আপনি নারী, বান্ধবী বলাই বাঙালির সামাজিক রীতি অনুসারে
ঠিক হতো; আমরা বন্ধু, প্রেমিকট্ৰেমিক নই; সরষে ক্ষেতের ধারে
দাঁড়িয়ে পেতেন সুখ যখন ছিলেন বালিকা, ভরতেন গন্ধে, যেমন আমিও। জলে
সাঁতরিয়ে পেতেন প্রবল সুখ সারাদেহে, যদিও আপনার অত্যন্ত নিষিদ্ধ
ছিলো পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়া, নগ্ন সাঁতরানো; আমার জন্যে খুবই সিদ্ধ
ছিলো, আমি ন্যাংটো সাঁতার কেটেছি, আপনি পারেন নি। আমগাছে উঠে
পেতেন পরম সুখ আম পেড়ে, যদিও নিষেধ ছিলো; আপনিও ছুটে
যেতে চাইতেন মাঠে, উড়োতে চাইতেন ঘুড়ি; যদিও আপনাকে
আটকে রাখতো ধার্মিক সমাজ, রাষ্ট্র; আমি ছিলাম স্বাধীন, এবং আমাকে
নিয়ে স্বপ্ন দেখতো সবাই; আপনাকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখতো না।
আপনি ছিলেন রাঙ, তামা, ছাই, খাদ, দস্তা; আমি অতি মূল্যবান সোনা।
ক্লাশে প্রথম হতেন, সেটা তুচ্ছ, হাস্যকর, নিরর্থক, আমিও প্রথম হতাম,
আমার গৌরব বাড়তো, আপনার কমতো, যদিও আমরা ছিলাম
একই দশকের; আপনাকে পেরোতে হয়েছে বহু ঝড়, অগ্নি, কালবৈশাখি,
লুটিয়ে পড়েছেন ডাল থেকে ডানাভাঙা, বজ্রে পোড়া, এক পাখি,
ছিন্নভিন্ন, তবু অপ্রতিরোধ্য বিস্তীর্ণ আকাশে মেলেছেন ছেঁড়া পালকের ডানা,
যদিও আকাশ কতো বড়ো, নীল, আপনার ছিলো সম্পূর্ণ অজানা।
আমার আকাশ ছিলো, আপনার জন্যে ছিলো খাঁচা, ও খোয়াড়;
আকাশে উড়েছি আমি অবাধে, আপনার স্বপ্নগ্রস্ত ডানা ভেঙেছে বারবার,
তবু উড়েছেন একলা আকাশে; হয়েছেন নিজেই ঈগল,
নিচে তুচ্ছ, খড়কুটো, জঞ্জাল, শুয়োরপাল, কেঁচো, প্রসারিত মল।
দেখা হলো সুসময়ে যখন আমরা শূন্য, হাত খালি, তাই ভরা, চাই না কিছুই,
সমস্ত চাওয়ার শেষ, এক অপূর্ব সময় আমাদের, অতীতের বিছানায় শুই;
আপনার মুখে দাগ সময়শিল্পীর; আমি এক ক্লান্ত সাফল্যমণ্ডিত প্রাণী,
হাঁটতে গিয়ে থামি, থামতে গিয়ে হাঁটি; শুধু এটুকুই জানি
নেই ভবিষ্যৎ, যদিও সফল; ঠোঁট নষ্ট, হৃৎপিণ্ড মৃত, শিশ্ন নপুংসক,
দেখা হলো, আপনি বালিকা হয়ে উঠলেন, আমি ধানখেতে গ্রাম্য যুবক।
সরষের সুগন্ধ চারদিকে, ঝাঁকেঝাঁকে পাখি, চৈত্রের আমের মুকুলে
দুলে ওঠে বাল্যকাল; কিশোরী আপনি আমার হাতে তুলে
দিলেন লুপ্ত বকুলের গন্ধ, পৌষের পূর্ণিমা, হিজলের ঢেউ, আশ্চর্য বেতুল,
জাম, সবুজ পেয়ারা, আমরোজ, কামরাঙ্গা, বন্য ধুতরার ফুল,
ইলশের স্বাদ, দিঘি, মেঘ, নদী, ঢেউ, ঘাসফুল, গাব, শিমুলের মন,
কাঁঠালচাঁপার গন্ধ, ছড়ানো শিউলি, শাপলা, পাখিডাকা বিল ও কাঁঠালের বন।