Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঈশ্বরে আর্তি || Sanjit Mandal

ঈশ্বরে আর্তি || Sanjit Mandal

ঈশ্বরে আর্তি দেখাব কি, প্রথমেই ধাক্কা খাই চার্বাক দর্শনে। ঈশ্বর আছেন তো? সেটা আগে বুঝি, তারপর তো তাঁর প্রতি আর্তি। এই চার্বাক দর্শনপন্থীরা নিরীশ্বরবাদী। তাদের মতে বৈদিক ও উপনিষদীয় যুগ থেকে ষড়দর্শনের যুগ পর্যন্ত অধ্যাত্মবাদীরা অনুমান, আগম প্রভৃতি প্রমাণকে আশ্রয় করে ধর্মীয় অলৌকিক বস্তুভাবনা গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতালোভী,গর্বিত সুকৌশলী  অসাধু ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের কিছু মানুষ নিজেদের জীবিকা নির্বাহের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম রাখার জন্য দরিদ্র, অক্ষম, অশিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের মনে ধর্মের ধারণা তথা ঈশ্বরানুভূতি ও স্বর্গ নরক, কর্মফল, পাপ পূণ্য, জন্মান্তর বাদ, মুক্তি, ভগবান ঈশ্বর ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা ও কাল্পনিক  প্রচার করে মানুষ কে বিভ্রান্ত করেছে, মানুষকে ভীত এবং সন্ত্রস্ত করে  নিজেদের উপার্জনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাকা করে রেখেছে। আসলে এসবের কোনো অস্তিত্বই নেই। এবং অস্তিত্বের সপক্ষে কোন চাক্ষুষ প্রমাণ ও নেই। চার্বাকদের মতে কেউ যদি ঈশ্বরকে সামনে হাজির করে তবুও সে যে ঈশ্বর তা তাকেই প্রমাণ করতে হবে, এবং বহু প্রশ্নের মুখোমুখি তাকে হতে হবে। প্রথম প্রশ্ন ই হবে তিনি কে, কোথায় থাকেন, কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন,  তিনি রেসিডেন্সিয়াল না ফরেনার, তার আধার কার্ড প্যান কার্ড আছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। 

চার্বাক দর্শন শুনলাম। এবার বেদ বিচার, ভারতীয় দর্শনের প্রমাণ কাণ্ড, প্রমেয় কাণ্ড, ন্যায় বিচার, জীব ও শিব জ্ঞান, সৃষ্টিতত্ত্ব, অদ্বৈত বেদান্ত মায়াবাদ, সপ্তধা, অনুপপত্তি, বন্ধমোক্ষ, ও মোক্ষের সাধনমার্গ, ইত্যাদি সুচারুরূপে বিশ্লেষণের পর, এই দিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে ঈশ্বর আর্তি কোন ফ্যালাসি নয় বা কোন প্রমাণ সাপেক্ষ ব্যাপারও নয়। বরং ঈশ্বর,  ঈশ্বর চেতনা ও ঈশ্বরে আর্তি সামগ্রিক ভাবে গভীর অনুভূতির ব্যাপার। এই অনুভূতি কেবলমাত্র তার ই হয় যে বা যিনি তাকে অনুভব করার মত শক্তি অর্জন করতে পেরেছেন। 

এই অনুভূতি অতীন্দ্রিয়। এই অনুভূতির কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। চোখ দিয়ে আমরা দেখি, কিন্তু চোখকে আমরা দেখতে পাইনা। অনেক টা সেই ব্যাপার। 

সাধন মার্গ ও ভারতীয় দর্শনের এ এক অমূল্য অধ্যায়। শ্রীচৈতন্যদেব জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ঈশ্বরানুভূতি অনুভব করেন এবং সেই অনুভূতির  কথা নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে আমাদের ভক্তিমার্গে বিচরণের সুখানুভূতি প্রচার করেন।  সাধনমার্গের এক অতি উচ্চতম স্তরে যে ঈশ্বরে আর্তি ও ঈশ্বর দর্শন ঘটে, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যুগাবতার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। যোগ সাধনা এবং ঈশ্বরসানুভূতির কথা আমাদের জানিয়েছেন আরও বহু প্রাত স্মরনীয় সাধু সাধক মহাপুরুষ যেমন, তোতাপুরী, লোকনাথ ব্রহ্মচারী,  তৈলঙ্গ স্বামী,  সাধক বামা ক্ষ্যাপা, শ্যামাচরণ লাহিড়ী এবং যুগে যুগে অবতীর্ণ আরও বহু সাধু সাধক ও সুফি দরবেশ। শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ভগবত দর্শন  শুধু একা করেননি, আরো এক মহাপুরুষকে ভগবত দর্শন করিয়েছেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দ। তারা তো এই সেদিনকার মানুষ, তাদের অনেকেই চাক্ষুষ করেছেন।অনুভব করেছেন নিরাকার ব্রহ্ম কে এবং জগৎ বিখ্যাত হয়েছেন।

যে সমস্ত আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ছিলেন অথচ আজ নেই, তাদের কেবলমাত্র আমরা অনুভব করতে পারি। ঠিক তেমনই ঈশ্বর বা ভগনবান বা সর্বশক্তিমানকে আমরা কেবলমাত্র অনুভব করতে পারি, তাও এক অনন্য অনুভূতির মাধ্যমে। অসাধারণ আর্তি নিয়ে তার আরাধনা আর গভীর ভাবে সাধনা ও ভজনা করলে তবেই ঈশ্বরসানুভূতি আসে। ঈশ্বর বা ভগবান কে হৃদয়ের  কতখানি আর্তি নিয়ে ডাকা যায় তার এক অনন্য উদাহরণ দিই আর এক মহামানব মহাকবি,কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এর আর্তি দিয়ে।

“দয়া,তব দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে,
নইলে কি আর পারব তোমার চরণ ছুঁতে।” 
তোমায় দিতে পূজার ডালি বেরিয়ে পড়ে সকল কালি
পরাণ আমার পারি নে তাই পায়ে থুতে।।
এত দিন তো ছিল না মোর কোনো ব্যথা, 
সর্ব অঙ্গে মাখা ছিল মলিনতা।
আজ ওই শুভ্র কোলের তরে ব্যাকুল হৃদয় কেঁদে মরে-
দিয়ো না গো দিয়ো না আর ধুলায় শুতে।।
দুটো জিনিস বোঝা গেলো,  এক, মনে কালি থাকা চলবে না, দুই, অঙ্গে মলিনতা নিয়ে ডাকলে হবে না। আর্তি না থাকলে প্রাপ্তি হবে কি করে। ডাকার মতো ডাকলে পরে পাষাণের ও অশ্রু ঝরে।।

1 thought on “ঈশ্বরে আর্তি || Sanjit Mandal”

  1. সঞ্জিত কুমার মণ্ডল ( সঞ্জিত মণ্ডল)

    ভালো লাগলো প্রিয় বন্ধুরা অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *