ভুবনেশ্বরের যক্ষীর ভাঙা মাথা
আপনার নাম আমি শুনেছি। আপনিই তো ভুবনেশ্বরের যক্ষীর ভাঙা মাথা উদ্ধার করে দিয়েছিলেন।–তাই না?
আজ্ঞে হ্যাঁ–ফেলুদা ওর পক্ষে যতটা সম্ভব বিনয়ী হাসি হেসে বলল। উমানাথ ঘোষালের বয়স চল্লিশের বেশি না, গায়ের রং ছেলেরই মতো টকটকে, চোখ দুটো কটা আর ঢুলু ঢুলু। কথা বলার সময় লক্ষ করলাম যে দুটো ভুরু এক সঙ্গে কখনই উপরে উঠছে না; একটা ওঠে তো অন্যটা নীচে থেকে যায়।
এঁরা সব আপনার–?-ভদ্রলোকের দৃষ্টি ফেলুদার দিক থেকে আমাদের দুজনের দিকে ঘুরে গেছে।
এটি আমার খুড়তুতো ভাই তপেশ, আর ইনি লালমোহন গাঙ্গুলী, জটায়ু ছদ্মনামে অ্যাড়তেঞ্চারের গল্প লেখেন।
জটায়ু?–উমানাথের ডান ভুরুটা উঠে গেল।নামটা চেনা চেনা লাগছে। রুকুর কাছে ওঁর কিছু বই দেখেছি বলে যেন মনে পড়ছে। তাই না হে বিকাশ?
আজ্ঞে হ্যাঁ, বললেন বিকাশবাবু, খান তিনেক আছে বোধহয়।
বোধহয় আবার কী। তুমিই তো যত রাজ্যের রহস্যের বই কিনে দাও ওকে।
বিকাশবাবু অপ্রস্তুত হাসি হেসে বললেন, ও ছাড়া ও আর কিছু পড়তেই চায় না।
এ বয়সে তো ও সব পড়বেই, পড়বেই, বলে উঠলেন লালমোহনবাবু। সকালে ক্যাপ্টেন স্পার্ক আর শয়তান সিং-এর নাম শোনা অবধি উনি বেশ মনমরা হয়ে ছিলেন; এখন আবার মুখে হাসি ফুটেছে। রহস্য রোমাঞ্চ বইয়ের বাজারে অক্রুর নদী নাকি জটায়ুর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
ফেলুদা বলল, আমি এমনিতেই একটা কারণে আপনার কাছে আসতে চেয়েছিলাম।..আপনার ছেলের সঙ্গে আজ আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। তার আসল নামটা যদিও এখনও জানতে পারিনি, তবে সে যে ভূমিকায় অভিনয় করছিল তার নামটা জানি।
অভিনয়?–উমানাথবাবু হা হা করে হেসে উঠলেন। আরে ও যে শুধু নিজে অভিনয় করে তা তো নয়, অন্যদেরও যে নামটাম বদলে অভিনয় করায়। তোমাকেও একটা কী নাম দিয়েছিল না, বিকাশ?
মাত্র একটা? বিকাশবাবুও হেসে উঠলেন।
যাই হাক–তা, কোথায় দেখা হল আমার ছেলের সঙ্গে?
ফেলুদা কোনওরকম ঝাড়াবাড়ি না করে অল্প কথায় অত্যন্ত গুছিয়ে সকালের ঘটনাটা উমানাথবাবুকে বলল। ভদ্রলোক শুনে প্রায় চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন।
কী সৰ্ব্বনাশের কথা!!–ছেলে আমার ডানপিটে সে তো জানি; তা বলে তার এতটা দুঃসাহস সে তো জানতাম না; ও তো মরতে মরতে বেঁচে গেছে! রুকুকে একবার ডেকে পাঠাও তো হে বিকাশ।
মিস্টার সিংহ ছেলেটির খোঁজে বেরিয়ে গেলেন। ফেলুদা বলল, ডাকনাম রুকু সে তো জানলাম। ভাল নামটা কী?
রুক্মিণীকুমার, বললেন উমানাথবাবু।ও-ই আমার একমাত্র ছেলে; কাজেই ঘটনাটা শুনে আমার মনের অবস্থা কী হচ্ছে সে তো বুঝতেই পেরেছেন।
দুৰ্গাকূণ্ড রোডের উপর বিরাট কম্পাউন্ডের মধ্যে বিশাল বাড়ি ঘোষালদের। রাত্রে বাড়ির বাইরেটা ভাল করে দেখতে পাইনি—শুধু গেটের উপর মার্বেল ফলকে লেখা শংকরী-নিবাস নামটা দেখেছি। আমরা বসেছি। একতলার বৈঠকখানায়। আমাদের ডান পাশে দরজা দিয়ে পুজোর দালান দেখা যাচ্ছে। আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে প্রতিমার আধখানা দেখতে পাচ্ছি। রং করার কাজ এখনও চলেছে।
চাকর ট্রেতে করে চা-মিষ্টি এনে আমাদের সামনে টেবিলে রেখে যাবার পর উমানাথবাবু বললেন, আপনারা মছলিবাঝা দর্শনে গিয়েছিলেন শুনলাম। কী মনে হল দেখেটেখে?
ফেলুদা একটা পেড়ার আধখানা কামড় দিয়ে মুখে ফেলে বলল, আমরা অল্পক্ষণই ছিলাম; শুনলাম। আপনিও নাকি যাচ্ছেন?
যাচ্ছি মানে একবারই গেছি। দ্বিতীয়বার যাবার আর বাসনা নেই, কারণ সেদিন আমি না-থাকার জন্যেই দুর্ঘটনা ঘটল।
উমানাথবাবু চুপ করলেন। আমরাও চুপ। লালমোহনবাবু দেখলাম আড়চোখে একবার ফেলুদার দিকে দেখে নিলেন।
দুর্ঘটনা?–ফেলুদা ফাঁক ভরাবার জন্য প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ। উমানাথবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। শুধু দামের দিক দিয়ে নয়, প্রভাবের দিক দিয়েও একটি অমূল্য জিনিস। গত বুধবার-অর্থাৎ আমি যেদিন বাবাজীকে দেখতে যাই সেদিন।–আমার বাবার ঘর থেকে উধাও হয়ে গেছে। আপনি যদি সেটিকে উদ্ধার করতে পারেন তো আমাদের অশেষ উপকার হবে, এবং সেই সঙ্গে আপনাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেব।
আমার বুকের ভিতরে আমার খুব চেনা একটা ধুকপুকুনি আরম্ভ হয়ে গেছে।
জিনিসটা কী সেটা জানতে পারি? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
ছোট্ট একটা জিনিস, মিস্টার ঘোষাল দু আঙুল ফাঁক করে জিনিসটার সাইজ বুঝিয়ে দিলেন। আড়াই ইঞ্চি লম্বা একটা গণেশের মূর্তি। সোনার মূর্তি, তার উপর দামি পাথর বসানো।
ওটা কীভাবে এল আপনাদের বাড়িতে?
বলছি সেটা। একেবারে গল্পের মতো।..আপনার তো বোধহয় চারমিনার ছাড়া চলে না–
ভদ্রলোক নিজে একটা ডানাহিল মুখে পুরুতেই ফেলুদা আগুন এগিয়ে দিয়ে সেই সঙ্গে নিজেও একটা চারমিনার ধরিয়ে নিল। একটা বড় টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে মিঃ ঘোষাল তাঁর কাহিনী বলতে শুরু করলেন।
আমার ঠাকুরদাদার বাবা সোমেশ্বর ঘোষালের ছিল ভ্রমণের নেশা। ছব্বিশ বছর বয়সে তিনি একা দেশ দেখতে বেরিয়ে যান। তখন নতুন রেলগাড়ি হয়েছে, কিছু পথ তাতে যাবেন, আর বাকিটা হয় হেঁটে, আর না হয়তো যা যানবাহন পাওয়া যায়। তাতেই। দক্ষিণ ভারতে ঘুরছিলেন। ত্ৰিচিনপল্লী থেকে মাদুরা হয়ে সেতুবন্ধের দিকে যাচ্ছিলেন গোরুর গাড়িতে, জঙ্গলে ভরা পাহাড়ে পথ দিয়ে। এই সময় মাঝরাত্তিরে তিনটি সশস্ত্র ডাকগত তাঁর গাড়ি আক্রমণ করে। সোমেশ্বর সাংঘাতিক শক্তিশালী লোক ছিলেন। সঙ্গে বাঁশের লাঠি ছিল। এক তিনজনের সঙ্গে লড়ে একটির মাথা ফাটিয়ে দেন, অন্য দুটি পালায়। ডাকাতদের একটা থলে পিছনে পড়ে থাকে। তার মধ্যে ছিল এই গণপতি। সেই মূর্তি সঙ্গে করে উনি দেশে ফেরেন। তারপর থেকেই আমাদের বংশের ভাগ্য ফিরে যায়। আমাকে। আপনি কুসংস্কারাচ্ছন্ন সেকেলে মানুষ বলে মনে করবেন না। আমাদের বংশে যা ঘটতে দেখেছি তার থেকে কতকগুলো বিশ্বাস আমার মনে জন্মেছে,–ব্যস, এইটুকুই। সত্যি বলতে কী, গণেশ আসার পর থেকে আমাদের ফ্যামিলিতে কোনও বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। ওটা আসার দু বছরের মধ্যেই পদ্মার ভাঙনে নদী আমাদের বাড়ির বিশ হাতের মধ্যে এগিয়ে আসে। কিন্তু বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। অবিশ্যি এ ছাড়াও আরও অনেক নজির আছে, সব দিতে গেলে দীর্ঘ ইতিহাস হয়ে যাবে। আসল কথা এই যে, একশো বছর আমাদের ফ্যামিলিতে থাকার পর আজ সে মূর্তি উধাও। বাড়িতে পুজো, বাইরে থেকে আত্মীয়স্বজন আসছে, কিন্তু সমস্ত সমারোহের উপর যেন একটা ছাড়া পড়ে রয়েছে।
উমানাথবাবু যেন ক্লান্ত হয়ে সোফায় এলিয়ে পড়লেন। ফেলুদা প্রশ্ন করল, কবে গিয়েছিলেন। আপনি মছলিবাবাকে দেখতে?
তিনদিন আগে। গত বুধবার। পনেরোই অক্টোবর। আমরা এসেইছি মাত্র দিন দশেক হল। মছলিবাবার কথা শুনে আমার গিন্নির দেখতে যাবার শখ হল, তাই ওঁকে আর রুকুকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।
আপনার ছেলেও যেতে চাইল?
নামটা শুনে কৌতুহল। বলল ওর কোন এক বইয়েতে নাকি কার কথ্য রয়েছে যে সত্তর মাইল সাঁতার কেটে এসেছিল কুমির হাঙরের মধ্যে দিয়ে। অবিশ্যি বাবাজীকে দেখে মোটেই ভাল লাগেনি। দশ মিনিটের মধ্যে উসখুসি শুরু হয়ে গেল। ওর জন্যেই তো তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। এসে দেখি এই কাণ্ড।
সিন্দুক আপনার বাবার ঘরে থাকে বলছিলেন না?
হ্যাঁ, তবে চাবিটা এমনিতে আমার ঘরেই থাকে। রিং-এর মধ্যে পাঁচ ছটা চাবি, তার মধ্যে একটিই হল ওই সিন্দুকের। এমনিতে কোথাও বেরোলে আমার স্ত্রীর কাছে চাবিটা থাকে, কিন্তু সেদিন ও-ও যাচ্ছে বলে বাবার ঘরের দেরাজে চাবিটা রেখে যাই। হয়তো খুব বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি, কারণ বাবা সন্ধের দিকে একটু আফিম-টাফিম খান, খুব একটা কুঁশ থাকে না। যাই হাক—যাবার সময় চাবিটা রেখে দেরাজটা একেবারে শেষ অবধি ঠেলে বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আধা ইঞ্চি খোলা। সন্দেহ হয়; তখন সিন্দুক খুলে দেখি গণেশ নেই।
ফেলুদা একটুক্ষণ ভুরু কুঁচকে থেকে বলল, আপনাদের বাড়িতে সেদিন সেই সময়ে কে কে ছিলেন সেটা জানতে পারি কি?
ফেলুদা খাতা আনেনি, তবে উত্তরটা যে ওর মুখস্থ থাকবে, আর নামগুলো হোটেলে গিয়ে লিখে নিতে পারবে সে বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই।
মিঃ ঘোষাল বললেন, দারোয়ান ত্ৰিলোচনকে আপনারা গেটে দেখলেন; ও প্রায় পয়ত্রিশ বছর হল আমাদের বাড়িতে রয়েছে। চাকর ঠাকুর ঝি সবাই পুরনো। প্রতিমা গড়েন শশীবাবু আর তার ছেলে কানাই। শশীবাবু কাজ করছেন ত্রিশ বছরের উপর। ছেলেটিও খুব ভাল। এ ছাড়া মালী আছে, সে পুরনো। আর আছে বিকাশ-যে আপনাদের সঙ্গে কএ নিয়ে এল।
বিকাশবাবু কদ্দিন আছেন?
সেক্রেটারির কাজ করছে বছর পাঁচেক, আছে অনেকদিন। ও প্রায় ফ্যামিলি মেম্বারের মতোই হয়ে গেছে। ওর বাবা অখিলবাবু আমাদের জমিদারি সেরেস্তায় কাজ করতেন। ওর মা বিকাশ হবার সময়ই মারা যান। তার বছর দশেক পরে বাপও চলে গেলেন ড্রপসিতে। অনাথ ছেলেটি সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শুনে আমার জ্যাঠামশাই ওকে বাড়িতে এনে রাখেন। ইস্কুল কলেজ সবই আমাদের বাড়িতে থেকেই। এমনি বুদ্ধিমান ছেলে। লেখাপড়ায় বেশ ভালই ছিল।
চুরির খবরটা পুলিশে দেননি?
সেই রাত্ৰেই। এখনও পর্যন্ত কোনও হদিস পায়নি।
গণেশের খবর বাইরের কেউ জানত?
উমানাথবাবু উত্তর দেবার আগেই বিকাশবাবুর সঙ্গে রুক্সিণীকুমার এসে হাজির হল। আমি ভেবেছিলাম ক্যাপ্টেম স্পার্কের ভাগ্যে বুঝি প্রচণ্ড ধমক আছে, কিন্তু দেখলাম উমানাথবাবু সেরকম লোক নন। শুধু আড়চাখে একবার ছেলের দিকে চেয়ে গভীর গলায় বললেন, কাল থেকে পুজোর কাঁটা দিন আর বাইরে যাবে না। বাড়িতে বাগান আছে, ছাত আছে–যত খুশি খেলতে পারো; ঘুড়ি আছে, ঘুড়ি ওড়াতে পারো, বই আছে পড়তে পারো, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ছাড়া বাইরে বেরোবে না।
আর শয়তান সিং? ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করল রুক্মিণীকুমার!
সে আবার কে?—উমানাথবাবুর বা ভুরুটা উঠে গেছে উপর দিকে।
ও যে কারাগারের শিক ভেঙে পালিয়েছে।
ঠিক আছে, আমি ওর খবর এনে দেব তোমাকে, হালকাভাবে হেসে আশ্বাসের সুরে বললেন বিকাশবাবু। রুকু মনে হল খানিকটা ভরসা পেয়েছে। অন্তত সে তার শাস্তির ব্যাপারে। আর কোনও আপত্তি না করে বিকাশবাবুর হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
উমানাথবাবু বললেন, বুঝতেই পারছেন আমার পুত্রটি একটু অতিমাত্রায় কল্পনাপ্রবণ। যাই হোক।–আপনার প্রশ্নের জবাব দিই এবার-w-গণপতির খবর আমরা দেশে থাকতে অনেকেই জানত। ওটা একটা কিংবদন্তির মতো মুখে মুখে রটে গিয়েছিল। সেটা অবিশ্যি আমার জন্মের আগে। পরের দিকে এ নিয়ে আর বিশেষ কেউ আলোচনা করত না। আমার নিজের ছাত্রজীবন কাটে কলকাতায়। কলেজে থাকতে দু-একটি বন্ধুকে আমি গল্পচ্ছলে গণেশের কথা বলেছিলাম। তার মধ্যে একটি বন্ধু—অবিশ্যি এখন তাকে আর বন্ধু বলি না–সম্প্রতি কাশীতে রয়েছেন। তার নাম মগনলাল মেঘরাজ।
বুঝেছি, ফেলুদা বলল, তাঁকে আজ মছলিবাবার ওখানে দেখলাম। জানি।
আমি যেদিন গেছিলাম সেদিনও ছিল। তার বাবাজীর কাছে যাতায়াত করার একটা কারণ আছে। কিছুদিন থেকে তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। খারাপের দিকে অবশ্যই। বছর দু-এক আগে ওর। প্লাইউডের ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগা থেকে এর শুরু।
তারপর এই গত কয়েক মাসের মধ্যে ওর গোলমেলে কারবার সম্বন্ধে অনেক গুজব বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ওর কলকাতার এবং বেনারসের বাড়িতে পুলিশ রেড হয়ে যায়। আমি এখানে আসার দুদিন বাদেই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সোজাসুজি বলল যে গণেশষ্টা ওরা দরকার। ওটা যে কলকাতায় আমার কাছে থাকে না, এখানে বাবার সিন্দুকে থাকে, সেটা ও জানত। চল্লিশ হাজার অবধি অফার করেছিল ওটার জন্য। আমি সোজাসুজি না বলে দিই। ও যাবার সময় শাসিয়ে যায় যে জিনিসটা ও হাত করে তবে ছাড়বে। তার ঠিক পাঁচদিন পরে গণেশ সিন্দুক থেকে উধাও হয়ে যায়।
ভদ্রলোক চুপ করলেন। ফেলুদাও চুপ, চিন্তিত। আমি জানি ওর তিনমাসের অবসর এখানেই শেষ হল। সামনের কাঁটা দিন কাশীই হবে ওর কাজের জায়গা, তদস্তর জায়গা। লালমোহনবাবুর ভবিষ্যদ্বাণী মনে পড়ছে-এক ঢিলে তিন পাখি। অবিশ্যি ক্যাশের ব্যাপারটা নির্ভর করছে।–
আমাদের খুব ভাগ্য ভাল যে আপনি ঠিক এই সময়ে এসে পড়লেন। আপনার উপর কাজের ভারটা দিতে পারলে–
নিশ্চয়ই। একশোবার! ফেলুদা উঠে দাঁড়িয়েছে।আপনি অনুমতি দিলে কাল সকালে একবার আসতে চাই। আপনার বাবার সঙ্গে একবার কথা বলা যাবে কি?
কোন যাবে না? বাবার তো এখন রিটায়ার্ড জীবন। অবিশ্যি বাবার মেজাজটা ঠিক যাকে বলে মোলায়েম তা নয়। তবে সেটা বাইরের খোলস। আর আপনি যদি আমাদের বাড়ির এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে চান, তাও পারেন স্বচ্ছন্দে। আমি ত্ৰিলোচনকে বলে রাখব আপনাকে এলে যেন ঢুকতে দেয়। আর. বিকাশ রয়েছে, ও-ও সব ব্যাপারে। আপনাদের হেলপ করতে পারে। আটটা নাগাত এলে ভাল-তা হলে বাবাকে তৈরি অবস্থায় পাবেন।
বাড়ি ফেরার পথে পর পর দুটো অন্ধকার গলি দিয়ে আসবার সময় তিন তিনবার পায়ের আওয়াজ শুনে পিছন ফিরে চাদর মুড়ি দেওয়া একই লোককে দেখতে পেয়ে সেদিকে ফেলুদার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলাম; ও যে শুধু পাত্তাই দিল না তা নয়-সারা রাস্তা ধরে গুনগুন করে ইশক ইশক ইশক ছবির এমনিতেই একটা বাজে গান সমানে ভুল সুরে গেয়ে গেল।