আরজ আলী মাতুব্বর
১৯০০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর (বাংলা ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩রা পৌষ) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বরিশাল জেলার অন্তর্গত চর বাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্ম নিয়েছেন বরিশাল শহর থেকে ছয় মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে কীর্তনখোলা নদীর পশ্চিম তীরে লামচরি নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালয় ছিল না। তাই মুন্সি তাহের আলীর মক্তবে আরজ আলির শিক্ষাজীবন শুরু হয়। মুন্সি আব্দুল করিম, মুন্সি আফছার উদ্দিন প্রমূখের কাছে কোরানের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাতে আরজ আলির জ্ঞানতৃষ্ণা মেটেনি।
তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তাঁর মা অত্যন্ত মিতাচারী ছিলেন। পরিবারে তারা ছিলেন পাঁচ ভাইবোন। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রকৃত নাম ছিলো ‘আরজ আলী’। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি ‘মাতুব্বর’ নাম গ্রহণ করেন। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিম পরিচালিত মসজিদে মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে ‘আদর্শলিপি’ পড়তেন। এছাড়া তিনি মক্তবে কোরআন এবং ইসলামিক ইতিহাস বিষয়ে শেখেন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক ইচ্ছায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সমস্ত বাংলা বই মনোযোগী ছাত্রের মতো পড়তেন। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল দর্শন। কিন্তু পাঠাগারে সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত বই ছিল না। পরে বিএম মহাবিদ্যালয়ের দর্শনের এক শিক্ষক – কাজী গোলাম কাদির তার জ্ঞানগর্ভ আচার-বিচার দেখে মোহিত হন এবং তিনি মহাবিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই তাঁর মানসিক প্রকৃতি তৈরী হয়। তিনি নিজের চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে।
পৈতৃক পেশা কৃষিকাজ দিয়েই তাঁর কর্মজীবনের শুরু। কৃষিকাজের অবসরে জমি জরিপের কাজ করে তিনি আমিনি পেশার সূক্ষ্ম গাণিতিক ও জ্যামিতিক নিয়ম সম্পর্কে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। নিজের শ্রম, মেধা, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তিনি আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেন এবং জমিদার ও মহাজনদের কাছে বন্ধককৃত জমি-জমা উদ্ধার করেন।
শৈশবে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি তোলার দায়ে গ্রামের মানুষ তাঁর মায়ের জানাজা পড়তে রাজি হয়নি। কারণ, ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী প্রাণীর ছবি তোলা মহা অপরাধ। শেষে বাড়ির কয়েকজন লোক মিলে তার মায়ের সৎকার করেন। এই ঘটনা আরজ আলীর ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার বিরোধিতা এবং সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে উঠার কারণ হিসাবে কাজ করেছিল।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও তিনি শিক্ষিতজনদের চাইতে তিনি অনেক বেশি শিক্ষিত ছিলেন। মননশীলতার অসাধারণ সৌকর্যছটায় আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছেন যে প্রশ্নধারা তা আজ মহাসত্যে পরিণত হয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিতে অশিক্ষিত কিন্তু স্ব-শিক্ষায়, প্রজ্ঞায়, মননে, বুদ্ধিবৃত্তিতে বাঙালি জাতির উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম আরজ আলি মাতুব্বর। তিনি অর্থকষ্টে ভুগেছেন সারাজীবন। তারপরও গ্রন্থের সংস্পর্শ থেকেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। অর্থাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগও আর তাঁর জীবনে ঘটেনি। নিজের ভাষায় তিনি ছিলেন ‘আজীবন পল্লীবাসী’, পেশায় ‘খাঁটি কৃষক’, জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাঁর ‘সহচর ছিল গরু’। তিনি ছিলেন ‘ইংরেজী ভাষায় অদ্বিতীয় মূর্খ’, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল ‘সেকালের পাঠশালার দ্বিতীয় শ্রেণী’ পর্যন্ত। সেই তিনিই নিজের ভিতরে লালন করেছেন একটি চিরপ্রজ্জ্বল দীপশিখা যার নাম ‘মুক্তবুদ্ধি’।
একা একাই তিনি অন্যদের ফেলে দেয়া বই, ছেঁড়া কাগজ, বাজারের ঠোঙা পড়ে পড়ে বাংলা পড়তে ও লিখতে শিখেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বই সংগ্রহ করে শিখেছেন ভূগোল, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, ব্যাকরণ। ইসলামের গন্ডী পেরিয়ে রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, মনসামঙ্গল, মনুসংহিতা পড়েছেন, লাভ করেছেন সনাতন ধর্ম সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান। ক্রমাগত মানসিক দিগন্ত প্রসারিত করার এক অদম্য নেশায় পেয়ে বসেছিল তাঁকে। তাঁর কৌতুহলী মনের সামনে সব সময়ই একটি প্রশ্ন ‘কেন’ তাকে দাঁড় করিয়েছে এক মহাকালিক সমাধানের সামনে।
আরজ আলী মাতুব্বর ২৯শে অগ্রহায়ণ ১৩২৯ সালে লালমন্নেছাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় কনের বয়স ছিল ২১ বছর। তাদের তিন মেয়ে :এশারন নেছা, ছলেমান নেছা এবং ফয়জন্নেছা; একছেলে: আব্দুল মালেক। পরে তিনি পাশের গ্রামের আব্দুল করিম মৃধার মেয়ে সুফিয়াকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তাদের চারটি মেয়ে : হাজেরা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, নূরজাহান বেগম ও বায়াম্মা বেগম; দুই ছেলে : আবদুল খালেক ও আবদুল বারেক। তিনি দশ সন্তানের জনক ছিলেন।
আরজ আলী মূলত বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি অনেক অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। আরজ আলি দেখেছেন দাবীকৃত শান্তিবাদীরাই তার জীবনে যতো অশান্তির মূল। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেছেন। সমাজনেতা, ধর্মনেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন অসংখ্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধান। ‘আমি কে?’, ‘আমি কি স্বাধীন?’ ‘অশরীরী আত্মার কি জ্ঞান থাকিবে?’, ‘আল্লাহর রূপ কি?’, ‘ঈশ্বর কি স্বেচ্ছাচারী না নিয়মতান্ত্রিক?’, আল্লাহ ন্যায়বান না দয়ালু?’, ‘আল্লাহর অনিচ্ছায় কোন ঘটনা ঘটে কি?’, ‘সৃষ্টি যুগের পূর্বে কোন যুগ?’, ‘ঈশ্বর কি দয়াময়?’, ‘জীবসৃষ্টির উদ্দেশ্য কি?’ ‘পাপ-পূণ্যের ডায়রী কেন?’, ‘পরলোকের সুখ-দুঃখ শারীরিক না আধ্যাত্মিক?’, ‘গোর আজাব কি ন্যায়সঙ্গত?’, ‘ইহকাল ও পরকালে সাদৃশ্য কেন?’, ‘আল্লাহ মানুষের পরিবর্তন না করিয়া হেদায়েতের ঝঞ্ঝাট পোহান কেন?’, ‘উপাসনার সময় নির্দিষ্ট কেন?’, ‘নাপাক বস্তু কি আল্লাহর কাছেও নাপাক?’, ‘উপাসনায় দিগনির্ণয় কেন?’, ‘মেয়ারাজ কি সত্য না স্বপ্ন?’, ‘ইসলামের সহিত পৌত্তলিকতার সাদৃশ্য কেন?’, ‘জীবহত্যায় পূণ্য কি?’, ‘মানুষ ও পশুতে সাদৃশ্য কেন?’, ‘আকাশ কি?’, ‘দিবা-রাত্রির কারণ কি?’, ‘বজ্রপাত হয় কেন?’, ‘রাত্রে সূর্য কোথায় থাকে?’, ‘আদম কি আদি মানব?’, ‘হজরত মুসা সীনয় পর্বতে কি দেখিয়াছিলেন?’, ‘হজরত সোলায়মানের হেকমত না কেরামত?’, ‘যীশু খ্রীস্টের পিতা কে?’, ‘জ্বীন জাতি কোথায়?’, ‘স্ত্রী ত্যাগ ও হিলা প্রথার তাৎপর্য কি?’ ধর্ম ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষঙ্গ প্রসঙ্গে এসব প্রশ্ন সহজাত। একজন প্রশ্নপ্রবণ, যুক্তিবাদী, শিক্ষিত, মানবিক ও উদার ব্যক্তির মনে এসব প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সময়, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থাৎ আইন মানুষের এইসব সাধারণ কৌতুহলকে কঠোরভাবে দমন করতে চায়। রাষ্ট্র যেন মানুষের মানবিক রূপের চাইতে স্বাধীনতাহীন যান্ত্রিক রূপটিকেই অধিকতর সমর্থন করে। তাই আমাদের আজ সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে। আমাদের দৃঢ় স্বরে উচ্চারণ করা উচিত কোন দর্শন সামাজিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়েছে আর কোন দর্শন সচেষ্ট থেকেছে সামাজিক পরিবর্তনকে বিঘ্নিত করতে। আরজ আলীর রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে।
তিনি দেখিয়েছেন আমাদের চিন্তার যৌক্তিক অসারতা। ‘সৃষ্টি রহস্য’ গ্রন্থে মানুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সারা পৃথিবীতে প্রচলিত একাধিক সৃষ্টিতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। তিনি বুঝেছেন সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চৈনিক মত, মিশরীয় মত, ফিনিসীয় মত, ব্যাবিলনীয় মত, অস্ট্রেলিয়া-আফ্রিকা-আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের মত, পলিনেশীয় মত, বৈদিক ধর্ম, পার্সি ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টিয় ধর্ম, ইসলাম ধর্ম প্রভৃতির মত পরস্পরের চাইতে আলাদা। সেমেটিক ধর্মগুলোর (ইহুদি, খ্রিস্টিয়, ইসলাম) সৃষ্টিতত্ত্ব প্রায় একই হলেও পরবর্তী ধর্মটি পূর্ববর্তীর তুলনায় নিজেরটাই সঠিক বলে ভেবেছে এবং পূববর্তী ধর্ম সম্পর্কে নিন্দামুখী ও আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেছে। দার্শনিক মতের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কেও তাঁর কৌতুহল ছিল অপার। থেলিস, অ্যানাক্সিমান্ডার, পিথাগোরাস, জেনোফেনস, হিরাক্লিটাস, এরিস্টটল, এম্পিডোকলস, অ্যানাক্সাগোরাস, ডেমক্রিটাস, লিউকিপ্পাস, সক্রেটিস, প্লে¬টো, অ্যারিস্টটল প্রমূখ প্রদত্ত সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধেও তাঁর সচেতন জ্ঞানপিপাসা ছিল।
মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন। মাতুব্বর বরিশালের অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামসুল হক সহ অন্য অনেক সংখ্যক সাম্যবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাঁর বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার কথা তিনি একাধিক গ্রন্থে প্রকাশ করে গেছেন। তাঁর লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দী’ অন্যতম। তাঁর লেখা পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল ৪টি। এই বইগুলো হল- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩ সাল), ‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭ সাল), ‘অনুমান’ (১৯৮৩ সাল), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮ সাল)। আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকেন। বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে। বইটি তাকে এলাকায় ‘শিক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে সুনাম এনে দিয়েছিল। মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেনঃ “আমি অনেক কিছুই ভাবছি, আমার মন প্রশ্নে ভরপুর কিন্তু এলোমেলোভাবে। আমি তখন প্রশ্নের সংক্ষেপণ লিখতে থাকি, বই লেখার জন্য নয় শুধুমাত্র পরবর্তীকালে মনে করার জন্য। অসীম সমুদ্রের মতন সেই প্রশ্নগুলো আমার মনে গেঁথে আছে এবং আমি ধীরে ধীরে ধর্মীয় গণ্ডি হতে বের হতে থাকি।”
তিনি এই বইটিতে দার্শনিক প্রশ্নগুলোর ৬টি শ্রেণীতে তার প্রশ্ন ও তাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সেগুলি হল :-
প্রথম প্রস্তাব : আত্মা বিষয়ক। এই অংশে ৮টি প্রশ্ন।
দ্বিতীয় প্রস্তাব : ঈশ্বর বিষয়ক। এই অংশে ১১টি প্রশ্ন।
তৃতীয় প্রস্তাব : পরকাল বিষয়ক। এই অংশে ৭টি প্রশ্ন।
চতুর্থ প্রস্তাব : ধর্ম বিষয়ক। এই অংশে ২২টি প্রশ্ন।
পঞ্চম প্রস্তাব : প্রকৃতি বিষয়ক। এই অংশে ১১ টি প্রশ্ন।
ষষ্ঠ প্রস্তাব : বিবিধ। এই অংশে ৯টি প্রশ্ন।
প্রথম আটটি প্রশ্নে তিনি নিজের ভাবভঙ্গি ব্যক্ত করেন। যেমন – ১। আমি কে? (নিজ) ২। জীবন কি শরীরী বা অপার্থিব? ৩। মন এবং আত্মা কি একই জিনিস? ৪। জীবনের সাথে শরীর বা মনের সম্পর্ক কি? ৫। আমরা কি জীবনকে চিহ্নিত করতে পারি? ৬। আমি কি মুক্ত? ৭। মরণোত্তর আত্মা শরীর বিহীন জ্ঞান ধারণ করে? এবং সর্বশেষ, ৮। কীভাবে শরীররে আত্মা প্রবেশ করে ও বের হয়?
পাকিস্তান সরকার আমলে তার লেখালেখির জন্য তিনি সমালোচিত ও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সেসময় তার লেখা-লেখি নিষিদ্ধ হয়েছিল।
[ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ]
১). সত্যের সন্ধানে (১৯৭৩ সাল)
২). সৃষ্টির রহস্য (১৯৭৭ সাল)
৩). অনুমান (১৯৮৩ সাল)
৪). স্মরণিকা (১৯৮২ সাল)
৫). ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০ সাল)
৬). মুক্তমন (১৯৮৮ সাল)
মরণোত্তর কতিপয় কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তার কিছু লেখা ইংরেজিতে ভাষান্তর করা হয় এবং পাঠক সমাবেশ কর্তৃক সেগুলো খন্ডাকারে প্রকাশ করা হবে।
আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ই মার্চ (বাংলা সনের ১লা চৈত্র ১৩৯২) ৮৪ বছর বয়সে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান করেন। মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন।
বাংলা একাডেমি কর্তৃক আজীবন সদস্যপদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।
হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৩৮৫ বঙ্গাব্দ)
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৩৯২ বঙ্গাব্দ)
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ প্রতি বছর তার স্মরণে আরজ আলী মাতুব্বর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে থাকে। ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কের ‘Iconoclast’ পত্রিকা লিখেছে Aroj ali, ‘The insurrectionist’, দিয়েছে তাকে সক্রেটিসের মর্যাদা।
[ তাঁর কয়েকটি উক্তি ]
“বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নেই ; জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন।”
“জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই নয়, সকল মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে আবদ্ধ হলে চলে না। সীমানাকে অতিক্রম করে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যেই ক্রমশ অতিক্রম করা যাবে নিজেকে।”
“কোন ব্যক্তি যদি একজন ক্ষুদার্থকে অন্নদান ও একজন পথিকের মাল লুন্ঠন করে ও অন্য কাউকে হত্যা করে অথবা একজন গৃহহীনকে গৃহদান করে এবং অপরের গৃহ করে অগ্নিদাহ, তবে তাহাকে ‘দয়াময় ‘বলা যায় না।”
—————————————————————-
[সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – বাংলাপিডিয়া]
সূত্র নির্দেশিকা –
“আরজ আলী মাতুববর”। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ সাল।
শামসুল হক, মুহম্মদ। আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র। আইএসবিএন 984-8120-01-7.
হোসেন, আইয়ুব (১৯৯৯)। “আরজ আলী মাতুব্বর”। জীবনী গ্রন্থমালা। বাংলা একাডেমী।
“কৃষক থেকে দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর”। ১৭ই ডিসেম্বর ২০১৪। ২৯শে ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ই আগস্ট ২০১৫ সাল।
“বাণী চিরন্তণী”। ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৬ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ সাল।
“বাণী চিরন্তণী”। ১লা নভেম্বর ২০১৬ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ সাল।