অন্ধ হওয়ার পর এ কী দেখি আমি? আজো আমার দু-চোখে
পাতারা সবুজ? জ্যোৎস্নাময় গন্ধরাজ? স্বর্ণচাঁপা মায়াবী সোনালি?
কৃষ্ণচূড়া আজো দেখি তীব্র লাল? আমার অসুস্থ বুকে
ফুটতে দেখি নীলপদ্ম? পূর্ণিমার চাঁদ আজো প্রবল রুপালি?
বধির হওয়ার পর এ কী শুনি আমি? ভোরে দোয়েলের শিস আমি
শুনতে পাচ্ছি আগের মতোই? শুনতে পাচ্ছি মধ্যদিনে কেঁদে চলে বাঁশি?
আজো আমি শুনতে পাই তার স্বর? মেঠো পথে বারবার থামি,
আজো শুনতে পাচ্ছি একতারার মতো বাজে ধানখেতে বোশেখের চাষী?
ঘ্রাণশক্তিহীন আমি এ কী ঘ্রাণ পাই? বাতাসে আসছে ভেসে
তীব্র বকুলের সুধা? কাঁঠালচাঁপার গন্ধে এলোমেলো বিবশ বিকেল?
হেঁটে যাচ্ছি আমন আউশ সরষে আম হিজলের দেশে?
গন্ধ পাই কাঁচাহলুদের? কে মাখছে চুলে গন্ধবতী নারকোল তেল?
স্পর্শময় ত্বক কবে খ’সে গেছে; তবু আমি বারবার উঠছি কেঁপে
কার স্পর্শে? বাতাসের? আগুনের? ফসলের? জলের? নারীর?
আমার ওষ্ঠে কেনো চুম্বনের ভেজা স্বাদ? আমার অধর কেনো লেপে
যাচ্ছে প্রবল মধুর স্পর্শে? আমি কি এখনো তবে এই পৃথিবীর?
জিভ কবে ছিন্নভিন্ন কুষ্ঠরোগে; তবু পাচ্ছি কেনো অনুপম
স্বাদ ভাত, মাছ, সবুজ শব্জির? রসের সুস্বাদে ঝলমল ক’রে ওঠে দেহ?
ঝরনার জলধারা এমন সুগন্ধি, সুখদ, কোমল? পরম
মধুর লাগে দুধ, রস, ইলিশ, কুমড়ো, রুটি, সর, মাখনের স্নেহ?
তাহলে হই নি অন্ধ? বধিরতা জমে নি শ্রবণে? ত্বক থেকে
লুপ্ত হয় নি স্পর্শ? শুনতে পাচ্ছি ফুল থেকে ফুলে ফেরে অক্লান্ত মৌমাছি?
কুষ্ঠরোগে ছিন্ন হয় নি জিভ? শ্রাবণ এখনো নামে বঙ্গদেশ ঢেকে?
লুপ্ত হই নি আমি? শিহরণ ওঠে রক্তস্রোতে- আছি, আজো বেঁচে আছি।