Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রয়াল বেঙ্গল রহস্য || Adrish Bardhan

রয়াল বেঙ্গল রহস্য || Adrish Bardhan

রয়াল বেঙ্গল রহস্য

সত্যজিৎ রায়ের গল্প নিয়ে গোয়েন্দা ধাঁধা
রয়াল বেঙ্গল রহস্য। ফেলুদা

সক্কালবেলা লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু এসে হাজির। ভদ্রলোকের হাইট মোটে পাঁচফুট পাঁচ ইঞ্চি, অনর্গল ভুল ইংরেজি বলেন, ভুল তত্ত্ব দিয়ে রগরগে রোমাঞ্চ গল্প লেখেন। বাজারে দারুণ কাটতি তার বইয়ের। এক-একখানা বইয়ের চার-পাঁচটা এডিশন হয়ে গেছে এবং তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।

এহেন লালমোহনবাবু এসে বললেন, জঙ্গলে যাবেন? ফেলুদা তক্তাপোশের ওপরে উঠে বসে বললেন, আপনার জঙ্গলের ডেফিনিশন?

সেন্ট পারসেন্ট জঙ্গল। যাকে বলে ফরেস্ট।

কোথায়?

ডুয়ার্সে। মহীতোষ সিংহরায়ের নাম শুনেছেন তো? জবর শিকারি। অনেক বই লিখেছেন। এই দেখুন চিঠি লিখে ইনভাইট করেছেন আপনাকেও।

ফেলুদা কিছুক্ষণ চিঠিটার দিকে চেয়ে থেকে বললে, ভদ্রলোক কি বৃদ্ধ?

নো স্যার।

সইটা দেখে বুড়ো বলে মনে হয়েছিল। চিঠিটা অন্যের লেখা।

নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ফেলুদা, তোপসে আর লালমোহনবাবুকে নিতে এলেন যে ভদ্রলোক নাম তার তড়িৎ সেনগুপ্ত। বয়স তিরিশ। সাহিত্যের ডিগ্রি আছে। মহীতোষবাবুর সেক্রেটারি। শিকারের বইগুলো উনিই শুনে-শুনে লিখে যান মহীতোষবাবুর হাতের লেখা ভালো নয় বলে।

সিংহরায় প্যালেসে গাড়ি পৌঁছতেই মহীতোষবাবু নিজে ওদের খাতির করে নিয়ে গেলেন। বৈঠকখানায়। ভদ্রলোক দারুণ ফরসা, চুল পাকা, চওড়া চোয়াল, চওড়া কাঁধ, চাড়া দেওয়া গোঁফ। গলার ডাক বাঘের ডাকের মতো। রীতিমতো ঢ্যাঙা।

মহীতোষবাবুরা তিনপুরুষের শিকারি। ঠাকুরদা আদিত্যনারায়ণ বাঘের হাতে মারা গেছেন, বাবাও তাই। মহীতোষবাবু তাই নিজের দেশের জঙ্গলে শিকার করেন না–আসাম আর উড়িষ্যার জঙ্গলে গিয়ে বাঘ মারেন। বাঘ মেরেছেন একাত্তরটা, লেপার্ড পঞ্চাশের ওপর। শিকারের কাহিনি লিখতে আরম্ভ করেন পঞ্চাশ বছর বয়েসে। এর মধ্যেই এত নাম।

বৈঠকখানায় আলাপ হল শশাঙ্ক সান্যালের সঙ্গে। মহীতোষবাবুর বাল্যবন্ধু। ওঁর কাঠের কারবার দেখাশুনা করেন। চেহারায় আর হাবভাবে আশ্চর্য বেমিল। মাথায় তেমন ঢ্যাঙা নন, কথা বলেন নীচু গলায়, চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মানুষ।

প্রাথমিক গল্পগুজবের পর বিশ্রাম নিতে দোতলায় উঠল ফেলুদা, তোপসে, লালমোহনবাবু। সেই সময়ে দেখা গেল বেগুনি ড্রেংসি গাউন পরা আর একজন তালঢ্যাঙা পুরুষকে। মাথার চুল বেবাক সাদা।

মহীতোষবাবুর দাদা। দেবতোষবাবু। বদ্ধ উন্মাদ।

বিকেলের দিকে জিপে করে জঙ্গলে বেড়িয়ে এল সবাই। কাকর হরিণের ডাক শোনা গেল বটে, বাঘ দেখা গেল না। ম্যানঈটার আসছে শুনেই অবশ্য গা ঠান্ডা হল লালমোহনবাবুর।

বাড়ি ফেরার পর মহীতোষবাবু ওদের নিয়ে গেলেন ঠাকুরদার ঘরে। শেষ বয়েসে তিনি পাগল হয়ে গিয়ে একটা তলোয়ার দিয়ে বাঘ মারতে ছুটেছিলেন। তলোয়ারটা আলমারিতেই রয়েছে অন্যান্য ছুরি ছোরার সঙ্গে।

হাতির দাঁতের একটা বাক্স বার করলেন মহীতোষবাবু। ভেতরে ভাঁজ করা কাগজ। কাগজে লেখা একটা উদ্ভট ছড়া :

মুড়ো হয় বুড়ো গাছ
হাত গোণ ভাত পাঁচ
দিক পাও ঠিক ঠিক জবাবে।
ফাল্গুন তাল জোড়
দুই মাঝে উঁই ফোঁড়
সন্ধানে ধন্দায় নবাবে।

মহীতোষবাবু বললেন, ডিটেকটিভদের অনেক ক্ষমতা থাকে। হেঁয়ালির সমাধান করতে পারেন, মিস্টার মিত্তির?

ফেলুদার ভালো নাম প্রদোষ মিত্র। বলল, গুপ্তধনের ইঙ্গিত রয়েছে শেষের লাইনে। এ সঙ্কেতের কথা আর কে জানে?

আমি, শশাঙ্ক আর তড়িৎ।

.

তড়িৎ সেনগুপ্ত মারা গেল সেই রাতেই। ঘটনাটা ঘটল এইভাবে।

শুতে উঠে দেবতোষবাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ফেলুদার। ভদ্রলোক কাছে এসে আবোল তাবোল কথা বলতে বলতে অদ্ভুত একটা কথা বললেন, যুধিষ্ঠিরের রথের চাকা মাটি ছুঁত না। তাও শেষটায় ছুঁল। তার আগে বললেন, হাতিয়ার কি আর সবাইয়ের হাতে বাগ মানে? সবাই কি আর আদিত্যনারায়ণ হয়?

ফেলুদা লক্ষ করল, ভদ্রলোকের খড়মের তলায় রবারের সাইলেন্সার লাগানো।

রাত এগারোটায় শোনা গেল মহীতোষবাবুর চাপা ধমকানি।

আমি শেষবারের মতো বলছি–এর ফল ভালো হবে না। কিন্তু কাকে ধমকাচ্ছেন তা বোঝা গেল না।

গভীর রাতে দেখা গেল কালবুনির জঙ্গলে একটা টর্চের আলো ঘোরাফেরা করছে। বিদ্যুতের আলো জ্বলছে আকাশে। বৃষ্টি আসছে।

হাইলি সাসপিশাস, চাপা গলায় বললেন লালমোহনবাবু।

টর্চ নিভে গেল। শোনা গেল কানফাটা বাজের আওয়াজ।

খবর এল সকালবেলায়। তড়িত্বাবুকে বাঘে খেয়েছে। ম্যানঈটার।

তক্ষুনি জিপে করে সবাই গেলেন জঙ্গলে। তড়িৎবাবুর আধখাওয়া দেহ যেখানে পড়ে, তার ধারেকাছে বাঘের দাগ অবিশ্যি পাওয়া গেল না। বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেছে।

কিন্তু একটা আশ্চর্য আবিষ্কার করল ফেলুদা। তড়িবাবুর বুকে বাঘের আঁচড়ের দিকে তাকিয়ে বললে, বাঘ কি কেবলমাত্র একটা নখের সাহায্যে একটা গভীর আঁচড় দিতে পারে?

দেখা গেল, আঁচড়টা সার্ট ভেদ করে বুকে ঢুকে গেছে।

ধারালো ফলা দিয়ে খুন করা হয়েছে তড়িৎবাবুকে! বাঘে খেয়েছে পরে!

.

সেইরাতেই উদ্ভট হেঁয়ালির সমাধান করে ফেলল ফেলুদা। হেঁয়ালি উদ্ধারে তার জুড়ি নেই। ইংরেজি কেতাব ছাড়াও বিদগ্ধমুখমণ্ডলম বলে একটা সংস্কৃত হেঁয়ালির বইও আছে তার কাছে। আটকাল শুধু একটা শব্দ নিয়ে–বুড়ো গাছ।

এমন সময়ে আবির্ভূত হলেন দেবতোষবাবু। ফেলুদা তাকেই জিগ্যেস করে বসল, এখানে বুড়ো গাছ মানে প্রাচীন গাছ কিছু আছে কি?

প্রাচীন আর বুড়ো কি এক হল? ঘোলাটে চোখে বললেন উন্মাদ দেবতোষবাবু। কাটা ঠাকুরানির মন্দির দেখেছ? মন্দিরের পশ্চিমে একটা অশ্বত্থ গাছ আছে। গায়ে একটা ফোকর। ঠিক যেন ফোকলা দাঁত বুড়ো। সেই গাছেই একদিন মহী–

দাদা, চলে এসো।

বাজখাঁই গলায় হাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকলেন মহীতোষবাবু। –একরকম জোর করেই ঘাড় ধরে ঘর থেকে বার করে নিয়ে গেলেন দাদাকে। ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দিলেন বাইরে।

পরদিন শিকারি মাধবলালকে নিয়ে ফেলুদা সদলবলে গেল কাটা ঠাকুরানির মন্দিরের পাশে। বাঁশের গায়ে গুলির দাগ আবিষ্কার করল ফেলুদা–পাওয়া গেল খানিকটা বাঘের লোম। গুলি খেয়ে পালিয়েছে বাঘ–তার চিহ্ন।

আর পাওয়া গেল সেই তলোয়ারটা। ঝোঁপের মধ্যে পড়েছিল।

আদিত্যনারায়ণের তরবারি। ডগায় খয়েরি রঙের রক্তের দাগ।

গুপ্তধন কিন্তু উধাও! মাটিতে গর্ত! কলসি নেই!

কাটা ঠাকুরানির মন্দিরে গেল ফেলুদা। মাটিতে নাক ঠেকিয়ে কী যেন দেখল। অদৃশ্য হল মন্দিরের অন্ধকারে। ফিরে এল কিছু পরেই।

বলল, অন্ধকারের মাঝে আলোর আভাস পাচ্ছি। তোপসে, বাড়ি চ।

.

বাড়ি ফিরে ট্রোফিরুমে ঢুকে একে-একে সবকটা বন্দুক নামিয়ে পরীক্ষা করল ফেলুদা। উলটেপালটে দেখল বন্দুকের বাঁট, ট্রিগার, নল, সেফটিক্যাচ।

তারপর বলল মহীতোষবাবুকে, গুপ্তধন উধাও হয়েছে। গর্ত খুঁড়ে কেউ সরিয়েছে।

সেকী! চলুন, সবাই গিয়ে দেখে আসা যাক।

কিন্তু বিকেলে তুমুল বৃষ্টি নামায় জঙ্গলে যাওয়া আর হল না। তবে জানলায় দাঁড়িয়ে ফেলুদা দেখল, দুটি মূর্তি টর্চের আলো জ্বালিয়ে শলাপরামর্শ করছে দারোয়ানের ঘরের কাছে দাঁড়িয়ে।

এই দারোয়ানই খবর দিয়েছিল ফেলুদাকে–পরশু রাতে তড়িৎবাবু জঙ্গলে ঢুকলে পেছন পেছন আরও একজন গিয়েছিল টর্চ নিয়ে। অন্ধকারে তার মুখ দেখা যায়নি।

.

পরদিন সকালে সবাই মিলে গেলেন কাটা ঠাকুরানির মন্দিরে। ফেলুদা রিভলভার হাতে মন্দিরে ঢুকল। পাঁচ সেকেন্ডের উপর্যুপরি দু-বার গুলিবর্ষণ করে একটা কেউটে বধ করে উদ্ধার করে নিয়ে এল নারায়ণী মুদ্রা বোঝাই একটা পেতলের ঘড়া।

তড়িতের কাণ্ড। গুপ্তধন চুরি করে সরিয়ে রেখেছিল মন্দিরের অন্ধকারে।

ঠিক এই সময়ে ডেকে উঠল কাকর হরিণ। বাঘ আসছে।

.

দাঁতে দাঁত চিপে মহীতোষবাবু বললেন, মিস্টার মিত্তির, যদি প্রাণের মায়া থাকে তো চলে যান।

কোথায়?

দুজনের হাতেই বন্দুক। মহীতোষবাবুর বন্দুক উঠেছে ফেলুদার দিকে।

বলছি যান–জিপে। আমার হুকুম।

আচমকা বাঘের গর্জনে সমস্ত বনটা কেঁপে উঠল। মন্দিরের পেছনে অর্জুন গাছের সাদা ডালের ফাঁক দিয়ে দেখা গেল একটা গনগনে আগুনের মতো চলন্ত রং। সেটা লম্বা ঘাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে একটা প্রকাণ্ড ডোরাকাটা বাঘের চেহারা নিল।

মহীতোষবাবুর হাত থরথর করে কাঁপছে।

বাঘ নীচু হয়েছে–এবার লাফ দেবে।

আচমকা গর্জে উঠল দুটো বন্দুক। বাঘ খতম। কিন্তু কি আশ্চর্য! মহীতোষবাবুর হাতের বন্দুক চলে গিয়েছে শশাঙ্কবাবুর হাতে। গুলি চালিয়েছেন তিনি এবং ফেলুদা। দুটো গুলিই ঢুকেছে বাঘের মাথায়।

মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে রইলেন মহীতোষবাবু।

ফেলুদা বলল, অযথা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন মহীতোষবাবু। আপনার শিকারের অক্ষমতা কারুকে বলব না। আপনি যে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছেন, আপনার দাদা তা জেনে খুব কষ্ট পেয়েছেন। দুবার তা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন আমার কাছে। মনে হয়েছে অসংলগ্ন কথা। তাছাড়া চিঠিতে আপনার সই দেখেই বুঝেছিলাম, আপনার হাত কাঁপে। বন্দুক ধরবেন কী করে?

চেঁচিয়ে উঠলেন মহীতোষবাবু, এককালে ধরতাম। এয়ারগান দিয়ে শালিক মেরেছিলাম। চড়ুইভাতি করতে এসে অশ্বথের ওই ডালে উঠেছিলাম। দাদা বলল বাঘ আসছে। আমি বাঘ দেখব বলে লাফ মেরে–

হাত ভাঙলেন?

কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার। হাড় আর জোড়া লাগেনি ভালো করে।

তবুও শিকারি হওয়ার সখ হল বংশের মর্যাদা রাখবার জন্যে। তাই নিজের দেশের জঙ্গলে যেতেন না ধরা পড়ে যাবেন বলে। আসাম উড়িষ্যার জঙ্গলে যেতেন–বাঘ শিকার করতেন শশাঙ্কবাবুনাম হত আপনার। কাহিনি লিখতেন তড়িবাবু। নাম হত আপনার। একদিন দুজনেই তা সইতে পারলেন না। এই নিয়ে পরশু রাতে আপনি শাসালেন শশাঙ্কবাবুকে। সেই রাতেই তড়িৎবাবু গুপ্তধন তুলে নিয়ে পালাবেন ঠিক করলেন। একা জঙ্গলে ঢুকলেন আদিত্যনারায়ণের তলোয়ার নিয়ে। সেদিন বাজ, বিদ্যুৎ আর বৃষ্টির মাতামাতি চলছে আকাশে। শশাঙ্কবাবু এলেন পেছন পেছন– বন্দুকের বাঁটে সে চিহ্ন পেয়েছি গতকাল।

এসেছিলাম তড়িৎকে বাঁচাতে, বললেন শশাঙ্কবাবু। কিন্তু দেখলাম বাঘ ওকে খাচ্ছে। গুলি চালালাম, ওকে মুখে নিয়ে বাঘ পালাল।

গতকাল দারোয়ানের ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে মাধবলালকে কী বলছিলেন, শশাঙ্কবাবু? মন্দিরের পেছনে টোপ ফেলতে?

মোষের বাচ্চা। চাপা গলায় বললেন শশাঙ্কবাবু।

যাতে বাঘ আসে এবং আমার সামনেই মহীতোষবাবুর কেরানি ফঁস হয়ে যায়, তাই না?

মহীতোষবাবু এগিয়ে এসে বললেন, মিস্টার মিত্তির, গুপ্তধনের খানিকটা ভাগ আপনি নিন।

রৌপ্যমুদ্রা নয়, মিস্টার সিংহরায়। আমি চাই আদিত্যনারায়ণের এই তলোয়ারটা।

ইস্পাতের তলোয়ার–রূপো ফেলে?

কারণ এই তলোয়ারই তড়িৎকে মেরেছে।

খুন?

না।

আত্মহত্যা?

তাও না। বলে তলোয়ারটা শশাঙ্কবাবুর বন্দুকের দিকে নিয়ে গেল ফেলুদা। কাছে আসতেই খটাং শব্দ করে জোড়া লেগে গেল ইস্পাতে-ইস্পাতে।

একী, এ যে চুম্বক! বলে উঠলেন শশাঙ্কবাবু।

হ্যাঁ, চুম্বক। তলোয়ারটা–বন্দুক নয়। আগে ছিল না তাই অন্যান্য ছুরি ছোরার পাশেই শোয়ানো থাকত আলমারিতে, গায়ে গায়ে লাগত না হয়েছে পরশু রাতে।

কী করে? জিগ্যেস করলেন মহীতোষবাবু। রুদ্ধশ্বাস বাকি সকলে।

ফেলুদা বলল…।

কী বলল বলুন তো?

.

গোয়েন্দা ধাঁধার সমাধান

ফেলুদা বলল, কোনও মানুষের হাতে লোহা বা ইস্পাতের কোনও জিনিস থাকা অবস্থায় যদি তার ওপর বাজ পড়ে, তাহলে সে অবস্থায় সে জিনিস চুম্বকে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, সে জিনিস অনেক সময়ে বিদ্যুৎকে আকর্ষণ করে। তড়িৎবাবুর মৃত্যু হয়েছিল বজ্রাঘাতে, এবং হয়তো এই তলোয়ারই তার মৃত্যুর জন্যে দায়ী। মাটি খুঁড়ে কলসি বার করার পর বৃষ্টি নামে, তার সঙ্গে বাজ ও বিদ্যুৎ। তড়িবাবু অশ্বত্থাগাছের নীচে আশ্রয়ের জন্যে ছুটে আসেন। বাজ পড়ে তড়িবাবু ছিটকে পড়ার সময়ে তার হাতের তলোয়ার বুকে বিঁধে যায়। সম্ভবত মৃত্যুর পর মুহূর্তেই তলোয়ার তার দেহে প্রবেশ করে।

বলে উঠলেন লালমোহনবাবু, তড়িবাবু শেষটায় তড়িৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *