Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সহিষ্ণুতা || Sanjit Mandal

সহিষ্ণুতা || Sanjit Mandal

সহিষ্ণুতা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় যে, সহিষ্ণুতা শব্দটার মধ্যেই এক অসাধারণ মহত্ত্ব লুকিয়ে আছে। শব্দটার মানে খুঁজতে গেলে বলতে হয়, সহিষ্ণুতা মানে সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা, তিতিক্ষা ও ক্ষমাশীলতা। একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
সহনশীলতা- বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে,”যে সয় সে রয়”। অর্থাৎ, সহনশীলতা বা সহ্যশক্তি একটা মহৎ গুণ। যে মানুষ সহ্য করে সে মানুষ দীর্ঘদিন টিঁকে থাকতে পারে। এখানে অন্যায় সহ্য করার কথা বলা হচ্ছেনা, বরং মতপার্থক্য সহ্য করার কথাই বলা হচ্ছে। মতপার্থক্য থাকলেও সহনশীল বিবেকবান মানুষ ক্রোধান্বিত হয় না, বরং বিপরীত মতকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করে তার গ্রহণযোগ্যতা অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ধৈর্যশীলতা — ধৈর্যশীলতা মানুষের অসাধারণ গুণাবলীর অন্যতম। ধৈর্যশীল মানুষ জন ধৈর্য ধরে অনেক শুভ ফল প্রাপ্ত হতে পারে। বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য স্মরণ করা যেতে পারে।”সবুরে মেওয়া ফলে”। ব্যাখ্যার বিশেষ প্রয়োজন নেই, শিক্ষিত মানুষের কাছে ইঙ্গিতই যথেষ্ট। কেবলমাত্র ধৈর্য ধারণ করে অনেক কঠিন পরিস্থিতির নিরসনের পরে শুভ ফল প্রাপ্ত হওয়ার প্রচুর উদাহরণ আছে।

তিতিক্ষা– তিতিক্ষার মধ্যেই সহিষ্ণুতা আছে আর দয়াও আছে। অর্থাৎ তিতিক্ষাযুক্ত মানুষই দয়া দেখাতে পারে, আর দয়ালু মানুষই সহিষ্ণু হতে পারে। তিতিক্ষা ও মানুষের অসাধারণ গুণাবলীর অন্যতম। তিতিক্ষা মানুষকে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করায় যেখানে সহনশীলতার সাথে দয়ার প্রয়োজন ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িয়ে আছে।

ক্ষমাশীলতা– ক্ষমা মানব চরিত্রের এক মহৎ গুণ। ক্ষমা সেই করতে পারে যার মধ্যে সহনশীলতা আছে আর তিতিক্ষাও আছে, সেই সঙ্গে অহংবোধ নেই বা হামবড়া ভাবও নেই।এখানে দুর্বলের ক্ষমা নয় বরং সবলের ক্ষমাই যুক্তিগ্রাহ্য। দুর্বল মানুষ সবলকে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারে, কিন্তু সে ক্ষমা কাপুরুষতারই নামান্তর। সবল মানুষ যে তার তুলনায় সবল বা দুর্বল মানুষকে ক্ষমা করে দেয় সেই আসল ক্ষমাশীল ব্যক্তি। ক্ষমা মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

আজকাল জাতি, ধর্ম,ও বর্ণ নির্বিশেষে, এবং দেশকাল ভেদে সহিষ্ণুতার বড় অভাব দেখা যাচ্ছে। মানুষ ভুলে যাচ্ছে,” বাঁচো এবং বাঁচতে দাও” ই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আদর্শ মূল মন্ত্র। সমস্ত প্রাণীকুল,উদ্ভিদকুল, জীব ও জড় নির্বিশেষে সহিষ্ণুতা ই আমাদের পৃথিবীকে নতুন প্রজন্মের দিকে তথা নতুন প্রভাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নানাভাবে যে সমস্ত অসহিষ্ণুতার হুঙ্কার আমরা প্রতিনিয়ত শুনতে পাই বা পাচ্ছি তা কোনোভাবেই আমাদের জগতের কোনো কল্যাণ সাধন করতে পারবে না। এই সুন্দর পৃথিবীকে বাঁচাতে গেলে এবং নিজেরাও বাঁচতে গেলে সহিষ্ণুতাই আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত। জাতি ভেদ, বর্ণ ভেদ আর ধর্ম ভেদ এই তিন ভেদ মানব সমাজের চরমতম শত্রু। এই তিন ভেদ কে কেবলমাত্র সহিষ্ণুতা দিয়ে নির্মূল করা যায়।
রক্তের প্রয়োজনে ব্লাডব্যাঙ্কে ছুটে গিয়ে রক্তটা কোন জাতের রক্ত, বা কোন ধর্মের লোকের রক্ত তা কখনই আমরা বিচার করিনা, কারণ জীবন ধারণের জন্য রক্ত একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ, রক্ত দিয়ে রোগীর জীবন বাঁচানো ই মুখ্য, কার রক্ত কোন ধর্ম বা বর্ণের রক্ত তা একেবারেই গৌণ এবং নিরর্থক। যেমন কেউ কখনো ই বিচার করিনা বাজারের কোন ফসলটা কোন ধর্ম বা কোন জাতের লোক উৎপাদন করেছে। এখানে প্রাণ ধারণ করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
জাতি ধর্ম আর বর্ণ নিয়ে হানাহানি করে তারাই যারা ওই তিনটির ঠিকাদারি নিয়েছে, তারা সুকৌশলে ধর্মের আফিম খাইয়ে মানুষের সাধারণ বোধবুদ্ধি কে অবশ করে দিয়ে নিজেদের মৌরসীপাট্টা কায়েম রাখতে চায়। সব থেকে বড় আশার কথা হল এই যে, সাধারণ মানুষ চিরকালই সহিষ্ণু ও শান্তিপ্রিয়। সহিষ্ণুতা আছে বলেই সব মানুষ সব গাছ ধ্বংস করে না, সব প্রাণী ধ্বংস করে না, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সহিষ্ণু মানুষ তাই জলাজমি জল জঙ্গল বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাই বুঝি জগৎ সংসার তার আপন খেয়ালে এগিয়ে চলে স্রষ্টার আশীর্বাদ মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress