বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর——
কলঙ্কী মন, চেয়ে দেখ্ আজি সঙ্গী মিলেছে তোর।
দিবা অবসান, রবি হ’ল রাঙা,
পশ্চিমাকাশে নট্ কনা -ভাঙা;
সঙ্গহীনের যাহা কিছু কাজ সাঙ্গ করেছি মোর,
কুঞ্জদুয়ারে ব’সে আছি একা কুসুমগন্ধে ভোর!
আধফুটন্ত বাতাবিকুসুমে কানন ভরিয়া আছে,—-
কি গোপন কথা গুঞ্জরি’ অলি ফিরিছে ফুলের কাছে!
ফুটনোন্মুখ ফুলদলগুলি
পুলক-পরশে উঠে দুলিদুলি
গন্ধভিখারী সন্ধ্যার বায় ফুলপরিমল যাচে—–
সঙ্কোচে নত পুষ্পবালিকা—অতিথি ফিরে বা পাছে!
বেলা বয়ে যায়, সন্ধ্যার বায় আসি’ কহে বার বার,
সন্ধ্যা হয় যে অন্ধ কুসুম—–খোলো অন্তর-দ্বার!
মুকুলগন্ধ অন্ধ ব্যথায়
কুঁড়ির বন্ধ টুটিবারে চায়,
লুটাইতে চায় সন্ধ্যার পায় রুদ্ধ আবেগভার,
বিকাইতে চায় চরণের পরে কৌমার সুকুমার।
মন্থরপদে সন্ধ্যা নামিছে কাজলতিমিরে আঁকা,
দুয়ারে অতিথি, অন্তরে ব্যথা— সম্ভব সে কি থাকা?
গন্ধে পাগল অন্তর যার,
আবরণ মাঝে থাকে সে কি আর,
খুলি’ দিল দ্বার, পরান তাহার পরাগে-শিশিরে মাখা;
কুঞ্জ ঘিরিয়া আঁধারে ছাইল স্বপ্নপাখীর পাখা।
বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর—
হা রে কলঙ্কী হৃদয় আমার, সঙ্গী মিলেছে তোর।
দূরদিগন্তে দিবা হল সারা;
অন্তর ভরি ফুটে’ উঠে তারা,
নব-ফুটন্ত নেবুর গন্ধে আসিল তন্দ্রাঘোর—-
কলঙ্কী প্রেম, মুগ্ধ হৃদয়—-একই “পরিণাম তোর।