্রথম চলচ্চিত্র (কাঞ্চনজঙ্ঘা)। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, সমালোচকদের মতে যেগুলোর মত করে ছবির পর্দায় ভারতীয় নারীদের এত অনুভূতি দিয়ে এর আগে কেউ ফুটিয়ে তোলেনি। পলিন কেল মন্তব্য করেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি সত্যজিৎ নারী নন, পুরুষ।
অপুর সংসার নির্মাণের পরে সত্যজিৎ দেবী ছবির কাজে হাত দেন। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন মজ্জাগত কুসংস্কার ছিল ছবিটির বিষয়। ছবিটিতে শর্মিলা ঠাকুর দয়াময়ী নামের এক তরুণ বধূর চরিত্রে অভিনয় করেন, যাকে তার শ্বশুর কালী বলে পূজা করতেন। শর্মিলা পরে এই ছবিতে তার অভিনয় নিয়ে মন্তব্য করেন যে দেবীতে তিনি নিজের থেকে কিছু করেননি, বরং এক জিনিয়াস তাঁকে দিয়ে সেটা করিয়ে নিয়েছিলেন। সত্যজিৎ আশঙ্কা করেছিলেন যে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড হয়ত ছবিটি প্রদর্শনে বাধা দেবে, বা হয়ত তাঁকে ছবিটি পুনরায় সম্পাদনা করতে বলবে, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটে নি। ১৯৬১ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্ররোচনায় সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কবিগুরুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। রবীন্দ্রনাথের ভিডিও ফুটেজের অভাবে সত্যজিৎকে মূলত স্থিরচিত্র দিয়েই ছবিটি বানানোর চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে হয় এবং তিনি পরে মন্তব্য করেন যে ছবিটি বানাতে তার সাধারণের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় লেগেছিল।একই বছরে সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যের সাথে মিলে সত্যজিৎ সন্দেশ নামের শিশুদের পত্রিকাটি – যেটি তার পিতামহ একসময় প্রকাশ করতেন – পুনরায় প্রকাশ করা শুরু করেন। সত্যজিৎ এ জন্য বহুদিন ধরে অর্থসঞ্চয় করেছিলেন। পত্রিকাটি ছিল একাধারে শিক্ষামূলক ও বিনোদনধর্মী, এবং “সন্দেশ” নামটিতে (শব্দটির দুটি অর্থ হয়: “খবর” ও “মিষ্টি”) এই দ্বিত্বতার প্রতিফলন ঘটেছে। সত্যজিৎ পত্রিকাটির ভেতরের ছবি আঁকতেন ও শিশুদের জন্য গল্প ও প্রবন্ধ লিখতেন। পরবর্তী বছরগুলোতে লেখালেখি করা তার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়।
১৯৬২ সালে সত্যজিৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিটি পরিচালনা করেন। এটি ছিল তার বানানো প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্যনির্ভর রঙিন চলচ্চিত্র। দার্জিলিং নামের এক পাহাড়ী রিসোর্টে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের কাটানো এক বিকেলের কাহিনী নিয়ে এই জটিল ও সঙ্গীতনির্ভর ছবিটি বানানো হয়, যে বিকেলে পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ করেই পরিবারের দণ্ডমুণ্ড কর্তা ইন্দ্রনাথ রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ছবিটি প্রথমে একটি বিরাট ম্যানশনে চিত্রায়িত করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে সত্যজিৎ সেই বিখ্যাত রিসোর্টেই দৃশ্যগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তিনি চিত্রনাট্যটির উত্তেজনা আলো-আঁধারের খেলা ও কুয়াশাকে ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। সত্যজিৎ পরে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন যে তার চিত্রনাট্যে যেকোন ধরনের আলোকসম্পাতেই দৃশ্যগ্রহণ সম্ভব ছিল, অথচ একই সময়ে দার্জিলিং-এ অবস্থানকারী একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণকারী দল সূর্যালোকের অভাবে একটি শটও সম্পন্ন করতে পারেনি।[৩১] ছবিটিতে ইন্দ্রনাথ রায়ের চরিত্রে রূপদানের জন্য সত্যজিৎ ছবি বিশ্বাস-কে নির্বাচন করেন। এটিই ছিল ছবি বিশ্বাসের করা শেষ ছবি; এর কিছুদিন পরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। এর ফলে সত্যজিৎ পরবর্তীকালে কিছু চরিত্র অঙ্কনে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়, কেননা তার মনে হয়েছিল একমাত্র ছবি বিশ্বাসই সেসব চরিত্র রূপদান করার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন।
এসময় সত্যজিৎ একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যদিও তিনি অনুযোগ করতেন যে কলকাতার বাইরে তার নিজেকে সৃষ্টিশীল মনে হত না। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন, ফেদেরিকো ফেলিন্নির 8½ ছবিটি সেরা পুরস্কার জেতে। ষাটের দশকে জাপান সফরের সময় তার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। দেশে অবস্থানকালে কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে দার্জিলিং বা পুরি-তে চলে যেতেন ও সেখানে নির্জনে চিত্রনাট্য লিখতেন।
১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ চারুলতা ছবিটি নির্মাণ করেন, যেটি ছিল তার কর্মজীবনের এই পর্বের শেষ ছবি এবং অনেক সমালোচকের মতে তার সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র।[৩২] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প নষ্টনীড় অবলম্বনে নির্মিত ছবিটিতে ১৯শ শতকের এক নিঃসঙ্গ বাঙালি বধূ চারু ও ঠাকুরপো অমলের প্রতি তার অনুভূতির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। মোৎসার্টীয় এই ছবিটিকে প্রায়ই “নিখুঁত” বলে অভিহিত করা হয়। সত্যজিৎ নিজেও বলেছেন যে এই ছবিটিতে তার ভুলের সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং এটিই তার নির্মিত একমাত্র ছবি, যেটি আবার সুযোগ পেলে তিনি ঠিক একইভাবে বানাতেন।[৩৩] ছবিটিতে চারু চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় এবং সুব্রত মিত্র ও বংশী দাশগুপ্তের কাজ উচ্চপ্রশংসা পায়। ছবিটির দুটি দৃশ্য সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমটি হচ্ছে ছবিটির নির্বাক প্রথম সাত মিনিট, যা চারুর একঘেয়েমি জীবন ফুটিয়ে তোলে এবং দ্বিতীয়টি হল “বাগানের দোলনার দৃশ্য”, যেখানে চারু অমলের জন্য তার ভালবাসার মুখোমুখি হয়। এ পর্বে সত্যজিতের নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে মহানগর, তিন কন্যা, অভিযান এবং কাপুরুষ ও মহাপুরুষ।
নতুন দিকনির্দেশনা (১৯৬৫–১৯৮২)
সত্যজিতের একটি চিত্রকর্ম
কাছের মানুষদের কাছে সত্যজিতের ডাকনাম ছিল “মানিক”। তিনি তার সমসাময়িক চলচ্চিত্রকারদের চেয়ে সাধারণ জনগণের সাথে অনেক বেশি মিশেছেন। অচেনা লোকদের তিনি প্রায়ই সাক্ষাৎ দিতেন। কিন্তু সাক্ষাৎকারীদের অনেকেই সত্যজিৎ ও তাদের মাঝে একটা দূরত্ব অনুভব করতেন। বাঙালিরা এটাকে ভাবতেন তার ইংরেজ মানসিকতার প্রকাশ, আর পশ্চিমীরা ভাবতেন তার শীতল ও গম্ভীর আচরণ ছিল ব্রাহ্মণদের মত। অভিনেতাদের প্রতি তার অগাধ আস্থা ছিল, কিন্তু তাদের অযোগ্যতায় বিরূপভাবও কখনো কখনো প্রকাশ করতেন।[৩৪] তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কখনোই তেমন আলোকপাত করা হয়নি, তবে কারও কারও মতে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সাথে ষাটের দশকে তার সম্পর্ক ছিল।
চারুলতা-পরবর্তী বছরগুলোতে সত্যজিৎ ছিলেন বৈচিত্র্যের সন্ধানী; এসময় কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা কাহিনী থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ছবিও তিনি বানান। এ পর্বে তিনি তার ছবিগুলোতে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান এবং সমকালীন ভারতীয় জীবনের বিভিন্ন দিকগুলো তার ছবিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এ পর্বে তার প্রথম প্রধান চলচ্চিত্র ছিল নায়ক, যার বিষয় ছিল এক চলচ্চিত্র তারকার সাথে এক সহানুভূতিশীল তরুণী সাংবাদিকের রেলযাত্রার সময়কার সাক্ষাৎ ও সংলাপ। উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত এই ছবিতে ট্রেন যাত্রার ২৪ ঘণ্টার পরিসরে এক আপাতসফল চলচ্চিত্র তারকার মনের অন্তর্সংঘাতগুলো উন্মোচন করা হয়। ছবিটি বার্লিনে সমালোচকদের পুরস্কার জিতলেও এটি নিয়ে তেমন আর কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। ১৯৬৭ সালে সত্যজিৎ দি এলিয়েন নামের একটি ছবির জন্য চিত্রনাট্য লেখেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটির প্রযোজক ছিল কলাম্বিয়া পিকচার্স এবং পিটার সেলার্স ও মার্লোন ব্রান্ডো ছবিটির প্রধান অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু চিত্রনাট্য লেখা শেষ করার পর সত্যজিৎ জানতে পারেন যে সেটির স্বত্ব তার নয় ও এর জন্য তিনি কোন সম্মানও পাবেন না। পরবর্তীকালে মার্লোন ব্র্যান্ডো প্রকল্পটি ত্যাগ করেন। তার স্থানে জেমস কোবার্ন কে আনার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ততদিনে সত্যজিতের আশাভঙ্গ ঘটে এবং তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। পরে ৭০ ও ৮০-র দশকে কলাম্বিয়া বহুবার প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৮২ সালে যখন স্টিভেন স্পিলবার্গের ই.টি. দ্য এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল মুক্তি পায়, তখন অনেকেই ছবিটির সাথে সত্যজিতের লেখা চিত্রনাট্যের মিল খুঁজে পান। সত্যজিৎ ১৯৮০ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনে লেখা একটি ফিচারে প্রকল্পটির ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেন ও পরে সত্যজিতের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবিনসন এ ঘটনার ওপর আরও বিস্তারিত লেখেন (১৯৮৯ সালে প্রকাশিত দি ইনার আই-এ)। সত্যজিৎ বিশ্বাস করতেন যে তার লেখা দি এলিয়েন-এর চিত্রনাট্যটির মাইমোগ্রাফ কপি সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে না পড়লে স্পিলবার্গের ছবিটি বানানো হয়ত সম্ভব হত না।
সত্যজিতের ছেলে সন্দ্বীপের অনুযোগ ছিল তিনি সবসময় বড়দের জন্য গম্ভীর মেজাজের ছবি বানান। এর উত্তরে ও নতুনত্বের সন্ধানে সত্যজিৎ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি গুপী গাইন বাঘা বাইন। এটি ছিল সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ছোটদের জন্য একটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে বানানো সঙ্গীতধর্মী রূপকথা। গায়ক গুপী ও ঢোলবাদক বাঘা ভুতের রাজার তিন বর পেয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে ও দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করে। ছবিটির নির্মাণকাজ ছিল ব্যয়বহুল, এবং অর্থাভাবে সত্যজিৎ ছবিটি সাদা-কালোয় ধারণ করেন। যদিও তার কাছে বলিউডের এক অভিনেতাকে ছবিতে নেয়ার বিনিময়ে অর্থের প্রস্তাব এসেছিল, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[৩৯] এর পরে সত্যজিৎ তরুণ কবি ও লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিটি নির্মাণ করেন। বলা হয় এই ছবিটির সঙ্গীত-কাঠামো চারুলতার চেয়েও বেশি জটিল ছিল। ছবিটিতে চার শহুরে তরুণ ছুটিতে বনে ঘুরতে যায় এবং একজন বাদে সকলেই নারীদের সাথে বিভিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে যা তাদের মধ্যবিত্ত চরিত্রের নানা দিক প্রকাশ করে। রবিন উডের মতে “[ছবিটির] একটিমাত্র দৃশ্য থেকেই…একটি ছোট গল্প লেখার রসদ পাওয়া সম্ভব।[৪০] এ ছবিতে সত্যজিৎ মুম্বাই-ভিত্তিক অভিনেত্রী সিমি গারেওয়াল-কে এক আদিবাসী মহিলা হিসেবে চরিত্রায়ণ করেন; তার মত শহুরে নারীকে সত্যজিৎ চরিত্রটির জন্য নির্বাচন করেছেন শুনে সিমি অবাক হয়েছিলেন।
অরণ্যের দিনরাত্রি-তে নির্মাণকুশলতা প্রদর্শনশেষে সত্যজিৎ মনোযোগ দেন তৎকালীন বাঙালি বাস্তবতার মর্মমূলে, যখন বামপন্থী নকশাল আন্দোলনের তীব্রতা সর্বত্র অনুভূত হচ্ছিল। সত্যজিৎকে প্রায়ই বলা হত তিনি সমসাময়িক ভারতীয় শহুরে অভিজ্ঞতার ব্যাপারে উদাসীন। এর জবাবে ১৯৭০-এর দশকে তিনি কলকাতাকে কেন্দ্র করে তিনটি ছবি বানান যেগুলো ‘‘কলকাতা ত্রয়ী’’ নামেও পরিচিত: প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), এবং জন অরণ্য (১৯৭৫)। চলচ্চিত্র তিনটি আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা হলেও বিষয়বস্তুর মিলের কারণে এগুলোকে একটি দুর্বল ত্রয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী-র নায়ক এক আদর্শবাদী তরুণ স্নাতক যার মোহমুক্তি ঘটলেও ছবির শেষ পর্যন্ত সে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েনি। জন অরণ্য-র নায়ক আরেক তরুণ যে জীবিকা নির্বাহের জন্য দুর্নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে। এবং সীমাবদ্ধ-র অর্থনৈতিকভাবে সফল প্রধান চরিত্রটি আরও লাভ করার জন্য সমস্ত আদর্শ বিসর্জন দেয়। এগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিতে সত্যজিৎ ভিন্ন ধরনের (elliptical) বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করেন, যেখানে নেগেটিভ, স্বপ্নদৃশ্য ও হঠাৎ ফ্ল্যাশব্যাকের সহায়তা নেয়া হয়। এ ছাড়া ৭০-এর দশকে সত্যজিৎ তার নিজের লেখা জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনীর নায়ক ফেলুদার ওপর ভিত্তি করে সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি দুটিও নির্মাণ করেন।
সত্যজিৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে একটি ছবি তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু পরে এ পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এই মন্তব্য করে যে একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি শরণার্থীদের বেদনা ও জীবন-অভিযাত্রার প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিলেন, তাদের নিয়ে রাজনীতির প্রতি নয়। ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ শতরঞ্জ কে খিলাড়ি নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি মুন্সি প্রেমচাঁদ-এর একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি করা হয়; ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিপ্লবের এক বছর আগে অযোধ্যা রাজ্যের লক্ষ্ণৌ ছিল গল্পটির পটভূমি। ছবিটিতে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সূত্রপাতের ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটিই ছিল বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত সত্যজিতের প্রথম চলচ্চিত্র। এটি আরও ছিল তার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও তারকাসমৃদ্ধ ছবি, যাতে সঞ্জীব কুমার, সাইদ জাফরি, আমজাদ খান, শাবানা আজমি, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিচার্ড অ্যাটনবারা-র মত অভিনেতারা অংশ নেন। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে হিন্দি ভাষায় এক-ঘণ্টা দীর্ঘ সদগতি নামের একটি ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটিতে ভারতে বিদ্যমান অস্পৃশ্যতার ক্রূর বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়। ১৯৮০ সালে সত্যজিৎ গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবির পরবর্তী পর্ব হীরক রাজার দেশে নির্মাণ করেন, যেটিতে তার রাজনৈতিক মতামতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ছবিটির চরিত্র হীরক রাজা ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণাকালীন সরকারের প্রতিফলন।[৪৩] বহুল প্রশংসাপ্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র পিকু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মজীবনের এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
শেষ পর্যায় (১৯৮৩–১৯৯২)
১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিতের হার্ট অ্যাটাক ঘটে এবং এ ঘটনার ফলে জীবনের অবশিষ্ট নয় বছরে তার কাজের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের সহায়তায় সত্যজিৎ ১৯৮৪ সালে ঘরে বাইরে নির্মাণ সমাপ্ত করেন। এরপর থেকে তার ছেলেই তার হয়ে ক্যামেরার কাজ করতেন। অন্ধ জাতীয়তাবাদের ওপর লেখা রবীন্দ্রনাথের এই উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপদানের ইচ্ছা সত্যজিতের অনেকদিন ধরেই ছিল এবং তিনি ৪০-এর দশকে ছবিটির একটি চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন। যদিও ছবিটিতে সত্যজিতের অসুস্থতাজনিত ভুলের ছাপ দেখা যায়, তা সত্ত্বেও ছবিটি কিছু সমালোচকের প্রশংসা কুড়ায় এবং এই ছবিতেই সত্যজিৎ প্রথমবারের মত একটি চুম্বনদৃশ্য যোগ করেন। ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সত্যজিৎ তার শেষ তিনটি ছবি অভ্যন্তরীণ মঞ্চে নির্মাণ করেন। এগুলি তার আগের ছবিগুলির চেয়ে আলাদা ও অনেক বেশি সংলাপনির্ভর। ১৯৮৯ সালে নির্মিত গণশত্রু ছবিটিতে তার পরিচালনা তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং এটিকে দীর্ঘদিনের অসুস্থতাশেষে ফিরে আসার পর সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণের পুনঃপ্রচেষ্টা হিসেবেই গণ্য করা হয়।[৪৫] ১৯৯০ সালে নির্মিত শাখা প্রশাখা সে তুলনায় উন্নততর ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছবিতে এক আজীবন সততার সাথে কাটানো বৃদ্ধ ব্যক্তি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার তিন ছেলের দুর্নীতির কথা জানতে পারেন; ছবির শেষ দৃশ্যে তিনি তার মানসিকভাবে অসুস্থ কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত চতুর্থ সন্তানের সান্নিধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পান। সত্যজিতের শেষ ছবি আগন্তুক ছিল হালকা আবহের। এ ছবিতে বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া মামার পরিচয় দিয়ে একজন আগন্তুক এক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার এই সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার (যেখানে পরিবারের ছোট ছেলেটি আগন্তুকটিকে আগ্রহভরে স্বাগত জানায়, কিন্তু পরিবারের বড়রা তাকে অনীহা ও সন্দেহের চোখে দেখেন) ভেতর দিয়ে সত্যজিৎ দর্শকের কাছে মানুষের পরিচয়, স্বভাব-প্রকৃতি ও সভ্যতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জাল বোনেন। সত্যজিতের ছবি গভীর মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ।
১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সে অবস্থা থেকে তার স্বাস্থ্য আর ভালো হয়নি। মৃত্যুর কিছু সপ্তাহ আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তার জীবনের শেষ পুরস্কার একটি সম্মানসূচক অস্কার গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন।
(চলচ্চিত্র কুশলতা)
সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনাকে পরিচালনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গণ্য করতেন। এ কারণেই কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী ছিলেন না। তার দুই বিদেশী ভাষায় নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য তিনি ইংরেজিতে লিখেছিলেন, এবং তারপর সেগুলো তার তত্ত্বাবধানে অনুবাদকেরা হিন্দি ও উর্দুতে ভাষান্তরিত করেন। সত্যজিৎ ও তার শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত মনে করতেন চলচ্চিত্রের “চলচ্চিত্রের রঙ্গমঞ্চের অস্তিত্বই চিত্রনাট্যের ওপর নির্ভরশীল”। সত্যজিৎ সবসময় প্রথমে ইংরেজিতে চিত্রনাট্য লিখতেন যেন অবাঙালি বংশী চন্দ্রগুপ্ত তা পড়তে পারেন। সত্যজিতের প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলোর ক্যামেরার কাজ করতেন সুব্রত মিত্র, যিনি পরবর্তীকালে তিক্ততার মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মীদল থেকে বেরিয়ে যান। কিছু সমালোচকের মতে সুব্রতের প্রস্থানের কারণে সত্যজিতের চলচ্চিত্রের চিত্রধারণের মান নেমে যায়। বাইরে সুব্রতের প্রশংসা করলেও চারুলতা-র সময় থেকেই ক্যামেরার কাজে সত্যজিৎ নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে থাকেন, এবং এর পরিণতিতে ১৯৬৬ সালের পর থেকে সুব্রত আর সত্যজিতের হয়ে কাজ করেননি। সুব্রত মিত্রের পথপ্রদর্শক কাজের মধ্যে রয়েছে “বাউন্স আলোকসজ্জা” কৌশল, যেখানে কাপড়ে আলো প্রতিফলিত করে অভ্যন্তরীণ সেটেও বাইরের প্রাকৃতিক আলোর আভাস তৈরি করা যায়। এছাড়া সত্যজিৎ তার নিজের অনেক কারিগরি ও চলচ্চিত্র-সংক্রান্ত উদ্ভাবনের পেছনে জঁ-লুক গদার ও ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর মত ফরাসি নবতরঙ্গের পরিচালকদের কাজের কথা স্বীকার করেছেন।
সত্যজিতের চলচ্চিত্র নিয়মিত সম্পাদনা করতেন দুলাল দত্ত, তবে বেশীর ভাগ সময় সত্যজিৎ-ই দুলালকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন। আর্থিক অসচ্ছলতা এবং সত্যজিতের অনুপুঙ্খ পরিকল্পনা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে তার বেশীর ভাগ চলচ্চিত্রের সম্পাদনা প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরাতে দৃশ্যধারণের সময়েই সম্পন্ন হয়ে যেত (পথের পাঁচালী বাদে)। কর্মজীবনের শুরুতেই রবি শংকর, বেলায়েত খান ও আলি আকবর খানের মত প্রতিভাবান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে সত্যজিতের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু তার এ অভিজ্ঞতা ছিল মূলত বেদনাদায়ক। তিনি বুঝতে পারেন যে সঙ্গীতজ্ঞেরা তার চলচ্চিত্রের চেয়ে তাদের নিজেদের সাঙ্গীতিক ধারার প্রতিই বেশি অনুগত। সত্যজিৎ পাশ্চাত্য ধারার ধ্রুপদী সঙ্গীতের ব্যবহার পছন্দ করতেন, বিশেষত তার শহুরে পটভূমিতে বানানো ছবিগুলোর জন্য। এ জন্য পরবর্তীকালে তিন কন্যা ছবিটির সময় থেকে তিনি নিজেই নিজের চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা করতেন। সত্যজিতের ছবিতে অভিনেতাদের কাজও সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তার ছবিতে চলচ্চিত্র তারকারা যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি কখনো চলচ্চিত্র দেখেননি এরকম মানুষও অভিনয় করেছেন (যেমন অপরাজিত ছবিটিতে)। রবিন উড-সহ অনেকেই সত্যজিতকে শিশু অভিনেতাদের জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে আখ্যা দেন, এবং উদাহরণ হিসেবে পথের পাঁচালী ছবিতে অপু ও দুর্গা, পোস্টমাস্টার ছবিতে রতন এবং সোনার কেল্লা ছবিতে মুকুল চরিত্রগুলোর উল্লেখ করেন। সত্যজিতের নির্দেশনার প্রকৃতি অভিনেতার প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করত। উৎপল দত্তের মত অভিনেতাদের তেমন কোন নির্দেশনাই তিনি দেননি, অন্যদিকে অপু চরিত্রে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিংবা অপর্ণা চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুরকে তিনি অনেকটা “পুতুলের” মত ব্যবহার করেছেন।
সত্যজিতের চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়বস্তু ছিল বহুমুখী। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালে বলেন যে সমালোচকেরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে, এক ধরন থেকে অন্য ধরনে ঘাসফড়িঙের মতো লাফ দেয়ার প্রবণতা প্রদর্শনের অভিযোগ করেন ও তার ছবিতে চেনাজানা কোন ধরন খুঁজে পান না যাতে তার গায়ে কোন একটি বিশেষ তকমা এঁটে দেয়া যায়। এ ব্যাপারে আত্ম-সমর্থন করে তিনি বলেন যে এই বহুমুখীতা তার নিজের চরিত্রেরই প্রতিফলন, এবং তার প্রতিটি ছবির পেছনে ঠাণ্ডা মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত কাজ করেছে।
(সাহিত্যকর্ম)
সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকর্ম –
সত্যজিৎ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা। একটি হল প্রাতিজনিক গোয়েন্দা ফেলুদা, অন্যটি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো বারটির সংকলনে প্রকাশ পেত এবং সংকলনগুলোর শিরোনামে “বার” শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত (যেমন ‘‘একের পিঠে দুই”, “এক ডজন গপ্পো”, ইত্যাদি)। ধাঁধা ও শব্দ-কৌতুক (pun)-এর প্রতি তার আগ্রহ এ গল্পগুলোতে প্রকাশ পায়। অনেক সময় ফেলুদাকে ধাঁধাঁর সমাধান বের করে কোন কেসের রহস্য উন্মোচন করতে হত। ফেলুদার বিভিন্ন গল্পে তার সঙ্গী উপন্যাস-লেখক জটায়ু (লালমোহন গাঙ্গুলি), আর তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে হচ্ছে গল্পের বর্ণনাকারী, যার ভূমিকা অনেকটা শার্লক হোমসের পার্শ্বচরিত্র ডক্টর ওয়াটসনের মত। প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ডায়েরী আকারে লেখা, যে ডায়েরী বিজ্ঞানীটির রহস্যময় অন্তর্ধানের পর খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যজিতের ছোটগল্পগুলোতে অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, ভয় ও অন্যান্য বিষয়ে সত্যজিতের আগ্রহের ছাপ পড়ে, যে ব্যাপারগুলো তিনি চলচ্চিত্রে এড়িয়ে চলতেন। সত্যজিতের অধিকাংশ রচনাই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং বর্তমানে তার বইগুলোর দ্বিতীয় প্রজন্মের পাঠকসমাজ গড়ে উঠেছে।
তার লেখা অধিকাংশ চিত্রনাট্যও “একশান” সাহিত্যপত্রে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। সত্যজিৎ তার ছেলেবেলার কাহিনী নিয়ে লেখেন যখন ছোট ছিলাম (১৯৮২ সাল)। চলচ্চিত্রের ওপর লেখা তার প্রবন্ধের সংকলনগুলো হল: আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস (১৯৭৬ সাল), বিষয় চলচ্চিত্র (১৯৮২ সাল), এবং একেই বলে শুটিং (১৯৭৯ সাল)। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিতের চলচ্চিত্র বিষয়ক নিবন্ধের একটি সঙ্কলন পশ্চিমে প্রকাশ পায়। এই বইটির নামও Our Films, Their Films। বইটির প্রথম অংশে সত্যজিৎ ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন, এবং দ্বিতীয় অংশে হলিউড, কিছু পছন্দের চিত্রনির্মাতা (চার্লি চ্যাপলিন, আকিরা কুরোসাওয়া) ও ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদের ওপর আলোচনা করেন। বিষয় চলচ্চিত্র বইটিতে চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে সত্যজিতের ব্যক্তিগত দর্শন আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি বইটির একটি ইংরেজি অনুবাদ Speaking of Films নামে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও সত্যজিৎ ‘‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’’ নামে একটি ননসেন্স ছড়ার বই লেখেন, যেখানে লুইস ক্যারলের ‘‘জ্যাবারওয়কি’’-র একটি অনুবাদ রয়েছে।
সত্যজিৎ “রে রোমান” (Ray Roman) ও “রে বিজার” (Ray Bizarre) নামের দুইটি টাইপফেস নকশা করেন। এর মধ্যে রায় রোমান ১৯৭০ সালে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতে। চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণের অনেক পরেও কলকাতার কিছু মহলে তিনি একজন প্রভাবশালী গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যজিত তার নিজের লেখা সমস্ত বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের ছবি আঁকতেন। এছাড়া তার চলচ্চিত্রের সব বিজ্ঞাপনগুলোও তিনিই তৈরি করতেন।
(চলচ্চিত্রের তালিকা)
দর্শক ও সমালোচকের প্রতিক্রিয়া
সত্যজিতের চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান ও পুনরাবৃত্ত উপাদান ছিল এর মানবতাবাদ। তার ছবিগুলো আপাতদৃষ্টিতে সরল, কিন্তু এই সরলতার গভীরে লুকিয়ে আছে জটিলতা। তার চলচ্চিত্রের বর্ণনাভঙ্গি ও চরিত্রায়ন নিখুঁত বলে অনেকবার প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, এবং এর মধ্যে অন্যতম হল আকিরা কুরোসাওয়ার করা এই উক্তিটি: “সত্যজিতের চলচ্চিত্র না দেখা আর পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র-সূর্য না দেখা একই কথা। অন্যদিকে সত্যজিতের নিন্দুকেরা মনে করেন তার ছবিগুলো অত্যন্ত ধীর গতির, যেন “রাজকীয় শামুকের” চলার মত। [৩২] তারা সত্যজিতের মানবতাবাদকে ভাবেন সরলমনস্কতার বহিঃপ্রকাশ, আর তার কাজকে মনে করেন আধুনিকতা-বিরোধী। তারা আরও বলেন যে সত্যজিতের চলচ্চিত্রে তার সমসাময়িক পরিচালকদের মত (যেমন জঁ-ল্যুক গদার) নতুন অভিব্যক্তি কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখতে পাওয়া যায় না। স্ট্যানলি কফম্যান লিখেছেন যে সত্যজিতের কিছু সমালোচক মনে করেন যে সত্যজিৎ “আগে থেকেই ধরে নিয়েছেন যে যেসব চলচ্চিত্র কেবল তাদের চরিত্রগুলোকে নিয়েই পড়ে থাকে, কিন্তু চরিত্রগুলোর জীবনে কোন নাটকীয় বিন্যাস আরোপ করে না, সেসব চলচ্চিত্র দর্শকেরা পছন্দ করবে। [৫৩] সত্যজিৎ নিজেই বলেছেন যে তার চলচ্চিত্রগুলোর ধীরগতির ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই, এবং কুরোসাওয়া সত্যজিতের পক্ষ নিয়ে বলেন যে “সত্যজিতের ছবিগুলো মোটেই ধীরগতির নয়। বরং এগুলোকে শান্তভাবে বহমান এক বিরাট নদীর সাথে তুলনা করা যায়।”
সমালোচকেরা প্রায়ই সত্যজিৎকে চলচ্চিত্র ও অন্যান্য মাধ্যমের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাথে তুলনা করেছেন, যেমন আন্তন চেখভ, জঁ রনোয়ার, ভিত্তোরিও দে সিকা, হাওয়ার্ড হক্স কিংবা ভোল্ফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। শেক্সপিয়ারের সাথেও তাঁকে তুলনা করা হয়েছে। ভি এস নাইপল শতরঞ্জ কে খিলাড়ি-র একটি দৃশ্যকে শেক্সপিয়ারের নাটকের সাথে তুলনা করে বলেছেন: “only three hundred words are spoken but goodness! – terrific things happen.”[৫৫] সত্যজিতের চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা নিয়ে যারা সন্তুষ্ট ছিলেন না তারাও স্বীকার করেন যে একটি সম্পূর্ণ সংস্কৃতিকে তার বিভিন্ন সূক্ষ্ম দ্যোতনাসহ চলচ্চিত্রে তুলে ধরার ব্যাপারে তিনি ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়ম। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় সত্যজিতের ওপর লেখা শ্রদ্ধাঞ্জলিতে এই অনুভূতিই প্রকাশ পায় এভাবে: “Who else can compete?” তবে সাধারণের মতে তার হার্ট অ্যাটাকের পরে বানানো ছবিগুলো তার পুরনো ছবিগুলোর মত জীবন্ত ছিল না।
১৯৮০-র শুরুর দিকে ভারতীয় লোকসভা সদস্য ও প্রাক্তন অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত তার বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ আনেন যে তিনি “দারিদ্র্য রফতানি” করছেন, এবং সত্যজিতের কাছে “আধুনিক ভারত”-এর প্রতিনিধিত্ব করে এমন ছবি বানানোর দাবি করেন অন্যদিকে ভারতজুড়ে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারা মনে করতেন সত্যজিৎ জাতির নিপীড়িত শ্রেণীর প্রতি “প্রত্যয়ী” ছিলেন না, বরং তিনি ‘‘পথের পাঁচালী’’ ও ‘’অশনি সংকেত’’ ছবিতে বর্ণনাভঙ্গি ও নান্দনিকতার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে মহৎ করে দেখিয়েছেন। তারা আরও অভিযোগ করে যে সত্যজিৎ তার ‘‘বুর্জোয়া’’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে তার ছবির সংঘাতগুলোর কোন সমাধান দেখাতে পারেন নি। ৭০-এর দশকের নকশাল আন্দোলনের সময় তার ছেলে সন্দীপ এক পর্যায়ে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ৬০-এর দশকে সত্যজিৎ ও মার্ক্স্বাদী চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বাণিজ্যিক অভিনেতা উত্তম কুমার-কে ছবিতে নেয়ার জন্য মৃণাল সত্যজিতের সমালোচনা করেন। সত্যজিৎ জবাব দেন যে মৃণাল কেবল “সহজ লক্ষ্য”গুলোতেই (তথা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী) আঘাত হানতে জানেন।
(কিংবদন্তি)
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ভারতীয় ডাকটিকিট
ভারতে ও বিশ্বব্যাপী বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে সত্যজিৎ রায় একজন সাংস্কৃতিক প্রতিভূ। তার মৃত্যুর পর কলকাতার জীবনযাত্রা থেমে পড়ে। হাজার হাজার লোক শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে আসেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ গভীর প্রভাব ফেলেন। সত্যজিতের চলচ্চিত্র কৌশল অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেল-কে অনুপ্রাণিত করেছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, মৃণাল সেন, ও আদুর গোপালকৃষ্ণন-এর মত চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভারতীয় চলচ্চিত্রে সত্যজিতের অসামান্য অবদান স্বীকার করেছেন। ভারতের বাইরে মার্টিন স্কোরসেজি, জেমস আইভরি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি ও এলিয়া কাজান-এর মত চিত্রনির্মাতারা তার কাজ দেখে প্রভাবিত হয়েছেন বলে ধারণা করে হয়। ইরা সাক্স-এর ২০০৫ সালে নির্মিত Forty Shades of Blue ছিল চারুলতা-র একটি দুর্বলভাবে অনুসৃত পুনর্নির্মাণ, আর ১৯৯৫ সালের মাই ফ্যামিলি ছবিটির শেষ দৃশ্য অপুর সংসার-এর শেষ দৃশ্যকে অনুসরণ করে তৈরি। ইদানীংকার কিছু ছবি, যেমন স্যাক্রেড এভিল, দীপা মেহতার এলিমেন্ট্স ত্রয়ী, এমনকি জঁ-ল্যুক গদার-এর চলচ্চিত্রেও সত্যজিতের চলচ্চিত্রের প্রতি নির্দেশ খুঁজে পাওয়া যায়।
মার্কিন অ্যানিমেটেড টেলিভিশন সিরিজ দ্য সিম্পসন্স-এর আপু নাহাসাপিমাপেটিলন চরিত্রটির নাম রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন করা হয়। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সাথে সত্যজিতের ছবি ডোমিনিকা-র স্ট্যাম্পে স্থান পায় – কোন ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের জন্য এ জাতীয় ঘটনা এটাই প্রথম। বহু সাহিত্যকর্মে সত্যজিৎ কিংবা তার কাজকে নির্দেশ করা হয়েছে। সালমান রুশদির লেখা হারুন অ্যান্ড দ্য সি অফ স্টোরিজ-এ দুইটি মাছের নাম ছিল গুপী ও বাঘা (সত্যজিতের “গুপী গাইন” ও “বাঘা বাইন” চরিত্র দুটির নামে)। বহু প্রতিষ্ঠান সত্যজিতকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এদের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দ্বিতীয় চলচ্চিত্রকার হিসেবে (চ্যাপলিনের পর) তাকে এই ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে লেজিওঁ দনর পুরস্কার প্রদান করেন। তার মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পদক ভারতরত্ন প্রদান করেন। ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা ক্রুজ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকার চলচ্চিত্র বিষয়ে গবেষণার জন্য সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৭ সালে ব্রিটিশ ব্রডক্যাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ঘোষণা দেয় যে, ফেলুদা সিরিজের দুটি গল্প নিয়ে রেডিও অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হবে।[৬৪] লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবের সময় থেকে “সত্যজিৎ রায় পুরস্কার” নামে একটি নিয়মিত পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম সারির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক যাদের চলচ্চিত্রের শিল্পগুণ, সহানুভূতি এবং মানবতার দিকটি সত্যজিতের মত তাদেরকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওয়েস অ্যান্ডারসন দাবী করেছেন যে তার চলচ্চিত্রে সত্যজিতের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তার সাম্প্রতিক ছবি দ্য দার্জিলিং লিমিটেড সত্যজিৎ রায়কে উৎসর্গ করেছেন।
(পুরস্কার, সম্মাননা এবং স্বীকৃতি)
সত্যজিৎ রায় তার জীবদ্দশায় প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাঁকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস তাকে আজীবন সম্মাননাস্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাকে প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রয়াত পরিচালকের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন শর্মিলা ঠাকুর।
—————————————————————-
[সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া
সূত্র নির্দেশিকা –
টিটি ব্যুরো (৩রা জুলাই ২০১৫ সাল) “A statue on every island”। পশ্চিমবঙ্গ: দ্য টেলিগ্রাফ। সংগ্রহের তারিখ ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল।
“Biography”। Satyajitray.org। ১১ই আগস্ট ২০০৩ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ই আগস্ট ২০০৩ সাল।
Tmh (২০০৭)। Book Of Knowledge Viii, 5E। Tata McGraw-Hill Education। আইএসবিএন 9780070668065।
রবিনসন, ডব্লিউ এন্ডারসন। “Satyajit Ray”। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। ২৬শে ডিসেম্বর ২০১৫ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
“Iconic filmmaker Satyajit Ray’s 94th birth anniversary celebrated”। ডিএনএ ইন্ডিয়া। ২রা মে ২০১৫রসাল। ৩রা মে ২০১৫ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
“Listeners name ‘greatest Bengali'” (ব্রিটিশ ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ই এপ্রিল ২০০৪ সাল। সংগ্রহের তারিখ ৯ই নভেম্বর ২০১৮ সাল।
“The Hindu : International : Mujib, Tagore, Bose among ‘greatest Bengalis of all time'”। www.thehindu.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ই নভেম্বর ২০১৮ সাল।
“Bangabandhu judged greatest Bangali of all time”। দ্য ডেইলি স্টার। ১৬ই এপ্রিল ২০০৪ সাল। সংগ্রহের তারিখ ৯ই নভেম্বর ২০১৮ সাল।
“সুকুমার রায়”। বুক রিডার ইমেজ। সংগ্রহের তারিখ ৩০শে মে ২০২০ সাল।
মিত্র, সমীর (১৯৬০ সাল)। “সুকুমার সমগ্র রচনাবলি”। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০২০।
Seton ১৯৭১, পৃষ্ঠা.৩৬.
“সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা কটিয়াদীতে বৈশাখী মেলা”। বাংলানিউজ২৪.কম। ৯ই মে ২০১২ সাল। ২৫শে জুলাই ২০১৪ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ই মে ২০১২ সাল।
Robinson ২০০৩ সাল, পৃষ্ঠা.৪৬
Seton ১৯৭১ সাল,পৃষ্ঠা.৭০.
Seton ২৯৭১ সাল,পৃষ্ঠা.৭১–৭২.
Robinson ২০০৩ সাল,পৃষ্ঠা.৫৬–৫৮.
Robinson 2005, পৃ. ৩৮.
Robinson 2005, পৃ.৪০–৪৩.
Robinson 2005, পৃ.৪২–৪৪.
Seton 1971, পৃ. ৯৫.
Seton 1971, পৃ.১১২–১১৫.
“Filmi Funda Pather Panchali (১৯৫৫ সাল)”। দ্য টেলিগ্রাফ। ২০ই এপ্রিল ২০০৫ সাল। সংগ্রহের তারিখ ২৮শে এপ্রিল ২০০৬ সাল।
ম্যালকম ডি। “Satyajit Ray: The Music Room”। guardian.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৯শে জুন ২০০৬ সাল।
Wood 1972, পৃ.৬১.
Wood 1972
Ray 1993, পৃ. ১৩-য়ে সত্যজিৎ এর উল্লেখ করেন
Robinson 2003, পৃ.৫.
Palopoli S। “Ghost ‘World'”। metroactive.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০০৬।
Robinson 2003, পৃ.২৭৭.
Seton 1971, পৃ.১৮৯.
Robinson 2003, পৃ.১৪২.
Robinson 2003, পৃ.১৫৭.
Palopoli S। “Charulata”। Slant magazine। সংগ্রহের তারিখ ১৯শে জুন ২০০৬ সাল।
Robinson 2003, পৃ.৩০৭.
Robinson 2003, পৃ.৩৬২.
Dasgupta 1996, পৃ.৯১.
Neumann P। “Biography for Satyajit Ray”। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ। সংগ্রহের তারিখ ২৯শে এপ্রিল ২০০৬ সাল।
Newman J (১৭ই সেপ্টেম্বর ২০০১ সাল)। “Satyajit Ray Collection receives Packard grant and lecture endowment”। UC Santa Cruz Currents online। ২০০৫-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯শে এপ্রিল ২০০৬ সাল।
Seton 1971, পৃ.২৯১-২৯৭.
Wood 1972, পৃ.১৩.
Rushdie 1992
Robinson 2003, পৃ.২০৬.
Robinson 2003, পৃ.১৮৮-১৮৯.
Robinson 2003, পৃ.৬৬-৬৭.
Dasgupta 1996, পৃ.১৩৪.
Robinson 2003, পৃ.৩৫৩.
Robinson 2003, পৃ.৩১৩.
Sen A। “Western Influences on Satyajit Ray”। Parabaas। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-২৯.
Robinson 2003, পৃ.৩১৫-৩১৮.
Ray 1994, পৃ.১০০
Basu D। “Biography of Satyajit Ray (1921–1992)”। Satyajit Ray Film and Study Collection, University of California, Santa Cruz। ২০১৪-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-২৯.
Nandy 1995
Robinson 2003, পৃ.৩৫২-৩৫৩.
Ebert R। “The Music Room (1958)”।
suntimes.com। ২০০৫-১২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-২৯
Robinson 2003, পৃ. ২৪৬.
Robinson 2005, পৃ.১৩-১৪.
Robinson 2003, পৃ.৩২৭-৩২৮.
Robinson 2003, পৃ.২০৫.
Amitav Ghosh। “Satyajit Ray”। Doom Online। ২০০৫-০৪-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৯.
সেন, মৃণাল। “Our lives, their lives”। Little Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-২৯.
SK Jha। “Sacred Ray”। Telegraph India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-২৯.
André Habib। “Before and After: Origins and Death in the Work of Jean-Luc Godard”। Senses of Cinema। ২০০৬-০৬-১৪. তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-২৯.
Datta S। “Feluda goes global, via radio”। Financial Express। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-১২.
(গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি)
বিশ্বাস, এম, সম্পাদক (২০০৬ সাল)। Apu and after: Revisiting Ray’s cinema। সিগাল বুকস। আইএসবিএন 978-1-905422-25-8.
কুপার, ডি (২০০০ সাল)। The Cinema of Satyajit Ray: Between Tradition and Modernity (পিডিএফ)। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-62980-5.
দাশগুপ্ত, সি (১৯৯৬নসাল)। The cinema of Satyajit Ray। পেঙ্গুইন ভারত। আইএসবিএন 978-0-14-024780-0.
গাঙ্গুলি, এস (২০০১ সাল)। Satyajit Ray: In search of the modern। ইন্ডিয়ালগ। আইএসবিএন 978-81-87981-04-6.
Y, ইশাগফুর (২০০২)। Satyajit Ray, l’Orient et l’Occident। Volume 24 of Les essais. Différence. আইএসবিএন 978-2-7291-1401-5.
মিত্র, এস (১৯৮৩ সাল)। “The Genius of Satyajit Ray”। ইন্ডিয়া টুডে।
নন্দী, এ (১৯৯৫ সাল)। “Satyajit Ray’s Secret Guide to Exquisite Murders”। The Savage Freud and Other Essays on Possible and Retrievable Selves। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-691-04410-1.
নাইস, B (১৯৮৮ সাল)। Satyajit Ray: A Study of His Films। প্রিজার পাবলিশার্স। আইএসবিএন 978-0-275-92666-3.
রায়, এস (১৯৯৩ সাল)। Our films, their films (3 সংস্করণ)। এশিয়া বুক কর্প. অব আমের। আইএসবিএন 978-0-86311-317-8.
রায়, এস (১৯৯৪ সাল)। My Years with Apu। ভাইকিং। আইএসবিএন 978-0-670-86215-3.
রায়, এস (২০০৫ সাল)। Speaking of films। পেঙ্গুইন ভারত। আইএসবিএন 978-0-14-400026-5.
রবিনসন, A (২০০৩)। Satyajit Ray: The Inner Eye: The Biography of a Master Film-Maker। I. B. Tauris. আইএসবিএন 978-1-86064-965-3.
রবিনসন (২০০৫ সাল)। Satyajit Ray: A Vision of Cinema। I. B. Tauris। আইএসবিএন 978-1-84511-074-1.
রুশদি, এস (১৯৯২ সাল)। Imaginary Homelands। Penguin. আইএসবিএন 978-0-14-014036-1.
সন্তোষ, কনস্ট্যান্টিন (২০০২ সাল)। Responding to film: A Text Guide for Students of Cinema Art। Rowman & Littlefield. আইএসবিএন 978-0-8304-1580-9.
সেটন, মারি (১৯৭১ সাল)। Satyajit Ray: Portrait of a director। Indiana University Press। আইএসবিএন 978-0-253-16815-3.
উড, আর (১৯৭২ সাল)। The Apu trilogy। নভেম্বর বুকস লিমিটেড। আইএসবিএন 978-0-85631-003-4.
—————————————————————-
(৯১৫৪ শব্দ)