Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কেয়াফুল || Keyaphool by Jatindramohan Bagchi

কেয়াফুল || Keyaphool by Jatindramohan Bagchi

ফুল চাই —- চাই কেয়াফুল!—-
সহসা পথের ‘পরে
আমার এ ভাঙ্গা ঘরে
কন্ঠ কার ধ্বনিল আকুল।

তখনো শ্রাবণ-সন্ধ্যা
নিঃশেষে হয়নি বন্ধ্যা—–
থেকে থেকে ঝরিতেছে জল;
পবন উঠিছে জেগে,
বিজলী ঝলিছে বেগে——
মেঘে মেঘে বাজিছে মাদল।

জনহীন ক্ষুব্ধ পথ
জাগিছে দুঃস্বপ্নবৎ—-
বুকে চাপি’ আর্ত্ত অন্ধকার;
কোনমতে কাজ সারি’
যে যার ফিরিছে বাড়ী,
ঘরে ঘরে বন্ধ যত দ্বার।

শূন্য ঘরে
হিয়া গুমরিয়া মরে
স্মরি’ যত জীবনের ভুল;
অকস্মাৎ তারি মাঝে
ধ্বনি কার কানে বাজে—–
চাই ফুল—-চাই কেয়াফুল!

পাগল! আজি এ রাতে
এ দুর্য্যোগ-অভিঘাতে—-
বৃষ্টিপাতে বিলুপ্ত মেদিনী;
তার মাঝে কে আছে,
কেতকী-সৌরভ যাচে!
কোথায় বা হবে বিকিকিনি?
পবন উঠিছে মাতি!
কিছুক্ষণ কান পাতি’
মনে হ’ল গিয়াছে বালাই;
সহসা আমারি দ্বারে
ডাক এল একেবারে—-
চাই ফুল — কেয়াফুল চাই!

ভাবিলাম মনে মনে—–
হয়ত বা এ জীবনে
কোনোদিন কিনেছিনু ফুল;
সেই কথা মনে ক’রে
আজো বা আশায় ঘোরে;
কিম্বা কারে করিয়াছে ভুল!

তাড়াতাড়ি আলো তুলি’
বাহিরিনু দ্বার খুলি,
সবিস্ময়ে দেখিলাম চেয়ে—-
মাথায় বৃহৎ ডালা,
দাঁড়ায়ে পসারী-বালা—–
শ্রাবণ ঝরিছে অঙ্গ বেয়ে;

কহিলাম, এ কি কান্ড!
তোমার পসরাভান্ড
আজ রাতে কে কিনিবে আর ?
এ প্রলয়ে কারো কাছে
কিছু কি প্রত্যাশা আছে—–
কেন মিছে বহিছ এ ভার!

আর্দ্র দেহে আর্দ্র বাসে
সে কহিল মৃদু হাসে,—–
শিরে বায়ু সুগন্ধ ছড়ায়—-
যে ফুল বেসাতি করি,
বাদল যে শিরে ধরি,—–
কপালে লিখিল বিধি তাই!

বহিয়া দুখের ঋণ
যে কষ্টে কাটাই দিন—–
এ দুর্দ্দিন কিবা তার কাছে?
ওগো তুমি নেবে কিছু?
নয়ন হইল নীচু—-
সেথাও বা মেঘ নামিয়াছে!

খোলা দরজার পাশে
বায়ু গরজিয়া আসে,
ফুলবাসে ভরি দেহ-মন;
ঝর-ঝর ঝরে জল,
আঁখি করে ছল-ছল
ঘনাইয়া প্রাণের শ্রাবণ!

বাদলের বিহ্বলতা—-
বুঝি হায়! লাগিল তা’
নয়নে বচনে সর্ব্ব দেহে;
সহসা চাহিয়া আড়
রমণী ফিরাল ঘাড়—–
উর্দ্ধে যেন কি দেখিবে চেয়ে!

না কহিয়া কোন বাণী
পসরা লইনু টানি’—–
মূল্য তার হাতে দিনু যবে,
উজার করিতে ডালা
কাঁদিয়া ফেলিল বালা——
ওমা এ কি —- এত কেন হবে?

কহিনু —যা’ কিনিলাম,
এ নহে তাহারি দাম—–
প্রতিদিন দিতে হবে মোরে;
এক পণ দুই পণ—-
যেদিন যেমন মন,
তাহারি আগাম দিনু তোরে;

কতক বুঝে’ না-বুঝে’
হৃদয়ের ভাষা খুঁজে’
বহুকষ্টে জানাইয়া তাই,
পুষ্পগন্ধে মোরে ঘিরে’
অন্ধকারে ধীরে-ধীরে
পসারিনী লইল বিদায়।

ফিরিনু একলা ঘরে—–
বাদল তখনো ঝরে,
পুষ্পগন্ধে পূর্ণ গৃহতল;
শয্যা লইলাম পাতি’
নিবায়ে দিলাম বাতি—-
আবার আসিল বেগে জল!

রুদ্ধ জানালার ফাঁকে
বাতাস কাহারে ডাকে,
বিজলী চমকি’ কারে চায়!
কোন্ অন্ধ অনুরাগে
ত্রিযামা যামিনী জাগে
শ্রাবণ ব্যাকুল-ব্যর্থতায়!

সঙ্গীহীন শূন্য ঘরে
হিয়া গুমরিয়া মরে—-
স্মরিয়া এ জীবনের ভুল;
সেই সাথে থেকে- থেকে
মনে হয় — গেল ডেকে’
কাননের যত কেয়াফুল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress