প্রভাত হইতে ভদ্র-পাড়ায় ঘুরে’ ঘুরে’ সারাবেলা,
হজম করিয়া হরেক-রকমে ভদ্র-আনার ঠেলা—
মুখোস-পরানো মলাম মিথ্যা, বিনীত অহংকার,
গরিবের পরে সহৃদয় ঘৃণা, ভণ্ডামি করুণার,—
সন্ধ্যাবেলায় শুণ্য জঠরে এলাম রে তোর দ্বারে,
ওরে চাষা, তোর আগলটা খোল্ ঠাঁই দে দাওয়ার ধারে।
তোরি ঘরে আজ রাতটা কাটাব, ক’য়ে দুটো সোজা কথা ;
ঠিক জানি তুই চির-দুখী-বুকে বুঝিবি আমার ব্যথা ;
না যদি বুঝিস তাও তো বুঝিব, রহিবে না কোন গোল,
নহে সে মিথ্যা মাথা-নাড়া শুধু — ভদ্র-আনার ভোল!
থাক্ থাক্ ভাই, ব্যস্ত হোস্ নে, কাঁথাতেই হবে বেশ,
খড়ের বুঁদীটা ওই তো রয়েছে, ঘুম পেলে দেব ঠেস্।
এই শীতে আর পা-ধোবার জলে কোন দরকার নাই ;
থাক্ রে পাগলা, হয়েছে প্রণাম, বোস্ দেখি কাছে, ভাই!
খাবার যোগাড়—এখনি কি তার ? হোক না খানিক রাত,
হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই হবে, তোর ঘরে খেলে যাবে নাকো আর জাত।
—দাঁড়িয়ে কেরে ও ? তোরি ছেলে নাকি ?
. মদ্না না ওর নাম ?
তোরি মত দেখি জোয়ান হয়েছে! করে তো রে কাজ-কাম ?
ক্ষেতের কর্মে ভারি দড় নাকি! আহা! ভারী খুসী শুনে’—
কি বল্লি ?—এই কুড়িতে পড়িবে সামনের ফাল্গুনে!
সারাদিন ভাই, কিছু খাই নাই—সত্যি কথাই বলি,
বড়োলেক যারা–খেতে বলে কেউ—মিছে এত বড় হ’লি!
চা ও খানদুই বিসকুট নামে সঙ্গে তাহারি চাট্—
তাই দিয়ে বটে রাখে কেউ কেউ ভদ্র-আনার ঠাট্।
বাজে কথা যাক্ ;—ক’ বিঘা চোতেলি করেছিস্ এই সন ?
পাটে কত পেলি, নয়ালির ধান এল ক’ কাহন ?
মহাজন-দেনা রাজার খাজনা—হয়েছে তো সব শোধ ?
বেশ বেশ ভাই, বড় খুসী তোর দেখে, বিবেচনা-বোধ!
ওরে ও মদ্না একটা কলকে তামাক পারিস দিতে ?
—দিয়েছিস্ নাকি! এ যে দেখি তুই বাপেরেও গেলি জিতে’!
দ্যাখ মানুষের কষ্ট থাকে না, হয় যদি লোক খাঁটি,
সোনার ফসল ফলায় যখন পায়ের তলায় মাটি!
মাটির-ই যদি না হেন মূল্য, মানুষের দাম নাই ?
এই সংসারে এই সোজা কথা সব আগে বোঝা চাই।
বিশ্বপিতার মহা-কারবার এই দিন্-দুনিয়াটা,
মানুষই তাহার মহা-মূলধন, কর্ম তাহার খাটা ;
তাঁরি নাম নিয়ে খাটিবে যে জন, অন্ন তো তার মুখে—
বিধাতার সেই সাচ্চা বাচ্চা কখনও পড়ে না দুখে।
তবে যে হেথায় দেখিবারে পাই গরিবের দুর্গতি,
অর্থ তাহার — চেনে না সো তার শক্তির সংহতি ?
পায়ের তলার ধূলো, সেও, যদি কেউ পদাঘাত করে,
নিমেষে তাহার প্রতিশোধ লয় চড়ি’ তার শিরোপরে।
মানুষ কি সেই ধূলি চেয়ে হীন, সহিবে সে অপমান ?
আত্মার সেই মহাদুর্গতি নহে দেবতার দান!
নাই ভগবান, নাইক ধর্ম, যাদের শিক্ষামূলে,
ছিন্নমস্তা শিক্ষা সে শুধু শয়তানি ইস্কুলে!—
দূর করি’ সেই ঝুটো সভ্যতা’ যত ফুঁকো শিক্ষার,
দূর করি’ সেই ভেক্-নেওয়া যত অপমান ভিক্ষার,
আপনার মত আপন শিক্ষা নিজে নিতে হবে জিনে’,
মুক্তির পথ মিলিবে তবে তো দেশ জোড়া দুর্দিনে।
ডাকিছে শেয়াল, রাত্রি দুপুর হ’ল বুঝি এইবার ;
খাটুনির দেহ এইবার ভাই বিশ্রাম দরকার!
সৌরভ যেন পাইবা কিসের—চিঁড়ে-কোটা বুঝি হয়!
ঢেকির শব্দ — তাই তো রে ঠিক! সমস্ত বাড়ীময়
নূতন ধানের মধুর গন্ধ মাতায়ে তুলিছে মন—
আর কি চাই রে ? কোন আয়োজনে নাই কিছু প্রয়োজন।
অতখানি দুধ ?—কি হবে রে ভাই ? খানিকটা রাখ তুলে’,
হজম-ই হয় না খাঁটি দুধ, সে যে বহুদিন গেছি ভুলে’।
এখো-গুড় নাকি! বাড়িতে হয়েছে ? তিন মন দশ সের!
সবি ত বাড়ীর! হায়, একি দান গরীব গৃহস্থের!
Thanks for giving this Poem it is very lovely and good poem .